সংবাদটি আমাকে অসুখ উপশমের আরাম দিচ্ছে
জালাল আহমেদ চৌধুরী
১৫ মার্চ ২০২১
ওয়েবসাইটের আত্মপ্রকাশের দিনেই ‘অতিথি কলাম’-এর মাধ্যমে তাঁর উপস্থিতি থাকার কথা ছিল। শারীরিক অসুস্থতার জন্য লিখতে পারেননি। সেই না-পারার দুঃখ প্রকাশ করে জালাল আহমেদ চৌধুরী গত ১৩ মার্চ যে স্ট্যাটাসটা দিয়েছেন ফেসবুকে, সেটিই না হয় থাকল অতিথি কলামে।
শরীর আয়ুর ভার সইতে অক্ষমতা প্রকাশ করতে বার্ধক্যে নানাবিধ রগড় করে। আমার সাথে এ পর্যন্ত দু-একবার এ রকম হয়েছে। গত কিছুদিন ধরে রগড়ের প্রকোপ সামান্য বাড়াবাড়ির দিকে। এরকম হলে মন জুতে থাকে না। আলস্য এসে অচল করে দিতে চায়। এক রকম জোর করে প্রাত্যহিকতা চলমান রাখতে হয়। নিরানন্দ শাসিত এরকম সময়ে ধারাবাহিক আনন্দস্রোতের আগমনী চাক্ষুষ করলে মনে যে ভাব জাগে, তা অনির্বচনীয়। মনে হয়, যেন সুচিত্রা মিত্রের কন্ঠ ভেসে আসছে "যেমন করে শ্রাবণ রজনীতে, হঠাৎ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে"। এরকম আর কি। বোকাবোকা কথা না বাড়িয়ে কী দেখলাম, যা দেখে অসুস্থ মনোভার হালকা হলো, সে কথা বলি।
ফেসবুকে দেখলাম, আর মাত্র দুদিনের মাথায় উৎপল শুভ্রের নিজস্ব ওয়েবসাইট আসছে, ক্রীড়াসমাজের ধারাবাহিক মনোরঞ্জনের জন্য। ওয়েবসাইটের লোগোটা চমৎকার, উৎপলীয় শিল্পের পরশে রুচিস্নিগ্ধ, নজরকাড়া। আর ওয়েবসাইটের প্রোমো বা পূর্বাভাসে যে সব ইংগিত, তাতে লোভাতুর জিব লকলকাচ্ছে পাঠকাগ্রহের নিদারুণ তীব্রতায়। সেগুলো পড়ে গভীর গভীর চিন্তার রেখা ভাঁজ খায় ললাটের ত্বকে। বুঝতে পারছি, জীবনের মানে খোঁজার তাড়না আসছে কলম বাহিত হয়ে, ক্রীড়া যার উপজীব্য। ঘোষণা এসেছে এই ওয়েবসাইট, উৎপল শুভ্র.কম যার পরিচয়, তাঁদের জন্য, যারা ক্রীড়া নিয়ে চিন্তা করেন এবং ক্রীড়াই যাদের ধ্যানজ্ঞান । আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই উদ্দিষ্ট পাঠক আমাদের জনগোষ্ঠীর বহুলাংশ আর শুভ্রের পাঠক তো মানচিত্রের সীমানা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী। সুতরাং ১৫ মার্চ থেকে আমাদের জন্য দারুণ কিছু অপেক্ষা করছে, বলাটা বাহুল্যের পর্যায়েই পড়ে।
উৎপল শুভ্র আমাদের ক্রীড়া সাংবাদিকতার, ক্রিকেট সাহিত্যের উজ্জ্বলতম তারকা। ক্রিকেট নিয়ে কথাশিল্পের যে বিশ্বজোড়া ক্যানভাস, সেখানে শুভ্র বাংলাভাষার প্রতিনিধি। বয়স্ক পাঠকের প্রশান্তি, তরুণ প্রজন্মের রোমাঞ্চকর অনুভূতি। ক্রিকেটারের শিল্পসৃজন অনন্তের জন্য দোল খায় তাঁর শাব্দিক নির্মাণে। সেই শুভ্র যখন অগণিত অনুরাগী পাঠকের জন্য চর্চামুখরতার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে আসেন, তখন ক্রীড়ামনস্ক চিত্ত মাত্রেরই আহ্লাদ হয় বৈ কি। আমি নিজেকে সে গোত্রের একজন মনে করি বলেই সংবাদটি আমাকে অসুখ উপশমের আরাম দিচ্ছে।
আমি স্পোর্টিং উইকেটে ভিভ রিচার্ডসের ব্যাটিং দেখার প্রতীক্ষায় আছি। শুভ্র কলম হাতে আমাদের কিং রিচার্ডস। সর্বতো আনন্দবাহন। তাঁর নব সৃজনপ্রকল্প জনপ্রিয়তার স্রোতে ভাসবে, এটা নিশ্চিত। তবু আমার শুভেচ্ছা রইল সে প্রকল্পের শুভ যাত্রায়। খেলিয়ে এবং লেখিয়েরা এ প্রকল্প থেকে হবেন বিনোদিত এবং অতি অবশ্যই প্রণোদিত। দিন কয়েক আগে রিচার্ডসের জন্মদিন গেছে। সেদিন শুভ্র নানা আঙ্গিকে তাঁকে আমাদের ফিরে দেখিয়েছেন। সে সব পড়ার রোমাঞ্চ থেকেই প্রিয় লেখককে রিচার্ডসের সমিল পারফর্মার মনে করা। শুভ্রের ওয়েবসাইটের উজ্জ্বল বহমানতা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি।
আলোচ্য ওয়েবসাইটের অভিষেকে আতিথ্য গ্রহণের আমন্ত্রণ ছিল এই অভাজনের। এমনিতে সামান্য লেখক হিসেবে আমি বহুদিন শুভ্রের প্রীতি ও প্রশ্রয় ভোগ করে আসছি। তাঁর অনুরোধ সময়মতো রক্ষা করতে পারি নাই মূলত স্বাস্থ্যগত কারণে। ভয় ছিল, নড়বড়ে দেহমনে শুভ্রীয় মাত্রার মান রাখতে পারব কি না। শেষ পর্যন্ত না পারায় লজ্জিত এবং বিব্রত। তবে বিশ্বাস রাখি, অতি সজ্জন এবং অতি ভালোবাসার মানুষটি অভিমান করতে পারেন, কিন্তু কিছুতেই রাগ করবেন না। শুভ্রকে ব্যস্ত প্রহরে বিচলিত করার জন্য তাঁর ভক্ত অনুরাগীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে রাখছি।