ধন্যবাদ, ক্রনিয়ে!
উৎপল শুভ্র
১১ এপ্রিল ২০২১
হানসি ক্রনিয়ের ম্যাচ ফিক্সিংয়ের খবরটা পাওয়ার প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে নেওয়ার পর মনে হয়েছিল, একটা ধন্যবাদও তাঁর প্রাপ্য। ক্রনিয়ের মতাে `সবরকম সন্দেহের উর্ধ্বে থাকা` এক ক্রিকেটার স্বর্গ থেকে নরকে পতিত হয়ে কিছুটা হলেও জাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। ঘুনপোকার মতো ভেতরে ভেতরে ক্রিকেটকে খেয়ে ফেলা ফিক্সিং নিয়ে এবার যদি কিছু হয়!
প্রথম প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০০০
সেপ্টেম্বর ১৯৯৪, কলম্বো
সেই সকালটি ছিল রোদ ঝলমলে। প্রায় ছয় বছর পরও রােদের কথা এভাবে মনে থাকার বিশেষ কারণ আছে। ১৯৯৪-এর সেপ্টেম্বরে ওরকম রােদ ঝলমল দিন বলতে গেলে দেখেইনি কলম্বাে। প্রায় প্রতিদিনই এমন বৃষ্টি হচ্ছিল যে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে আয়ােজিত সিঙ্গার ওয়ার্ল্ড সিরিজকে সবাই বলতে শুরু করেছিল 'রেইন ওয়ার্ল্ড সিরিজ'।
রােদ ঝলমল সেই ব্যতিক্রমী সকালে লঙ্কা ওবেরয় হােটেলের লবিটা আরও আলােকিত হয়ে গেল যখন মার্ক ওয়াহ আর শেন ওয়ার্ন হাসতে হাসতে এসে ঢুকলেন ভেতরে। দুজনের পরনেই ক্যাজুয়াল পােশাক। যেন হােটেল রুমে বন্দি থেকে হাঁপিয়ে ওঠায় একটু হাঁটতে গিয়েছিলেন বাইরে। হােটেলের প্রবেশ দ্বারের দিকে মুখ করে আমি তখন লবিতেই বসে। সবকিছু এতা স্পষ্ট মনে থাকার এর চেয়েও বড় কারণ, এই দুই অস্ট্রেলীয়কে একই সঙ্গে ইন্টারভিউ করেছিলাম একটু পরেই। মার্ক ওয়াহর সঙ্গে আগেই টেলিফোনে কথা হয়েছিল, সে কথা মনে করিয়ে দিতেই অপ্রত্যাশিত প্রস্তাব, 'আমার ইন্টারভিউ চান? এখনই সেরে ফেলুন না!'
মার্ক ওয়াহকে নিয়ে যখন বসতে যাচ্ছি, তখনই শেষ ওয়ার্নের কৌতুকমাখা কণ্ঠ, "কি, আমার ইন্টারভিউ করবে না?' শেন ওয়ার্ন তখনাে আজকের শেন ওয়ার্ন হননি—এই প্রশ্নের একটা কারণ তো অবশ্যই এটি। তবে তখনকার মতাে প্রত্যক্ষ কারণ ছিল, আগের সাত/আট দিনে তিন/চার বার সময় দিয়েও শেষ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি ওয়ার্ন। 'ওয়ান টু ওয়ান' এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ না পেয়ে অগত্যা ম্যান অব দ্য ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনে যতােটুকু পেয়েছিলাম ওয়ার্নকে, সেটি দিয়েই তার ওপর বেশ বড় স্টোরি পাঠিয়ে দিয়েছি। ওই সকালে দুজনকে একসঙ্গে দেখে এ কারণেই শেন ওয়ার্নকে ছেড়ে মার্ক ওয়াহর দিকে পক্ষপাত দেখানাে।
তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাত্রই কাভার করতে শুরু করেছি। তাই একসঙ্গে মার্ক ওয়াহ ও শেন ওয়ার্নকে পাওয়া রােমাঞ্চিত হওয়ার মতােই একটা ব্যাপার ছিল। মার্ক ওয়াহর সঙ্গে যখন কথা বলছি, উল্টোদিকের সােফার বসে রইলেন শেন ওয়ার্ন। টুকটাক রসিকতা করলেন, এমনকি ইন্টারভিউ শেষে মার্ক ওয়াহ চলে যাওয়ার পরও 'আমার সঙ্গে আগে কথা বলােনি কেন' জাতীয় ইগাে বিসর্জন দিয়ে আড্ডার মেজাজে কথা বললেন আরও মিনিট পাঁচেক।
তখন যতটা না সাংবাদিক, তার চেয়েও বেশি এসব ক্রিকেট তারকার মুগ্ধ ভক্ত। এ কারণেই কলম্বাের সেই সকাল স্মরণীয় একটা অভিজ্ঞতা হয়ে ছিল অনেকদিন। এরপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে আরাে ঘনিষ্ঠ পরিচয় অনুভূতিটাকে আর সে জায়গায় রাখেনি। তবে সেই সকালটি কিন্তু প্রায়ই মনে পড়েছে। এখনো পড়ে, তবে গত বছর দেড়েক ধরেই অন্যরকম অনুভূতি হয়। শ্রীলঙ্কায় ওই টুর্নামেন্টের সময়ই এক বাজিকরকে 'পিচ, আবহাওয়া, দল' এসব বিষয়ে কিছু 'নির্দোষ' তথ্য যােগান দিয়েছিলেন এই মার্ক ওয়াহ আর শেন ওয়ার্ন। তথ্যগুলাে 'নির্দোষ' ছিল, তা দেওয়াটাও নির্দোষই থাকত, যদি তার বিনিময়ে কিছু ডলার হাতিয়ে না নিতেন ব্যাট এবং বল হাতে ওই দুই দর্শক মনােরঞ্জক।
এই কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর থেকে কলম্বাের ওই রােদ ঝলমল সকালটিতে কেমন একটা কালাে ছায়া দেখতে পাই। সন্দেহ এমন জিনিস, এখন মনে হয় শেন ওয়ার্ন আর মার্ক ওয়াহ যে ওভাবে হাসতে হাসতে বাইরে থেকে লবিতে ঢুকলেন, কারণটা নিশ্চয়ই ওই বাড়তি ডলারগুলাে। কে জানে, তা নিতেই তাদের রুম থেকে নেমে আসা কি না!
এপ্রিল ১৯৯৫, শারজা
বড় ব্যবধানে জিতেছে ভারত, অধিনায়কের মন ফুরফুরেই থাকার কথা। অথচ ম্যাচ উত্তর প্রেস কনফারেন্সে মােহাম্মদ আজহারউদ্দিনের দেখা নেই এবং মিনিট দশেক অপেক্ষার পর শােনা গেল, তিনি নাকি আসবেনই না। প্রেস কনফারেন্সে আজহারের আচার-আচরণ নিয়ে হাজারাে আপত্তি তােলা যায়, কিন্তু প্রেস কনফারেন্সে আনার জন্য তাকে সাধ্য-সাধনা করতে হয়েছে, এমন শােনা যায়নি কখনাে। তাহলে কী হলাে এমন?
হয়েছে আসলে ভারতের আগের ম্যাচে। সেদিন ভারতীয় দলের এনক্লোজারে এসে বসা দুজনকে শারজা স্টেডিয়ামের নিরাপত্তারক্ষীরা বের করে দিয়েছে। দিয়েছে তাদের চিনতে পেরেই! ওই দুজন ছিলেন বুকমেকার, যাদের বাংলা নাম বাজিকর । এ-ও জানা গেল যে, ওই দুজন অজয় জাদেজার পরিচিত এবং তারা এসেছিলেনও জাদেজার কাছেই। এই খবরটিই কলকাতার 'দ্য টেলিগ্রাফ' পত্রিকার সাংবাদিক শারজা থেকে পাঠালেন এবং 'ভারতীয় শিবিরে বুকি' জাতীয় শিরােনামে তা ছাপাও হলাে। সেই খবর শারজায় ভারতীয় দলের কাছে পৌঁছুতেও সময় লাগল না। মােহাম্মদ আজহারউদ্দিন এতেই মহা ক্ষিপ্ত। পরে অনেক সাধ্য-সাধনা করে তাঁকে প্রেস কনফারেন্সে আনা হলাে, কিন্তু একটি-দুটি শব্দ ছাড়া কিছুই বললেন না, বরং উদাসী চোখে শারজার মাঠ-আকাশ এসব দেখতে লাগলেন। মরুভূমিতে এমন সবুজ একটা কীভাবে বানানাে হলাে, হঠাৎ করেই যেন এই বিস্ময় অধিকার করে নিয়েছে তাঁকে! ভারতীয় দলের ম্যানেজার হিসেবে সেটিই ছিল অজিত ওয়াড়েকারের শেষ টুর্নামেন্ট। তিনিও মহা উত্তেজিত, 'টেলিগ্রাফ'-এর রিপাের্টারের সঙ্গে তাঁর একপ্রস্থ বাদানুবাদ দিয়ে শুরু হলাে সেই প্রেস কনফারেন্স।
ওরকম প্রতিক্রিয়াই প্রত্যাশিত ছিল। কারণ বেটিং এবং ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে তুলকালাম চলছে তখন। মাত্র কয়েক মাস আগে শেন ওয়ার্ন আর টিম মে ঘুষ সাধার অভিযােগ তুলেছেন সেলিম মালিকের বিরুদ্ধে। বাসিত আলী ও রশিদ লতিফ ঘােষণা করেছেন ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত। শারজা স্টেডিয়ামের প্যাভিলিয়নের দোতলায় যেখানে বিলাসবহুল বক্সে সব রথী-মহারথীরা বসেন, সেখানকার দেয়ালে লেগেছে সতর্কবাণী। যার মর্মার্থ, এখানে বেটিং জাতীয় কিছুতে জড়িত থাকা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
তারপরও আজহারউদ্দিন বা অজয় জাদেজাকে সন্দেহ নয়, বরং টেলিগ্রাফ-এর সাংবাদিকের সন্দেহবাতিকগ্রস্ত মনের ওপরেই তখন রাগ হয়েছিল বেশি। তখনাে আজহার অর্থ অফ স্টাম্পের বাইরে তৃতীয় স্টাম্প থেকে ফ্লিক করে মিড উইকেট বাউন্ডারিতে বল পাঠানাের জাদুকর, জাদেজা মানে হাজার ওয়াটের নিষ্পাপ হাসি। হায়! সেই অর্থটা পাল্টে গেছে আজ অনেকদিন। সত্যিই কোনাে কুকর্মের সঙ্গে তাঁদের সংশ্রব আছে কি না, সেটি তাে এখনাে প্রমাণের অপেক্ষায়। কিন্তু ওই যে সন্দেহ, সেটিই তাে আসল সর্বনাশ! তাঁদের নাম ক্রিকেটীয় কীর্তির আগে অন্য একটা আলাে-আঁধারি রহস্যের কথা মনে করিয়ে দেয় এখন!
জুন ১৯৯৯, লিডস
হেডিংলি মাঠে পৌঁছুতে পৌঁছুতে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের প্র্যাকটিস সেশন প্রায় মাঝপথে। পরদিন বড় ম্যাচ, তবে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য তা একেবারে জীবন-মরণ লড়াই নয়। অস্ট্রেলিয়ার কাছে সুপার সিক্স ম্যাচটি হারলে একটাই সমস্যা—সেমিফাইনালে আবার স্টিভ ওয়াহর দলেরই মুখােমুখি হতে হবে। জিতলে প্রতিপক্ষ হবে নিউজিল্যান্ড, এটি মনে রাখলে অবশ্য জয়টাকে খুব জরুরিই মনে হওয়ার কথা। হানসি ক্রনিয়ে মাঠে উপস্থিত চার/পাঁচ সাংবাদিককে এসব সমীকরণ নিয়ে না ভাবার পরামর্শ দিয়ে বললেন, 'সেমিফাইনাল নিয়ে আমি এখনই ভাবছি না। এই ম্যাচ জেতার অর্থ যদি সেমিফাইনালে কঠিনতর প্রতিপক্ষ পাওয়াও হতাে, তাহলেও আমরা জয়ের জন্যই খেলতাম। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকানরা প্রতিটা ম্যাচই জিততে চাই।'
বব উলমারেরও দেখলাম একই মত। মাঠে দাঁড়িয়েই ক্রিকেট কোচিংয়ে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলা এই ভদ্রলােকের দীর্ঘ একটা ইন্টারভিউ যখন শেষ করলাম, হেডিংলি মাঠ তখন প্রায় জনশূন্য। 'প্রায়' শব্দটা রাখতে হচ্ছে, কারণ তখনাে দুজনকে দেখা যাচ্ছে মাঠের এক কোণে। ফিল্ডিং প্র্যাকটিস যে কতাে বৈচিত্র্যময় হতে পারে, সেটিই দেখলাম কাছে গিয়ে। ডান-বাঁয়ে দৌড়ে, ডাইভ দিয়ে, শূন্যে লাফিয়ে বল ধরার মতাে প্রচলিত ব্যাপারগুলাে তাে ছিলই, এর বাইরেও ছিল তাঁদের নিজস্ব কিছু উদ্ভাবন। যেমন বল-টল ছাড়াই দুই পাশে ডাইভিং প্র্যাকটিস। ব্যাকহ্যান্ডে চকিত ছুঁড়ে দেওয়া বল ধরাও চলল অনেকক্ষণ। মাঠে তাদের প্রায় অলৌকিক যেসব কাণ্ড দেখে দর্শকরা অভিভূত হন, তাঁর পেছনে কী কঠোর পরিশ্রম, কাছ থেকে তা দেখে আমি তখন একটু বিহ্বল। জন্টি রােডস ও হার্শেল গিবসের মুখের হাসি দেখে কিন্তু মনে হলাে, পরিশ্রমটাকে পরিশ্রম মনে হচ্ছে না তাঁদের, বরং তা দারুণ এনজয় করছেন।
সেই গিবস পরদিন বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত ক্যাচটি ফেললেন। স্টিভ ওয়াহর ক্যাচটি হাতে জমিয়েও বাতাসে ছুঁড়ে ফেলতে গিয়ে ফেলে দিলেন মাটিতে, এরপরই অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের সেই বিখ্যাত বাণী, 'বাছা! বিশ্বকাপটাই তাে হাত থেকে ফেলে দিলে তুমি!' স্টিভ ওয়াহ অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে জেতালেন, তারপরও ম্যাচশেষে দক্ষিণ আফ্রিকান সাংবাদিকদের গিবসকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় না করানাের পরিবর্তে একটা সহানুভূতিই আচ্ছন্ন করে রাখতে দেখলাম। 'ক্রিকেটে কত আশ্চর্য ঘটনাই ঘটে! নইলে এভাবে কেউ ক্যাচ ফেলে!' এতদিন গিবসের ঘটনাটির ব্যাখ্যা ছিল এটিই। কিন্তু ক্রনিয়ে-কেলেঙ্কারির সঙ্গে হার্শেল গিবসের নাম জড়িয়ে যাওয়ার পর থেকে যতই ওই ক্যাচ ফেলার কথা ভাবি, ততই অন্য একটা সন্দেহ মনে খচখচ করতে থাকে!
বেটিং আর ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারির করা সবচেয়ে বড় ক্ষতি ওই সন্দেহটাই! শচীন টেন্ডুলকার কখনাে ফুল টসে আউট হবেন, ওয়াসিম আকরাম হাফ ভলি দেবেন, জন্টি রােডস ফেলে দেবেন হাতে পাওয়া ক্যাচ—খেলার মজাই তাে আপাত অবিশ্বাস্য এসব ঘটনা। ৫ ওভারে ২০ রান প্রয়ােজন, হাতে ৪ উইকেট, এরপরও হেরে যেতে পারে ব্যাটিং সাইড এ কারণেই না আমরা তখনাে মাঠে বা টিভি সেটের সামনে বসে থাকি, এ কারণেই না ক্রিকেটের মহান অনিশ্চয়তা নিয়ে এমন দিস্তা দিস্তা কাগজ খরচ হলাে এত যুগ। অথচ এখন এমন কিছু ঘটলে কেউ কি সাদা চোখে দেখবে? উল্টোপাল্টা কিছু হলেই বুকিদের সঙ্গে সংশ্রব আবিষ্কার করে ফেলবে সবাই—এই অসহনীয় চাপ নিয়ে খেলােয়াড়রাই বা স্বাভাবিক খেলা খেলবে কীভাবে? 'বডিলাইনের পর সবচেয়ে বড় সংকট' বললেও হালকা করে দেখা হয়, কোনাে খেলার জন্যই এর চেয়ে বড় সংকট আর কিছু হতে পারে না। ক্রমেই বড় হয়ে উঠছে প্রশ্নটা, এই ধাক্কা সামলে ক্রিকেট কোনােদিনই কি আর আগের মতাে হতে পারবে?
গত পাঁচ বছরে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রদূত হিসেবে মার্ক টেলরের সঙ্গে অনেকেই যাঁর নাম করতেন, সেই হানসি ক্রনিয়ে প্রশ্নটাকে এত বড় করে দিয়ে হয়তাে একটা উপকারই করে গেলেন। এটি যে শুধু উপমহাদেশের সমস্যা নয়, ঘুনপােকার মতাে নীরবে খেলাটির অস্থিমজ্জা খেয়ে খেয়ে ক্রিকেটকে তা প্রায় ঝাঁঝরা করে ফেলেছে—এই ভয়ঙ্কর সত্যটার সামনে সবাইকে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে 'ক্রনিয়ে-গেট' কেলেঙ্কারি। নইলে সমস্যাটা তাে আজকের নয়। ক্রিকেট আর শুধু 'ফেয়ার প্লে'র প্রতিশব্দ নয়—ক্রিকেট সার্কিটের সবার অনেকদিন থেকেই তা জানা, অথচ ঝড়ে পড়া উট পাখির মতাে বালিতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকাটাকেই সমাধান ভেবে এসেছে আইসিসি। 'আমার দেশের দুর্নাম হবে'—এই যুক্তিতে বিভিন্ন দেশের বাের্ডের তৎপরতাও সীমাবদ্ধ থেকেছে সবকিছু ধামাচাপা দেওয়ায়। ক্রনিয়ের মতাে 'সবরকম সন্দেহের উর্ধ্বে থাকা' এক ক্রিকেটার স্বর্গ থেকে নরকে পতিত হয়ে কিছুটা হলেও জাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। এবার যদি কিছু হয়! ক্যান্সার হলে যেমন আক্রান্ত কোষগুলিকে ধ্বংস করে ফেলতে হয়, তেমনি খেলাটিকে ধ্বংস করে দিতে বসা এসব ক্যান্সারকে উপড়ে ফেলে ক্রিকেট যদি এতে আবার সামনে এগিয়ে চলার শক্তি পায়, তাহলে শুধু ঘৃণা নয়, কিছু ধন্যবাদও হানসি ক্রনিয়ের প্রাপ্য।