যুবরাজকে নিয়েও সিনেমা হোক
উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা
রিদওয়ান রায়হান
১৭ এপ্রিল ২০২১
যাঁর জীবনের বাঁকে বাঁকে উত্থান, পতন আর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প, তাঁর জীবন তো সিনেমাকেও হার মানায়। ধোনি-টেন্ডুলকার-কপিলের মতো যুবরাজ সিংয়েরও বায়োপিক তাহলে কেন হবে না?
অস্ট্রেলিয়া ইন্ডিয়া ট্যুরে এসেছিল। মুম্বাইয়ের একটা ম্যাচে যুবরাজ ঠিকঠাক পারফর্ম করতে পারেননি। মেজাজ হারিয়ে ড্রেসিংরুমে এসেই ফ্লোরে ব্যাট দিয়ে মারলেন এক ঘা। ব্যাট ভেঙে কয়েক টুকরো, সাথে মন ভেঙেছিল শচীনেরও। যাঁকে সবসময় আইডল মেনে এসেছেন যুবরাজ। শচীন এগিয়ে এসে বলেছিলেন, ‘ক্রিকেট তোমাকে অর্থ, সম্মান সব দিয়েছে, দিচ্ছে, তুমি ক্রিকেট ব্যাটের সাথে এরকম করতে পারো না!’ যুবরাজ আর এমন করেনওনি কখনো।
যুবরাজের প্রিয় প্রতিপক্ষ অবশ্য ক্যাঙ্গারুরাই। ৮০ বলে ৮৪ রানের ইনিংসে এদের সাথেই শুরুটা হয়েছিল সেই ২০০০ সালে। কেনিয়ায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। ২০১১ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাউন্ডারি মেরে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর যে বুনো উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন, ফাইনাল জিতেও মনে হয় তাঁর অতটা উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি।
বাবা যোগরাজ সিং মেজাজের জন্য বেশ বিখ্যাত। যুবরাজে সেই ছোঁয়া বা ছায়া কিছুটা হলেও ছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্রডকে ছয় বলে ছয় মারার পেছনেও আসলে মেজাজটাই কাজ করেছিল। বাবা যোগরাজ মেজাজ না দেখালে অবশ্য স্কেটার হয়েই থেকে যেতে পারতেন যুবরাজ। ১৪ বছর বয়সে স্কেটিংয়ে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপও জিতেছিলেন। বাবা যোগরাজের অবশ্য প্রবল আপত্তি, 'হলে বাপু ক্রিকেটারই হতে হবে'। যোগরাজ নিজেও ছিলেন ক্রিকেটার। কপিল দেবের সঙ্গেই বেড়ে ওঠা। কিন্তু একটি টেস্ট আর ৬টি ওয়ানডেতেই থেমে গেছে তাঁর ক্যারিয়ার।
বাবার চাপে যুবরাজ নিজের সাধের স্কেটিং তো ছাড়লেনই, ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল তাঁর বাবা-মায়েরও। কন্টকাকীর্ণ পথ মাড়িয়ে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম ‘পোস্টার বয়’ হয়ে উঠেছিলেন ২০১১ বিশ্বকাপের 'প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট'।
স্কেটিং থেকে ক্রিকেটে আসা, পেসার থেকে স্পিনার হওয়া, ক্যান্সারকে হারিয়ে মাঠে ফেরা– সব মিলিয়ে বেশ বৈচিত্র্যময় ক্রিকেট ক্যারিয়ার। চার শতাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা ১১ সহস্রাধিক আন্তর্জাতিক রানে যুবরাজকে মাপতে যাওয়া বোকামি। যুবরাজ এর চেয়ে বেশি কিছু। ক্রিকেটপ্রেমীরা যুবরাজকে সেই ছয় বলে ছয় ছক্কা, ন্যাটওয়েস্টে ৩২৫ রান তাড়া করতে গিয়ে ফিল্ডিংমেট কাইফের সাথে অনন্য জুটি বা ১২ বলে করা অর্ধশতকেই মনে রেখেছেন। অথবা মনে রেখেছেন মোহাম্মদ কাইফের সাথে মিলে দুর্ধর্ষ ফিল্ডিং প্রদর্শনীর কারণে।
শুরুতে শচীনের প্রভাব কতটা ছিল, তার একটা ধারণা পাওয়া গিয়েছে। ক্যান্সার-পরবর্তী কঠিন সময় পেরিয়ে যুবরাজকে মাঠে ফিরিয়ে আনতেও শচীন ছিলেন সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকায়। আর শচীনের প্রতি যুবরাজের ভালোবাসা কেমন, সেটা ২০১১ বিশ্বকাপের পরই বোঝা গিয়েছিলো। সংবাদ সম্মেলনে অকপট বলেছিলেন, ‘আমরা শচীন পাজির জন্যই বিশ্বকাপটা জিততে চেয়েছি’। অবশ্য সেবার পুরো টিম ইন্ডিয়ার মুখেই এই কথাটা ছিল।
শচীনই তাঁকে বলেছিলেন, 'ক্রিকেট আমরা ভালোবেসেই খেলি! এর বাইরে টাকা-পয়সা যা কিছু আছে, সব গৌণ, বোনাস। মূল কিন্তু ভালোবাসাটুকুই। ভালোবাসায় ছেদ পড়ার আগেই যতি টানা জরুরি।' ২০১৯ সালেই যতি টেনে দেন যুবি। যদিও কিছুদিন আগে এই শচীনের সাথেই রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজে যুবরাজ দেখিয়েছেন, এখনো চাইলে ছয়ের ফুলঝুরি ছোটাতে পারেন তিনি।
‘দ্য টেস্ট অব মাই লাইফ’ নামে বই বেরিয়েছে যুবরাজকে নিয়ে। যেকোনো দিন হয়ে যেতে পারে সিনেমাও। ‘এমএস ধোনি: আনটোল্ড স্টোরি’ যেমন হয়েছে বা কপিল দেবদের নিয়ে ‘এইটি থ্রি’ যেমন হচ্ছে। 'এমএস ধোনি' মুভিতেও অবশ্য যুবরাজকে হালকা পাওয়া গিয়েছে, তাঁর ৩৫৮ রানের কথাও আছে সেখানে। অভিনেতা যোগরাজের ছেলের জীবনী (যোগরাজ পাঞ্জাবি সিনেমাতে অভিনয়ও করেন) রিল লাইফে নিয়ে আসা গেলে মন্দ হয় না বিষয়টা। ২০১১ সালে ফিনিশিং শটে ফিনিশার মাহির ছয়টা তো ট্রেডমার্ক হয়ে গিয়েছে বহু আগেই। নন-স্ট্রাইকে থাকা যুবির উপরেও এবার আলো পড়ুক।
লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের!