জুটি না হওয়ার কারণটা না বলবেন মাহমুদউল্লাহ!

উৎপলশুভ্রডটকম

৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

জুটি না হওয়ার কারণটা না বলবেন মাহমুদউল্লাহ!

বাংলাদেশের আরেকটি উইকেট!

ব্যাটসম্যানরা একের পর এক আউট হয়ে ফিরলে আর জুটি হবে কিভাবে? বাংলাদেশের ইনিংসে ২৩ রানের ওপেনিং জুটিটিই তাই হয়ে রইল সর্বোচ্চ। ম্যাচশেষে মাহমুদউল্লাহ জুটি না হওয়াটাকেই পরাজয়ের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করলেন। কেন জুটি হয়নি, তা বললে আরও ভালো হতো না?

নিজেদের পাতা ফাঁদেই ধরা পড়তে হলো শেষ পর্যন্ত ?

স্লো-লো উইকেট বানিয়ে টি-টোয়েন্টি জেতার তরিকা বাংলাদেশ চালু করেছে গত অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকেই। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও এমন উইকেটে সংগ্রাম করলেও পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই জিতে গিয়েছিল বোলারদের কারণে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচেও জিতিয়েছিলেন বোলাররাই। তৃতীয় ম্যাচেও বোলাররা তাঁদের কাজটা ঠিকই করেছিলেন। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা যে এদিন নামলেন ব্যর্থতার প্রতিযোগিতায়। ১২৮ রান-ও যে কারণে নক্ষত্রের দূরত্বে থেকে গেল। ইনিংস শেষ হয়ে গেল ৭৬ রানেই। দেশের মাটিতে এর চেয়ে কম রানে কোনো টি-টোয়েন্টি ইনিংস শেষ করেনি বাংলাদেশ৷ দেশের বাইরেও এর চেয়ে কম রানে অলআউট হয়েছে মাত্র একবার। সেটাও এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই, কলকাতায় ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে ৭০ রানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের ইনিংস।

যে স্পিন-জালে বাংলাদেশ জড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে, আজ সে জালে ধরা পড়তে হলো তাদেরই। ১০ উইকেটের ৮টিই তো 'নিয়েছেন' তিন কিউই স্পিনার মিলে। আসলেই নিয়েছেন? তা তো নিয়েছেনই, তবে ব্যাটসম্যানদের এমন অকুণ্ঠ সমর্থন না পেলে না নিয়ে উপায় কি! লিটন-সাকিব-নাঈম-আফিফদের আউটগুলো মনে করে দেখুন। স্কোরবোর্ডে  উইকেটগুলো কিউই স্পিনারদের নামেই লেখা থাকবে, তাতে তো আর ব্যাটসম্যানদের আত্মহত্যার কথা লেখা থাকে না! টম ব্লান্ডল ইম্প্রোভাইজেশনও করেছেন ব্যাটিংয়ে। ছবি: এএফপিব্যাটসম্যানদের এই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার অবধারিত প্রতিক্রিয়া, বাংলাদেশের ইনিংসে বলার মতো কোনো পার্টনারশিপই না হওয়া। ব্যাটসম্যানদের কাঠগড়ায় না তুলে ম্যাচ শেষের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ হারের কারণ হিসেবে দাঁড় করালেন যেটিকে, 'বোলাররা যথারীতি ভালো করেছে। আমাদের (ব্যাটিংয়ের) শুরুটাও ভালো ছিল। কিন্তু সেই ভিত্তিটা আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। টানা কিছু উইকেট হারিয়েছি। পার্টনারশিপের অভাবই ভুগিয়েছে আমাদের, এখানটায় কাজ করতে হবে।'

ওপেনিং জুটির পর বলার মতো কোনো পার্টনারশিপ যে হয়নি, তা তো স্কোরকার্ড দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মাহমুদউল্লাহ তাই পার্টনারশিপ না হওয়ার কারণটা বললে ভালো করতেন। ব্যাটসম্যানদের অমন ব্যাটিং করা নিয়েই তো আসলে যত কৌতূহল।

মাহমুদউল্লাহর দল যেটা পারেনি, নিউজিল্যান্ডের হয়ে সেটাই করেছেন টম ব্লান্ডল ও হেনরি নিকোলস। ৬২ রানে ৫ উইকেট হারানো দলটা যে ১২৮ অব্দি গেল, সেটা তো  দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৬৬ রানের জুটিতেই। কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথামও তাই কৃতিত্ব দিলেন দুজনকেই, 'আমরা শুরুতে কিছু উইকেট হারিয়েছিলাম, কিন্তু ব্লান্ডল-নিকোলস দুর্দান্ত জুটি গড়ে স্কোরটাকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে গেছে।'

তাদের জুটির কিছুটা কৃতিত্ব তো কিউই ম্যানেজমেন্টকেও দিতে হবে। শেষের ওভারগুলোতে ডানহাতি-বাঁহাতি জুটি কার্যকর হতে পারে ভেবে নিকোলস আর ল্যাথাম ব্যাটিং অর্ডারে নিচে নেমে গিয়েছিলেন। ভাবনাটা কাজে এসেছে বলে কিউই অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তা জানিয়ে গিয়েছেন নিজেই।

তারপরও ১২৮ রান কোনো রান নাকি! স্বাভাবিক ক্রিকেট খেললেই তো তা টপকে যাওয়া যায়। কিন্তু স্বাভাবিক ক্রিকেটই যে খেললেন না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন কিউই স্পিনাররা। এর চেয়ে কম রান পুঁজি করেও কিউইরা জিতেছে দুই ম্যাচে, কিন্তু অনভিজ্ঞ একটা বোলিং লাইন-আপ নিয়ে ১২৮ রান ডিফেন্ড করাটা নিশ্চয়ই নিউজিল্যান্ডের জন্য বাড়তি আনন্দ হয়ে এসেছে। ল্যাথামও মুগ্ধ চাপের মধ্যে তাঁর দলের স্পিনারদের বোলিংয়ে, 'ওরা যেভাবে চাপ প্রয়োগ করে উইকেট নিয়েছে, সেটা অনবদ্য।'ম্যাচ-সেরা এজাজ প্যাটেল। ছবি: এএফপিসিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ শেষে কিউই অধিনায়ক জানিয়েছিলেন, কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। তাদের জন্য পরামর্শের ঝুলি খুলে বসেছেন বাংলাদেশের সাবেক স্পিন বোলিং কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টোরিও। ম্যাচ-সেরা এজাজ প্যাটেল জানিয়ে গেলেন, ফোনে ভেট্টোরিও তাদের ধারণা দিয়েছেন, এই কন্ডিশনটা কিভাবে কাজে লাগানো যায়।

কন্ডিশন কাজে লাগানোর কৌশল বাংলাদেশেরই অবশ্য জানা আছে ভালো। প্রথম দুই ম্যাচ জেতা গিয়েছিল বলে সিরিজেও এখনো এগিয়ে আছে বাংলাদেশই। বাকি দুই ম্যাচের যেকোনো একটি জিতলেই নিশ্চিত হবে সিরিজ। শেষ ম্যাচের ভরসায় না থেকে মাহমুদউল্লাহ তা নিশ্চিত করতে চাইছেন পরের ম্যাচেই, 'এখনো দুই ম্যাচ বাকি আছে। আশা করছি, পরের ম্যাচ জিতেই সিরিজ নিশ্চিত করতে পারব আমরা।'

তা করতে হলে এই ম্যাচের ভুলগুলো শুধরেই মাঠে নামতে হবে। সেটা বাংলাদেশ পেরেছে কি না, উত্তর জানতে অবশ্য ৮ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×