২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

`ছোট` দলের `বড়` তারকা

উৎপলশুভ্রডটকম

১২ অক্টোবর ২০২১

`ছোট` দলের `বড়` তারকা

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিরাট কোহলি, বাবর আজমরা খেলবেন ঠিকই; তবে বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনি কিংবা নামিবিয়ারও অংশ আছে। আর আছে বলেই উৎপলশুভ্রডটকম খুঁজে বের করেছে নামে-ভারে ছোট দলের `বড়` পাঁচ ক্রিকেটারকে।

এমনিতে সারা বছর পেছনের বেঞ্চে পড়ে থাকাটাই তাদের নিয়তি। আজ ভারত খেলছে তো কাল ইংল্যান্ড, ওদিকে আবার ফ্র‍্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগগুলোও দম ফেলার ফুরসত দিচ্ছে না দর্শকদের...এত খেলার ভিড়ে আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর খবর রাখার সময় কোথায়!

তবে বছরের ওই সময়টা এসে হাজির আবারও, যখন তাদের খবর রাখতেই হচ্ছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিরাট কোহলি, বাবর আজমরা খেলবেন ঠিকই; তবে বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনি কিংবা নামিবিয়ারও অংশ আছে।

আর অংশ আছে বলেই উৎপলশুভ্রডটকম খুঁজে বের করেছে নামে-ভারে ছোট দলের 'বড়' পাঁচ ক্রিকেটারকে। ওই পাঁচ ক্রিকেটার, যাঁদের ওপর নজর রাখলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা আপনার রোমাঞ্চকরই লাগার কথা।

নরম্যান ভানুয়া
পাপুয়া নিউ গিনি

ক্রিকেটার না হলে আকাশে উড়েই বেড়াতেন হয়তো। ক্রিকেটার হতে না পারলে যে পাইলটই হতে চেয়েছিলেন পাপুয়া নিউ গিনির এই ক্রিকেটার। তবে প্রথম স্বপ্নটা পূরণ করে এখন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। দল হিসেবে বারামুন্দিসদের সফলতার পাল্লাটা কম ভারি হলেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই নরম্যান ভানুয়াকে। তাঁর ব্যাট ও বলের পরিসংখ্যান দেখলেই যা দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ২৫টি। ব্যাটিং স্ট্রাইক রেটটা রীতিমতো বিধ্বংসী, ১৫২.১। ৩৩৩.৯১ স্ট্রাইক রেটে ১২ বলে ৪৭ রানের ইনিংসের পরিসংখ্যান দেখলে অস্বস্তি বোধ করবেনই প্রতিপক্ষ বোলাররা। ২৫ ম্যাচে শিকার ৩৫ উইকেট, বোলিংয়ে অবশ্য ইকোনমি রেটটাই দৃষ্টি কাড়ে, মাত্র ৬.১৮। আছে এক ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্বও, বারমুডার বিপক্ষে ওই ম্যাচে আবার হ্যাটট্রিকও করেছেন।

ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান তোলার ক্ষমতা আর বোলিংয়ে ডট বল আদায়ের দক্ষতাই তো ভালো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার মাপার আদর্শ মানদণ্ড। ওই বিচারে নরম্যান ভানুয়াকে 'কমপ্লিট প্যাকেজ' হিসেবেই দেখতে হচ্ছে। পিএনজির প্রথম বিশ্বকাপ যাত্রার সফলতা অনেকখানি নির্ভর করবে তাঁর অলরাউন্ড নৈপুণ্যের উপর।

বিলাল খান
ওমান

জন্মসূত্রে পাকিস্তানি হলেও ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সূচনা হয়েছে ওমানেই। টি-টোয়েন্টিকে অভিজ্ঞতার খেলার চেয়েও তারুণ্য ও পেশিশক্তির খেলা হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয় বেশি। বিলাল খানের বয়স ৩৩ হলেও মনের দিক থেকে বোধ হয় ওই বছর সতেরোর যুবাই আছেন। বল হাতে বাইশ গজে তাঁর ছুটে আসার ভঙি দেখলে তো তেমনটাই মনে হয়!

বাঁহাতি এই বোলারের বলের উপর নিয়ন্ত্রণ দেখলে তাঁকে একদম জাত সিমার বলতে বাধ্য হবেন আপনি। ইয়র্কার ও স্লোয়ারে রাখেন বিশেষ ক্ষমতা। আর বাঁহাতি বোলাররা সাধারণত ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের জন্য বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। ওমান নিজেদের সবগুলো ম্যাচ খেলবে ঘরের মাঠে। তাই পরিচিত পরিবেশে জ্বলে উঠার সুযোগ বিলাল খানের সামনে।

সুযোগ খুঁজছেন তো ওমানের আরেক ক্রিকেটার খাইবার আলীও। এমনিতেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন লেগ স্পিনাররা। লেগ স্পিনার খাইবারের জন্যেও তাই বিরাট সুযোগ ঘরের মাঠকে কাজে লাগিয়ে চমক দেখানোর। লেগ স্পিনের পাশাপাশি ব্যাটটাও চালাতে জানেন দারুণ। ওমানের গ্রুপেই বাংলাদেশ। খাইবার আলীকে সামলানো তাই বিরাট এক চ্যালেঞ্জই হতে যাচ্ছে।

জর্জ মানসি
স্কটল্যান্ড

স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলস…ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে আনাগোনা দেখা যায় তিন দেশের ক্রিকেটারদেরই। নিজেদের আরও পরিশীলিত করার সূচনাও ঘটে সেখানেই। জর্জ মানসির কথাই ধরুন। স্কটিশ ক্রিকেটার হলেও কখনো লেস্টারশায়ার, কখনো বা হ্যাম্পশায়ারের হয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন কাউন্টি ক্রিকেটে। তাঁর সামর্থ্যের কথা গোটা বিশ্বও জেনেছে সেখান থেকেই। গ্লস্টারশায়ারের দ্বিতীয় দলের হয়ে ২৫ বলে শতরানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস আছে নামের পাশে, পরের ৫০ করতে খেলতে হয়েছিল মাত্র ৮ বল!

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও প্রমাণ রেখেছেন নিজের বিগ হিটিং সামর্থ্যের। ক্যারিয়ার স্ট্রাইকরেট ১৫৫.০১। স্কটল্যান্ডের জার্সিতেও আছে টি-টোয়েন্টি শতক।

এমনিতে এশিয়ার মাটিতে এশিয়ার বাইরের দলগুলোর ক্রিকেটারদের মনে বাড়তি দুশ্চিন্তা ভর করে স্পিন সামলানো নিয়ে। এক্ষেত্রে জর্জ মানসিকে উল্টো দলেই রাখতে হবে। ঘরের মাঠে নিয়মিত সিমিং উইকেটে খেলায় পেসারদের বিপক্ষে তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিংটা যদি অনুমিত হয়, তো বিস্ময় জাগাবে স্পিনের বিপক্ষে তাঁর সাবলীলতা। কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগে সুনিল নারাইনকেও সীমানা ছাড়া করেছিলেন অনায়াসে। স্লগ সুইপে তাঁর পারদর্শিতার কথা জানা থাকা উচিত আপনারও। স্কটিশদের বিশ্বকাপ যাত্রায় তাই তুরুপের তাস হবেন এই ক্রিকেটার। এর বাইরে ভুলে গেলে চলবে না অভিজ্ঞ অধিনায়ক কাইল কোয়েটজারের কথা। দুজনের ব্যাট একই দিনে জেগে উঠলে, মুহূর্তেই বেদনার বর্ষা নেমে আসবে প্রতিপক্ষের সাজঘরে।

গেরহার্ড ইরাসমাস
নামিবিয়া

'দ্য সাইলেন্ট অ্যাসাসিন' কথাটা এই নামিবিয়ানের নামের পাশে খেটে যায় খুব ভালোভাবে। নইলে ওই সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখটা দেখে কে বলবে, এই মানুষটাই কী প্রলয় লুকিয়ে রেখেছেন তাঁর ব্যাটে! বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে তাঁর ৪৬ বলে ৭২ রানের বিধ্বংসী ইনিংসটি দেখে থাকলে যা বিশ্বাস করবেন আপনিও। শুধু ওই ইনিংসেই নয়, কোয়ালিফায়ারে ৯ ম্যাচে ২৬৮ রান করে ২০০৩ সালের পর নামিবিয়াকে আবারও বিশ্বকাপে তোলায় বড় ভূমিকা রেখেছেন দলটার অধিনায়ক ইরাসমাসই।

সিমারদের শাসন করতে ভালোবাসেন। ফিল্ডার হিসেবেও দুর্দান্ত; গ্রাউন্ড ফিল্ডিং ও হাই ক্যাচে নজর সরে না এক বিন্দুও। অন সাইডে একটু বেশিই ভালো খেলেন, মানেটা এই নয় যে অফ সাইডে অদক্ষ! দ্রুত রান বের করার নেশায় স্পিন কিংবা সিমার, যে কারো বিপক্ষেই নির্দ্বিধায় রিভার্স সুইপ খেলতে পারেন। ২০ ম্যাচের ক্যারিয়ারের ১৮ ইনিংস মাঠে নেমেছেন ব্যাট হাতে। আর তাতেই ৩৯ গড়ে ৫ অর্ধশতক নামের পাশে। ১৪১ স্ট্রাইকরেটটাও প্রমাণ করে তাঁর বিশেষত্ব।

দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ডেভিড ভিসেকে দলে ভিড়িয়ে বিশ্বকাপ ঘিরে বড় স্বপ্নই দেখছে নামিবিয়া। আর ওই স্বপ্ন পূরণের পথে গেরহার্ড ইরাসমাসই সবচেয়ে বড় ভরসা।

রোয়েলফ ভ্যান ডার মারউই
নেদারল্যান্ডস

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র। ডাচ ক্রিকেটার ভ্যান ডার মারউইর সাথে এই কবিতা মিলে যায় পুরোপুরি। তাবৎ বিশ্বের ফ্র‍্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর নিলামে এই ডাচ ক্রিকেটারের নাম থাকবেই। ডাচ বললেও আদতে তিনি কিন্তু একজন দক্ষিণ আফ্রিকান। খেলেছেন প্রোটিয়াদের মূল দলেও। ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অভিষেকের পর খেলেছেন ২০১১ পর্যন্ত। আর হল্যান্ডের হয়ে অভিষেক ২০১৫ সালে। নামের পাশে ৪২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ থাকলেও ডাচদের হয়ে ছয় বছরে মাঠে নেমেছেন ৩০ ম্যাচে। শেষ ১২ ম্যাচে দারুণ ইকোনমিক্যাল বোলিংয়ের পরিসংখ্যান নিয়েই যাচ্ছেন বিশ্বকাপে।

একজন আদর্শ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারের তালিকায় মারউইর স্থান পাওয়াই উচিত। এই ফরম্যাট ঘিরেই তো ধ্যান-জ্ঞান তাঁর। ব্যাট হাতেও বেশ ঝোড়ো সমাপ্তি এনে দিতে পারেন দলকে। আর বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগে খেলে বেড়ানোর অভিজ্ঞতাও তো তাঁকে আলাদা করে দিচ্ছে বেশ, হল্যান্ডের মূল পর্বে খেলার স্বপ্ন পূরণের জন্য তাঁকে তাই বাড়তি দায়িত্ব নিতেই হবে।

দায়িত্বটা কতটুকু ঠিকঠাক পালন করতে পারেন, সেটার এখন দেখার।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×