অস্ট্রেলিয়ার `পেইনে` ইংল্যান্ডের আনন্দ

উৎপলশুভ্রডটকম

২০ নভেম্বর ২০২১

অস্ট্রেলিয়ার `পেইনে` ইংল্যান্ডের আনন্দ

ইংল্যান্ডের সংবাদপত্রে পেইন

চার বছর আগের কেলেঙ্কারি। এতদিন পর পদত্যাগ। চাপে পড়ে। কিন্তু টিম পেইন এই যে অ্যাশেজের ঠিক আগে টেস্ট নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন, তাতে কাদের হাসি চওড়া হয়েছে বা হচ্ছে? অনুমান করাটা এমন কঠিন কিছু নয়।

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ইংল্যান্ডের শত্রুতা কি সেদিনকার নাকি! ইতিহাসের প্রথম টেস্টটি খেলেছে দুই দল। যার মানে এই শত্রুতাও ক্রিকেটের প্রায় সমান বয়সী। এই বৈরিতারই প্রতীক হয়ে আছে অ্যাশেজ। এবার অবশ্য অ্যাশেজ শুরুর আগে সপ্তাহ দুয়েক আগে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট আবার বিরাট সঙ্কটে। হঠাৎই চার বছর আগে টিম পেইনের এক যৌন টেক্সট মেসেজ কেলেঙ্কারি আলোয়া আসার পর টিম পেইনের নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়া বড়ই আনন্দের কারণ হয়েছে ইংল্যান্ডে। ‘স্যান্ড পেপার কেলেঙ্কারি’ থেকে অস্ট্রেলিয়ার নৈতিকতার আরও কত পতন হয়েছে আর কতটা বাকি, তা নিয়েই এখন চর্চা চলছে ইংলিশ সংবাদমাধ্যমে। যেটিতে নেতৃত্বে যথারীতি ট্যাবলয়েডগুলো।

ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ায় গতকাল কী হয়েছে, তা আবার মনে করিয়ে দেওয়া যাক। প্রায় চার বছর আগে তাসমানিয়ার এক মহিলা সহকর্মীকে অশ্লীল ছবি ও বার্তা পাঠিয়েছিলেন টিম পেইন। ঘটনার কিছুদিন পরই তা নজরে এসেছিল ক্রিকেট তাসমানিয়ার। তবে ক্রিকেট তাসমানিয়া ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার তদন্তে পার পেয়ে গিয়েছিলেন পেইন। ঘটনা ওখানেই শেষে হতে পারত। এবার অস্ট্রেলিয়ার একটি সংবাদপত্র গোপন করে রাখা সেই ঘটনা তুলে আনায় অধিনায়কত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন পেইন। সেটি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে।

এবার আসুন বার্মি আর্মির কথায়। ইংল্যান্ড দল যেখানেই খেলুক, মাঠে হাজির থাকে এই বার্মি আর্মি। নিজেদের দলকে সমর্থন দেওযার পাশাপাশি অবশ্য করণীয় তালিকায় থাকে অস্ট্রেলিয়া দলকে উত্যক্ত করা। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক গান বাঁধা থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছুই করে তারা।

খুব স্বাভাবিকভাবেই বার্মি আর্মির জন্য পেইনের এই পদত্যাগের দিনটা ছিল বিশাল উৎসবের। তা সাড়ম্বরে উদযাপনও করেছে তারা। ২ লাখ ৩৬ হাজার অনুসারীর বার্মি আর্মির টুইটারে লেখা হয়েছে, বল ট্যাম্পারিং’-এর অভিযোগে টিম পেইনের পদত্যাগ। সঙ্গে পোস্ট করা হয়েছে একটা কোলাজ ছবিও। যেখানে সংবাদ সম্মেলনে টিম পেইনের ছবি তো আছেই, সঙ্গে 'স্যান্ড পেপার' কেলেঙ্কারির পর দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথের কান্নার ছবিও। মাথায় হাত হতবিহ্বল এক অস্ট্রেলীয় সমর্থকেরও ছবি আছে এর সঙ্গে। ক্যাপশনটা অস্ট্রেলিয়ানদের গায়ে বিছুটি লাগিয়ে দেওয়ার মতো: পার্থক্য খুঁজে বের করুন তো। ইঙ্গিতটা স্মিথ-ওয়ার্নার-পেইন তিনজনেরই কান্নার দিকেই। 

টিম পেইন: কেলেঙ্কারি মাথায় নিয়ে বিদায়

ইংল্যান্ডের মিডিয়াও নেমে পড়েছে কাজে। স্কাই স্পোর্টসের শিরোনাম, ‘ক্যারিয়ার ইন অ্যাশেজ’। অর্থ তো একটাই, টিম পেইনের ক্যারিয়ার এখন পুড়ে ছাই। 

টেলিগ্রাফের প্রধান ক্রিকেট লেখক শিল্ড বেরি লিখেছেন, ইংল্যান্ড হয়তো 'মনে মনে খুশি হতে পারে।’ পেইনের বিদায়কে তিনি বলছেন অস্ট্রেলিয়ার জন্য 'ভয়ঙ্কর এবং এলোমেলো করে দেওয়া মুহূর্ত'। ডেইলি মেইলের ক্রিকেট প্রতিনিধি পল নিউম্যান সমস্যাটা দেখছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াতেই। সংস্কৃতিগত সমস্যা।

টিম পেইনের পরিবর্তে কে অধিনায়ক হবেন, এ নিয়ে জল্পনা কল্পনাও হচ্ছে। ইভনিং স্ট্যান্ডার্ডের উইল ম্যাকফারসন লিখেছেন, স্যান্ড পেপার কেলেঙ্কারির কারণে স্টিভ স্মিথের দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে গেছে। তাঁর অধিনায়ক হওয়ায় তাই কোনো বাধা নেই, তবে 'দুর্বল নেতৃত্বের কারণে সিএ হয়তো তাঁকে ফেরাতে চাইবে না।’

ডেইলি মেইল ইউকে তাদের ওয়েবসাইটে খবরটার শিরোনাম করেছে, ‘পেইন কট আউট’। পেইনের স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর একটা ছবি দিয়ে টেক্সট মেসেজের সম্পাদিত রূপও প্রকাশ করেছে। আরেক ট্যাবলয়েড ডেইলি মিরর অবশ্য সম্পাদনার ধার ধারেননি। প্রথম পৃষ্ঠায় ঘোষণা দিয়ে পেইনের সেই টেক্সট মেসেজের পুরোটাই প্রকাশ করে দিয়েছে।

টিম পেইনের এই কেলেঙ্কারি বিশ্ব ক্রিকেট জুড়েই খবর হয়েছে। এমনকি যে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট সাধারণত খবরে আসে না, সেখানেও দেখা যাচ্ছে এটা বড় খবর। সিএনএন'র অনলাইনে পেইনের খবরই শুধু প্রকাশিত হয়নি, এ নিয়ে টক শোও করেছে তারা। ইন্টারেস্টিং হলো, সেই টক শোতে বক্তা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে এক ইংলিশ ক্রিকেট লেখককে। সেটাই তো স্বাভাবিক। অস্ট্রেলিয়ার দুর্দশা নিয়ে কথা বলার জন্য ইংল্যান্ডের কাউকেই তো লাগে, তাই না? 

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×