এই বিশ্বকাপেই শেষ দেখছেন অরবিন্দ ডি সিলভাকে

উৎপল শুভ্র

১৩ মে ২০২১

এই বিশ্বকাপেই শেষ দেখছেন অরবিন্দ ডি সিলভাকে

লিখেছিলাম ২০০৩ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আগে। নির্বাচক, কোচ, অধিনায়ক সবার অনুরোধে যে বিশ্বকাপ খেলতে এসে সাত বছর আগের সেই ১৯৯৬ বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর স্বপ্ন দেখছেন অরবিন্দ ডি সিলভা। সেই স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়নি। ১৯৯৬ বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়াই সেমিফাইনাল থেকে বিদায় করে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। তাতে তো আর অরবিন্দ ডি সিলভার ফিরে আসার রোমাঞ্চকর গল্পটা মিথ্যা হয়ে যায় না।

প্রথম প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০০৩। প্রথম আলো।

দেশের বাইরে টেস্ট সিরিজ জেতার আগে বিয়ে করবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। প্রতিজ্ঞা রেখেছেন।

১৯৯৬ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা যখন শুধুই জয়াসুরিয়ার দল হয়ে গেছে, শেষ দুই ম্যাচের আগে বলেছিলেন, সেমিফাইনাল ও ফাইনালে কিছু করতে চান। করেছেন।

এবার অরবিন্দ ডি সিলভার তৃতীয় ও শেষ প্রতিজ্ঞা। সেটি রাখতে পারলে এই বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দলের নাম হবে শ্রীলঙ্কা। 

১৯৯৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে। ছবি: গেটি ইমেজেস

’৯৬ বিশ্বকাপকে তাঁর ১৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের উজ্জ্বলতম মুহূর্ত বলে মানেন। এর বাইরেও যা পেয়েছেন, তাতে তিনি পুরোপুরি তৃপ্ত। এখন শুধু একটাই স্বপ্ন। ২০০৩ বিশ্বকাপ জিতে রাজার মতো বিদায় নিতে চান অরবিন্দ ডি সিলভা। 

একই স্বপ্ন নিয়ে এই বিশ্বকাপে খেলতে নেমেছিলেন জন্টি রোডস, অ্যালান ডোনাল্ড আর ওয়াসিম আকরাম। ‘আসল বিশ্বকাপ’ শুরু হওয়ার আগেই বিদায় নিয়েছেন তাঁরা সবাই।

অরবিন্দ ডি সিলভা আছেন। যেন-তেনভাবে নয়, দক্ষিণ আফ্রিকা আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগের দুটি ম্যাচে ৭৮ বলে ৭৩ আর ৯৪ বলে ৯২ প্রমাণ করেছে, এই ৩৭ বছর বয়সেও বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যেই রাখতে হবে তাঁকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি নিয়ে আক্ষেপ আছে, টপ অর্ডারের আর একজন ব্যাটসম্যান দাঁড়াতে পারলেও ম্যাচটার শেষ ১০ ওভার শুধু ব্যবধান কমানোর জন্যই খেলতে হতো না বলে বিশ্বাস তাঁর। সেই আক্ষেপ ভুলে সামনের দিকে তাকাতে চান অরবিন্দ ডি সিলভা। ভারতের বিপক্ষে খেলাটা সব সময়ই উপভোগ করেন, ‘সনাৎকে খেলতেই হবে’ বললেও ঠিকই জানেন, ব্যাপারটা নিশ্চিত নয়। ‘মাতারা হারিকেন’ না থাকলে কাঁধে বাড়তি দায়িত্ব থাকবে, তবে সেটি তাঁর অভ্যাস হয়ে গেছে।

তাঁর উপস্থিতিই দলকে বাড়তি কিছু দেয় বলে কোচ হোয়াটমোরের বিশ্বাসের বড় একটা ভূমিকা ছিল অরবিন্দ ডি সিলভার ২০০৩ বিশ্বকাপ খেলায়। ছবি: গেটি ইমেজেস

শুধু ভারতের বিপক্ষে খেলাই নয়, এই বিশ্বকাপে খেলাটাই খুব উপভোগ করছেন। জীবনের শেষ টুর্নামেন্ট, তাতে খেলতে নেমে মিল খুঁজে পাচ্ছেন সেই শুরুর দিনগুলোর সঙ্গে। কোনো চাপ নয়, ব্যর্থতার ভয় নয়, শুধুই মনের আনন্দে খেলা। ‘চাপ নেওয়ার তো কিছু নেই। ক্রিকেট আমাকে যা দিয়েছে, তাতে আমি পরিতৃপ্ত। সব দেশের সঙ্গে খেলেছি, খেলেছি বিশ্বের সেরা বোলারদের বিপক্ষে। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই’– বলেই মৃদু হেসে যোগ করলেন, ‘শুধু এই বিশ্বকাপটি জেতা ছাড়া।’

সেরা বোলারদের মধ্যে ওয়াসিম আকরাম আর স্যার রিচার্ড হ্যাডলিকে সবার ওপরে রাখতে চান। আর স্পিনারদের মধ্যে এই স্বীকৃতি শেন ওয়ার্ন আর আবদুল কাদিরের।

এটি তাঁর পঞ্চম বিশ্বকাপ, ১৯৯২-এ ছিলেন অধিনায়ক। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে নাম লেখা হয়ে গেছে অনেক আগেই। এ সব অর্জনের পাশে ছোট্ট একটু আক্ষেপ– নির্বাচকদের খামখেয়ালিতে হারিয়ে যাওয়া তিনটি বছর। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার শোচনীয় ব্যর্থতার পরই তারুণ্যের ধুয়ো তুলে আরও কয়েকজনের সঙ্গে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। প্রথমে ওয়ানডে, পরে টেস্ট দল থেকেও। ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে বলেই ধরে নিয়েছিলেন, প্র্যাকটিস-ট্যাকটিসও বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন। মিডল অর্ডারে তরুণদের কাউকে দাঁড় করাতে না পেরে আবার তাঁর কথা মনে পড়ল নির্বাচকদের। কিন্তু ততদিনে ফেরার আশা বাদ দিয়ে দেওয়া অরবিন্দ ডি সিলভা ফুলে ঢোল। ফিট হতে পারলে ইংল্যান্ড সফরে নেওয়া হবে-- নির্বাচকদের কাছ থেকে এই সবুজ সংকেত পাওয়ার পর যা করলেন, তা শ্রীলঙ্কার ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয়ের চেয়ে কম বিস্ময় নয়। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে ১৭ কেজি ওজন কমিয়ে ফিরলেন গত বছর ইংল্যান্ড সফরে।

দুই সপ্তাহের মধ্যে ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন। ছবি: গেটি ইমেজেস

এমন ভাবেই ফিরলেন যে, বিশ্বকাপ পর্যন্ত থেকে যাওয়ার জন্য রীতিমতো কাকুতি-মিনতি করতে শুরু করলেন নির্বাচকরা। অধিনায়ক সনাৎ জয়াসুরিয়া ও কোচ ডেভ হোয়াটমোরেরও এতে বড় ভূমিকা। ব্যাটিংটা তো অবশ্যই মূল কারণ, তবে হোয়াটমোর ডি সিলভা দলে থাকার অর্থকে দেখছেন এর চেয়েও বড় করে, ‘শুধু ওর ব্যাটিং নয়; ড্রেসিংরুমে, টিম বাসে, প্র্যাকটিসে ও যে বিশাল অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে, এর পুরো প্যাকেজটাই জরুরি ছিল শ্রীলঙ্কার জন্য।’

গতকাল সকালে প্র্যাকটিসের মাঝখানে যা বললেন, তাতে তাঁর ওয়াসিম আকরাম হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিশ্বকাপই শেষ, এরপর আর ক্রিকেট নয়-- এই সিদ্ধান্ত থেকে নড়ছেন না অরবিন্দ ডি সিলভা। মাঝের যে সময়টা বাইরে ছিলেন, ব্যবসা ছড়িয়ে দিয়েছেন নানা দিকে। এপ্রিল থেকে সেটাই হবে তাঁর ধ্যানজ্ঞান। সারাদিনের টাকাপয়সার হিসাব থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে রাতের বেলা ল্যাম্বোরগনি নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন রাস্তায়। দামী গাড়ি আর ফাস্ট ড্রাইভিং– ক্রিকেটের পর এটাই তো ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। ক্রিকেট ছাড়ার পর সেটিই উঠে আসবে এক নম্বরে।

আরও পড়ুন ...
লাহোর ফাইনালে অরবিন্দ ডি সিলভার অমর সেই ইনিংস
অরবিন্দ ডি সিলভার চোখে সেরা

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×