যুবরাজের মুখে ওই ছয় বলে ছয় ছক্কার বৃত্তান্ত

উৎপলশুভ্রডটকম

২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

যুবরাজের মুখে ওই ছয় বলে ছয় ছক্কার বৃত্তান্ত

যুবরাজ সিং

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এর আগে ওভারের ছয় বলে ছয় ছক্কা হয়েছে। হয়েছে ওয়ানডেতেও। টি-টোয়েন্টিতে সেবারই প্রথম। ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ডারবানে ইংল্যান্ডের ফাস্ট বোলার স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে যা মেরেছিলেন ভারতের যুবরাজ সিং। পরে পডকাস্টে এসে সেই কীর্তি নিয়ে যুবরাজ যা বলেছিলেন...

ধারাভাষ্যকক্ষে রবি শাস্ত্রী ওই ছয়টা বলের বর্ণনা খারাপ করেননি মোটেই, উল্টো তাঁর উত্তেজিত কণ্ঠ ওই সময়টুকুর আবেদন-রোমাঞ্চ বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। তবুও যুবরাজ সিংয়ের কাছ থেকে ওই ছয়টা বলের গল্প শোনাটা তো অন্যরকম এক অভিজ্ঞতাই হওয়ার কথা। ডারবানে কিংসমিড স্টেডিয়ামে এক ওভারে ছয় ছক্কার কীর্তিটা তো তিনিই গড়েছিলেন!

'টোয়েন্টি-টু ইয়ার্নস'-এর পডকাস্টে এসে যুবরাজ সিং কথা বলেছিলেন ওই ছয় ছক্কার স্মৃতি নিয়ে। এর আগেও টুকটাক কথা বলেছিলেন এখানে-ওখানে। ফ্লিনটফের সঙ্গে ঝামেলার সূত্রপাত, ব্রডের বোলিংয়ের বিপক্ষে ভাবনা, ক্রিস ব্রড ম্যাচ শেষে কেন এসেছিলেন তাঁর কাছে...সব কিছুই জানা যাচ্ছে তাঁর বয়ানে।ছয় ছক্কার একটা

ধোনির উচ্ছ্বাস

'এমএস (ধোনি) তো খুব খুশি হয়েছিল বলেই মনে হয়। আপনি ক্যাপ্টেন, আপনার দলকে ম্যাচটা জিততেই হবে। এমন সময় অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখছেন, ছয়ের পর ছয় হচ্ছে, স্কোর বাড়ছে….আপনার তো আনন্দিত হওয়ারই কথা।'

ফ্লিনটফের সঙ্গে ঝামেলা

'মনে আছে, আমি দুটি বাউন্ডারি মেরেছিলাম ফ্লিনটফের এক ওভারে। স্বাভাবিকভাবেই ওর ভালো লাগেনি সেটা। ও আমাকে কিছু বলেছিল, আমিও পাল্টা জবাব দিয়েছিলাম। তখন ও রীতিমতো হুমকি দিচ্ছিল, "আয়, তোর ঘাড় কামড়ে দিই।" মানে বেশ সিরিয়াস গণ্ডগোলই হয়েছিল। আম্পায়ারদেরও এগিয়ে আসতে হয়েছিল তা থামাতে। আমিও এমন ফুঁসছিলাম, মনে হচ্ছিল, সব বল মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিই।'এখান থেকেই সব কিছুর শুরু

ব্রডের বিপক্ষে পরিকল্পনা

'সৌভাগ্যবশত, ব্রডের করা প্রথম বলটাই মাঠের বাইরে উড়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় বলটা গিয়ে পড়েছিল গ্যালারিতে। আমি পয়েন্ট দিয়ে ছক্কা দূরে থাক, চারই কখনো মারিনি আমি; কিন্তু সেদিন তৃতীয় ছয়টা সেখান দিয়েই মেরেছিলাম। কলিংউড তখন এগিয়ে এসে ব্রডকে বলেছিল, আমাকে যেন অফ স্টাম্পের বাইরে ইয়র্কার করতে থাকে। মাঠের অফ সাইডটাই যেহেতু বড় ছিল।'

'কিন্তু ব্রড আমার পায়ে বল করারই চিন্তা করেছিল। আমি ওর পরিকল্পনা দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম, আজ ওর খবর আছে। পঞ্চম বলটা তো ব্যাটের একদম গোড়ায় লেগেছিল, কিন্তু বাউন্ডারি ছোট ছিল দেখে ফ্লিনটফের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গিয়েছিল সেটাও। আমি জানতাম, ষষ্ঠ বলটা ইয়র্কার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই ব্রডের। আগে থেকেই তাই সোজা উড়িয়ে মারার জন্য তৈরি ছিলাম। আর একদম জায়গামতো পেয়েছিলাম।'

তারপর যা হলো...

'প্রথমেই মুচকি একটা হাসি দিয়ে তাকিয়েছিলাম ফ্লিনটফের দিকে। পরে নজর পড়েছিল দিমিত্রি মাসকারেনহাসের দিকে। মানে, ইশারায় বোঝাতে চাইছিলাম, "দেখ্ ভাই, এখন তুই-ও সমান, আমিও সমান।" তারপরই তো ধোনির সঙ্গে ওই মুষ্ঠি মেলানো। সত্যি বলতে, ছয় ছক্কা মারাটা আমার ভেতরে কোনো ভাবান্তর ঘটায়নি। ইংল্যান্ডের সামনে একটা লক্ষ্য দাঁড় করানোটাই তখন উদ্দেশ্য ছিল।'হতচকিত স্টুয়ার্ট ব্রডের সামনে যুবরাজের উদযাপন

'আমি খুব খুশি, ছক্কাগুলো ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই মেরেছিলাম। এর কয়েক সপ্তাহ আগেই দিমিত্রি মাসকারেনহাস আমার বলে পাঁচটা ছয় মেরেছিল কিনা।'

ক্রিস ব্রড কী বলেছিলেন?

'ওই ম্যাচের রেফারির দায়িত্বে ছিলেন ক্রিস ব্রড (স্টুয়ার্ট ব্রডের বাবা)। তিনি পরদিন আমাকে এসে বললেন, "ধন্যবাদ। আমার ছেলের ক্যারিয়ারটাই প্রায় শেষ করে দেওয়ার জন্য! এখন ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওকে একটা অটোগ্রাফ দিয়ে দাও।" আমি আমার জার্সিটায় একটা সই করে লিখলাম, "আমিও পাঁচটা ছয় খেয়েছি। সুতরাং, অনুভূতিটা আমার জানা। ইংল্যান্ডের ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা"।'

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×