কে পাবেন এই স্বীকৃতি?

উৎপলশুভ্রডটকম

১৫ আগস্ট ২০২১

কে পাবেন এই স্বীকৃতি?

২২২ মিলিয়ন ইউরোতে বার্সেলোনা ছেড়ে প্যারিসে পা রেখেছিলেন নেইমার, একটা ট্রান্সফার ফির হিসাবে সবচেয়ে দামি ফুটবলারও নেইমারই। তবে ক্যারিয়ারের সব ট্রান্সফার মিলিয়ে হিসাব করলে? তখনো কি নেইমারই এক নম্বরে থাকেন, নাকি তাঁকে ছাড়িয়ে যান অন্য কেউ?

শুধু একটা ট্রান্সফারের হিসাব করলে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল দলবদল তো নেইমারের বার্সেলোনা থেকে প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে যাওয়াই। সান্তোস থেকে বার্সা, বার্সা থেকে পিএসজি...নেইমারের এই্ দুটিই দলবদল। বড় ফুটবলারদের অনেকেই তো চারটি-পাঁচটি, কখনো বা এর চেয়েও বেশিবার ট্রান্সফার মার্কেটে উঠেছেন। সব যোগ করে যদি সবচেয়ে দামি ফুটবলারের হিসাবটা হয়, তাহলে? প্ল্যানেটসকার করতে চেয়েছে সেই হিসাবই। উৎপলশুভ্রডটকম-এ থাকল সেই হিসাব-নিকাশের অনূদিত রূপ:

১০. উসমান দেম্বেলে (সম্মিলিত খরচ- ১৩৭ মিলিয়ন পাউন্ড)

রেনেতে আলো ছড়িয়ে আবির্ভাব। এমন উজ্জ্বল প্রতিভাকে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড কিনে নিয়েছিল ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড খরচায়। লাভ অবশ্য তুলেছিল সাত গুণেরও বেশি, নেইমারকে হারিয়ে বার্সেলোনা যখন হন্যে হয়ে খেলোয়াড় খুঁজছে, জার্মান ক্লাবটা তাঁকে বিক্রি করে দিয়েছিল কাতালানদের কাছে। সঠিক অঙ্কটা জানা না গেলেও তা ১০০ মিলিয়নের কম নয়।

​​​​​

৯. জলাতান ইব্রাহিমোভিচ (১৫২ মিলিয়ন পাউন্ড)

তাঁর পুরো ক্যারিয়ারটাই কেটেছে ক্লাবে ক্লাবে ঘুরে। শুরুটা সুইডিশ ক্লাব মালমোতে, সেখান থেকে ৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন আয়াক্সে। হল্যান্ডে সাফল্য পেয়ে গিয়েছিলেন জুভেন্টাসে, দলবদলের অঙ্কটা বেড়েছিল প্রায় দ্বিগুণ (১৩.৫ মিলিয়ন পাউন্ড)। পরে ইন্টার মিলান তাঁকে সান সিরোতে নিয়ে গিয়েছিল ২১ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে।

তাঁর জন্যে সবচেয়ে খরচ করেছে অবশ্য বার্সেলোনা, ৬০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে কাতালুনিয়ার রাজধানীতে যেতে রাজি হয়েছিলেন ইব্রা। সেখানে সময়টা অবশ্য সুখের কাটেনি কোচ পেপ গার্দিওলার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায়। গিয়েছিলেন প্যারিস সেন্ট-জার্মেইয়ে। পরে আবারও ফিরেছেন সান সিরোতে, এবার এসি মিলানের হয়ে। দুটি ক্লাবকেই তাঁকে পেতে খরচ করতে হয়েছে ২৫ মিলিয়ন পাউন্ড, সব মিলিয়ে তাঁর দলবদলের অঙ্কটা পেরিয়ে দেড় শ মিলিয়ন পাউন্ডের ঘর।

৮. ফিলিপে কুতিনহো  (১৫৩.৫ মিলিয়ন পাউন্ড)

তখন তিনি মাত্র ১৬, ওই বয়সেই তাঁর প্রতিভার চমকে ৩ মিলিয়ন পাউন্ডে কিনে নিয়েছিল ইন্টার মিলান। অবশ্য শুরুর চমকটা ধরে রাখতে পারেননি বেশিদিন, যে কারণে ২০১৩ সালে লিভারপুলে নাম লিখিয়েছিলেন মাত্র ৮.৫ মিলিয়ন পাউন্ডে। সেখানে গিয়ে আবারও খুঁজে পেয়েছিলেন নিজেকে, বার্সেলোনা তাই তাঁর জন্য ১৪২ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করতেও দ্বিধা করেনি।

৭. আলভারো মোরাতা (১৫৪ মিলিয়ন পাউন্ড)

নামে-ভারে বড় ক্লাবগুলোতে চারবার দলবদল করেছেন বলেই দাম বেড়েছে মোরাতার। রিয়াল মাদ্রিদের একাডেমি থেকে উঠে আসা এই স্ট্রাইকারকে ২০১৪ সালে ১৬ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে কিনে নিয়েছিল জুভেন্টাস। কিন্তু রিয়াল 'পুনরায়-ক্রয়'-এর শর্তটা কাজে লাগিয়ে দুই বছর পরই ফেরত এনেছিল তাঁকে, এ জন্য গুনতে হয়েছিল ২০ মিলিয়ন পাউন্ড।

পরে খেলেছিলেন চেলসিতেও। ইংল্যান্ডে সময়টা ভাগ্যবিড়ম্বিত কাটলেও দলবদলে খরচ হয়েছিল ৬০ মিলিয়ন পাউন্ড। ২০২০ সালে ফেরত এসেছেন মাদ্রিদে; তবে রিয়ালে নয়, ডিয়েগো সিমিওনের দল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে, এখানেও স্প্যানিশ ক্লাবটিকে গুনতে হয়েছে ৫৮ মিলিয়ন পাউন্ড।

বর্তমানে ধারে খেলছেন জুভেন্টাসে, চাইলে তাঁকে কিনে নিতে পারবে ইতালিয়ান ক্লাবটিও। তখন ভালো-খারাপ যা-ই খেলুন, এই তালিকায় তাঁর ওপরে ওঠা তখন নিশ্চিতই।

৬. আঁতোয়ান গ্রিজমান (১৫৬ মিলিয়ন পাউন্ড)

রিয়াল সোসিয়েদাদের সিঁড়ি ধরে উঠে আসা গ্রিজমান ২০১৪ সালে পাড়ি জমিয়েছিলেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে, দলবদল মূল্য ৪৯ মিলিয়ন পাউন্ড। ২০১৯ সালে তাঁর বাইআউট ক্লজ ছিল ১০৭ মিলিয়ন পাউন্ড, ফরাসি ফরোয়ার্ডকে দলে ভেড়ানোর জন্য এই অঙ্ক খরচে কোনো সমস্যা দেখেনি জোসেপ বার্তোমেউর বোর্ড।

৫. এডেন হ্যাজার্ড (১৬২ মিলিয়ন পাউন্ড)

লিলের হয়ে ঝড় তুলে নজর কেড়েছিলেন বিশ্বের, শেষমেশ প্রায় ৩২ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে তাঁকে ঘিরে ইঁদুর দৌড় জিতেছিল চেলসি। স্টামফোর্ড ব্রিজে সাফল্যের সঙ্গে সাত বছর কাটিয়ে এসেছেন রিয়াল মাদ্রিদে। বিনিময়মূল্য আনুমানিক ১৩০ মিলিয়ন পাউন্ড।

৪. কিলিয়ান এমবাপ্পে (১৬৫.৭ মিলিয়ন পাউন্ড)

জীবনে দলবদল করেছেন মাত্র একবারই, তাতেই উঠে এসেছেন দলবদলের টেবিলে সবচেয়ে বেশি দাম পাওয়া খেলোয়াড়দের তালিকায় সেরা পাঁচে৷ মোনাকো থেকে ১৬৫.৭ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে তাঁকে দলে টেনেছিল আরেক ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট-জার্মেই।

৩. ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (১৯১ মিলিয়ন পাউন্ড)

স্পোর্টিং লিসবন থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে পাড়ি জমিয়েছিলেন ১২.২৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে। ওল্ড ট্রাফোর্ডের ক্লাবটিকে সব জিতিয়ে এনে দিয়েছিলেন ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডও, ২০০৯ সালে এই মূল্যেই তাঁকে দলে ভিড়িয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ।

সেখানে দুটি লা লিগা আর চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ২০১৮ সালে ৯৯.২৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাসে পা রেখেছেন সিআরসেভেন। কৌতূহলের বিষয়, আর দল পাল্টান কি না তিনি।

২. নেইমার (২৭১.৫ মিলিয়ন পাউন্ড)

দুটি দলবদল, আর তাতেই রেকর্ড। সান্তোসের হয়ে ফুটবলপিয়াসীদের মনে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে এলেন বার্সেলোনায়। ওই দলবদল নিয়ে কানাঘুষা আছে বিস্তর, দলবদলের সঠিক অঙ্কটাও জানা যায়নি। তবে কোনো হিসাবই ৭১.৫ মিলিয়ন পাউন্ডের নিচে বলছে না।

কাতালানদের চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন ফ্রান্সে। প্যারিস সেন্ট-জার্মেই তাঁর রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করে তাঁকে দলে ভিড়িয়েছিল ২০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে। এক নির্দিষ্ট দলবদল থেকে সবচেয়ে বেশি দাম তোলা ফুটবলার তাই নেইমারই।

১. রোমেলু লুকাকু (২৮৫.৫ মিলিয়ন পাউন্ড)

যাত্রা শুরু আন্ডারলেখটের হয়ে, ১০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে ধারে নিয়েছিল চেলসি। পরে পাকাপাকিভাবে গিয়েছেন এভারটনে, খরচা পড়েছিল ২৮ মিলিয়ন পাউন্ড।

এরপর ঘুরেছেন ম্যানচেস্টারেও, আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিলেও রেড ডেভিলদের গুনতে হয়েছিল ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডে। ২০১৯ সালে সেখান থেকে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইতালিতে, ইন্টার মিলান তাঁকে কিনে নিয়েছিল ৬০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে।

সেখানে ইন্টারকে সিরি 'আর' জিতিয়ে ফেরত এলেন ইংল্যান্ডে, চেলসির জার্সি গায়ে চড়াতে। লন্ডনের ক্লাবটাকে এজন্য খরচ করতে হলো ৯৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ড। আর রোমেলু লুকাকু হয়ে গেলেন ইতিহাসের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়!

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×