টেস্টের প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিকের একমাত্র কীর্তির পর ইরফান পাঠান

‘ভেবেছিলাম আগেও যখন হয়নি, এবারও হয়তো হবে না’

উৎপল শুভ্র

২৮ আগস্ট ২০২১

‘ভেবেছিলাম আগেও যখন হয়নি, এবারও হয়তো হবে না’

হ্যাটট্রিক করার পর ইরফান পাঠানকে ঘিরে সতীর্থদের উদযাপন। ছবি: এএফপি

সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে তাঁর বোলিং নিয়ে কী কাটাছেঁড়াই না হয়েছে! নিজেকে যেভাবে হারিয়ে খুঁজছিলেন, তাতে সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক ছিল। করাচিতে ২০০৬ ভারত-পাকিস্তান সিরিজের তৃতীয় টেস্টে সেই ইরফান পাঠানই জন্ম দিলেন নতুন ইতিহাসের। প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিক! টেস্ট ক্রিকেট এর আগে কখনো যা দেখেনি, দেখেনি এরপরও। সেই কীর্তির পর ইরফান পাঠান যা বলেছিলেন...

প্রথম প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০০৬। প্রথম আলো।

প্রশ্ন: হ্যাটট্রিকের অনুভূতিটা কেমন?

ইরফান পাঠান: টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনে প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিক—এটা তো যে কারও জন্য স্বপ্ন। আজ আমি হ্যাটট্রিক করেছি, ভাবতেই রোমাঞ্চিত বোধ করছি। 

প্রশ্ন: হ্যাটট্রিক-বলটির আগে চিন্তাটা কী ছিল?

পাঠান: এর আগেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমি দুবার হ্যাটট্রিকের সামনে এসেছিলাম। আজ তাই ভেবেছি, আগের দুবার যখন হয়নি, এবারও না-ও হতে পারে। স্বাভাবিক থাকো, উইকেট সোজা বল করো। 

প্রশ্ন: মোহাম্মদ ইউসুফকে তো আপনি আগেও অনেকবার আউট করেছেন। হ্যাটট্রিক-বলে তাঁকে সামনে পেয়ে কি তাই একটু খুশিই হয়েছিলেন?

পাঠান: হ্যাটট্রিক তো আর এভাবে হয় না। ইউসুফই হোক আর যে ব্যাটসম্যানই হোক, হ্যাটট্রিকের সামনে থাকলে আপনি তো তাঁকে আউট করার কথা ভাববেনই। ইউসুফকে আগে কতবার আউট করেছি, এসব কিছু ভাবিনি। 

হ্যাটট্রিকের তৃতীয় শিকার: বোওলড্ মোহাম্মদ ইউসুফ। ছবি;এএফপি

প্রশ্ন: আপনার হ্যাটট্রিকের পর মাঠে যে উদযাপনের দৃশ্যটা দেখা গেল, সেটির বিস্তারিত একটু জানাবেন?

পাঠান: আমার সাফল্যে দলের সবাই খুব খুশি হয়েছে। আমাদের দলের এ দিকটিই সবচেয়ে দারুণ— একজনের সাফল্যে অন্যরা খুশি হয়। হরভজন এসে আমাকে বলল, 'ভারতীয় ক্রিকেটে শুধু আমাদের দুজনেরই টেস্ট হ্যাটট্রিক আছে। আমি তোমার জন্য গর্বিত।'

প্রশ্ন: আগের দুই টেস্টে যে ধরনের উইকেটে বোলিং করতে হয়েছে, তাতে এখানে এমন উইকেট পেয়ে নিশ্চয়ই খুশি হয়েছেন?

পাঠান: সকালে উইকেটে আর্দ্রতা ছিল। বল করতে শুরু করার আগেই আমার মনে হয়েছে, উইকেট একটু ভেজা। এ কারণেই বল বাতাসে খুব একটা সুইং না করলেও উইকেটে পড়ার পর অফ দ্য সিম মুভমেন্ট হয়েছে।

প্রশ্ন: গত দুই টেস্টে আপনার ডেলিভারি অ্যাকশন, গ্রিপ—এ সব নিয়ে টিভি ধারাভাষ্যকাররা অনেক গবেষণা করেছেন। সে সব কি আপনাকে আরও উদ্দীপ্ত করেছিল?

পাঠান: ভালো না করলে লোকে হাজারো কথা বলবে। আমি এসব পাত্তা দিই না। এখানেই দলের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আমি এমন একটা দলে খেলছি, সবাই যেখানে একে অন্যের পাশে দাঁড়ায়। কেউ ভালো না করলে তাকে সাহায্য করে। আমরা ভালো একজন কোচ পেয়েছি, ভালো অধিনায়ক পেয়েছি।

হ্যাটট্রিকের দ্বিতীয় শিকার: এলবিডব্লিউ ইউনিস খান

প্রশ্ন: কিন্তু এই টেস্টে কি আপনার ডেলিভারি অ্যাকশন বা অন্য কোনো কিছুতে কোনো পরিবর্তন করেছিলেন?

পাঠান: না, আমি কিছুই বদলাইনি। অনেক দিন ধরে খেলতে থাকলে এমনিতেই কিছু পরিবর্তন হয়। গত দুটি টেস্টে কোনো বোলারই তো ভালো করেনি। জোরে বল করা আর আস্তে বল করায় কোনো পার্থক্য তো হয়নি।

প্রশ্ন: আপনি কি অন্যদের উপদেশ-টুপদেশ কানে নেন না?

পাঠান: আমি সব সময়ই যে কারো পরামর্শ বা উপদেশ শুনতে প্রস্তুত থাকি। কারণ আমি বিশ্বাস করি, ক্রিকেটে শেখার কোনো শেষ নেই, প্রতিদিনই নতুন কিছু শেখার আছে। কেউ এসে আমাকে কিছু বললে আমি তা মন দিয়েই শুনি।

প্রশ্ন: টেলিভিশনে আপনার বোলিং নিয়ে মাইকেল হোল্ডিং যে এত কথা বললেন, আপনাকে কি কিছু বলেছেন?

পাঠান: না, উনি আমাকে কিছু বলেননি। তবে গ্রেগ চ্যাপেল আমাকে শুধু একটা কথাই বলেছেন, তোমার মাথাটা পরিষ্কার রাখো। কঠিন উইকেটে এত কিছু মাথায় আসে যে, অনেক সময় নেতিবাচক চিন্তা পেয়ে বসে। এত ভাবার কিছু নেই। তোমার সব কিছুই ঠিক আছে। 

প্রশ্ন: ফয়সালাবাদ টেস্টে আপনার ব্যাটিংয়ের সময় পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। এটা কি আপনাকে তাতিয়ে তুলেছিল?

পাঠান: আগের ম্যাচটা ওখানেই শেষ হয়ে গেছে। সেখানে কে কী বলেছে, সেটার জের এখানে টেনে আনার কী আছে? এটা নতুন ম্যাচ। আমি নতুন করেই ভেবেছি।

হ্যাটট্রিকের প্রথম শিকার: স্লিপে মৃত্যু সালমান বাটের। ছবি: এএফপি

প্রশ্ন: পাকিস্তানেই অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে পারফরম্যান্স আপনাকে ভারতীয় দলে সুযোগ করে দিয়েছিল। আপনার জন্য এটা তো পয়া জায়গাই, তাই না?

পাঠান: (হেসে) আগের দুই টেস্টে তো তা মনে হলো না। আসলে পাকিস্তানে ভালো করেই আমি জাতীয় দলে ঢুকেছি বলে এখানে খেলার সময় একটা আলাদা অনুভূতি তো কাজ করেই। এখানে অনেক মানুষ আমার শুভকামনা করে।

প্রশ্ন: ম্যাচের অবস্থা কী মনে হচ্ছে?

পাঠান: ৩৯ রানে ৬ উইকেট ফেলে দেওয়ার পর আরো কম রানে ওদের অলআউট করে দিতে পারলে অবশ্যই ভালো হতো। তবে ক্রিকেট এমনই। আকমল দারুণ এক সেঞ্চুরি করেছে আজ। আমাদের শুধু একটা বড় পার্টনারশিপ দরকার। তাহলেই আমরা ভালোমতোই ম্যাচে থাকব।

সংযোজন: ইরফান পাঠানের আশামতো ভারত ভালোমতো কেন, ম্যাচেই থাকেনি। শূন্য রানে ৩, এরপর ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও কামরান্ আকমলের সেঞ্চুরিতে পাকিস্তান করেছিল ২৪৫। এরপর ভারতকে ২৩৮ রানে অলআউট করে দিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ডিক্লেয়ার করেছিল ৭ উইকেটে ৫৯৯ রান তুলে। ভারত দ্বিতীয়বার ব্যাটিং করতে নেমে ২৬৫ রানে অলআউট হয়ে ৩৪১ রানে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×