দ্য নেম ইজ বন্ড...শেন বন্ড!

৭ জুন ২০২১

দ্য নেম ইজ বন্ড...শেন বন্ড!

শেন বন্ড

রিচার্ড হ্যাডলি উত্তর নিউজিল্যান্ডের সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবে আবির্ভার ঘটেছিল তাঁর। কিন্তু মাত্র ১৮ টেস্টেই থেমে গেছে ইনজুরি জর্জরিত ক্যারিয়ার। তাতেই ৮৭ উইকেট। ৮২ ওয়ানডেতে ১৪৭। দারুণ সুদর্শন আর বলে দূরন্ত গতি মিলিয়ে দর্শকপ্রিয় এই বোলারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সবচেয়ে স্পর্শ করেছিল তাঁর বিনয়। এতটাই যে, ২০০৩ বিশ্বকাপের সময় কিম্বার্লিতে ইন্টারভিউ করার পর থেকে তাঁর সাফল্য কামনা করে এসেছি সব সময়।

উৎপল শুভ্র : আবির্ভাবেই  সেনসেশনে পরিণত হয়েছেন আপনি। কিন্তু সেই আবির্ভাব এত দেরিতে হলো কেন? ২৭ ছুঁইছুঁই বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনার অভিষেক। ক্রিকেট কি আপনার প্রথম পছন্দ ছিল না? 

শেন বন্ড : না না, নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ক্রিকেট খেলাটা সব সময়ই আমার স্বপ্ন ছিল। একটু বড় হওয়ার পর থেকেই আমার যে দুটো স্বপ্ন ছিল, তার একটি হলো পুলিশ হওয়া, আরেকটি নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ক্রিকেট খেলা। সমস্যা হলো, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত আমি খুব একটা কুইক ছিলাম না, আমার পেস ছিল অনেকটা ড্যারিল টাফি বা কাইল মিলসের মতো। এরপর পুলিশে যোগ দেই। পুলিশ কলেজ থেকে বেরোনোর পর আমি এখনকার গতিতে বল করতে শুরু করি, জানি না কী কারণে আমার বলের গতি অনেক বেড়ে যায়। তখন আমি ক্রিকেটে আরেকবার চেষ্টা করে দেখার সিদ্ধান্ত নিই, নির্বাচকরাও আমাকে দলে নেন।

শুভ্র : একটা  কথা প্রচলিত আছে, ফাস্ট বোলারদের তৈরি করা যায় না, তাদের জন্ম হয়। কিন্তু আপনার গল্পটা তো অন্য রকম। হঠাৎ করে আপনার ফাস্ট বোলার হওয়ার রহস্যটা কী? 

বন্ড: একটা কারণ হতে পারে, কম বয়সে আমার পিঠে বেশ সমস্যা ছিল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিকভাবে কিছুটা শক্তিশালী হওয়াটাই হয়তো আমার বলে গতি বেড়ে যাওয়ার রহস্য। দ্রুত বল করার ক্ষমতাটা হয়তো আগে থেকেই ছিল, সেটি আবিষ্কার করতে একটু সময় লেগেছে আমার।

শুভ্র : তার  মানে কিশোর বা তরুণ বয়সে আপনি কখনো সে রকম সম্ভাবনা হিসেবে বিবেচিত হননি? 

বন্ড : ঠিক তা নয়। কৈশোরে আমাকে উদীয়মান একজন ফাস্ট বোলার হিসেবেই ধরা হতো, যদিও কখনই এক্সপ্রেস কুইকের দলে ছিলাম না। কিন্তু আমি যখন ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলতে শুরু করি, তখন আমি ফাস্ট বোলার হিসেবে নিজেকে চেনাতে পারিনি। আমি ছিলাম টিপিক্যাল নিউজিল্যান্ড বোলার, মিডিয়াম-ফাস্ট, যে কখনো কখনো একটু জোরে বল করে। আমি আসলে ছিলাম মিডিয়াম পেসার।

শেন বন্ডের বোলিং অ্যাকশনটাও ছিল অপূর্ব। অন্য সব ফাস্ট বোলারের মতো যা নিয়ে কখনোই কোনো প্রশ্ন ওঠেনি শুভ্র: আপনি  যেমন বললেন, নিউজিল্যান্ড তো মূলত মিডিয়াম পেসারই জন্ম দিয়ে এসেছে। সেখানে আপনি এক মূর্তিমান ব্যতিক্রম। মনোযোগটাও অনেক বেশি পাচ্ছেন আপনি। কেমন লাগে এতে?

বন্ড : একটু অন্য রকম হওয়াতে ভালোই হয়েছে, আমি বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। দলের অ্যাটাকেও বৈচিত্র্য এসেছে। নির্বাচকরাও এখন শুধু ফাস্ট মিডিয়াম বোলারের পরিবর্তে সত্যিকার ফাস্ট বোলারদের খুঁজছেন। কারণ তারা বুঝতে পেরেছেন, শীর্ষে উঠতে হলে ফাস্ট বোলার ছাড়া উপায় নেই। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তানের মতো সেরা দলগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাবেন, সব দলেই ফাস্ট বোলার আছে।

শুভ্র : এমন  কোনো ম্যাচ কি আছে, যেটিকে আপনার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করেন? 

বন্ড : অস্ট্রেলিয়ায় পুরো ওয়ানডে সিরিজটাকেই আমি টার্নিং পয়েন্ট বলব। সেখানে বেশ কিছু উইকেট পেয়েছি আমি, এটাই আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। ওই সিরিজটাই আমার ক্যারিয়ারকে বদলে দিয়েছে। (২০০২ সালের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজে ৯ ম্যাচে ২১ উইকেট পেয়েছিলেন শেন বন্ড)।

শুভ্র: অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে অমন একটা শুরু। এর চেয়ে ভালো শুরু তো কল্পনার ব্যাপার। 

বন্ড : ওই সিরিজে যা হয়েছে, তা আমার কাছেই বিস্ময়কর বলে মনে হয়। ওই সিরিজে যে বোলিং করেছি আমি, সব সময় সে রকম করাটা খুব কঠিন। এই বিশ্বকাপেও এখনো সে রকম সাফল্য পাইনি। তবে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি, কয়েকটি উইকেট পেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।

শুভ্র : আপনাকেই যদি আপনার বোলিংয়ের মূল বিশেষত্ব বলতে বলি...

বন্ড : আমার মনে হয়, আমি ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বল সুইং করে ভেতরে ঢুকিয়ে অনেক ব্যাটসম্যানকেই চমকে দিয়েছি। এটি অনেকটা নতুন বলে রিভার্স সুইং করানোর মতো ব্যাপার, তা ছাড়া আমার বল অনেক দেরিতে সুইং করে। আপনি অন্য ফাস্ট বোলারদের দিকে তাকালে দেখবেন, ইয়র্কার বাদ দিলে নতুন বলে বোলিং করার সময় ওরা মূলত বল বের করে নিয়ে যায়। আমি যে ভেতরে আনতে পারি, এটা অনেক সময়ই ব্যাটসম্যানকে একটা বিস্ময়ের ধাক্কা দেয়। 

শুভ্র : গত কিছুদিন দ্রুততম বোলারের প্রসঙ্গ উঠলেই শোয়েব আখতার আর ব্রেট লির নাম উচ্চারিত হয়। আপনার বলেও তো যথেষ্টই গতি। ওই দুজন সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী? 

বন্ড : আমি ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটারের মতো গতিতে বল করি, ওরা দুজনই আমার চেয়ে ফাস্ট। শোয়েব আর লি ১৬০ কিলোমিটারের মতো গতিতে বল করে। আমি ওদের মতো গতিতে বল করতে পারব না, তবে এটা নিয়ে আমি ভাবি না। কারণ আমি ব্যাটসম্যানদের তাড়াহুড়ো করানোর মতো যথেষ্টই দ্রুত। আমার জন্য এটাই যথেষ্ট।

শুভ্র : তবে একটা ক্ষেত্রে তো আপনি এগিয়ে। জেনুইন ফাস্ট বোলারদের মধ্যে একমাত্র আপনার অ্যাকশন নিয়েই কোনো বিতর্ক নেই। 

বন্ড : (হাসি) সেটাই তো ভালো। আমি আমার বোলিং অ্যাকশন বদলানোর কথাও ভাবছি না। তাই আশা করি আমার বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ উঠবে না।

শুভ্র : যাঁদের  বিপক্ষে বল করেছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ব্যাটসম্যান মনে হয়েছে কাকে? 

বন্ড : অনেককেই। ম্যাট হেইডেন, ব্রায়ান লারা, টেন্ডুলকার... ওরা শট খেলতে এত সময় পায়! আপনি যত দ্রুতই বল করুন না কেন, ওদের তাড়াহুড়ো করাতে পারবেন না। সময় সময় যা খুব হতাশাজনক, একই সঙ্গে একটু ভয়-জাগানিয়াও। ওরা হলো গ্রেট প্লেয়ার।  

শুভ্র : আপনি তো পুলিশ অফিসারও। পুলিশে যোগ দিয়েছিলেন কবে?

বন্ড : পুলিশে যোগ দিয়েছিলাম ১৯৯৯ সালে। ২০০০-এর এপ্রিল পর্যন্ত অর্থাৎ দেড় বছরের মতো কাজ করেছি। এখন আমি ক্রিকেটের জন্য ছুটিতে আছি।  

শুভ্র : এখন আপনার পুলিশে চাকরি করার দরকারটা কী? পুরোদস্তুর পেশাদার ক্রিকেটার হয়ে গেলেই তো পারেন। 

বন্ড : হ্যাঁ, এখন আমি পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার কথা ভাবছি। আমি যখন ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলতে শুরু করি, তখন নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ক্রিকেট খেলাটা খুব লোভনীয় কোনো ক্যারিয়ার ছিল না। খেলা ছাড়ার পর অনেক ক্রিকেটারকে আমি জীবনযুদ্ধে ধুঁকতে দেখেছি। ক্রিকেটারদের একটু নামধাম হয়ে যায় বলে ক্রিকেট ছাড়ার পর চাকরি পাওয়া খুব কঠিন। খুব বেশি টাকাও তো ছিল না তখন। ইনজুরি হলেই তুমি শেষ, আর কিছু করার নেই। এখন অবস্থা বদলেছে, ক্রিকেটে অনেক টাকা। তবে পুলিশের চাকরিটা থাকায় আমার ওপর কোনো চাপ নেই। আর চাপ না থাকলেই সেরা খেলাটা খেলা যায়।

গৃহকোণে প্রিয় কুকুর নিয়ে শেন বন্ড
শুভ্র: তার মানে আপনি এখনো পুলিশের চাকরি চালিয়ে যেতে চান? 

বন্ড : সত্যি বলতে কি, এখনো ঠিক করিনি। তবে ক্রিকেটে একটু ভালো করে ফেলার পর অপারেশনে যেতে এখন সমস্যাই হবে।

শুভ্র : এখন আপনি অপরাধীদের ধরতে গেলে আপনাকে দেখে রাস্তায় ভিড় জমে যাওয়ার কথা। 

বন্ড : (হাসি) আমাকে হয়তো এখন ছদ্মবেশ নিয়ে যেতে হবে।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×