তামিম কি আসলেই `ডট বাবা`?

৯ জুন ২০২১

তামিম কি আসলেই `ডট বাবা`?

তামিম প্রচুরসংখ্যক ডট খেলেন, বেশি বেশি ডট খেলেন বলে দল পড়ছে বিপদে---এমন আলোচনা সর্বত্র। তবে পরিসংখ্যানে আশ্রয় নিয়ে এক পাঠক বোঝাতে চাইলেন, স্ট্রাইক রেট কিংবা ডট পারসেন্টেজ, বাকিদের সঙ্গে তামিমের ব্যবধান নেই খুব একটা। আলোচনার শেষে থাকল একটা অনুরোধও, আমরা সমালোচনা করব, তাতে দোষের কিছু নেই, কিন্তু তা যেন ঢালাওভাবে না হয়।

ইদানীং বাংলাদেশ দলের খেলা মানেই যেন ডট বল নিয়ে আলোচনার ঝড়। যার বেশির ভাগটা বয়ে যায় তামিম ইকবালের ওপর দিয়েই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো তাঁর নামের আগে-পরে 'ডট বাবা' যোগ করেই তৃপ্তি খুঁজে পান অনেকে। অনেকে তো খেলা দেখতেই বসে তামিম একটি ডট বাবা খেলবে আর তাকে 'ডট বাবা' বলবে---এমন চিন্তা নিয়ে। কিন্তু তামিমের দিকেই সব নজর দিতে গিয়ে অন্যরা পড়ে যান আড়ালে। তবে ক্রিকেটের রেকর্ড বুকে প্রতিটি রান যেমন কাউন্ট হয়, তেমন করে প্রতিটি ডটও তো কাউন্ট হয়। তামিমের সঙ্গে বাকিদের তুলনা করাটা তাই খুব কঠিন কিছু না। আর মোবাইল-ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার এই যুগে তো যেকোনো পরিসংখ্যান বের করে নেওয়া যায় খুব সহজেই। পরিসংখ্যানের সাহায্য নিয়েই আমি তাই জানাতে এলাম, ডট বল নিয়ে সমস্ত বক্তব্যে কেবল তামিমকেই দায়ী করে যাওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে? ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে কমপক্ষে ৩০০০ রান করেছেন, এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে একটি তুলনা করা হচ্ছে নিচে:

★ ওয়ানডেতে ৩০০০-এর বেশি রান করা পাঁচজন বাংলাদেশি ক্রিকেটার হলেন: মোহাম্মদ আশরাফুল, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং সাকিব আল হাসান।

★ বাংলাদেশ দলে এখন পর্যন্ত শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ডট বল খেলা খেলোয়াড়টির নাম মোহাম্মদ আশরাফুল। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৯৪৭ বলের মধ্যে আশরাফুল ডট খেলেছেন ৬০.৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রতি ১০০ বলে ৬০-৬১ টি বল ডট খেলতেন তিনি। আর তাঁর স্ট্রাইক রেট ৭০-এর সামান্য বেশি, ৭০.১০।

★ তামিম ইকবাল, বর্তমানে অনেক ক্রিকেট ফ্যানের চোখের বিষ যেন। 'ডট বাবা' থেকে শুরু করে এমন কোনো ট্রল নেই, যা তাঁকে নিয়ে হয় না। ওয়ানডেতে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার বল (৯৫২৪) খেলেছেন তিনি। শতকরার হিসাবে প্রতি ১০০ বলে তিনি ডট খেলেছেন ৫৭ টি (৫৭.৬)। এবং, তাঁর স্ট্রাইক রেট ৭৮-এর ওপরে (৭৮.৫)।

★ মুশফিকুর রহিম। 'মিস্টার ডিপেন্ডেবল' খ্যাত এই ব্যাটসম্যান ওয়ানডেতে প্রায় ৮০০০ বল (৮০৭৪) মোকাবিলা করেছেন। যেখানে প্রতি ১০০ বলের প্রায় ৫০-৫১টিতেই (৫০.৪) কোনো রান নেননি, এবং তাঁর স্ট্রাইক রেট আশি ছুঁইছুঁই (৭৯.৯)।

★ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। 'সাইলেন্ট কিলার' খ্যাত এই ব্যাটসম্যান ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রায় ৫৭১২ বল মোকাবেলা করেছেন। যেখানে প্রতি ১০০ বলে ডট খেলেছেন ৫৩টি (৫২.৯) এবং প্রতি ১০০ বলে করেছেন ৭৭.২ রান।

★ সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত মোকাবেলা করেছেন প্রায় ৭৩৯৬ বল। যার মধ্যে প্রতি ১০০ বলে ডট খেলেছেন ৪৯টি আর প্রতি ১০০ বল থেকে করেছেন ৮২.৩ রান।

তো এই হলো আমাদের দলের অবস্থা। যেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রত্যেকে প্রায় কাছাকাছি সংখ্যক ডট খেলেছেন আর স্ট্রাইকরেটেও প্রত্যেকে প্রায় কাছাকাছি। এই তথ্য দেখার পরও কেউ যদি নির্দিষ্ট কাউকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন, তাহলে আর বলার কিছু নেই। গঠনমূলক সমালোচনা অবশ্যই ভালো, কিন্তু নির্দিষ্ট একজনকে নিয়ে ঢালাওভাবে সমালোচনা করা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই গঠনমূলকভাবে প্রত্যেকের ভুলের সমালোচনা করব আমরা, একইসঙ্গে তাঁর ভালো গুণগুলোও যথাযথভাবে প্রচার করব, সকলের কাছে এটাই চাইছি।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×