নেপালকে হারাতে যা করতে হবে

সাইফুল বারী টিটু

১৩ অক্টোবর ২০২১

নেপালকে হারাতে যা করতে হবে

সমীকরণটা খুব সহজ। আজ নেপালের বিপক্ষে জিতলেই সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশ। সমীকরণ সহজ, তবে কাজটা অবশ্যই তা নয়। বিশেষ করে নেপালের যেখানে ড্র হলেই চলে। সেই কঠিন কাজটায় সফল হতে বাংলাদেশের করণীয়টা বাতলে দিচ্ছেন কোচ সাইফুল বারী টিটু।

বাংলাদেশকে জিততেই হবে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলতে এর কোনো বিকল্প নেই। রাউন্ড রবিন লিগে আর দুটি মাত্র ম্যাচ বাকি। আজ প্রথম ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। যেটাতে ড্র করতে পারলেই ফাইনালে উঠে যাবে নেপাল। এদিনের অন্য ম্যাচটা ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে। সমান ৩টি করে ম্যাচ খেলে নেপাল ও মালদ্বীপের পয়েন্ট ৬। ভারতের ৫। বাংলাদেশের ৪। ড্র হলেই চলে বলে নেপালকে অনেকে হয়তো বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে এগিয়ে রাখবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশের ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা কতটা?

সেটা বলতে গেলে কিছু ব্যাপার ভেবে দেখতে হবে। বাংলাদেশ শেষ ম্যাচ খেলেছে ৭ অক্টোবর। এর মধ্যে আমাদের দলের ভালো রিকভারি হয়ে যাওয়ার কথা। কারণ, বেশ লম্বা একটা ছিল। বিশ্রাম মিলেছে। এছাড়া ফরোয়ার্ড রাকিব এই ম্যাচে ফিরে আসবে। যদিও ইয়াসিনকে মিস করতে হবে তাঁর দুই হলুদ কার্ডের কারণে। এদিকে নেপাল তাদের শেষ ম্যাচ খেলেছে ১০ তারিখে। আজকের ম্যাচের আগে মাত্র দুদিন সময় পেয়েছে। তাদের মধ্যে এক ধরনের ক্লান্তি ভর করার কথা।

এখন মূল ব্যাপারটা দাঁড়াবে ম্যাচের অ্যাপ্রোচে। ভারতের বিপক্ষে নেপাল যেভাবে খেলেছে, বাংলাদেশের বিপক্ষেও সেভাবেই খেলতে পারে। একমাত্র গোলে হারা ওই ম্যাচে তারা ৫-৪-১ এ খেলেছে। বাংলাদেশের বিপক্ষেও তা-ই করবে কি না, জানা নেই। তবে নেপাল শুরু থেকেই ড্র করার অ্যাপ্রোচে খেলতে পারে। সেটা করলে তারা শুধু কাউন্টার অ্যাটাক করে খেলার মধ্যে যেতে চাইবে। ওদের কাউন্টার অ্যাটাক কিন্তু খুব ভালো। ভালো খেলোয়াড় আছে। শারীরিক সক্ষমতায়ও ওরা ভালো।

তবে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অবশ্যই আছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। একটাই শর্ত, বাংলাদেশের গোল করতেই হবে। এদিক দিয়ে নেপালের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে বাংলাদেশ। নেপাল এখন পর্যন্ত চার গোল করেছে। বাংলাদেশ যেখানে করেছে মাত্র দুটি। তবে নেপাল গোলও কিন্তু খেয়েছে তিনটা। এটাই আমাদের আশার দিক যে ‘হ্যাঁ, নেপালকে গোল দেওয়া যায়’। শ্রীলঙ্কাও তো ওদের দুইটা গোল দিয়েছে।

তাই বাংলাদেশের সুযোগ অবশ্যই আছে। তবে সেজন্য আমাদের খুব ভালো খেলতে হবে। বল হারানো মাত্রই সাবধান হয়ে যেতে হবে, যাতে ওরা কাউন্টার অ্যাটাকের সুযোগ না পায়। এটা একটা বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, আমরা যদি ধরে নিই যে, নেপাল ড্র করার অ্যাপ্রোচে খেলবে, তাহলে ওরা নিচে নেমে খেলবে, মানে লো ব্যাক ডিফেন্ডিং করবে। তখন বাধ্য হয়েই আমাদের একটু বেশি ওপরে উঠতে হবে। কারণ আমাদের তো গোল বের করা ছাড়া ফাইনালে যাওয়ার পথ নেই। তাই আমাদের যে সমস্ত জায়গা খালি থাকবে, সেসব জায়গায় নেপাল যেন ডমিনেট না করতে পারে। তার মানে আমি বলতে চাচ্ছি, অ্যাটাকে যাওয়ার সময় আমাদের যেন নিচে ফাঁকা জায়গা ভরাট করার প্লেয়ার থাকে। কাউন্টার অ্যাটাকগুলোর যেন কাউন্টার দিতে পারি আমরা।

এটা নেপালের সঙ্গে খেলায় বড় হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, ফাইনালে যেতে নেপাল আমাদের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। এক পয়েন্ট হলেই হয়তো ওদের হয়ে যাবে। তাতে দিনের পরের ম্যাচের রেজাল্ট যাই হোক না কেন। এজন্যই আমাদের জন্য পরিস্থিতিটা একটু কঠিন। বাট উই ক্যান ডু ইট।

এই আসরে আমাদের দুই গোলের দুটিই করেছে দুই ডিফেন্ডার। বলা যায় সেট পিস থেকেই এসেছে ওই দুই গোল। নেপালের বিপক্ষেও আমাদের সেট পিসের ওপর নির্ভর করতে হবে। সেটি কাজে লাগাতে হবে।

এই ম্যাচে বাংলাদেশ কোন ফর্মেশনে খেলবে, তা ভাবার আগে ভাবতে হবে আমাদের খেলোয়াড়দের কোয়ালিটি নিয়ে। আমাদের দুইজন ভালো স্ট্রাইকার আছে কি না তা দেখতে হবে। ৩টা ম্যাচ চলে গেছে। এখনো আমাদের কোনো স্ট্রাইকার গোল করতে পারেনি। তো আমার মনে হয় না, গোল করার মতো দুজন স্ট্রাইকার আমাদের দলে আছে। সাইড বা মিডফিল্ড দিয়ে আক্রমণ করে আমাদের তিন/চারজন খেলোয়াড় বক্সে গিয়ে হাজির হচ্ছে, এটা ভালো ব্যাপার। এটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হবে।

যে কোনো ব্লক যদি নেপাল তৈরি করে, ধরেই নেই যে, ওরা ব্লক তৈরি করল। সেই ব্লক আমরা কয়েকভাবে ভাঙতে পারি। অ্যারাউন্ড দ্য ব্লক খেলে, মানে হচ্ছে উইং ব্যাকের দিক দিয়ে বা সাইডলাইন দিয়ে অ্যাটাক করে। আরেকটা হচ্ছে ওভার দ্য ব্লক। মানে ডিফেন্সের পেছনে ডিরেক্ট পাস। আরেকটা হচ্ছে থ্রু দ্য বা অ্যাক্রস দ্য ব্লক। মানে মাঝের অর্ধে বল নেওয়া। নেপালের ডিফেন্স লাইনের সামনে যদি আমরা বল নিতে পারি, ওদের মিডফিল্ড ও ডিফেন্স লাইনের মাঝামাঝি, তাহলে ওখান থেকে কয়েকজন মিলে কম্বিনেশন প্লে আমরা করতে পারি। ওখান থেকে ক্রস বা গোলের সুযোগ তৈরি হতে পারে। এটা হবে আমাদের জন্য কাজের কাজ। তো ফর্মেশন কোনো ব্যাপার না। যদি কেউ নিচে নেমে আসে এবং নিচের থেকে খেলা তৈরি করে, তাহলে সেটাও করতে পারে। এ ধরনের খেলোয়াড়ও আমাদের টিমে আছে।

টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের দুটি গোলই করেছেন ডিফেন্ডাররা। ছবিতে ভারতের বিপক্ষে গোল করার পর ইয়াসিনের উল্লাস

আমি মনে করি, প্রধান কোচ অস্কার ব্রুজোনের আক্রমণাত্মক ফুটবল ভাবনা এখানে অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কারণ এই ম্যাচে তো অন্য কিছু ভাবার সুযোগই নেই। আমাদের জিততেই হবে। তবে তারপরও বলব, নিজেদের দুর্গও যেন সামলে রাখা হয়। যেন গোল খেয়ে না বসি। কারণ, একটা গোল খেয়ে গেলে তখন দুই গোল দিয়ে জিততে হবে। যেটা আমাদের জন্য খুব কঠিন হবে। আমি তাই এমন ভাবতে চাই, খেলার ৯০ মিনিট পর্যন্ত যদি আমরা গোল না খাই, তাহলে ইনজুরি টাইমের খেলায় আমরা গোল করেও জিতে যেতে পারি। 

অস্কার ভারতের বিপক্ষে খুব বাস্তব একটা অ্যাপ্রোচ নিয়ে দলকে খেলিয়েছিলেন। মালদ্বীপের সঙ্গেও বাস্তব অ্যাপ্রোচ ছিল। ভারতের বিপক্ষে ১০ জন নিয়ে খেলেও ড্র করা গেছে। কিন্তু মালদ্বীপের সঙ্গে হয়তো জেতা যায়নি। মালদ্বীপের সঙ্গে খেলায় আমরা প্রাইমারি ডিফেন্ডিং করেছিলাম। কিন্তু সেকেন্ডারি ডিফেন্ডিং করতে না পারায় প্রথম গোলটা খেয়ে বসি। নেপালের বিপক্ষে এই ধরনের ভুল করা যাবে না। ওদের ফরোয়ার্ড লাইন ভালো।

মোদ্দা কথা হলো, জিততে হলে বাংলাদেশকে যত সম্ভব কম ভুল করা যায়, তা মাথায় নিয়ে খেলতে হবে।  

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×