বাংলাদেশের এক পয়েন্ট প্রাপ্য ছিল

বাংলাদেশ-ভারত ফুটবল ম্যাচ

বাংলাদেশের এক পয়েন্ট প্রাপ্য ছিল

খেলার একেবারে শেষ দিকে দুই গোল খেয়ে ভারতের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। নইলে পুরো ম্যাচে বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা দুর্দান্তই ছিলেন, রিয়াদুল হাসান রাফি তো গোল লাইন থেকে বল আটকে নিশ্চিত গোল বাঁচালেন একবার। এত ভালো রক্ষণ সামলানোর পর বাংলাদেশের এক পয়েন্ট প্রাপ্য ছিল বলেই মনে করছেন দেশের খ্যাতনামা ফুটবল কোচ সাইফুল বারী টিটু। যদিও পয়েন্ট না পাওয়ার কারণ হিসেবে ডিফেন্সের ভুলই দেখতে পাচ্ছেন তিনি।

প্রথমেই বলে নিই, বাংলাদেশ দল অসম্ভব ভালো ডিফেন্ডিং করেছে। গোলটা খাওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারতকে একটা জায়গাতেই চান্স দিয়েছে, সেটা হলো সেট-পিসে। এই সেট-পিস থেকেই ওরা কিছু সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিল। বাংলাদেশ দল খুব একটা বল পজেশন ধরে রাখতে পারেনি, পুরো ম্যাচে মাত্র ২৭ পারসেন্ট বল রাখতে পেরেছিল নিজেদের দখলে। পেছন থেকে খেলা বিল্ড-আপ সেভাবে করতে পারেনি, ডিফেন্ডিংয়েই ব্যস্ত থেকেছে। বল যখনই উইন করেছে, কাউন্টার অ্যাটাকের চেষ্টা করেছে। ভারতের ডিফেন্ডাররা আবার এমনভাবে নিজেদের লাইন মেইনটেইন করছিল, কাউন্টার অ্যাটাকগুলোও সেভাবে ফল দেয়নি।

ভারতের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, প্রথমে থ্রি ম্যান ব্যাকলাইন না থাকলেও উদান্তে সিংকে রাইট উইংয়ে ঠেলে দিয়ে বিল্ড আপের ক্ষেত্রে তিনজনের ডিফেন্স লাইন মেইনটেইন করেছে। অনেকটা ৩-৩-৪ বা ৩-২-৫ ফর্মেশন দেখা যাচ্ছিল আর কি। যদিও ডিফেন্ডিংয়ের ক্ষেত্রে আবার চারজনের রক্ষণেই ফেরত এসেছিল ওরা। আর ম্যাচ কন্ট্রোল করেছে মূলত ওদের মিডফিল্ডাররা, আট নম্বর জার্সি পরা গ্লেন মার্টিনস আর দশ নম্বর ব্রেন্ডন ফার্নান্দেজ। পাশাপাশি বলতে হবে সুরেশের কথাও। উদান্তে সিংয়ের সঙ্গে নিয়মিতই জায়গা অদলবদল করছিলেন তিনি। কখনো একজন রাইটব্যাকে এসে ডিফেন্স করছেন, কখনো বা রাইট উইংয়ে উঠে ইনফিল্ডে অপরজনের জন্য জায়গা বানিয়ে দিচ্ছেন---ওদের মধ্যে এরকম রোটেশন দেখতে পেয়েছিলাম আমরা।

ভারত ম্যাচের বাংলাদেশ দল

বাংলাদেশকে আমি কৃতিত্ব দিতে চাই ভারতকে হাফ স্পেস এক্সপ্লয়েট করতে দেয়নি বলেও। আফগানিস্তান ম্যাচে কিন্তু আমরা দেখেছিলাম, লেফট ব্যাক আর লেফট সেন্টারব্যাকের মাঝের জায়গাটা অনেক বেশি কাজে লাগিয়েছিলেন আফগান ফুটবলাররা। কিন্তু আজ বাংলাদেশ ৪-১-৪-১ ফর্মেশন মেইনটেইন করেছিল, জামাল ভূঁইয়া আর মানিক মোল্লা দুটো লাইন করাতে ভারতীয় ফুটবলারদের ওই হাফ স্পেসে বল নিতে দেয়নি। এমনকি মাঝমাঠ দিয়ে কোনো আক্রমণই করতে পারেনি ভারত। গোল খাওয়ার আগ পর্যন্ত এটাই ছিল গল্প।

গোলটার ক্ষেত্রে যদি বলি, তেমন বুদ্ধিদীপ্ত কোনো মুভ থেকে গোলটা হয়নি। আশিক পুরুলিয়ানের কাছে বলটা পাস দেওয়া হয়েছিল, তখন আমাদের যে রাইট ব্যাক, তারেক কাজী, ওর উচিত ছিল আশিককে ইমিডিয়েট প্রেশার দেয়া। প্রেশার না দেওয়াতে যা হয়েছে, আশিক মাথা তুলে দেখতে পেয়েছে, সুনীল ছেত্রী দৌড় শুরু করেছে, আশিক ওই অনুযায়ী ক্রসটা করতে পেরেছেন। এটাই ছিল প্রথম মিসটেক।

ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন সুনীল ছেত্রীই

দ্বিতীয় ভুলটা হচ্ছে, আমাদের সেন্টার ব্যাক তপুর পেছন দিয়ে সুনীল ছেত্রী বেরিয়ে গেছে, তপু তাই দেখতে পায়নি। রহমত মিয়ার তখন সুনীলকে ক্লোজ করা উচিত ছিল, কেননা রহমতের যাকে মার্ক করার কথা, সে কিন্তু গোল থেকে অনেক দূরে ছিল। ও তাই আমাদের জন্য কোনো হুমকি ছিলেন না। রহমত এগিয়ে এসে সুনীলকে আটকায়নি, যে কারণে ছেত্রী হেড করে গোল করার সুযোগ পেল৷ আবারও বলছি, পুরো ম্যাচে বাংলাদেশ দুর্দান্ত ডিফেন্ডিং করেছে, ছোট্ট একটা ভুল থেকেই কেবল গোলটা হয়েছে।

সেকেন্ড গোল নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কারণ ম্যাচের তখন অন্তিম মুহূর্ত, বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে, গোল দেয়ার জন্য মরিয়া। একটা গোল তাই হতেই পারে। আর সুনীল ছেত্রী পুরো ম্যাচে যে সুযোগগুলো মিস করেছে, সেগুলো ওর স্বভাববিরুদ্ধ। এই দুই গোল দিয়ে ও পুরোটা পুষিয়ে দিয়েছে আরকি।

ডিফেন্সের ভুলের কারণটা আমার কাছে যা মনে হচ্ছে, রক্ষণ সামলাতে সামলাতে বাংলাদেশ বেশ টায়ার্ড হয়ে পড়েছিল একটা সময়। তো প্রথম গোলে সেই সুযোগটাই ভারত নিয়েছিল। আপনি যদি খেয়াল করেন, রাইট সাইড দিয়ে ভারত প্রচুর অ্যাটাক করেছে, তখন ম্যাচের শেষ মুহূর্ত, পুরো ৯০ মিনিট জুড়ে তো একই ছন্দে খেলা সম্ভব না। শারিরীক ক্লান্তি থেকে ডিসিশন মেকিং-এ একটা সমস্যা তৈরি হয়ই। অন্য সময় আমরা খুব অ্যাগ্রেসিভ তারেক কাজীকেই দেখতে পাই। সামনে এগিয়ে গিয়ে ট্যাকল করে, প্লেয়ারকে খুব তাড়াতাড়ি ক্লোজ ডাউন করে, ঘুরতে দেয় না প্রতিপক্ষকে। তবে ওই মুহূর্তে তারেক কাজীর টায়ার্ডনেসই ওই ক্রসটা হতে দিয়েছে। ওর মাথা তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করেনি বোধ হয়।

বাংলাদেশের ডিফেন্ডিং দেখে নইলে এমনিতে বেশ খুশি। কারণটা হচ্ছে, বাংলাদেশ অনেকক্ষণ পর্যন্ত রক্ষণভাগে ডিসিপ্লিনটা মেইনটেইন করেছিল। প্রথমার্ধে কিছুটা অগোছালো মনে হলেও দ্বিতীয়ার্ধে গুছিয়ে নিয়েছিল নিজেদের।

রাকিবের এই চ্যালেঞ্জটা রেড কার্ড খাওয়ার মতোই

আক্রমণের কথা যদি বলি, বলগুলো যখন আমরা উইন করেছি, সবই লং পাস খেলতে চেয়েছি। কিন্তু ভারতের রক্ষণভাগে যে তিনজন খেলোয়াড় ছিলেন, তারা তিনজনই খুব লম্বা। সেখানে লং পাস খেলাটা অনুচিত হয়েছে বলেই মনে হয় আমার। অবশ্য, লং পাস খেলা ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিল না। ভারতের গ্লেন মার্টিনস, ফার্নান্দেজ আর সুরেশ---তিনজনই খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের ক্লোজ ডাউন করে ফেলেছিল।

কোচ জেমি ডের কৌশল নিয়েও সমালোচনার জায়গা দেখছি না। প্রথমার্ধের ৩৫ মিনিটের সময় জনিকে বদলি করাটাও বুদ্ধিমানের কাজই ছিল বলব। ও আমাদের তেমন কোনো কাজেই আসছিল না। ইব্রাহিমকে নামানোতে ও লেফট উইংয়ে চলে যায়, বিপলু চলে আসে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের রোলে। আর রাকিবকে বদলি করাটাও ভালো সিদ্ধান্ত। কেননা, দ্বিতীয় মিনিটেই হলুদ কার্ড দেখার পর যেকোনো মুহূর্তে লাল কার্ড দেখতে পারত রাকিব। ওর চ্যালেঞ্জটা এত বাজে ছিল, অন্য কোনো রেফারি থাকলে সরাসরি রেড কার্ডও দেখাতে পারতেন।

পুরো খেলার সারসংক্ষেপ যদি তিন লাইনে বলি, বাংলাদেশ নিজেরাই নিজেদের ওপর কিছুটা প্রেশার নিয়ে নিয়েছিল। ভারতকে অনেকক্ষণ পর্যন্ত আটকে রেখেও ছোট্ট একটা ডিফেন্সের ভুলে হেরে যেত হলো। নইলে বাংলাদেশ এই ম্যাচে যেমন খেলেছে, তাতে বাংলাদেশের একটা পয়েন্ট প্রাপ্যই ছিল।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×