এমবাপ্পে নিজেও তো উভয় সংকটে!

উৎপলশুভ্রডটকম

২৬ আগস্ট ২০২১

এমবাপ্পে নিজেও তো উভয় সংকটে!

কিলিয়ান এমবাপ্পে: শরীর প্যারিসে, মন কি মাদ্রিদে?

কিলিয়ান এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমাবেন, বলতে গেলে অনেক বছর ধরে এটা অবধারিতই হয়ে আছে। তবে তা এই মৌসুমেই, নাকি অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী মৌসুমের জন্য, প্রশ্নটা সেখানেই। আর দলবদল পরবর্তী মৌসুমে হলে এমবাপ্পে মুখোমুখি হবেন অদ্ভুত এক পরিস্থিতির। তিনি তো দুই পক্ষকেই কথা দিয়েছেন!

'কবে আর কখন?'

কিলিয়ান এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমাবেন, এ নিয়ে প্রশ্ন ছিল না কখনোই। শৈশব থেকেই এমবাপ্পে স্বপ্ন দেখে এসেছেন মাদ্রিদের ক্লাবটায় খেলার, এটা অজানা নয় কারোরই। ১৩ বছর বয়সেই প্রথম ট্রায়াল দিয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের যুব দলে, পরে মোনাকো অধ্যায় পেরিয়ে প্যারিস সেন্ট-জার্মেইর বদলে রিয়ালকেই বেছে নেওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে কোনো না কোনো কারণে তা শুধু বিলম্বিতই হয়েছে। যে কারণে এমবাপ্পের স্বপ্নটা বাস্তবতার দেখা পায়নি এখনো।

আবারও সেই সম্ভাবনার পালে জোর হাওয়া লেগেছে। খবর যা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এমবাপ্পের আশৈশব স্বপ্নটা এবার সত্যি হয়েও হতে পারে। এমবাপ্পের আগ্রহ নিয়ে তো কখনোই প্রশ্ন ছিল না, তাঁকে দলে পেতে এবার ঝাঁপিয়ে পড়েছে রিয়াল মাদ্রিদও। 'মিশন এমবাপ্পে' প্রকল্প সফল করতে ২০২০ সালের জানুয়ারির পর থেকে অর্থ খরচ করে কোনো খেলোয়াড় কেনেনি রিয়াল মাদ্রিদ। ক্লাবের সমার্থক হয়ে ওঠা সার্জিও রামোসকে পর্যন্ত তাঁর চাহিদামতো চুক্তির প্রস্তাবে 'না' করে দেওয়া হয়েছে; বিদায় জানাতে হয়েছে রাফায়েল ভারানে ও মার্টিন ওডেগার্ডকেও। এর আগের মৌসুমেও সার্জিও রেগুইলন, আশরাফ হাকিমিকে বিক্রি করতে হয়েছে অন্য ক্লাবে; হল্যান্ডের ডনি ফন বিকের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েও পিছিয়ে আসতে হয়েছে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রাখতে। সব খাত থেকে আসা অর্থ জমা হয়েছে একটা প্রকল্পেই, 'মিশন এমবাপ্পে'। শুরুর 'কবে আর কখন' প্রশ্নটা উঠছে তাই ওই কারণেই।

ইতিহাসের খোঁজখবর রাখা ফুটবলপ্রেমীদের কারণটা বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা না মোটেই। ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ কোনো খেলোয়াড়কে চেয়েও পাননি, এমন ঘটনা তো ঘটেইনি বলতে গেলে। অতি সাম্প্রতিক থিবো কোর্তোয়া, এডেন হ্যাজার্ড থেকে শুরু করে টটেনহ্যামের গ্যারেথ বেল, লুকা মডরিচ; রিয়াল মাদ্রিদের জালে ধরা দিয়েছেন সব বড় তারকাই। এমনকি স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন কোনো খেলোয়াড়কে মাদ্রিদের কাছে পাঠাবেন না জানিয়েও বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে।

এমবাপ্পে-রত্নকে শেষ পর্যন্ত রিয়ালের হাতেই তুলে দিতে হবে, এই ধারণা ছড়িয়ে গেছে পিএসজির অন্দরমহলেও। ক্লাবের ক্রীড়া পরিচালক লিওনার্দো দুদিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন, রিয়ালে যাওয়ার ব্যাপারে এমবাপ্পের আগ্রহের কথা। এমবাপ্পের চুক্তির আর এক বছরও বাকি নেই, এমবাপ্পে পিএসজির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করলে এক বছর পর এমবাপ্পেকে ছাড়তে হবে বিনামূল্যেই...পিএসজির এমন একটা ভয় তো আছেই। ক্লাব সভাপতি নাসের আল-খেলাইফিকে তাই ক্লাব সংশ্লিষ্ট অনেকে নাকি পরামর্শও দিয়েছেন, রিয়াল মাদ্রিদের দেওয়া ১৬০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাবেই রাজি হতে। যদিও এমবাপ্পেকে পেতে রিয়ালের প্রবল আগ্রহের কারণে পিএসজি আশা করছে, দলবদলের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার আগেই রিয়াল ২০০ মিলিয়ন ইউরোর কাছাকাছি কোনো প্রস্তাব নিয়ে আসবে। কিন্তু তা যদি না হয়? তখন পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাবে এমবাপ্পের জন্যে। তখন তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষার দায়ের জালে জড়িয়ে যেতে হবে তাঁকে। পিএসজিকে যে কথা দিয়ে রেখেছেন, ফ্রি ট্রান্সফারে প্যারিস ছাড়বেন না।

সবার থেকে আলাদা হয়ে গেছেন এমবাপ্পে। ছবি: ভিডিও​​​​​​

এই দোলাচলের প্রভাব নিশ্চিতভাবেই পড়েছে এমবাপ্পের মনে। পিএসজিতে থেকেও যেন তিনি পিএসজিতে নেই। সর্বশেষ এক অনুশীলন সেশনে দেখা গেছে, দলের বাকি সদস্যরা একসঙ্গে অনুশীলন ভেন্যুতে প্রবেশ করলেও এমবাপ্পে মাঠে ঢুকছেন একাই। বাদবাকি সবাইকে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় পাওয়া গেলেও এমবাপ্পের মুখের হাসিও যেন মলিন গত কিছুদিনে। পিএসজি ম্যানেজার মরিসিও পচেত্তিনো অবশ্য বারবারই বলে যাচ্ছেন, এসব থেকে অন্য অর্থ খোঁজাটা অতি উৎসাহীদের জল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। ব্রেস্তের সঙ্গে লিগ ওয়ানের ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনেই যেমন বলেছেন, 'ভালো একটা মৌসুম কাটানোর লক্ষ্যে ও (এমবাপ্পে) বদ্ধপরিকর। ও পিএসজির খেলোয়াড় এবং আমাদের সঙ্গে খুব ভালো আছে।'

করোনা মহামারীতে আর্থিক দুর্দশায় ভুগছে প্রায় সব ক্লাবই। বার্সেলোনাকে বিনা মূল্যে ছেড়ে দিতে হয়েছে ক্লাবের প্রতীক হয়ে ওঠা লিওনেল মেসিকে, আর্থিক সংকটে পড়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ইতালির ঐতিহ্যবাহী ক্লাব শিয়েভো ভেরোনা। ধারণা করা হচ্ছিল, দলবদলের বাজারে বেশ নিস্তরঙ্গ এক মৌসুমই যাবে এবার। অথচ হচ্ছে উল্টোটা। নাটকীয় সব ঘটনা এরই মধ্যে ঘটে গেছে। করোনা আশীর্বাদ হয়ে এসেছে 'ফ্রি ট্রান্সফার'-এর বাজারে। মেসির মতো সার্জিও রামোস, জিয়ানলুইজি ডোন্নারুমা, সার্জিও আগুয়েরো, মেম্ফিস ডিপাইয়ের মতো তারকা খেলোয়াড়েরাও ক্লাব বদলেছেন বিনা মূল্যে। জ্যাক গ্রিলিশ, রোমেলু লুকাকুর পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ খরচে কার্পণ্য করেনি ম্যানচেস্টার সিটি আর চেলসি। খবর সত্যি হলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও ক্লাব ছাড়তে পারেন এই মৌসুমেই। ম্যানচেস্টার সিটির দ্বারে তাঁর এজেন্ট হোর্হে মেন্দেস ধর্ণা দিয়েছেন বলেও গুঞ্জন। সঙ্গে যদি কিলিয়ান এমবাপ্পের দলও বদলে যায় এই মৌসুমেই, তো এই গ্রীষ্মকালীন দলবদল হয়ে থাকবে স্মরণকালের সবচেয়ে ঘটনাবহুল। মেসির সঙ্গে এমবাপ্পে আর রোনালদোও যোগ হলে সবচেয়ে তারকাবহুলও বলতে পারেন। 

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×