দলবদলের অন্দরমহলে

অ্যাডাম ক্রাফটন

২৬ জুলাই ২০২১

দলবদলের অন্দরমহলে

`অমুক ক্লাব অমুক খেলোয়াড়কে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, ওই খেলোয়াড় তো অনুশীলনই বন্ধ করে দিয়েছেন`-এর বাইরে দলবদলের ভেতরের খবরগুলো জানার সুযোগ কতটুকু? সেই সুযোগটা এবার পাওয়া গেল `দ্য অ্যাথলেটিক`-এর সৌজন্যে। প্রায় এক পক্ষ ধরে বিভিন্ন ক্লাবের চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তা, ক্রীড়া পরিচালক, এজেন্ট আর খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে দলবদলের পেছনের গল্পগুলো উঠেছে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। সেটিরই চুম্বক অংশের অনূদিত রূপ উৎপলশুভ্রডটকম-এর পাঠকদের জন্য।

বছরের ওই সময়টা আবার এসে হাজির। বারো সপ্তাহের মাঝে আদান-প্রদান হবে গুচ্ছের টাকা, ক্লাব কর্তা-এজেন্টরা নামবেন একে অন্যকে টেক্কা দেওয়ার লড়াইতে, ভাগ-বাটোয়ারার হিসাব-নিকাশে সব সময়ই থাকতে চাইবেন জয়ীর প্রান্তে। দর্শকরাও এই বাজারের বাইরে থাকবেন নাকি! গুগল জানাচ্ছে, 'আর্সেনাল ট্রান্সফারস' শব্দ দুটো গত বছরে খোঁজা হয়েছে ৪.৪ মিলিয়ন বার, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৩.৬ মিলিয়ন। পরের মৌসুমে কোন ক্লাবের খেলাগুলোতে চোখ রাখতে হবে, প্রিয় খেলোয়াড়টা প্রিয় দলে গেল কি না-- প্রশ্নের উত্তরগুলো তো জানা যাবে দলবদলের এই মহোৎসবেই।

একটা সময় ছিল, যখন দলবদলের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ই-মেইল চালাচালিতেই সাড়া হতো। তবে যুগ তো বদলেছে। প্রতিটা ক্লাবের মালিক, চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী, স্কাউট দলের প্রধান আর ম্যানেজারেরই এখন 'ট্রান্সফার চ্যাট' বলে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। শুধু তো নিজেদের মধ্যেই নয়, এজেন্ট-ক্লাব, এমনকি ক্লাবগুলোর মধ্যেও গ্রুপ চ্যাট আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রীড়া পরিচালক জানান, 'ক্লাবগুলোর মধ্যে দরাদরিটা এখন হোয়াটসঅ্যাপেই হয়। একবার পাকা কথা হয়ে গেলে তবেই চূড়ান্ত প্রস্তাবপত্রটা মেইল করা হয়।'

তো মে'র শেষ থেকেই এই গ্রুপগুলো সচল হতে শুরু করে, সংশ্লিষ্টদের আইফোনগুলোও মেসেজে-মেসেজে ভর্তি হতে শুরু করে এই সময় থেকেই। এজেন্টদের ব্যস্ততা এতই বেশি যে, বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায়, 'আমার কাছে অমুক খেলোয়াড় আছে' মেসেজটা তাঁরা সব ক্লাবের কাছেই কপি-পেস্ট করে পাঠাচ্ছেন তারা।

হোয়াটসঅ্যাপেই বেশি, তবে ফোন-ইমেইল-লিংকডইন….যোগাযোগের মাধ্যমের তো অভাব নেই এখন। এক ক্লাবের চেয়ারম্যান জানাচ্ছেন, ২০১৮ সালে তিন সপ্তাহের মধ্যে তাঁর সঙ্গে ১২৫ জন এজেন্ট যোগাযোগ করেছিলেন। এবং এখানেই জাগে প্রথম প্রশ্নটা, এদের কতজন সত্যি সত্যিই খেলোয়াড়ের প্রতিনিধিত্ব করছে? তিনি তো এমনও জানাচ্ছেন, 'পাঁচজন এজেন্ট একই খেলোয়াড়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে, এমন ঘটনাও  ঘটেছিল একবার।' ক্লাবগুলোকে তাই এগোতে হয় খুবই সতর্কভাবে। নয়তো দেখা গেল, খুবই সরল মনে যে উত্তর দিয়েছেন, তারই স্ক্রিনশট টুইটারে ছড়িয়ে পড়েছে বা ট্যাবলয়েডের পাতায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। তখন তো ক্লাবের জন্য কিংবা চেয়ারম্যানের জন্য পরিস্থিতিটা ভীষণ বিব্রতকর হবে।

সত্যিকারের এজেন্টদের নিয়েও তো ক্লাবগুলোর হরেক রকম অভিজ্ঞতা। কোনো কোনো এজেন্ট খুবই ভালো, টাকার অঙ্কে না হলেও ক্যারিয়ারের দিক থেকে খেলোয়াড়কে সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়াটাই যাঁদের লক্ষ্য। তাঁরা জানেন, খেলোয়াড়কে ঠিক ক্লাবে খেলাতে পারলে আখেরে লাভটা খেলোয়াড় আর তাঁরই হবে।

আবার এমন এজেন্টও আছেন, যাঁদের প্রশ্নই থাকে, 'আমি কী পাচ্ছি?' এক ক্লাব সভাপতি তো এমনও বলেন, 'ওরা রীতিমতো দুঃস্বপ্ন। একবার এক এজেন্ট তো ফোন করেই বলতে শুরু করেছিল, "আমি ১০০ হাজার পাউন্ড না পেলে কিন্তু ওই খেলোয়াড়কে আপনার ক্লাবে দেব না।" বহু বছর বাদে খেলোয়াড়টির সঙ্গে ইএফএল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল আমার। ওকে যখন বললাম, আমরা তো তোমাকে দলে নিতে আগ্রহী ছিলাম; শুনে ও আকাশ থেকে পড়ল। এজেন্ট নাকি ওকে কিছুই  জানায়নি। জানালে এক ছুটে ও আমাদের ক্লাবে চলে আসত।'

খেলোয়াড়দের সঙ্গে এজেন্টের আস্থার জায়গাটায় তাই চিড় ধরছে ক্রমশ। খেলোয়াড়কে মুগ্ধ করতে 'অমুক ক্লাব তো তোমার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে'-জাতীয় প্রতারণাও করছেন এজেন্টরা। যে কারণে অনেক খেলোয়াড়ই তাঁর পরিবারেরই কাউকে নিজের এজেন্ট বানিয়ে নিচ্ছেন এখন।

মিনো রাইওলা, বিশ্বের সবচেয়ে হেভিওয়েট এজেন্ট বলা যায় তাঁকেই। ছবি: গেটি ইমেজেস

তবে সমস্যা আছে এখানেও। এমন এজেন্টেরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে আজকাল, যারা সাইনিং-ফি বোঝে না, কীভাবে চুক্তি করতে হয় তা-ও বোঝে না। এক ক্রীড়া পরিচালক জানান, 'আমার অফিসে এক খেলোয়াড়ের বাবা এসেছিল। এসেই তো বলছেন, উনি ওর (খেলোয়াড়কে) শৈশবে ওকে নিয়ে সারা দেশ চষে বেড়াতেন, এখন ট্রান্সফার ফি'র মাধ্যমে সেই কষ্টের প্রতিদান পেতে চান।'

নিজের সুখ-আহ্লাদের চিন্তা করতে গিয়ে অনেক বাবাই তাই সন্তানকে ঠেলে দিচ্ছেন প্রবল চাপের মধ্যে। বেশ কিছু ক্লাব অবশ্য এমন পরিবারের সঙ্গেই দর কষাকষি করতে আগ্রহ বোধ করেন। মুখে 'সন্তানের জন্য সেরাটা তো বাবা-মা'ই বুঝবেন' বললেও এর অন্তর্নিহিত কারণ, 'চুক্তির ধারা-উপধারা সম্পর্কে তাঁদের অধিকাংশেরই বিন্দুবিসর্গ জ্ঞান না থাকায় ক্লাবগুলো বাঁচিয়ে ফেলতে পারে বেশ কিছু পরিমাণ অর্থ।'

এজেন্ট নিয়ে নানা অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা অর্জনের পর ক্লাবগুলো তাই চেষ্টা করছে ভিন্ন পন্থা অবলম্বনের। ২০১৭ সালে ড্যানিশ ব্যবসায়ী জোনাস আনকারসেন 'ট্রান্সফাররুম.কম' নামে একটা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে ক্লাবগুলোর সামনে তাদের পছন্দসই পজিশনের খেলোয়াড়কে ধারে অথবা পাকাপাকিভাবে কিনে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। খেলোয়াড় বিক্রি করতে ইচ্ছুক ক্লাবগুলোও সেখানে নিজেদের তুলে ধরতে পারছে। আনকারসেন জানাচ্ছেন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৫টা দেশের ৫৩টা ক্লাব তাঁদের প্ল্যাটফর্মের সুবিধা নিয়েছে, যার মধ্যে জুভেন্টাস-ম্যানচেস্টার সিটির মতো ক্লাবগুলোও আছে। ক্লাবগুলো সরাসরি নিজেদের মাঝে কথা বলে নিচ্ছে বলে কোনো এজেন্সি ফি দিতে হচ্ছে না কিংবা মধ্যস্বত্বভোগীদের তোষামোদও করতে হচ্ছে না। একবার তো স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে সব ক্লাবের নির্বাহীরা সভা করে নিজেদের চাহিদাগুলো ভাগাভাগিও করে নিয়েছিলেন৷ এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এরই মধ্যে দু শ'র বেশি খেলোয়াড়ের দলবদল হয়েছে।

পাঁচ তারকা হোটেল কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট চাওয়ার দাবিগুলো না হয় কিছুটা কষ্ট হলেও হজম করে নেওয়া যায়; কিন্তু কোনো খেলোয়াড় যখন তাঁর সদ্য হওয়া 'বিবাহবিচ্ছেদ'-এর খরচাপাতি ক্লাবের কাছে দাবি করেন, তখন 'দূর হ' বলে ফোন কাটা ছাড়া আর কী-ই বা করার থাকে!

কিন্তু আনকারসেনের এই উদ্যোগের পরও এজেন্টদের দমিয়ে রাখা যাচ্ছে কই! ইংল্যান্ডের ক্লাব ফুটবলের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, খেলোয়াড়টি বর্তমানে যে ক্লাবে খেলছেন, সে ক্লাবের অনুমতি ব্যতিরেকে খেলোয়াড়ের সঙ্গে কোনোরূপ কোনো যোগাযোগ করা যাবে না-- এটাই বা ক'জন মানছেন! খেলোয়াড়ের সম্মতিরও তো একটা ব্যাপার আছে। এক ক্লাব পরিচালক জানাচ্ছেন, '৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই খেলোয়াড়ের এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যক্তিগত চুক্তি সেরে রাখা হয়। পরবর্তীতে ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।'

মাঝেমধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ক্লাবগুলোই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় পল পগবার গল্পটা। তিনি রিয়াল মাদ্রিদে আসতে চাইলেও বাধার দেয়াল তুলেছিল তাঁর ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এরকম পরিস্থিতিতে অনেক ক্ষেত্রেই খেলোয়াড়, এজেন্ট আর খেলোয়াড়কে দলে টানতে ইচ্ছুক ক্লাব মিলে নিয়েছেন নতুন কৌশল। এক চেয়ারম্যান যেমন জানাচ্ছেন, 'আমরা এজেন্টকে গিয়ে বলি, আমরা পাঁচবার প্রস্তাব পাঠিয়েছি, কিন্তু প্রতিবারই প্রত্যাখ্যাত হয়েছি। এবার তোমার হাত লাগাও। খেলোয়াড়টা ক্লাব ছাড়তে উদগ্রীব-- বাজারে এমন গল্প ছড়াও।'

মাঝেমধ্যে এজেন্টরা খেলোয়াড়দের বেতন বাড়াতেও অন্য ক্লাবকে ব্যবহার করেন। ওই চেয়ারম্যানই বলছেন, 'একবার এক খেলোয়াড় আমাদের দলে আসতে চাইল। কিন্তু ওর এজেন্ট চাইছিল, আমাদের ব্যবহার করে এর আগের ক্লাবেই চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে। আমরা পাঁচটা প্রস্তাব পাঠালাম। ওর ক্লাব তো রাজি হলোই না, উল্টো ওর চুক্তি দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিল। মানে, মাঝখান থেকে আমরা ব্যবহৃত হলাম।'

অনেক সময় দেখা যায়, ক্লাবগুলো দলবদলে রাজি হলেও জুড়ে দেয় অদ্ভুত কিছু শর্ত। বিশেষ করে ধারের চুক্তিগুলোতে দেখা যায় এমন সব শর্ত। একবার যেমন লিভারপুলের কাছ থেকে একজন উদীয়মান প্রতিভাকে ধারে দলে টানতে চেয়েও পরে পিছু হটেছে ইংলিশ লিগের আরেক ক্লাব। কারণ, লিভারপুল শর্ত দিয়েছিল, খেলোয়াড়টিকে নির্দিষ্ট একটা সময় মাঠে না রাখলে ছয় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ওই ক্লাবের চেয়ারম্যান তাই প্রশ্ন ছোড়েন, 'যোগ্যতায় নয়, বরং অন্য ক্লাবকে দেওয়া কথা রাখতে গিয়েই ওই খেলোয়াড়টাকে খেলানো হচ্ছে-- এমন খবর ফাঁস হলে ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা কেমন হবে, একবার ভেবে দেখুন তো!'

সমস্যা আরও আছে। খেলোয়াড়দের সঙ্গে ব্যক্তিগত চুক্তিতে সম্মত হওয়ার আগেও তো ক্লাবগুলোকে শুনতে হয় হাজার বায়নাক্কা। দেখা গেল, চুক্তিটা হয়ে যাবে-যাবে ভাব, এমন মুহূর্তে এজেন্ট তাঁর খেলোয়াড়ের তরফ থেকে একটা স্ক্রিনশট পাঠিয়েছেন, যেখানে সাইনিং ফি হিসেবে ১০ হাজার পাউন্ড দাবি করা হয়েছে। একজন এজেন্ট তো এমন দাবিও করছেন যে, শুধুমাত্র খেলোয়াড়ের পরিবারের জন্য যথেচ্ছ পরিমাণ বিমানভ্রমণের টিকেট দিতে রাজি হয়নি বলে তাঁর এক খেলোয়াড়ের সঙ্গে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ ছয় দলের একটি ক্লাবের কয়েক মিলিয়ন পাউন্ডের চুক্তি হতে হতেও হয়নি।

গ্যাঞ্জাম বাঁধে ম্যাচের টিকেট নিয়েও। ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের একটা দলের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, প্রতিটা ম্যাচে প্রতি খেলোয়াড় চারটা করে টিকেট পাবেন। কিন্তু ক্লাবের ক্রীড়া পরিচালকের দাবি, 'আমরা এমন খেলোয়াড়ও পেয়েছি, যার পরিবার প্রতি ম্যাচে ১৬টা টিকেট চায়।' আলাদা আলাদা খেলোয়াড়ের জন্য আলাদা নিয়ম মানা হলে, ড্রেসিংরুমে শান্তি থাকে কী করে!

শান্তি বিনষ্ট করা এমন অনেক উদ্ভট দাবিই অবশ্য খেলোয়াড়েরা করেন। পাঁচ তারকা হোটেল কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট চাওয়ার দাবিগুলো না হয় কিছুটা কষ্ট হলেও হজম করে নেওয়া যায়; কিন্তু কোনো খেলোয়াড় যখন তাঁর সদ্য হওয়া 'বিবাহবিচ্ছেদ'-এর খরচাপাতি ক্লাবের কাছে দাবি করেন, তখন 'দূর হ' বলে ফোন কাটা ছাড়া আর কী-ই বা করার থাকে!

মাঠের ভেতরের দাবি-দাওয়াতেও তো যোগ হচ্ছে অভিনবত্ব। 'গোল বোনাস' যায় সেন্টার ফরোয়ার্ডদের ব্যাংকে। ইংল্যান্ডের শীর্ষ চার লিগে বেশ কয়েক বছর আগেই ঢোকানো হয়েছে অ্যাসিস্ট বোনাস, প্লে-মেকার আর উইঙ্গাররাও তাই চলে এসেছেন সুবিধাভোগীদের আওতায়। আর অতিসম্প্রতি তো চুক্তিতে ঢোকানো হচ্ছে সেট-পিস বোনাসও! যার মানেটা হচ্ছে, কর্নার থেকে দল কোনো গোল পেলে বোনাস দেওয়া লাগবে একাদশে থাকা সবাইকেই। কেন, তা কেন? গোল না হয় একজন করলেন, কিন্তু বাকিরা যে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে ধস্তাধস্তি করলেন, সতীর্থর জন্য জায়গা বানালেন, সেটার মূল্য দেওয়া লাগবে না?

ক্লাবগুলো নিজেদের তাগিদেই অবশ্য অনেক বোনাসের ব্যবস্থা করছেন আজকাল। মৌসুমের শুরুর ছয় সপ্তাহে গোল-অ্যাসিস্ট করলে কিংবা ক্লিন শিট রাখতে পারলে যা কথা ছিল তার চেয়ে তিনগুণ বেশি বোনাস দেওয়া হবে-- এমন শর্তেও রাজি হচ্ছে ক্লাবগুলো। মৌসুমের শুরুর দিকে বেশি গোল, বড় জয় মানেই তো মৌসুমের শেষে গিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা, তাই না?

ক্লাব-এজেন্ট-খেলোয়াড়দের মধ্যে দেনদরবার চুকানোর পরও বাকি থেকে যায় আরেকটা সমস্যার সমাধান। খেলোয়াড়দের তো পরিবারও আছে, নাকি? এক কোচ যেমন জানাচ্ছেন, 'একবার ইংল্যান্ডের দক্ষিণের একটা ক্লাবের দায়িত্বে ছিলাম, কিন্তু ক্লাবটার আসল ম্যানেজার ছিল খেলোয়াড়দের বউরা। আমি এখন খেলোয়াড়ও পেয়েছি, সকালবেলা ফুটবল খেলে বিকালে যার ঘরজামাই সেজে লিভারপুল চলে যেতে হতো। কারণ, ওর বউ লিভারপুল ছাড়তে রাজি হচ্ছিল না। ওকে তাই প্রতিদিন ২৫০ মাইল গাড়ি চালিয়ে এসে অনুশীলন করতে হতো। খুব স্বাভাবিকভাবেই ওর পারফরম্যান্সেও এর প্রভাব পড়েছিল।'

এক ক্লাবের ক্রীড়া পরিচালক তাই জানাচ্ছেন, দেনদরবার করার সময় খেলোয়াড়ের সঙ্গে সঙ্গে খেলোয়াড়ের স্ত্রীকেও   ক্লাব-চত্বরে আহ্বান জানাতে শুরু করেছেন তারা। ম্যানেজার যখন খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলছেন, দেখা যাচ্ছে, তাঁর স্ত্রী কথা বলছেন এজেন্ট-ক্লাব চেয়ারম্যানের সঙ্গে। তাঁকেও তো নতুন ক্লাবটা বুঝে নিতে হবে।

সব পক্ষ যখন ঐকমত্যে পৌঁছায়, তবেই বাজে দলবদলের বাঁশি। কাজটা সব পক্ষেই কঠিন, তবে ক্রীড়া পরিচালকের জন্য বোধ হয় একটু বেশিই। এদেরই একজন যেমন বলছেন, 'ক্লাবের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে টাকার জন্য। এজেন্টের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাঁর আর তাঁর খেলোয়াড়ের চাহিদার জন্য। ম্যানেজারকে শান্ত করতে হচ্ছে, পাঁচ খেলোয়াড় পেয়েও আরেক খেলোয়াড়ের আক্ষেপ তাঁর যাচ্ছে না বলে। প্রতি রাতে একদম নিঃস্ব হয়ে বাড়ি যেতে হয় আমাকে।'

বাড়ি গিয়েও যে জিরোবেন, সে উপায় কোথায়! পরদিন থেকেই নামতে হবে নতুন খেলোয়াড়ের সন্ধানে। দল গোছাতে তো মাত্র বার সপ্তাহই পাওয়া যাবে!

*'দ্য অ্যাথলেটিক' থেকে ভাষান্তর: রিজওয়ান রেহমান সাদিদ

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×