গার্দিওলার যে চ্যালেঞ্জটা জিততে বাকি

উৎপলশুভ্রডটকম

২৬ আগস্ট ২০২১

গার্দিওলার যে চ্যালেঞ্জটা জিততে বাকি

পাঁচ বছরে ম্যানচেস্টার সিটিকে তিনবার প্রিমিয়ার লিগ জিতিয়েছেন তিনি, তবে চ্যাম্পিয়নস লিগের স্বাদ পাওয়া হয়নি গত এক দশকেও। তৃতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য গার্দিওলা অবশ্য আর দুই মৌসুমই পাচ্ছেন। নিজেই জানিয়েছেন, এরপর কোনো একটা জাতীয় দলের দায়িত্ব নেবেন। শুধু ওই চ্যালেঞ্জটাই যে জিততে বাকি।

শুধু তো ঘণ্টাদুয়েক ডাগআউটে থাকাই নয়; ম্যাচের আগে গণ্ডাখানেক ভিডিও দেখে ম্যাচের কৌশল সাজাও, খেলোয়াড়দের তৈরি করো; ম্যাচের আগে-পরে প্রেস-দর্শকদের প্রত্যাশার চাপ সামলাও, হেরে গেলে সব দায় নিজের ঘাড়ে নাও; এবং এরপরও ফলে সামান্য হেরফের হলেই চাকরি হারাও-- ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ফুটবল ম্যানেজারের দায়িত্বটা স্বেচ্ছায় নিজেকে ফুটন্ত কড়াইয়ে সঁপে দেওয়ার মতোই। এমন উত্তাপে বছরের পর বছর টিকে থাকা তো রীতিমতো অগ্নিপরীক্ষা। পেপ গার্দিওলার তাই মনে হচ্ছে, এমন পরীক্ষায় সাত বছরই যথেষ্ট। এরপর বিশ্রাম চাই। ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে চুক্তি বাড়িয়েছিলেন গত নভেম্বরেই। তবে বছর না পেরোতেই জানিয়ে দিলেন, হাঁপিয়ে উঠেছেন। ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করবেন না আর। ২০২২-২৩ মৌসুমেই সিটির ডাগআউটে শেষ হচ্ছে তাঁর সময়।

সম্প্রতি এক্সপি ইনভেস্টিমেন্টোসের এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রশ্ন উঠেছিল সিটিতে গার্দিওলার ভবিষ্যত নিয়ে। সেখানেই ক্লাব ছাড়ার আভাস দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, 'জানি না, এখানে সাত বছর কাটানোর পর আরও কিছুদিন থাকব কি না। তবে আমার যা মনে হয়, একটা বিরতি নেব আমি।'

কেন বিরতি নেবেন, ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটারও, 'আমরা কী করেছি, সেটা বুঝতে হলেও আমাকে কিছুটা থামতে হবে। কিভাবে কাজগুলো করেছি, আমি যে কোচদের কাজ দেখতে মুখিয়ে আছি, তাঁদের থেকে শিখতেও আমাকে বিরতি নিতেই হবে।'

কোচিং থেকে গার্দিওলার বিরতি নেওয়াটা অবশ্য নতুন কিছু হবে না। শীর্ষ পর্যায়ে প্রথম সামলেছিলেন বার্সেলোনার দায়িত্ব, সেখানে চার বছরে কাতালান ক্লাবটার হয়ে ১৪ শিরোপা জেতার পর স্বেচ্ছা নির্বাসনে গিয়েছিলেন এক বছরের জন্য। প্রতিদিনই খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনার চ্যালেঞ্জটা আর উপভোগ করছিলেন না বলেই যে বিরতি। বিরতি কাটিয়ে ফিরেছিলেন জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ দিয়ে। সেখানে তিন মৌসুমের প্রতিবারই জিতেছিলেন বুন্দেসলিগা, দুবার ডিএফবি পোকালসহ জিতেছিলেন আরও চার শিরোপা।

সব তাঁর পরিকল্পনা মতো এগোলে সিটিতে তিনি থাকবেন ঠিক সাত বছর। সেই ২০১৫-১৬ মৌসুম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত পাঁচ বছরে সিটিকে জিতিয়েছেন তিনটি প্রিমিয়ার লিগ, দুবার তুলেছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালেও। গুঞ্জন আছে, ২০১৯ কিংবা গত মৌসুমের কোনো একটাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিততে পারলে সিটিকে বিদায় বলে দিতেন এতদিনে। তা যখন হয়নি, ফের সেই চেষ্টা করবেন চুক্তির বাকি থাকা দুই মৌসুমে।

যদি এই দুই মৌসুমেও ব্যর্থ হয়েই ফিরতে হয় তাঁকে, তো তৃতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্নটা অধরাই থেকে যাবে তাঁর। কেননা, এরই মধ্যে নতুন চ্যালেঞ্জ খুঁজে পেয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রেও গার্দিওলাকে ব্যতিক্রমই বলতে হবে। প্রায় সব কোচই যেখানে আঁকড়ে পড়ে থাকতে চান একটি দলেই, গার্দিওলা সেখানে চ্যালেঞ্জ খুঁজেছেন প্রতিনিয়ত। বায়ার্নের সাজানো-গোছানো দল ছেড়ে সিটিতে আসার পেছনের কারণও ছিল সেটি। এবার সিটি ছাড়তে চাইছেন কোনো একটা জাতীয় দলকে শিরোপা জেতানোর লক্ষ্যে। নিজেই জানিয়েছেন, কোচিং ক্যারিয়ারের এই শেষ পর্যায়ে এসে জাতীয় দলের চ্যালেঞ্জ জেতাটাই বাকি তাঁর, 'হ্যাঁ, কোনো একটা দলকে ইউরো, কোপা আমেরিকা কিংবা বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করাটা আমি উপভোগই করব। তাই, যদি সম্ভব হয়, জাতীয় দলই পরবর্তী ধাপ হতে পারে।'

দুই মৌসুম বাদেও গার্দিওলা এই পরিকল্পনাতেই অটল থাকেন কি না, সেটাই এখন দেখার।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×