ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচের ভবিষ্যৎ কী?

রিজওয়ান রেহমান সাদিদ

৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচের ভবিষ্যৎ কী?

সাও পাওলোর মাঠে

যে ম্যাচের জন্য অধীর আগ্রহে ছিল পুরো বিশ্ব, সেই ম্যাচটাই হয়ে গেল প্রহসন। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচটি মিনিট পাঁচেক পরই বন্ধ হয়ে যায় করোনা বিধিনিষেধের জটিলতায়। কী হয়েছে মাঠে, ম্যাচের ভবিষ্যত কী লেখা আছে...তা জেনে নিন এখানে।

কানাঘুষা শোনা যাচ্ছিল আগে থেকেই। ব্রাজিলের স্বাস্থ্য বিভাগের করোনা বিধিনিষেধের বেড়াজালে আর্জেন্টিনা পাবে না এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, জিওভান্নি লো সেলসো ও এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়াকে। কিন্তু ম্যাচ শুরুর এক ঘণ্টা আগে ঘোষিত একাদশে জায়গা পেয়েছিলেন বুয়েন্দিয়া ছাড়া বাকি তিনজনই; এমনকি রেফারি যখন কিক-অফের বাঁশি বাজাচ্ছেন, তখনো মাঠে ছিলেন প্রত্যেকেই। তখন ধারণা করাটাই স্বাভাবিক, ওই জটিলতা বোধ হয় কেটে গেছে লোকচক্ষুর অগোচরেই।

তখনো কি কেউ জানতেন, ব্রাজিলের স্বাস্থ্য বিভাগ বাড়া ভাতে ছাই ঢালতে অপেক্ষা করবে ম্যাচ শুরু হওয়া অব্দি! ম্যাচের বয়স তখন পাঁচ মিনিট ছুঁয়েছে কি ছোঁয়নি, আচমকাই ডাগআউট দখল করে নিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা। জানালেন, ওই চারজনকে নিয়ে আর্জেন্টিনা খেলতে পারবে না।

খেলা বন্ধ হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গেই। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর কনমেবল টুইট করে জানায়, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ রেফারির পরামর্শে স্থগিত করা হয়েছে। এর আগেই অবশ্য পুরো পৃথিবীকে হেলিয়ে দেওয়ার কাজ সারা!

মাঠে কী হয়েছে?

মাঠ থেকে আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়েরা উঠে গিয়েছিলেন খেলা থামার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। তবে লিওনেল মেসি আর লিওনেল স্কালোনি মাঠে ফেরত এসে কথা বলেছিলেন তিতে, কাসেমিরো এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাদের সঙ্গে। মেসি শুরুতেই জানিয়ে দেন, তাঁরা মাঠ ছাড়ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্তাকে তখন বলতে শোনা যায়, তারা ভুল পন্থায় কাজটা করেছেন, তবে খেলোয়াড়দের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু মেসি মানতে নারাজ এই অভিযোগ। মেসি রাগতস্বরেই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন, 'আমরা তিনদিন ধরে এখানে আছি। আপনারা ম্যাচ শুরু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন? আপনারা প্রথম দিনই আসতেন! আমাদের আগে সতর্ক করা হলো না কেন?'

স্কালোনিও সুর মিলিয়েছেন মেসির কথাতেই। তিনি বলছিলেন, 'তারা (স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন) হোটেলে এলো না কেন? কনমেবল বলেছে, ওরা (ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড়েরা) খেলতে পারবে।'

পরে অবশ্য ব্রাজিলের স্বাস্থ্য বিভাগের ওপর দোষ চাপাননি স্কালোনি। বরং খেলা বন্ধ হওয়া নিয়েই নিজের হতাশা ব্যক্ত করেছেন, 'খুবই দুঃখজনক। আমি কোনো দোষী খুঁজতে চাইছি না। তবে একটা কথাই বলতে পারি, খেলায় বাগড়া দেওয়ার জন্য সময়টা আদর্শ ছিল না।'

ম্যাচের ভাগ্যে কী লেখা আছে?

খেলা থেমে যাওয়ার প্রায় মিনিট ৪৫ পর কনমেবল আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে। তবে এই ম্যাচের ভবিতব্য কী, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি এখনো।

কোথাও বলা হচ্ছে, খেলা ফের মাঠে গড়াতে পারে পর দিনই (সোমবার)। কেউ বা আবার বলছেন, এই ম্যাচের ফলাফল এখন আর মাঠে নয়, নির্ধারিত হবে ফিফার টেবিলে। ম্যাচ রেফারি এবং অফিসিয়ালরা প্রতিবেদন পাঠাবেন ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে। সে আলোকেই সিদ্ধান্ত আসবে ফিফার তরফ থেকে।

কী সিদ্ধান্ত আসতে পারে?

এখনো বলা যাচ্ছে না কিছুই। এমনিতে কনমেবলের নিয়ম-নীতির ৭৪ নম্বর ধারায় স্পষ্ট করে লেখা আছে, একবার ম্যাচ শুরু হয়ে গেলে খেলা থামিয়ে খেলোয়াড়দের ম্যাচ খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যাবে না। খেলোয়াড় সংক্রান্ত কোনো জটিলতা থাকলে সেটা ম্যাচ শুরুর আগেই মিটিয়ে ফেলতে হবে। নতুবা অপেক্ষা করতে হবে ম্যাচ শেষ হওয়া পর্যন্ত৷ কিন্তু ম্যাচ চলাকালীন সময়ে কোনো দলের কারণে ম্যাচ থেমে গেলে সে দল হারাবে ম্যাচ খেলার যোগ্যতা। প্রতিপক্ষকে দেওয়া হবে তিন পয়েন্ট।

এই নিয়মে পয়েন্ট পাওয়ার কথা আর্জেন্টিনারই। কিন্তু করোনা মহামারীতে ফিফা অন্তর্ভুক্ত করেছে স্বাস্থ্যবিধি মানা সংক্রান্ত একটা ধারাও; যেখানে বলা হয়েছে, আয়োজক দেশের তৈরি করা স্বাস্থ্যবিধান মেনেই খেলতে যেতে হবে সফরকারীদের। তাই যদি ফিফা কর্তারা নিশ্চিত হন যে, আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা ব্রাজিলের বেঁধে দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মানেননি, সেক্ষেত্রে জয়ী ঘোষণা করা হবে ব্রাজিলকে।

যদি, কিন্তু থেকে যাচ্ছে এরপরও। যদি কোয়ারেন্টিন ইস্যু সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকার পরও আর্জেন্টাইন একাদশকে ফিফার ম্যাচ অফিসিয়ালরা অনুমোদন দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে তো এই প্রহসন রচনার দায়টা ফিফার ওপরই বর্তাবে।

আদতেই কী হয়েছে কিংবা হবে, তা জানতে আরও কিছুক্ষণ তাই অপেক্ষাই করতে হচ্ছে।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×