ইউরোপে ইউনাইটেডের শেষ ম্যাচের মতোই প্রত্যাবর্তনেও হার রোনালদোর

কাশীনাথ ভট্টাচার্য

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

ইউরোপে ইউনাইটেডের শেষ ম্যাচের মতোই প্রত্যাবর্তনেও হার রোনালদোর

ইয়াং বয়েজের উৎসবের রাত

২০০৯-এর ২৭ মে`র পর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আবার মাঠে নামলেন ইউরোপে ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১। এবং, রাজকীয় প্রত্যাবর্তন সম্পূর্ণ করতে চেষ্টা করেছিলেন, প্রিমিয়ার লিগে জোড়া গোলের পর ইউরোপেও প্রথম ম্যাচেই গোল পেয়ে। তাঁরই পরিবর্তে ৭১ মিনিটে মাঠে-আসা জেসে লিনগার্ডের শেষ মিনিটের ভুলে যা হয়ে গেল মূল্যহীন।

ইউরোপে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে শেষ ম্যাচে হেরেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ১২ বছর পর ফিরে প্রথম ম্যাচেও একই ফল। ২০০৯ রোমের পর ২০২১-এ সুইজারল্যান্ড থেকেও হেরেই ফিরতে হল ক্রিস্টিয়ানোকে! পার্থক্য, গোল পেলেন, যা সেবার পাননি।

‘'চ্যাম্পিয়নস লিগ শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সালে। তারপর আর কোনো দল পরপর দুবার জেতেনি। খুব কঠিন কাজ, কিন্তু অসম্ভব ন্য। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এখন রোমে ফাইনালে পৌঁছানোর লক্ষ্যে দৌড়াবে,'...বলেছিলেন অ্যালেক্স ফার্গুসন। ২০০৮-এর ফাইনালে চেলসিকে টাইব্রেকারে হারিয়েই।শেষ মিনিটে জয়সূচক গোল করার পর ইয়াং বয়েজের উল্লাসে ভেসে যাওয়া

লুঝনিকির সেই জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে বসে নোট নিতে নিতে হতবাক। কী বলছেন ফার্গি! এক ঘণ্টাও হয়নি ইউরোপ-সেরার ট্রফি জিতেছেন। সাজঘর উৎসবে মত্ত। তিনি কিন্তু ‘টার্গেট’ দিয়ে দিয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো-রুনি-গিগসদের। ‘এবার জিতেছ, ভালো কথা। সত্যিই সেরা হলে আরও একবার জিতে দেখাও!’

পঁচিশ বছরে মাত্র দুবার ইউরোপ-সেরা হওয়া ম্যানেজার ফার্গির জীবনে সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তি। কিন্তু রোনালদোরা তাঁকে পরের বারও ফাইনালে পৌঁছে দিয়েছিলেন যেখানে রোমের স্তাদিও অলিম্পিকোতে লিওনেল মেসি নিয়ে গিয়েছিলেন শিরোপা। সেই ফাইনালই ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড জার্সিতে ক্রিস্টিয়ানোর শেষ ম্যাচ, ইউরোপে। তারপর রিয়াল মাদ্রিদে গিয়ে রূপকথার উত্থান।

২০০৯-এর সেই ২৭ মে'র পর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আবার মাঠে নামলেন ইউরোপে ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১। এবং, রাজকীয় প্রত্যাবর্তন সম্পূর্ণ করতে চেষ্টা করেছিলেন, প্রিমিয়ার লিগে জোড়া গোলের পর ইউরোপেও প্রথম ম্যাচেই গোল পেয়ে। তাঁরই পরিবর্তে ৭১ মিনিটে মাঠে-আসা জেসে লিনগার্ডের শেষ মিনিটের ভুলে যা হয়ে গেল মূল্যহীন।

তবুও, এখন ক্রিস্টিয়ানো যা-ই করেন, রেকর্ড! ইয়ং বয়েজের বিরুদ্ধে বার্নের ওয়ানকডর্ফ স্টেডিয়ামে খেলতে নামলেন ইউরোপে ১৭৭তম ম্যাচ। ছুঁয়ে ফেললেন ইকার ক্যাসিয়াসের ইউরোপে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড। পরের ম্যাচেই একক সর্বোচ্চ হয়ে উঠবেন। গোলটা ১৩৫তম। এমনিতেই সর্বোচ্চ, দ্বিতীয় স্থানে থাকা মেসির (১৪৯ ম্যাচে ১২০) সঙ্গে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে রাখলেন। আগামীকাল ক্লাব ব্রুগের বিরুদ্ধে পিএসজির হয়ে মাঠে নামলে যা কমানোর চেষ্টা করবেন আবার মেসিও!১৭৭তম ম্যাচে ১৩৫তম গোল করে ইউনাইটেডকে এগিয়ে দিয়েছিলেন রোনালদো

ক্রিস্টিয়ানোর গোলটা আবারও বিপক্ষ গোলরক্ষকের ভুলে। পাসটা ডান পায়ের আউট স্টেপ দিয়ে রেখেছিলেন তাঁর পর্তুগাল-সতীর্থ ব্রুনো ফার্নান্দেজ। ইয়াং বয়েজের লেফট ব্যাক বুঝতে ভুল তো করলেনই, বলের পেছনেও ছুটলেন না। পেছন থেকে ফাঁকায় এসে আবারও ঠিক জায়গায় ঠিক সময়ে ক্রিস্টিয়ানো। ডান পায়ে শট রেখেছিলেন চলতি বলেই। ইয়াং বয়েজের অধিনায়ক-গোলরক্ষক ভন বলমোস-এর দুপায়ের ফাঁক গলে যা পেরিয়ে যায় গোললাইন। বলমোস চেষ্টা করেছিলেন গোললাইনের ভেতর থেকে বল ফেরাতে। এখন অবশ্য এই প্রচেষ্টাগুলো সফল হয় না আর, যেমন হয়েছিল ম্যানুয়েল নয়্যারের, ২০১০ বিশ্বকাপে। ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের শট পরিষ্কার গোললাইনের ভেতর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন চকিত-চাপড়ে এবং ভার-এর সুবিধা নিতে না-পারায় রেফারিও তখন বিশ্বাস রেখেছিলেন নয়্যারের সততায়!

ম্যাচে ক্রিস্টিয়ানোর থেকে মনে রাখার মতো আরও একটি পাস বেরিয়েছিল নবাগত তরুণ সানচো-র জন্য, ২৮ মিনিটে। অনেকটা জায়গা ফাঁকা সামনে, ডানদিক দিয়ে উঠে আসতে আসতে হঠাৎই আত্মবিশ্বাসহীন সানচো বলের দখল এত সহজে হারালেন, ইউনাইটেড কোচ নিশ্চয়ই বোঝাবেন তাঁকে।

আর অবশ্যই ৫৪ মিনিটে পেনাল্টির আবেদন, যা নাকচ করেছেন ফরাসি রেফারি ফ্রাঁকোইস, সঙ্গত কারণে। সুযোগ ছিল ক্রিস্টিয়ানোর সামনে, বল নিয়ে খানিকটা এগিয়ে গোলের চেষ্টা করার। পরিবর্তে বিপক্ষের ডিফেন্ডারের স্পর্শ শরীরে পেয়ে পড়ে যাওয়াকেই অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন পর্তুগিজ অধিনায়ক। রেফারির কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। এখন পেনাল্টির মতো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত পরে টেলিভিশনে রিপ্লে দেখেও চতুর্থ রেফারিরা নির্দেশ দিতে পারেন মাঠের রেফারিকে, যদি মনে করেন মাঠের রেফারি ভুল করেছেন। তেমন কিছুও হয়নি। তাই প্রিমিয়ার লিগে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে যেমন জোড়া গোলে শুরু করেছিলেন, ইউরোপে তেমন হলো না ক্রিস্টিয়ানোর।

ইয়াং বয়েজের বিরুদ্ধে ক্রিস্টিয়ানোর হারও অবশ্য এই প্রথম নয়। ২০১৮ সালে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে এসেও নিজেদের মাঠে ফিরতি লিগে ২-১ জিতেছিল ইয়াং বয়েজ। সেবার জুভেন্টাসের পক্ষে গোল না পেলেও ক্রিস্টিয়ানো এবার এগিয়ে দিয়েছিলেন নিজের দলকে। ৩৫ মিনিটে অ্যারন ওয়ান-বিসাকার সরাসরি লাল কার্ড এবং লিনগার্ডের অমার্জনীয় ভুলের কারণে ইউরোপে এবার হেরেই শুরু করতে হলো ইউনাইটেডকে।

গ্রুপ 'এফ' থেকে যদিও নকআউট পর্বে যেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় ক্রিস্টিয়ানোদের। গ্রুপে অন্য দুটি দল যে আটালান্টা এবং ভিয়ারিয়াল!

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×