রোমান সানাদের তিরের পেছনে অদৃশ্য আরেক ‘তীর’
উৎপল শুভ্র
২২ মে ২০২১
আর্চারিতে বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে একটা গল্প আছে। একটা পার্টনারশিপের গল্প। বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের সঙ্গে সিটি গ্রুপের যে পার্টনারশিপ `মডেল` হতে পারে অন্য ফেডারেশন ও কর্পোরেট হাউসগুলোর জন্য। সিটি গ্রুপের মতো অন্য কর্পোরেট হাউসগুলোও এভাবে এগিয়ে এলে রুগ্ন, দীন-হীন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের চেহারা বদলে যেতে সময় লাগবে না।
বাংলাদেশ কি কোনো খেলায় ইরান, জার্মানি, স্পেন ও কানাডাকে হারিয়ে কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে?
মেসেজটা শুরু হয়েছে এই প্রশ্ন দিয়ে।
শেষে যার উত্তরও আছে, সম্ভবত না…আমার চোখ ভিজে গেছে।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে এগারটার দিকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো মেসেজটা আমি দেখলাম প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে। উত্তরে কী লিখব, বুঝতে না পেরে ‘লাভ’-এর তিনটা ইমোজি পাঠিয়ে দিলাম।
এই আবেগের উত্তর যে কথায় দেওয়াটা যে একটু কঠিনই মনে হলো।
লেখার শিরোনামে রোমান সানার নাম দেখে কোন খেলার কথা হচ্ছে, তা তো আপনি বুঝেই ফেলেছেন। সঙ্গে যেখানে আরও দুই রকম বানানে ‘তির/তীর’ আছে। সুইজারল্যান্ডের লুজানে আর্চারির বিশ্বকাপে র্যাঙ্কিং ও বাছাই তালিকায় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকা ওই চারটি দেশকে (এর মধ্যে জার্মানি আবার ছিল শীর্ষ বাছাই) হারিয়ে বাংলাদেশ যে মিক্সড রিকার্ভের ফাইনালে উঠে গেছে, এটাও কোনো না কোনোভাবে আপনার জানা হয়ে গিয়ে থাকবে।
তাহলে জানা কথাটাই আবার একটু মনে করিয়ে দিই, বাংলাদেশের দুই আর্চার রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিক বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন বিশ্বকাপ আর্চারির প্রথম গোল্ড মেডেল ম্যাচে। রোববারের ফাইনালে হল্যান্ডের যুগলকে হারাতে পারলে তো কথাই নেই, না পারলেও বিশ্বকাপ আর্চারিতে এটা বাংলাদেশের সেরা রেজাল্ট হয়ে থাকবে। ফাইনালই যেহেতু প্রথম, পদকের রং সোনালি হোক বা রুপালি, সেটাও প্রথমই হবে।
ফাইনালের প্রতিপক্ষ যে দেশ, সেই হল্যান্ডের হের্টাগবচে ২০১৯ সালের ১৩ জুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এর আগে আর্চারিতে বাংলাদেশের সেরা সাফল্যের সাক্ষী হয়ে ছিল। সেটির নায়কও রোমান সানা। র্যাঙ্কিংয়ে অনেক উপরে থাকা ইতালির মাওরো নেসপলিকে হারিয়ে তাঁর জেতা ব্রোঞ্জের মহিমা শুধুই একটা পদকে সীমাবদ্ধ ছিল না। কারণ তাতে লেখা ছিল টোকিও অলিম্পিকে রিকার্ভে বাংলাদেশের অংশ নেওয়ার ছাড়পত্র।
নেসপলি ২০১২ অলিম্পিকে দলগত সোনাজয়ী। তাঁকে হারানোটাও বড় ব্যাপার। তবে এর আগের রাউন্ডে কোরিয়ার কিম ইয়ুজিনের বিপক্ষে রোমান সানার জয়ে চমকের উপাদান ছিল আরও বেশি। কদিন আগেই কোয়ালিফাইং রাউন্ডে নতুন রেকর্ড গড়া ইয়ুজিন দুই বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, ২০১৬ রিও অলিম্পিকে দলগত সোনাজয়ী। দুজনের র্যাঙ্কিংয়ে পার্থক্য বলতে ছিল শুধুই একটা '০'। তবে তাতে ব্যবধান হয়েছিল ৩৬। রোমান সানা ৪০, কিম ইয়ুজিন ৪। ক্রিকেটের বাইরে বাংলাদেশের নিস্তরঙ্গ ক্রীড়াঙ্গনে স্বাভাবিকভাবেই বড় একটা ঢেউ তুলেছিল রোমান সানার ওই সাফল্য।
করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর দেশবন্দি বাংলাদেশের আর্চারি আবারও একটা ঢেউ তুলেছে এবং আবারও অনুরণিত হচ্ছে রোমান সানার নাম। মাঝের দুই বছর অনেক উত্থান-পতন, কখনো বা পথ হারিয়ে ফেলার শঙ্কা জাগিয়ে আবারও যাঁর কক্ষপথে ফেরা বড় কিছুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে। রোমান সানায় একটু পরে আসি। যে মেসেজের কথাটা দিয়ে লেখাটা শুরু করেছি, সেই রহস্যটা আগে খোলাসা করে নিই। কারণ আর্চারিতে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সঙ্গে এটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।
ওই মেসেজটা যিনি পাঠিয়েছেন, তাঁর নাম শোয়েব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। একাডেমিক পড়াশোনা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে, তবে কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন কর্পোরেট দুনিয়াকে। আমার কাছে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় অবশ্য অন্য, খেলা অন্তঃপ্রাণ একজন মানুষ। খেলার হুজুগে দর্শক নন, খেলার অন্তনির্হিত সৌন্দর্য আর তাৎপর্যটা খুব ভালো বোঝেন, এমন একজন মানুষ। এই পরিচয়টা জানানো খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আর্চারির বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের স্থান করে নেওয়ায় এটির ভূমিকা আছে।
শোয়েব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের সঙ্গে আমার পরিচয়ের সূত্রও খেলা। আমি তখন প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক এবং তিনি বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের (বিইওএল) বড় কর্তা, সম্ভবত সেলস অ্যান্ড মার্কেটিংয়ের প্রধান । পরিচয়ের সেতু প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার, বিইওল যেটির পৃষ্ঠপোষণা করতে এগিয়ে এসেছে। প্রথম দেখলাম ও চিনলাম ওই ক্রীড়া পুরস্কার অনুষ্ঠানেই। পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এমন দারুণ একটা বক্তৃতা দিলেন যে, যা শুনে আমি রীতিমতো মুগ্ধ। এই লোক তো দেখছি খেলার উপরিতলের দর্শক নন। সয়াবিন তেলের মতো একটা পণ্যের ক্রীড়া পুরস্কারের সঙ্গে জড়ানোর রহস্যটাও আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। পেছনে তা হলে ইনি!
আবার দেখা হলো ২০১৬ রিও অলিম্পিক কাভার করে ফেরার কিছুদিন পর। ততদিনে তিনি বিইওএল ছেড়ে সিটি গ্রুপে যোগ দিয়েছেন। টেলিভিশনে সেই অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দলগুলোর মার্চ পাস্ট দেখার সময় বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা কথা খট করে তাঁর কানে লেগেছে। বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ, যারা কখনো অলিম্পিকে পদক জেতেনি। এটা জেনে শোয়েব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের খুব খারাপ লেগেছে। লজ্জার এই রেকর্ড মুছে ফেলতে একটা কিছু করতেও উদগ্রীব হয়ে উঠেছে তাঁর মন। যা ঘুরপাক খাচ্ছে একটা প্রশ্নে–কোন খেলায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা আছে অলিম্পিকে পদক জয়ের? তিনি আমার মতটাও জানতে চান।
বাংলাদেশের এই 'রেকর্ড' রিও অলিম্পিকে আমাকেও খুব বিব্রত করেছে। বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে ইন্টারভিউ পর্যন্ত দিতে হয়েছে এ নিয়ে। এর চেয়েও ভয়ঙ্কর হলো, বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সার্বিক অবস্থা জানিয়ে দিচ্ছে, অলিম্পিক কাভার করতে গেলে ভবিষ্যতেও এমন ইন্টারভিউ দিয়েই যেতে হবে। সিটি গ্রুপ এ নিয়ে কিছু করতে চায় জেনে আমি তাই রীতিমতো রোমাঞ্চিত। অলিম্পিকে পদক পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বললে দুটি খেলাই আসলে শর্ট লিস্টে আসে। একটা শ্যুটিং, আরেকটা আর্চারি। শ্যুটিং ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক পদক-প্রসবা খেলা, আর নবীন হয়েও আর্চারি ততদিনে সম্ভাবনার যথেষ্টই আভাস দিয়ে রেখেছে। শ্যুটিং না আর্চারি–এই প্রশ্নের মীমাংসা করে দিয়েছিল সম্ভবত সিটি গ্রুপের প্রতীক তীর। সংশোধিত বানানে তির হয়ে যাওয়া 'তীর' মানেই তো আর্চারি, আর আর্চারি মানেই 'তীর'। বাংলাদেশের খেলাধুলার ইতিহাসে কোনো খেলার সঙ্গে কোনো পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে কার্যকর, সবচেয়ে পেশাদার, সবচেয়ে সফল পার্টনারশিপটির জন্ম এ থেকেই। যেটিতে শোয়েব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের ব্যক্তিগত আগ্রহের কথাটা ভুলে গেলে অন্যায় হবে।
প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মে চলে, তারপরও ব্যক্তি-উদ্যোগ যে ভিন্ন কিছুর, বড় কিছুর সূচনা করে দিতে পারে, আর্চারির সঙ্গে সিটি গ্রুপের পার্টনারশিপই এর প্রমাণ। বাংলাদেশে আর্চারির প্রচলন ও প্রসারও তো ব্যক্তি-উদ্যোগের আরেকটি উদাহরণ। বলতে গেলে কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপলের ব্যক্তিগত আগ্রহেই এদেশে তির-ধনুকের খেলাটির চর্চা শুরু। এক সময় খো খো খেলা নিয়ে তাঁর 'পাগলামি' দেখেছি। বাঁশের তৈরি তির-ধনুক নিয়ে আর্চারিতে নেমে পড়াকেও শুরুতে অনেকে 'চপল/চপল ভাইয়ের আরেকটি পাগলামি' বলেই দেখেছিলেন। সেই আর্চারিকে ঘিরে বাংলাদেশ যে এখন সত্যি সত্যিই বড় কিছুর স্বপ্ন দেখার সাহস পাচ্ছে, এতে আমি চপলের স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি দেখি, দেখি শোয়েব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের স্বপ্নেরও, ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে দিলে সিটি গ্রুপেরও।
শোয়েব মোহাম্মদ সিটি গ্রুপ ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু সিটি গ্রুপ আর্চারিকে ছাড়েনি। বরং আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরেছে। এ কারণেই রোমান সানাদের ছোঁড়া প্রতিটি তিরে আমি আরেকটি অদৃশ্য 'তীর' দেখি। সিটি গ্রুপের তীর। বাংলাদেশে পৃষ্ঠপোষণার প্রচলিত ধারণাটাকেই যা বদলে দিয়েছে। অন্য সব পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান টাকা দিয়েই দায়িত্ব শেষ মনে করে। যে কারণে ওই টাকার সদ্ব্যবহারও সব সময় হয় না। কিন্তু আর্চারির সঙ্গে সিটি গ্রুপের পার্টনারশিপে সেই সুযোগ নেই। স্পনসরশিপের বদলে বারবার যে পার্টনারশিপ বলছি, তা জেনেবুঝেই। সিটি গ্রুপ যা করছে, শুধুই স্পনসরশিপ বলে তা বোঝানো যায় না। আর্চারি ফেডারেশনের বার্ষিক বাজেট দেখে তারাই ঠিক করে দেয়, কোন কোন খাতে তাদের টাকাটা খরচ হবে। প্রতি বছরের জন্য নতুন যে চুক্তি, সেটিও পারফরম্যান্স-ভিত্তিক। আর্চারদের জন্য মাসিক বেতনও তা-ই। প্রতি বছরই যে সিটি গ্রুপ টাকাটা বাড়াচ্ছে,পারফরম্যান্স দিয়ে আর্চারিকে তা আদায় করে নিতে হচ্ছে।
যত দূর জানি, এই মডেলও শোয়েব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানেরই ঠিক করে দেওয়া। যা বলতে গিয়ে সোনারগাঁও হোটেলে ওই ডিনারটার কথা মনে পড়ছে। আর্চারি ফেডারেশনের সঙ্গে সিটি গ্রুপের চুক্তির কিছুদিন পরই যাতে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শোয়েব মোহাম্মদ। গিয়ে দেখি, তাঁর হাতে এক তাড়া কাগজপত্র, কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার কাছে যা গবেষণাকর্ম বলে প্রতিভাত হলো। আর্চারির কোন ইভেন্টে কেমন সম্ভাবনা, সর্বশেষ অলিম্পিকে বিভিন্ন ইভেন্টে পদকজয়ীদের স্কোর, বাংলাদেশের আর্চাররা এখন তা থেকে কতটা পিছিয়ে...এত ডিটেইলসে কাজ করেছেন যে, আমি রীতিমতো চমৎকৃত। ২০১২ অলিম্পিকে ইমদাদুল হক মিলনকে কাভার করতে গিয়ে আর্চারি নিয়ে কিছু পড়াশোনা করেছিলাম, চর্চাহীনতায় যার অনেক কিছু আবার ভুলেও গেছি। এই লোক আর্চারির এত গভীরে চলে গিয়ে অবলীলায় এমন সব টার্ম ব্যবহার করছেন, যার অনেকগুলো সম্পর্কে আমার পরিষ্কার ধারণাই নেই। আর্চারি তাঁর কাছেও নিশ্চয়ই নতুন খেলা, কিন্তু তা নিয়ে এমন হোমওয়ার্ক করেছেন যে, আমার মতো আরও অনেক ক্রীড়া সাংবাদিকের তুলনায় রীতিমতো এক্সপার্ট বলে মানতে হচ্ছে তাঁকে।
অলিম্পিক-দুঃখ ঘোচানোর বাস্তবোচিত একটা সম্ভাবনা দেখানোয় বাংলাদেশের আর্চারি সম্ভবত তাঁর কাছে একটা অবসেশনের মতোও হয়ে গেছে। আর্চারির বেশির ভাগ সাফল্যের খবর তাঁর কাছ থেকেই প্রথম পাই।মাঝখানে রোমান সানার ফর্মে যখন ভাটার টান, অলিম্পিকে তাঁকেই পাঠানো উচিত কি না, এমন প্রশ্ন উঠছে; একদিন ফোন করে চিন্তিত স্বরে কেন বললেন, 'রোমান সানাই কিন্তু আমাদের বেস্ট প্রসপেক্ট। এই খারাপ সময়টাতে সবার উচিত ওকে সাপোর্ট করা।'
সেই সাপোর্ট সিটি গ্রুপ অকাতরেই করে যাচ্ছে। শুধু রোমান সানাকেই নয়, বাংলাদেশের আর্চারিকেই। 'তীর গো ফর গোল্ড' ঘোষণা দেওয়াতেই বড় একটা সাহসের ব্যাপার ছিল। বাংলাদেশে আরও অনেক কিছুর মতো এটিও শুধুই চমকে সীমাবদ্ধ থাকতে পারত। তা তো থাকেইনি, বরং এই স্বপ্নকে সত্যি করতে যখন যা করা দরকার, সিটি গ্রুপ যেভাবে তা করে যাচ্ছে, তাতে একটা হাততালি তাদের প্রাপ্যই। বাংলাদেশের আর্চারির 'হোম' টঙ্গীর আহসানউল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে আর্চারদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডরমিটরি-জিমন্যাসিয়াম বানিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে নামি জার্মান কোচের সব খরচ বহন করা, তরুণ প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ..আর্চারি ফেডারেশনের সঙ্গে সিটি গ্রুপের এই পার্টনারশিপ মডেল হতে পারে বাংলাদেশের অন্য খেলাগুলোর জন্য। বড় বড় সব কর্পোরেট হাউসের জন্যও। সব কর্পোরেট হাউসই এখন সিএসআর মানে কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি খাতে প্রচুর টাকা খরচ করে। এর কিছু যদি খেলায় আসে, তাহলে বাংলাদেশের রুগ্ন, দীনহীন ক্রীড়াঙ্গনের চেহারা বদলে যেতে সময় লাগবে না।
আর্চারিই এর বড় প্রমাণ। প্রমাণ সিটি গ্রুপও। তা কী শিখিয়েছে আর্চারি? শিখিয়েছে, পরিষ্কার একটা লক্ষ্য সামনে রেখে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং সেই অনুযায়ী নিবিড় প্রশিক্ষণ ও কঠোর অনুশীলনই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্যের পূর্বশর্ত। ঠিক শেখানো নয়, কারণ এটা তো এমন কোনো মহাকাশ-বিজ্ঞান না, আমাদের দেশে চর্চা নেই বলেই না এভাবে বলতে হচ্ছে। এবার আসুন পরের প্রশ্নে। লক্ষ্য ঠিক করলাম, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাও, প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের কর্মসূচিও ধরে নিলাম চূড়ান্ত...কিন্তু এসব বাস্তবায়নে টাকা আসবে কোত্থেকে? এখানেই আসছে সিটি গ্রুপ। যারা শিখিয়েছে (এটাও বাংলাদেশ বলেই নতুন করে শেখার প্রয়োজন পড়ছে), বিনিয়োগ না করলে, খেলোয়াড়দের ভালো রাখতে না পারলে কোনো খেলাতেই সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়। আমরা খেলার পেছনে টাকা ঢালব না, খেলোয়াড়দের নিশ্চিন্ত একটা জীবনের নিশ্চয়তা দেব না, অথচ তাদের কাছে সাফল্য চাইব...অন্যায়, এ ঘোরতর অন্যায়।
রোমান সানাদের তিরের পেছনে যে অদৃশ্য 'তীর' দেখি বলছিলাম, সব খেলাতেই তাই অমন 'তীর' চাই। অনেক অনেক 'তীর।'