মেসির ব্যালন ডি'অর তো তাহলে নিশ্চিতই!

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

রিজওয়ান রেহমান সাদিদ

২৪ জুলাই ২০২১

মেসির ব্যালন ডি'অর তো তাহলে নিশ্চিতই!

এবার কি সংখ্যাটা 'সাত' হবে? ছবি: ইমাগো

ব্যক্তিগত হিসাব-নিকাশ করতে গেলে মৌসুমটা মেসিকে তৃপ্তই করার কথা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আর্জেন্টিনা সিনিয়র দলের হয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের গর্ব। ব্যালন ডি'অরে সাত নম্বর ট্রফিটা কি তাহলে আসছে?

লড়াইয়ে তিনি এমনিতেই থাকতেন।

গেল মৌসুম শুরুর আগে বার্সেলোনা ছেড়ে দেবেন জানিয়ে তুললেন উথাল-পাথাল ঝড়। মৌসুমের শুরুতেও জালের ঠিকানা খুঁজে পেতে ঘুরলেন হন্যে হয়ে, লা লিগার প্রথম আট ম্যাচে গোল পেলেন মাত্র ১টি। জীবনঘড়ি ততদিনে ৩৩ পেরিয়ে ৩৪ বছরের দিকে ছুটছে। ফের উঠল ওই গুঞ্জন, 'মেসি অতিমানুষ বলে ভ্রম জাগতে পারে, তবে তিনিও তো মানুষ। তাঁর দিনও তাই ফুরোয়।'

তবে লিওনেল মেসি যে ফুরাননি, তার প্রমাণ রাখতে শুরু করেছিলেন লিগের নবম ম্যাচ থেকে। রিয়াল বেটিসের বিপক্ষে ২ গোল করে সেই যে ফর্মে ফিরলেন, পরের ২৬ ম্যাচে গোল করলেন ২৭টি, সঙ্গে ১১ অ্যাসিস্ট। চ্যাম্পিয়নস লিগ বার্সেলোনা বাদ পড়ল দ্বিতীয় রাউন্ডেই, এর আগেই খেলা ৬ ম্যাচে গোলে অবদান রেখেছিলেন ৭টি। এক কোপা দেল রে ছাড়া বার্সেলোনা এই মৌসুমে জেতেনি কিছুই, তবে দায়টা মেসির কাঁধে চাপানোর আগে তাঁর কট্টর সমালোচকও দু'বার ভাববেন। নবিশ-ধীরগতির রক্ষণভাগের কারণে হজম করা গোলগুলোতে মেসির তো ভূমিকা রাখার সুযোগ ছিল না। ব্যক্তিগত সাফল্যে ভরা একটা মৌসুমের পর ব্যালন ডি'অরের সংক্ষিপ্ত তালিকায় মেসির থাকাটা তাই অবধারিতই ছিল।

তবে ব্যালন ডি'অর তো এক মৌসুমের জন্য নয়, দেওয়া হয় এক বছরের পারফরম্যান্সের জন্য। এবং ২০২১ সালে এসেই মেসি বাদবাকি প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে নিয়েছেন যোজন যোজন। ২০২১ সালে লেভানডফস্কির ৩৪ গোলের সঙ্গে ২ অ্যাসিস্ট আছে, জর্জিনহোর আছে ইউরো আর চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের টাটকা স্মৃতি, ২২ গোল আর ২ গোলে সহায়তা করে ইন্টার মিলানকে সিরি 'আ' শিরোপা পাইয়ে দিয়েছেন রোমেলু লুকাকু। কিন্তু ২০২১ সালে ৩৮ ম্যাচ খেলে যাঁর ৩৩ গোল আর ১৪ অ্যাসিস্ট, ২৬ ম্যাচে পেয়েছেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার-- সেই মেসিকে টেক্কা দেওয়ার মতো পারফরম্যান্স কার আছে!

তবে মেসিকে ব্যালন ডি'অর জয়ের দৌড়ে হট ফেবারিট বানিয়ে দিয়েছে কোপা আমেরিকা। ক্যারিয়ারের একমাত্র খামতি এই কোপাতেই ঘুচিয়েছেন, আর্জেন্টিনার ২৮ বছর পরের শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন একদম সামনে থেকে। ৪ গোল, ৫ অ্যাসিস্ট, ৪ ম্যান অব দ্য ম্যাচ, কোচ লিওনেল স্কালোনির কৌশলের কারণে প্রতিপক্ষকে ক্লান্তিহীনভাবে প্রেস করার তথ্যগুলো যার সামান্যই বোঝাতে পারে। সব দেখে-শুনে মেসির হাতে সপ্তম ব্যালন ডি'অর দেখার দৃশ্যটা কল্পচোখে দেখতে শুরু করে দিতেই পারেন তাঁর ভক্তরা।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ১৯৯৬ থেকে ব্যালন ডি'অরের সঙ্গে বিশ্বকাপ-ইউরো-কোপার বছর মিলে গিয়েছে ১৯ বার, এর মধ্যে এই টুর্নামেন্টগুলোর ফাইনালে ওঠা দলের খেলোয়াড়দের হাতে ব্যালন ডি'অর উঠেছে নয়বার। দুবার তো তাদের বঞ্চিত করেছেন মেসি নিজেই। ২০১০ সালে মেসির দ্বিতীয় ব্যালন ডি'অর জেতার বছর বিশ্বকাপ জিতেছিল স্পেন, লা রোহারা ইউরো জিতেছিল ২০১২-তেও। কিন্তু দুবারই ব্যালন ডি'অর জিতে নিয়েছেন মেসি।

কোপা জিতে মেসিই ব্যালন ডি'অর জয়ের হট ফেবারিট। ছবি: এএফপি

অবশ্য ওই দুবার মেসিকে না দিয়ে ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনের উপায়ই বা কী ছিল! ২০১০-এ তা-ও ৪১ গোল করে জিতেছিলেন, ২০১২-তে সালে তো রেকর্ড বই ওলট-পালট করে ৯১ গোল নিয়ে শেষ করেছিলেন বছর। দলীয় অর্জনের ঝুড়ি শূন্য হলেও মেসির হাতে পুরস্কারটা তাই কোনো প্রশ্ন ছাড়াই উঠেছিল।

এবার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও আছে, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দলগত সাফল্য-- মেসির হাতে ব্যালন ডি'অর তো তাহলে নিশ্চিত করেই উঠছে! ঘোষণার সুরে বলে দিতে গিয়েও একটা লাইনই কেবল বাগড়া দিচ্ছে, এবারের ব্যালন ডি'অর জয়ীর নামটা তো ফ্রান্স ফুটবল আগামী ডিসেম্বরে ফাঁস করবে।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×