উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা
সেঞ্চুরিয়নে ভারতের জয় শুধুই আরেকটি জয় নয়
অবশেষে সেঞ্চুরিয়ন-দুর্গও জয় করে ফেলল ভারত। বছরের শুরুতে ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের মতোই মহিমান্বিত বছর শেষে সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই জয়। এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে সেঞ্চুরিয়নে টেস্ট জয়ই যা বলে দিচ্ছে। সেই জয় পাওয়ার পথে যেসব রেকর্ড হয়েছে, সেসবই দেখা নেওয়া যাক সংখ্যায় সংখ্যায়…
২০০- মোহাম্মদ শামি এ ম্যাচে ৮ উইকেট নেওয়ার পথেই ঢুকে গেছেন দুই শ উইকেটের ক্লাবে। যেখানে আছেন আরও চার ভারতীয় পেসার। এই পাঁচজনের মধ্যে একমাত্র মোহাম্মদ শামিরই স্ট্রাইক রেট ৫০-এর কম। ইশান্ত শর্মা, কাপিল দেব, জাভাগাল শ্রীনাথ, জহির খান...বাকি চারজনেরই বোলিং স্ট্রাইক রেট ৬০-এর বেশি। আরেকটু ছড়িয়ে দিলে ভারতের হয়ে টেস্টে দুই শ উইকেট নেওয়া ১১ বোলারের মধ্যে একমাত্র শামির স্ট্রাইক রেটই ৫০-এর নিচে। ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে পুরো বিশ্ব ধরলেও এমন বোলার পাওয়া যায় আর মাত্র সাতজন, যারা দুই শ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন প্রতিটি উইকেট নিতে গড়ে ৫০টির কম বল করে।

২৬- ভারতের উইকেটকিপারদের মধ্যে সবচেয়ে কম ম্যাচে এক শ ডিসমিসালের মাইলফলক ছুঁয়েছেন ঋষভ পন্ত। ২৬ ম্যাচেই এই কীর্তি গড়েছেন পন্ত। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ৩৬টি করে ম্যাচ লেগেছে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও ঋদ্ধিমান সাহার। চলতি বছরেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডিসমিসালের মালিক ঋষভ পন্ত, সেঞ্চুরিয়নে সাত ক্যাচ নিয়ে ছাড়িয়ে গেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জসুয়া ডি সিলভার ৩৮ ডিসমিসালকে। তাঁর ৩৯ ডিসমিসালের চেয়ে বেশি ডিসমিসাল আছে শুধু ইংল্যান্ডের জস বাটলারের। আর এটিই বছরের শেষ টেস্ট হওয়ায় এ বছরের সর্বোচ্চ ডিসমিসালের রেকর্ডটা বাটলারেরই থাকছে।
২- সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে দ্বিতীয়বারের মতো এক শ রানের বেশি ব্যবধানে টেস্ট হারল দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের কাছে ১১৩ রানে হারার আগে ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরেছিল ২৮১ রানের বিশাল ব্যবধানে। সেঞ্চুরিয়নের এই স্টেডিয়ামে আর মাত্র একটিই হার আছে দক্ষিণ আফ্রিকার, ২০০০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যা ২ উইকেটে। সুপারস্পোর্ট পার্কে ২৭ টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার এটি মাত্র তৃতীয় পরাজয়।
২৬০- প্রথম ইনিংসে ২৬০ বল খেলেছেন লোকেশ রাহুল। সেঞ্চুরিয়নে ভারতের কোনো ব্যাটসম্যান এর চেয়ে বেশি বল খেলতে পারেননি কখনোই। এর আগে ২০১০ সালে শচীন টেন্ডুলকার ১১১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পথে খেলেছিলেন ২৪১ বল। সুপারস্পোর্ট পার্কে ইনিংসে দুই শ বলের বেশি খেলতে পেরেছেন আর মাত্র একজন, ২০১৮ সালে বিরাট কোহলি ১৫৩ রান করতে নিয়েছিলেন ২১৭ বল।

১- রাহুলের সেঞ্চুরি ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয় ওপেনারদের সেঞ্চুরি রয়েছে আর মাত্র একটি। ২০০৭ সালে কেপটাউনে ওয়াসিম জাফর করেছিলেন ১১৬ রান। সেঞ্চুরিয়নে রাহুলের সেঞ্চুরি ভিনদেশে তাঁর ষষ্ঠ। এই ওপেনারের সাত সেঞ্চুরির পাঁচটিই এসেছে এশিয়ার বাইরে। ভারতীয় ওপেনারদের মধ্যে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এশিয়ার বাইরে সবচেয়ে বেশি ১৫টি শতক এসেছে সুনীল গাভাস্কারের ব্যাট থেকে।
৩- সেঞ্চুরিয়নে বিদেশি ওপেনারদের সেঞ্চুরি সংখ্যা মাত্র তিন। রাহুলের ১২৩ রানের ইনিংসের আগে ২০১৪ সালে ডেভিড ওয়ার্নার খেলেছিলেন ১১৫ রানের এক ইনিংস। আরেক বাঁহাতি ওপেনার ক্রিস গেইলেরও এই মাঠে শতক আছে। টি-টোয়েন্টির আবির্ভাবের আগে সাদা পোশাকে সেই ২০০৪ সালে গেইল খেলেছিলেন ১০৭ রানের এক ইনিংস।

২৪২- প্রথম ইনিংসে মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও লোকেশ রাহুলের জুটি টিকেছিল ২৪২ বল। ২০১০ সাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বিদেশি আর কোনো ওপেনিং জুটি এর চাইতে বেশি বল টিকে থাকতে পারেনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১৯ বল খেলেছিল দুটি ভিন্ন জুটি। ২০১০ সালে অ্যালিস্টার কুক ও অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস খেলেছিলেন তার একটি। অন্যটিতে ছিলেন দুই অস্ট্রেলিয়ান, শেন ওয়াটসন ও ফিলিপ হিউজ।
৮- এ বছরে ভারতের জয়ের সংখ্যা এখন আট। যা ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি টেস্ট জয়ের রেকর্ড। এই টেস্টের আগে ৯ ম্যাচে পাকিস্তানের জয়ের সংখ্যা ছিল সাত। সেঞ্চুরিয়ন টেস্ট জিতে ১৪ ম্যাচে ৮ জয়ে সেটি ছাড়িয়ে গেছে ভারত। সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ডটা যখন জানলেন, এ বছর সবচেয়ে বেশি টেস্টে পরাজয়েরটা জানবেন না? সেই রেকর্ডটা ইংল্যান্ডের, যারা এ বছর হেরেছে ৯টি টেস্ট।



 
										 
										 
										 
										 
										 
										

 
            





 
						 
						 
						 
						 
						