রিয়াল রাজ্যের সবচেয়ে তেজি যোদ্ধার বিদায়

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

রাইসান কবির

২০ জুন ২০২১

রিয়াল রাজ্যের সবচেয়ে তেজি যোদ্ধার বিদায়

রিয়াল মাদ্রিদের সমার্থক হয়ে ওঠা সের্গেই রামোস বিদায় বলছেন বার্নাব্যুকে

১৬ বছরের সম্পর্ক ছিঁড়ে রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়লেন সার্জিও রামোস। এই ১৬ বছরে ট্রফি জিতেছেন ২২টি। অবশ্য কেবল ট্রফি দিয়ে কি আর রামোসের মাহাত্ম্য বোঝা যায়! এক পাঠক এই লেখাতে সবার জানা কথাটাই জানিয়ে দিলেন আবারও, রিয়াল-রাজ্যের সবচেয়ে যুদ্ধংদেহী সৈন্যটার নামই ছিল রামোস। এক সময় রাউল বা ক্যাসিয়াস যা ছিলেন, রামোসও তেমনি হয়ে উঠেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের সমার্থক।

রিয়াল মাদ্রিদে নিজের ১৬ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন ক্লাব ক্যাপ্টেন সার্জিও রামোস। 'রিয়াল মাদ্রিদ আর রামোস', একদম একে অপরের সমার্থক হয়ে যাওয়া দুইটি নাম বিদায় বলে দিয়েছে একে অপরকে। হয়তো আর কোনোদিনই বার্নাব্যুর সবুজ ঘাসে খেলতে দেখা যাবে না রামোসকে, অন্তত রিয়ালের সাদা জার্সিতে নয়ই।

২০০৫ সালের গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে রিয়ালে নাম লিখিয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সী কিশোর সার্জিও রামোস। সেই টিনএজার সার্জিও রামোসের আজকের সার্জিও রামোস হয়ে ওঠা--পুরো সময়টাতেই রামোস ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের খুব আপন একজন হয়ে। কড়া কড়া সব ট্যাকল, কড়া মার্কিংয়ে প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করা, শেষ মুহূর্তে হেড থেকে গোল দিয়ে দলকে উদ্ধার করা, পুরো টিমকে উজ্জীবিত রাখা--সব মিলিয়ে আদর্শ ডিফেন্ডার আর নেতার এক উদাহরণ হয়ে উঠেছিলেন রামোস। অগণিত সুখস্মৃতি আর সাফল্য মাহাত্ম্য বাড়িয়েছে রামোসের ক্যারিয়ার, নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায় যার সিংহভাগই এসেছে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে।

বিদায়ী সংবর্ধনায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন রামোস। ছবি: টুইটার

বিশেষ করে একটা ঘটনার কথা বলতেই হচ্ছে। ২০১৪ সালের ২৪ মে, লিসবনের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিরুদ্ধে ১-০ গোলে পিছিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ। ৯৩ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে মদরিচের বাড়ানো বলে রামোসের হেড। আর তারপর? ভুবনজয়ী এক উল্লাসে পুরো মাদ্রিদ শিবিরের ফেটে পড়া। উচ্ছ্বাস, উৎকণ্ঠা, আনন্দ, হাসি, কান্না--সব কিছু যেন এক হয়ে ধরা দিয়েছিল গোটা মাদ্রিদ স্কোয়াডে। দুনিয়ার সকল মাদ্রিদিস্তার মনেও কি নয়? পরে সেই ম্যাচ এক্সট্রা টাইমে গিয়ে জেতে রিয়াল মাদ্রিদ, ৪-১ গোলে। বহু আকাঙ্ক্ষিত 'লা ডেসিমা' সেবার ধরা দিয়েছিল রিয়ালের হাতে। রামোসের সেই হেড ইতিহাসের পাতায় ঢুকে গেছে নিঃসন্দেহে। আগামী ১০০ বছরেও এই ধরনের ঘটনা আরেকবার ঘটবে কি না, কে জানে!

ইকার ক্যাসিয়াস ক্লাব ছাড়ার পর ২০১৫ সাল থেকে পাকাপাকিভাবে রিয়ালের ক্যাপ্টেনসি পান রামোস। আর্মব্যান্ড পাওয়ার পরে যেন নতুন ভূমিকায় আরও ধারালো এক রামোসের দেখা পায় বিশ্ব। দলকে উজ্জীবিত রাখা, চাঙা রাখা, সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া--পারফেক্ট লিডারশিপ বলতে যা বোঝায়, রামোস যেন সেটাই দেখিয়েছেন ফুটবল বিশ্বকে। ২০১৬-১৮ টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন একেবারে সামনে থেকে। আর মূল কাজ ডিফেন্ডিং তো করেছেন বরাবরের মতোই। সাথে গোল স্কোরিংও চলেছে দলের প্রয়োজনে। তাঁকে এই প্রজন্মের সেরা ডিফেন্ডারও বলে থাকেন অনেকেই। পারফরম্যান্স আর ট্রফি কেস দেখলে দ্বিমত পোষণ করার মতো মানুষও হয়তো খুব একটা পাওয়া যাবে না। ১৬ বছরের ক্লাব ক্যারিয়ারে সার্জিও রামোস দলের আস্থা, নির্ভরতা, ভরসার প্রতীক আর যোগ্য নেতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন।

রামোস মানে হার না মানা এক যোদ্ধা। ছবি: গেটি ইমেজেস

বরাবরের মতো মাঠ আর মাঠের বাইরে বেশ আক্রমণাত্মক রামোস। এ নিয়ে কম কথা শুনতে হয়নি রামোসকে। অনেক সময় তো মাঠেই লেগে যেত ঝগড়া-বিবাদ। এত কিছুর পরও রামোস তাঁর মতোই থেকে গেছেন। হয়তো এ কারণেই রামোস আজকের সার্জিও রামোস হতে পেরেছেন, নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। চ্যাম্পিয়নরা তো একটু উদ্ধতই হয়, নাকি?

১৬ বছরের ক্যারিয়ারে রামোস ৬৭১ ম্যাচ খেলে করেছেন ১০১ গোল, অ্যাসিস্ট ৪০টা। একজন ডিফেন্ডারের জন্য খারাপ নয়, কী বলেন! ট্রফি জিতেছেন ২২টি। ৫টি লা লিগা, ৪টি করে চ্যাম্পিয়নস লিগ, সুপারকোপা ও ক্লাব বিশ্বকাপের সঙ্গে ৩টি উয়েফা সুপার কাপ আর ২টি কোপা দেল রে। আর এত কিছুর বাইরেও জিতেছেন অগণিত মাদ্রিদিস্তার হৃদয়, এটা বলা যায় কোনো সন্দেহ ছাড়াই।

যা জিতেছেন ১৬ বছরে। ছবি: ইন্সটাগ্রাম

ডিফেন্ডার রামোস কিংবা নেতা রামোস, দুই রামোসকেই মিস করবে রিয়াল মাদ্রিদ। রামোসের এই শুন্যস্থানটা রিয়াল মাদ্রিদ পূরণ করতে পারবে কি না, সেই প্রশ্নটা আপাতত সময়ের হাতেই তোলা থাকুক। তবে যিনিই আসুন, রিয়াল মাদ্রিদ যে সার্জিও রামোসকে মিস করবে ভীষণ, তা তো বলাই বাহুল্য। রাজ্যের সবচেয়ে তেজি যোদ্ধা তো তিনিই ছিলেন।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×