আজই কি আকাশ ছোঁবেন রোনালদো?

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

শাহরিয়ার রিদওয়ান

২৮ জুন ২০২১

আজই কি আকাশ ছোঁবেন রোনালদো?

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো

ইরানের আলি দাইয়িকে ছাড়িয়ে আজই ছেলেদের ফুটবলে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ড গড়তে পারেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। পর্তুগিজ উইঙ্গারের এই মাইলফলক ছোঁয়ার হাতছানিই নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইউরোয় আজকের পর্তুগাল-বেলজিয়াম ম্যাচে।

বব মার্লের বিখ্যাত সেই গানের লাইনটি কি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো শুনেছেন? `দা সান ইজ শাইনিং, সো আর ইউ’। লক্ষ কোটি বছর ধরে আলো ছড়ানো সূর্যের মতোই তো ‘বুড়ো’ রোনালদো আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন ৩৬ বছর বয়সেও। আজ সেই রোনালদোর সামনেই আকাশ ছোঁয়ার সুযোগ। ১০৯টি গোল নিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটির মালিক তাঁর সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের আলী দাইয়ি। তাঁকে ছাড়িয়ে এককভাবে সিংহাসনে বসার সুযোগ রোনালদো পেতে যাচ্ছেন বেলজিয়ামের বিপক্ষে আজকের ম্যাচেই।

২০১৪ বিশ্বকাপে ঘানার বিপক্ষে ২-১ গোলে জেতা ম্যাচে একটি গোল করেছিলেন রোনালদো। ওই জয়ের পরও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল পর্তুগাল। তাঁকে নিয়ে যে প্রত্যাশা ছিল সে বিশ্বকাপে সেটা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন রোনালদো, ভক্তদের হতাশ করেছিল তাঁর দল পর্তুগালও। তখন রোনালদোর ভক্ত, এমনকি ফুটবল বোদ্ধাদেরও কেউ কেউ তাঁর আন্তজাতিক ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন! রোনালদোর বয়সটাও তাতে ইন্ধন যুগিয়েছিল। তখন তাঁর বয়স ২৯। ৩০ এর পর অ্যাথলেটদের গতি কিংবা স্কিল কি আর আগের মতো থাকে! তাতে তিনি যতই ফিট অ্যাথলেট হোন না কেন! ক্যারিয়ারে ১১৮ ম্যাচে তখন তাঁর ৫২ গোল। খুব ঈর্ষণীয় কিছু না হলেও, কোনোভাবেই এটাকে খারাপ বলা চলে না। ৫০-এর ওপর আন্তর্জাতিক গোল তো খুব বেশি ফুটবলারের নেই। 

কিন্তু ‘খুব খারাপ বলা চলে না’ কথাটিতেই রোনালদোর যত আপত্তি। তিনি যে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো! মাদেইরার অলিতে-গলিতে বড় হয়ে, স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড জয় করে এসে রিয়াল মাদ্রিদকে কেবলই জিতিয়েছেন বহুল কাঙ্ক্ষিত ‘লা ডেসিমা’। তিনি কেন ‘খুব খারাপ না’-তে সন্তুষ্ট হবেন!

ক্লাবের মতো জাতীয় দলের হয়েও রোনালদো এখন উড়ছেন। ছবি: গেটি ইমেজেস

সেখানেই থেমে থাকতে চাননি রোনালদো। থেমে থাকার পাত্রও নন তিনি। আর তাই তো ২০১৪ বিশ্বকাপের পর তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার আক্ষরিক অর্থেই বদলে গেল। জাতীয় দলের হয়ে ক্লাবের মতো পারফর্ম করতে না পারার যে ‌‘অপবাদ’ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে, সেটি মুছে ফেলার যেন পণ করলেন। ২০১৬ ইউরো জিতে লিখলেন পর্তুগিজ ফুটবলের নতুন ইতিহাস। ২০১৯-এ জিতলেন প্রথম  উয়েফা নেশন্স কাপ। ২০১৪ পর্যন্ত যাঁর ১১৮ ম্যাচে ৫২ গোল ছিল, সেই রোনালদোই পরের ৭ বছরে করলেন ৬০ ম্যাচে ৫৭ গোল! যার ৪৯টি গোলই এসেছে বড় টুর্নামেন্ট এবং বড় টুর্নামেন্টের বাছাই পর্বে। 

২০১৬ ইউরো আর ২০১৯ উয়েফা নেশন্স কাপ জিতে জাতীয় দলের হয়ে অর্জনের ক্ষেত্রে তিনি আগেই পেছনে ফেলে এসেছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসিকে। গোলের সংখ্যায়ও তাঁকে (৭৩) তো পেছনে ফেলেছেনই, পেছনে ফেলে এসেছেন পেলে (৭৭), পুস্কাসদের (৮৪) মতো মহারথীদের। ইউসেবিওর পর্তুগাল কিংবা লুইস ফিগোর পর্তুগালকে সামান্য পেছনে ফেলেই বর্তমান পর্তুগাল দলটিকে বানিয়ে ফেলেছেন ‘রোনালদোর পর্তুগাল’।

আজ বেলজিয়ামের বিপক্ষে রোনালদো আলি দাইয়িকে ছাড়িয়ে ছেলেদের আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি গোলের নতুন রেকর্ড গড়তে পারবেন কি না তা সময়ই বলে দেবে। তবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণে যদি ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ ম্যাচের লাইভ কমেন্ট্রিতে থাকতেন, রোনালাদোর সেই অর্জনের পর নির্ঘাত বলে বসতেন ‘রিমেম্বার দা নেইম…’।

আরও পড়ুন: আলী দাইয়িকে চেনেন?
                 রোনালদোর রেকর্ড, রেকর্ডের রোনালদো

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×