আর দুই পা এগোলেই মাহেন্দ্রক্ষণ

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

ইমতিয়াজ চৌধুরী

৫ জুলাই ২০২১

আর দুই পা এগোলেই মাহেন্দ্রক্ষণ

ট্রফিকে এমনই পাখির চোখ করেছেন মেসি। ছবি: গেটি ইমেজেস

পাঁচটি কোপাতে হয়নি, চারটি বিশ্বকাপে হয়নি, তিনটি ফাইনালে উঠেও হয়নি। জাতীয় দলের হয়ে মেসির অর্জনের খাতা এখন পর্যন্ত ভাঁড়ে মা ভবানী। আরও একবার আর্জেন্টিনার হয়ে `কিছু একটা জেতা`র মিশনে নেমেছেন মেসি, সমান চার গোল আর অ্যাসিস্ট করে আর্জেন্টিনাকে তুলেছেন সেমিফাইনালে। এবার কি মেসি জিতবেন? মাহেন্দ্রক্ষণের দেখা পেতে আর তো দুটি ধাপই বাকি!

দুটি দলের প্রতিযোগিতায় গোল হয়, থাকে জয়-পরাজয়ের নানান গল্প। তবুও দিনশেষে ফুটবল তো একটি খেলাই বটে। দর্শকের মাঝে উন্মাদনা ছড়িয়ে দেওয়ার যে মন্ত্র, তা তো পাঠ করেন সব ফুটবলারই। কিন্তু ক'জনই বা পারেন, গোটা ফুটবল দুনিয়াকে একই মালার ফুল বানাতে! সাধারণের মাঝেও থাকে অসাধারণ, সুন্দরের মাঝেও নান্দনিকতা। ফুটবলের এত এত ছোট গল্পের মাঝে কেউ কেউ তো পরিপূর্ণ উপন্যাসও।

মেসি-ফুটবল-আর্জেন্টিনা, নামগুলোয় কেমন যেন ভিন্ন তিনটি আমেজ। যে ছেলেটা গোটা ফুটবল দুনিয়াকে একটি বাঁ পায়ে বুদ করে রেখেছেন, সেই ছেলেটাই আবার বিবর্ণ। আকাশী-নীলের ঢেউয়ে বারবার ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্ন হয় চূর্ণ-বিচূর্ণ। সুযোগ এসেছে, সুযোগ করে নিয়েছেন মেসি। এই বুঝি স্বপ্ন পূরণ হলো, এই হলোটাই যে আর হলো না। তাতেই তো বুকভরা কষ্ট। বড্ড অভিমানও বটে।

২০১৪ সালের সেই ফাইনাল ট্র‍্যাজেডি! ব্রাজিলের ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে জার্মানির বিপক্ষে মেসিদের চোয়ালবদ্ধ লড়াইটা ছিল পাক্কা ১২০ মিনিটের। ম্যাচের ১১৩ মিনিটেই ভেঙে যায় বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরার স্বপ্ন। জার্মান সাবস্টিটিউট মারিও গোটজের বুক থেকে নামিয়ে মাটি ছোঁয়ার আগেই বাঁ পায়ে নেওয়া বুলেট গতির শটটা আলবিসেলেস্তেদের জাল খু্ঁজে নেয়। ৭ মিনিট পরে রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে অশ্রুজলে ভেঙে পড়েন ফুটবলের সেরা জাদুকর, লিওনেল মেসি। এবং লাখো মেসিয়ান।

সোনায় মোড়ানো ট্রফিটা যদি একবার আকাশপানে উঁচিয়ে ধরা যায়, তবে আর কী চাই! সেই চাওয়াটাই হয়তো বড্ড চেয়েছিলেন খোদ মেসিই, তাই তো বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার হাতে পেয়েও অভিমানে চোখ ভিজিয়েছেন। একটুর জন্য হলো না, স্বপ্ন সত্যির পথটাও দীর্ঘ হয়েছে মারিও গোট্জের এক শটেই।

সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে সে পথে এখনো প্রতিনিয়ত হেঁটে যাচ্ছেন লিওনেল মেসি। পরের দুই বছরে দুটি ফাইনাল, আরও দুবার মেসির স্বপ্নভঙ্গ। ২০১৫'র পর ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালেও চিলির বিপক্ষে হেরে গেলে অভিমানে দেশের জার্সিটাই তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন মেসি। কিন্তু না, আকাশী-নীলের সাথে যে প্রেম। সে মায়ার টানেই আবার ফিরে এসেছেন প্রেমিক মেসি। বল পায়ে আবারও ছুটে চলেছেন একটি জয়ের নেশায়।

আর্জেন্টিনার এবারের কোপা-অভিযানের পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ মেসি। ছবি: গেটি ইমেজেস

এবার আরও একটি কোপা আমেরিকা আসর। আরও একবার প্রাণপণ লড়াই। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের মাঠে খেলতে গেছেন মেসিরা। শক্তিমত্তার ব্যাপার তো আছেই, আছে চ্যালেঞ্জও। তবে ছোটবেলা থেকেই চ্যালেঞ্জের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে ওঠা লিওনেল আন্দ্রেস মেসি তো জানেন, কিভাবে জিততে হয়। কিভাবে মাথা উঁচু করে লড়তে হয়। এবারের কোপায় সেই লড়াইটা খুব ভালোভাবেই করে যাচ্ছেন মেসি অ্যান্ড কোং।

শিরোপার দৌড়ে আর্জেন্টিনা এখন সেমিফাইনালে। চিলির বিপক্ষে ড্র দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও ২০২১ কোপা আমেরিকায় এখন পর্যন্ত অপরাজিত। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। যেখানে রবিবার ইকুয়েডরকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে মেসির দল। অধিনায়ক মেসি গোল করিয়েছেন, নিজে গোল করেছেন। ম্যাচের সব আলোও কেড়ে নিয়েছেন আর্জেন্টাইন তারকা।

আর দুটি ধাপই কেবল বাকি। ১৯৯৩ সালের ৪ এপ্রিল, ইকুয়েডরের এস্তাদিও মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামের সেই মাহেন্দ্রক্ষণের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে কি এই আর্জেন্টিনা? সেদিন তো কিংবদন্তি 'বাতিগোল' বাতিস্তুতা জোড়া গোল করে আনন্দের জোয়ার এনে দিয়েছিলেন গ্যালারির আর্জেন্টিনিয়ান সমর্থকদরে মনে, সেই আনন্দ ঢেউ গিয়ে আছড়ে পড়ে বুয়েনস এইরেসে হয়ে গোটা আর্জেন্টিনায়। মেসি কি পারবেন ক্যারিয়ারের সূর্যাস্তে এসে এক ঝলক হাসি এনে দিতে? উত্তরটা সময়ই বলে দেবে।

তবে এবারের কোপায় যে গতিতে লিওনেল মেসি এগোচ্ছেন, তাতে ভালো কিছুরই আভাস পেতে পারেন আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা। কেননা সেরা তারকার নামের পাশে এখন পর্যন্ত সমান চারটি করে গোল এবং অ্যাসিস্ট। যেখানে দুটি গোল এসেছে মেসির জাদুকরী বাঁ পায়ের দুর্দান্ত ফ্রি-কিক থেকে। এবার সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল, এ দুটি ধাপ পেরোলেই মেসি নামক উপন্যাস পূর্ণতা পাবে, সেই সাথে দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময়ের শিরোপা-খরা ঘুচবে আর্জেন্টিনার।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×