আনন্দে-বেদনায়-রোমাঞ্চে-প্রত্যাশায় ব্রাজিল

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

আনন্দে-বেদনায়-রোমাঞ্চে-প্রত্যাশায় ব্রাজিল

খেলা দেখছেন ১৯৯৪ বিশ্বকাপ থেকে। ব্রাজিলকে সমর্থন করে দুবার বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরতে যেমন দেখেছেন, জার্মানির বিপক্ষে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হওয়া দলের কারণে নতুন শ্বশুর বাড়িতে হয়েছেন অপদস্থও। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনালের আগে সমর্থক-জীবনের পুরো স্মৃতিটাই রোমন্থন করলেন এই পাঠক।

২০১৩ সালে বিয়ে করে ২০১৪ সালে নতুন বউকে ঘরে ওঠানোর কয়েক মাস পরই ফুটবল বিশ্বকাপের শুরু। বউ থেকে শুরু করে কাছাকাছি বয়সের শ্যালিকারা এবং হাঁটুর বয়সী শ্যালকেরা--সবাই আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। আর আমার বাসায় আম্মা খেলা দেখেন না, আব্বা আফ্রিকা আর এশিয়ার দেশগুলোর সাপোর্টার, বোনের পছন্দের দল নাই । শ্বশুর-শাশুড়ি কোন দল? এখনো জানি না। এই অবস্থায় ঘটল ফুটবল ইতিহাসের মহাকেলেঙ্কারি 'সেভেন-আপ'! কেলেঙ্কারি তো অবশ্যই, কারণ আমি যে ব্রাজিলের সাপোর্টার! নতুন শ্বশুর বাড়িতে আমার ইমেজ নিয়েই তখন টানাটানি!

২০১৪ সালের বেদনার স্মৃতি দিয়ে লেখা শুরু করলেও আমি ব্রাজিলের প্রথম খেলা দেখি ১৯৯৪ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে, তখন আমার বয়স ৯ (সার্টিফিকেটে অবশ্য ৮)। আর ব্রাজিল সাপোর্ট করা শুরু করি '৯৮র ফ্রান্স বিশ্বকাপ থেকে, কারণ বিশ্বকাপ বাদে খেলা দেখার সুযোগ তখন ছিল না। খালাতো ভাইদের প্রভাব, স্কুলের সাধারণ জ্ঞান বইয়ে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের পরিসংখ্যান এবং বাংলা বইয়ে পেলের জীবনী আমার ব্রাজিলের সাপোর্টার হয়ে ওঠার পেছনের গল্প।

সত্যি বলতে, ২০০২ সাল পর্যন্ত আমার দ্বিতীয় পছন্দে দল ছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু আমি আবিষ্কার করলাম, কোনো আর্জেন্টিনা সমর্থকই ব্রাজিলকে দুই চোখে দেখতে পারেন না। যেন দুই চোখের বিষ! সেই সাথে আমার পরিচিত আর অর্ধপরিচিত আর্জেন্টিনা সাপোর্টাররা বুঝে-না বুঝে  আর্জেন্টিনাকে বিশ্বসেরা দল বলত, অযথা তর্ক, ভুল পরিসংখ্যান, আর্জেন্টিনা জিতলে কিংবা ব্রাজিল হারলে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করত। এই সব কিছুই ধীরে ধীরে আমাকে আর্জেন্টিনার সমর্থন থেকে দূরে সরিয়ে নেয় (ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আর্জেন্টিনার বিচক্ষণ সাপোর্টারদের কাছে)। ২০০২ বিশ্বকাপের ব্রজিলের স্কোয়াড এখনো আমার চোখে ভাসে। কে ছিল না ওই দলে! রোনালদো 'দ্য ফেনোমেনন', রিভালদো, রোনালদিনহো, কার্লোস, কাফু… এমনকি কাকার মতো খেলোয়াড়কে সাইড বেঞ্চে বসে থাকতে হতো! আমার মনে হয় তখন বিশ্বসেরা একাদশ সাজালে ব্রাজিলের সব খেলোয়াড়ই সুযোগ পেতেন। এখনো চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই রবার্তো কার্লোসের ফ্রি কিক, রোনালদো-রোনালদিনহোর ড্রিবলিং কিংবা রিভালদো-কাকার দম।

২০১৪ বিশ্বকাপ আমাকে চূড়ান্ত কষ্ট দিলেও কষ্টের শুরু ২০০৬ বিশ্বকাপ থেকে। চলেছে পরের তিন বিশ্বকাপেও। যেন ইউরোপিয়ান ট্যাকটিক্যাল ফুটবলের কাছে হেরে হয়ে যাচ্ছে ল্যাটিন ছন্দের ফুটবল। এখন আশায় আছি ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে। কারণ, সর্বশেষবার ব্রাজিল কাপ জিতেছিল এই এশিয়াতেই! ভাবতেই খারাপ লাগে, এখন ব্রাজিল নিয়ে চিন্তা করতে কাকতালীয় ব্যাপার-স্যাপার কেও বিবেচনায় আনতে হয়!

বড় পতাকা লাগানো, রাত জেগে পিকনিক আমেজে খেলা দেখা, ইলেকট্রিসিটি চলে গেলে এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায় কিংবা কোথায় জেনারেটর আছে জেনে সেখানে দৌড়ে ছুটে চলা, খেলা নিয়ে বাজি ধরে খাওয়া কিংবা বন্ধুদের সাথে রাগ-অভিমান...এই স্মৃতি গুলা নিয়ে বিস্তারিত আর না-ই বললাম। কারণ, আমাদের দেশে ৮০/৯০'র দশকে জন্ম নেওয়া ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা সাপোর্টার, সবার ক্ষেত্রেই এই গল্পগুলো একেবারে দাড়ি, কমাসহ মিলে যায়।  প্রার্থনা করি, এই মহামারী দ্রুতই কেটে যাক, বিশ্বকাপটাও হোক যথা সময়ে।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×