আকাশি নীলের মাঝে এক টুকরো সাদা মেঘ

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

রাকিবুল হাসান

৮ জুলাই ২০২১

আকাশি নীলের মাঝে এক টুকরো সাদা মেঘ

বেশির ভাগ আর্জেন্টিনা সমর্থকের মতো এই পাঠকও ডিয়েগো ম্যারাডোনার কারণেই আর্জেন্টিনার প্রেমে মজেছেন। তবে মাঠের ম্যারাডোনাকে দেখে নয়, ডাগআউটের ম্যারাডোনাকে দেখে। এর আগেই তো শুনেছিলেন, ফুটবল-ঈশ্বর একজনই, নাম তাঁর ডিয়েগো ম্যারাডোনা।

'মাথার ওপর এক আকাশ নীল, তার মাঝে এক টুকরো সাদা মেঘ'--এমন একটি আকাশ বিরাজ করে প্রতিটা আকাশপ্রেমীর মাঝে। তবে আজকে যে আকাশের কথা বলব, সে আকাশ বিরাজ করে আমাদের হৃদয়ে, হৃদয়ের গহীন কোণে।

সাল ২০১০। ফুটবলের নিয়ম-কানুন তখনো ছোট্ট আমার মগজে স্থান করে নিতে পারেনি। 'জাদু' শব্দটার সাথে তখন পরিচিত ছিলাম, তবে খুব বেশি টান কাজ করত না এর প্রতি। বড়দের মুখে শুনলাম, ফুটবল-বিশ্বও দেখেছে এক জাদুকরের মনোমুগ্ধকর সব জাদু। জাদুকরের নাম, ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা। শুনে ভাবলাম, ফুটবলেও জাদু! সেই থেকে এই জাদুর খোঁজে ফুটবলের প্রেমে পড়া। শুধুই কি জাদুকর? ফুটবল-বিশ্ব যে তাঁকে ফুটবল-ঈশ্বর বলেও মেনে নিয়েছে। ততদিনে জানা হয়ে গেছে ফুটবলের মাঠ থেকে জাদুকরের প্রস্থানের খবর।

২০১০ ফুটবল বিশ্বকাপ। ফুটবল-প্রেমী বাঙালির বাড়ির ছাদে, গাছের ডালে কিংবা গাড়ির সামনে তার প্রিয় দেশের পতাকা থাকবে না, তা কি হয়! তবে বিশেষ করে আকাশি-সাদা রঙের একটা পতাকার প্রতি অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করল। তখনো জানতাম না, এটাই ফুটবল-ঈশ্বরের দেশের পতাকা। আকাশের নীলের মাঝে সাদা মেঘ। আহা, ঈশ্বরদের সবই বুঝি মনোমুগ্ধকর হয়!

দিন-তারিখ মনে নেই। তবে দিনটি অনেকের কাছেই স্পেশাল ছিল। কারণ, আর্জেন্টিনা নামক একটি দেশের খেলা ছিল। আমার কাছেও একই কারণে দিনটি স্পেশাল। কারণ, সেদিনই কোনো ফুটবল ম্যাচ প্রথম দেখা। টিভিতে খেলা দেখাও তখন একপ্রকার যুদ্ধ জয়ের মতোই। সারা গ্রামে একটাই টিভি। চাচাদের সাথে খেলা দেখতে যাওয়াতে বয়সে সবার ছোট হলেও তেমন যুদ্ধ করতে হয়নি খেলা দেখতে। প্রতিপক্ষের নাম জানি না। প্রতিপক্ষ কে, সেটা নিয়ে কেউ আলোচনাও করছে না। সবার আলোচনার বিষয়বস্তু আর্জেন্টিনা আর লিওনেল মেসি। শুনেছি, লিওনেল মেসির মাঝে নাকি ম্যারাডোনার ছায়া দেখা যায়।

অপেক্ষার অবসান হলো। মাঠে প্রবেশ করল দুটি দল। বুঝতে বাকি রইল না, আমার প্রিয় আকাশি-সাদার দলটি লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। পুরো খেলা জুড়ে মানুষের যতটা না আগ্রহ ছিল মাঠের খেলায়, তার চেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল আর্জেন্টিনার ডাগআউটের একজনকে নিয়ে। তিনি আর কেউ নন। 'ফুটবল-ঈশ্বর' ম্যারাডোনা। ফুটবলের জাদুকর ম্যারাডোনা। যতবারই ক্যামেরা ম্যারাডোনাকে ধরেছে, মুগ্ধ চোখে দেখেছি তাঁকে। দেখেছি মাঠজুড়ে আকাশি-সাদাদের শৈল্পিক ফুটবল। এরপর থেকে নিয়ম করেই ফুটবল খেলা দেখি। ফুটবলের সবকিছু মননে-মগজে গাঁথা হয়ে গিয়েছে।

মাঝখানে কত স্মৃতি! কখনো আর্জেন্টিনার জয়ের আনন্দে আত্মহারা হয়েছি, আবার কখনো বা পেয়েছি হেরে যাওয়ার তিক্ত স্বাদ। তবে তিক্ততায় যেন আমাদের চারপাশ ঘেরা। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেই ফাইনাল ম্যাচ। কাছে গিয়েও ছুঁয়ে দেখা হলো না বিশ্বকাপ। লিওনেল মেসির সেই হতাশ চেহারা। কিংবা, পরপর দুইবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে হার। সবই আমাদের বিষাদ স্মৃতি। তবুও ভালোবাসি এই দলটাকে। ভালোবাসি এই দেশটাকে। ভালোবাসি ফুটবল-ঈশ্বরের দেশ। যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন একটাই ছবি হৃদয়ের গহীন কোণে অতিযত্নে লালন করব....আকাশি নীলের বুকে এক টুকরো সাদা মেঘ।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×