গর্বের ব্রাজিল যেভাবে ভালোবাসার আর্জেন্টিনার কাছে পরাজিত

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

এস এম আবু সাঈদ

৯ জুলাই ২০২১

গর্বের ব্রাজিল যেভাবে ভালোবাসার আর্জেন্টিনার কাছে পরাজিত

এরিক ক্যান্টোনা বলেছিলেন, পছন্দের দল নাকি বদলানো যায় না। তবে `কিছু ব্যতিক্রম তো থাকবেই` শর্ত প্রয়োগ করতে বোধ হয় ভুলে গিয়েছিলেন। নইলে এই লেখক তো ব্রাজিল থেকে আর্জেন্টিনার সমর্থক হয়ে গেছেন! কিভাবে হলেন, কেন হলেন-- তাঁর জবানিতেই পড়ে নেবেন।

সালটা ২০০৬। তখন আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। প্রথমে দেখলাম, আমার এলাকায় ফুটবল নিয়ে সবাই কথা বলছে। বাংলাদেশের পতাকা ছাড়াও প্রথম আকাশে উড়তে দেখেছিলাম অন্য দুটো দেশের পতাকা। সে সময়কার পাকিস্তানের কট্টর সমর্থক আমি আর্জেন্টিনার পতাকার সাথে মিল খুঁজে পেয়েছিলাম ভারতের পতাকার। আমার শিশুমন সেটা মেনে নিতে পারছিল না। উল্টোদিকে আমি দেখলাম, সবুজ-হলুদের সংমিশ্রণে কি অসাধারণ একটা পতাকার দেশ-- ব্রাজিল। সাথে শুনেছিলাম, দলটার নাকি পাঁচটা বিশ্বকাপ শিরোপাও আছে। ক্লাসে প্রথম শ্রেণি থেকে ফার্স্ট হওয়া আমি সব সময় বিশ্বাস করতাম শ্রেষ্ঠত্বে। সেই থেকে আমি সাপোর্ট শুরু করি ব্রাজিল ফুটবল দলের।

২০০৬ সালের ওয়ার্ড কাপে আমি ব্রাজিলের জন্য রীতিমতো প্রার্থনা করতাম। কিন্তু সে সময়ের ক্লাস থ্রিতে পড়ুয়া আমি কখনোই সেভাবে খেলা দেখতে পারতাম না। বলা যায়, আমি ১০ টার বেশি রাত জাগতেই পারতাম না। তবুও আমার সাপোর্টের কিন্তু কোনো কমতি ছিল না। পাঁচটা ওয়ার্ল্ডকাপ নিয়ে গর্ব, ব্রাজিলের জয়ের খবরে দারুণ আনন্দ, ব্রাজিলের পরাজয়ের খবরে কেমন একটা শোক-- কোনোকিছুরই কমতি ছিলো না আমার।

বাল্যকাল পেরিয়ে কৈশোরে পা দিলাম। তখন এলাকার মাঠে মাঝেমধ্যেই ফুটবল খেলা হতো। ফুটবল খেলতে গিয়ে যখনই একটু ড্রিবলিং এর চেষ্টা করে বল হারাতাম, তখন পাশ থেকে অন্যরা বলত-- 'এহ! এমন ভাব মনে হয় সে মেসি! সবাইকে একাই কাটাবে! পাস দে।' তখন মাঝেমধ্যেই মনে হতো-- কে এই মেসি? আমাদের এলাকার এক বড়ভাই মেসির বিশাল বড় ভক্ত ছিলেন। তাঁর কম্পিউটারে মেসির ড্রিবলিং, গোল, সলো রান-- এসবের অনেক ভিডিও ছিল। তো সেসব একদিন দেখলাম। অসম্ভব ভালো লেগে গেল। এরপর ২০১১ সালের দিকে যখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি, তখন থেকে মোটামুটি বার্সেলোনার খেলা দেখা শুরু করলাম। আসলে দেখতাম মেসির খেলা। মেসি একটা গোল করবে, সেটা দেখার জন্য আমি রাত জাগতাম। চুপিচুপি বাবার রুমে গিয়ে নিঃশব্দে টিভি চালু করে বসে থাকতাম। অনেক দিন খুব আনন্দ পেতাম। অনেক দিন এত কষ্ট পেতাম যে, রাতে ঘুমও আসতে চাইত না। তারপর কত কিছু দেখলাম। একটার পর একটা মেসির গোল। একটার পর একটা মেসির বার্সেলোনার ট্রফি। একটার পর একটা মেসির ব্যালন ডি'অর। কোনো কিছুরই কমতি ছিলো না।

এরপর মেসি যখন আর্জেন্টিনার হয়ে খেলত, তখন কিভাবে যেন মেসির আর্জেন্টিনারও সাপোর্টার হয়ে গেলাম। এভাবেই সেই সুন্দর পতাকার দেশ বা পাঁচটা ট্রফির দেশ ব্রাজিলকে কিভাবে যেন ভুলেই গেলাম। আজ সেই ভারতের মতো পতাকাটাই ভালো লাগে। গত ২৮ বছরে কোনো ট্রফি নেই আর্জেন্টিনার, ৯ টা ফাইনাল খেলে একটাও জিততে না পারা মেসি-- আজ কারও প্রতি আমার আবেগ বা ভালোবাসার একটুও কমতি নেই। ভালোবাসা অদ্ভুত! ফুটবল অদ্ভুত! এবং অবশ্যই-- জীবন অদ্ভুত!

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×