ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি: গয়কোচিয়া থেকে এমি

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

মেহদী আহমেদ

৯ জুলাই ২০২১

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি: গয়কোচিয়া থেকে এমি

কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে তিনটি শট ঠেকিয়ে দিয়ে নায়ক হয়েছেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, সঙ্গে ফিরিয়ে এনেছেন সার্জিও গয়কোচিয়াকেও। `৯০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের সঙ্গে `২১-এর কোপার তো অনেক মিল। কী সেই মিল, তা-ই মনে করিয়ে দিলেন এক পাঠক।

ভলয়েতার বলেছিলেন, 'ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় না। মানুষই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করে।'

হ্যাঁ, মানুষই করে। এই যে সেদিন এমি মার্তিনেজ মনে করিয়ে দিলেন সার্জিও গয়কোচিয়ার কথা। ব্রাজিলের বিপক্ষে কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে গেলেন কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে তিনটি শট ঠেকিয়ে দিয়ে। আর ফিরে এলেন গয়কোচিয়া।

১৯৯০ সালের বিশ্বকাপ, আর্জেন্টিনার দলপতি ফুটবল ঈশ্বর ম্যারাডোনা। পুরো হাইপ তাঁকে জুড়েই আর তাঁর রাজ্য নেপলসেই সেমিফাইনাল। অথচ ম্যাচের পর পুরপ আলো কেড়ে নিলেন গয়কোচিয়া।

`৯০র সেমিতে গয়কোচিয়া

ম্যাচটা সংক্ষেপে মনে করিয়ে দিলে দাঁড়াবে এমন: খেলা শুরু হলো স্তাদিও সান পাওলোতে। ৯০ মিনিট শেষে ১-১ সমতা, অতিরিক্ত সময়েও কোনো দল আর কোনো গোলের দেখা পেল না। ফলাফল ড্র, টাইব্রেকারে গড়াল ম্যাচ। আর্জেন্টিনা নিজেদের প্রথম চারটা শটই জড়াতে পারল জালে, কিন্তু ইতালির পাঁচটা শটের দুইটা শট আটকে দিলেন বাজপাখি খ্যাত সার্জিও গয়কোচিয়া। ইতালির চতুর্থ এবং পঞ্চম শট আটকে দিয়েই নিশ্চুপ করে দিলেন নেপলসের স্তাদিও সান পাওলোর গ্যালারিকে।

তবে এত বছর পর দুটো ম্যাচের মধ্যে অদ্ভুত মিল পাওয়া যাচ্ছে। কী কী মিল তা দেখা যাক:

১. এমি মার্তিনেজ দলের প্রধান গোলকিপার ছিলেন না। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে উনি সুযোগ পেয়েছেন ফ্রাঙ্কো আরমানির চোটে। সুযোগ পেয়েই নিজেকে উজার করে দিয়েছেন এবং নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন। ঠিক অনুরূপ সার্জিও গয়কোচিয়ার গল্প, দলের প্রধান গোলকিপার নেরি পাম্পিদো চোটের কারণে '৯০ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বেই ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে যাওয়ায় সুযোগ পেয়েছিলেন গয়কোচিয়া।

২. ম্যাচটা ছিল সেমিফাইনাল। দুই সময়ের দুই গোলকিপারই নিজেদের একক নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তিন কাঠির নিচে।   

৩. ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলের দলপতি ছিলেন ফুটবল ঈশ্বর দিয়েগো ম্যারাডোনা। ২০২১ সালের কোপা আমেরিকায় আকাশি নীলদের দলপতি লিওনেল মেসি। দুজনই নিজেদের সময়ের সেরা ফুটবলার, তর্ক-বিতর্ক চলতেই পারে সর্বকালের সেরা ফুটবলার কি না, তা নিয়ে।

৪. নির্ধারিত সময় শেষে স্কোর ছিল ১-১। তবে পার্থক্য হচ্ছে, এবনার কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা প্রথমে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু '৯০ এর বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষ প্রথমে লিড নিয়েছিল।

৩১ বছর আগের নেপলসের সেই রাত আর ২০২১ এস্তাদিও ন্যাশনাল দে ব্রাসিলিয়া স্টেডিয়ামের এই রাত, কি অদ্ভুত মিল! আর্জেন্টিনা অবশ্য চাইবে মিলটা যেন এখানেই শেষ হয়। ১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে আলবিসেলেস্তেরা জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে গিয়েছিল, ৩১ বছর পর মারাকানার ফাইনালটা নিশ্চয়ই হারতে চাইবে না। তবে যে ২৮ বছর ধরে আন্তর্জাতিক শিরোপা না জেতার হাহাকারটা ফুরোবে না।

মার্ক টোয়েনই কি সত্যি হবেন মারাকানায়? তিনি তো বলেছিলেন, 'ইতিহাস মাঝে মাঝে পুনরাবৃত্তি হয়, মাঝে মাঝে হয় না।'

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×