উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

নাইটওয়াচম্যান, চট্টগ্রাম টেস্ট ও গিলেস্পি 

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

রিদওয়ান রায়হান

১১ এপ্রিল ২০২১

নাইটওয়াচম্যান, চট্টগ্রাম টেস্ট ও গিলেস্পি 

নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নেমে ডাবল সেঞ্চুরি। জ্যাসন গিলেস্পির এমন আনন্দে ভেসে যাওয়ারই তো কথা। ছবি: বিসিসিআই

অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংস খেলেও কেউ চিরতরে বাদ যেতে পারেন, এমন উদাহরণ বোধহয় অস্ট্রেলীয় নির্বাচকরাই তৈরি করতে পারেন। মাঝখানে ভারতীয় আইসিএলে খেলেছেন জ্যাসন গিলেস্পি। ২০০৮ সালে বিদায় জানিয়ে দেন ক্রিকেটকে। বোলিংয়ের চেয়েও মানুষ যাঁকে বেশি মনে রেখেছে নাইটওয়াচম্যান হিসাবে নেমে ডাবল সেঞ্চুরি করায়।

ওয়াসিম আকরাম ২৫৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। জিম্বাবুয়ে শুনে নাক সিঁটকানোর কিছু নেই। জিম্বাবুয়ের ৩৭৫ রানের প্রথম ইনিংসের জবাব দিতে নেমে ১৮১ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল পাকিস্তান। জিম্বাবুয়ে দলটাও তখন এখনকার মতো হতশ্রী নয়। আকরাম অবশ্য তাঁর পজিশনেই ব্যাট করতে নেমেছিলেন। মানে ৮ নম্বরে। একই পজিশনে নেমে ২০৯ রানের ইনিংস আছে আরেক পাকিস্তানি ইমতিয়াজ আহমেদেরও। তবে জ্যাসন গিলেস্পিরটা আলাদা। 

অনেক ক্রিকেট অনুরাগীর কাছে নাইটওয়াচম্যান বিষয়টা একটু ধোঁয়াশার। আসলে, নাইটওয়াচম্যান বিষয়টা সহজে বললে এর অর্থ দাঁড়ায়, কোনো টেল এন্ডারকে তাঁর পজিশনের চেয়ে বেশ আগেই ব্যাট করতে পাঠানো। উদ্দেশ্য থাকে একটাই, মূল ব্যাটসম্যানদের বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য স্টকে রাখা। এর কোনো বাঁধাধরা নিয়ম অবশ্য নেই। গ্রেগ চ্যাপেল যেমন ইরফান পাঠানকে আকসার টপ অর্ডারে পাঠিয়ে দিতেন ব্যাট করতে। ব্যাটিংটা ভালোই করতেন ছোট পাঠান, তবে মাঝখান থেকে বোলিংয়ে কেমন যেন খেই হারিয়ে ফেললেন। তা নিয়ে বিতর্কও কিছু কম নেই। 

আর ক্রিকেটে নাইটওয়াচম্যান পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। ধরুন, ভারত ব্যাট করছে টেস্টে। উইকেট খুবই কঠিন। তাল সামলানোই দায়। শেবাগ গেলেন আউট হয়ে। নামার কথা দ্রাবিড়ের। কিন্তু গাঙ্গুলী পাঠিয়ে দিলেন শান্তকুমারণ (আসলে অশান্ত) শ্রীশান্থকে। এখন যে উইকেটে শেবাগই খাবি খাচ্ছিলেন, সেখানে শ্রীশান্থের কতটুকুই বা ম্যাচ কিংবা উইকেট ধরে রাখার ক্ষমতা থাকবে।

তো সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার হয়ে চট্টগ্রাম টেস্টে নাইটওয়াচম্যান হয়েছিলেন গিলেস্পি। ২০০৬ সালের ঘটনা। ১৯৭ রান করেছিল বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে। ওপেনিংয়ে হেইডেন আর ফিল জ্যাকসের ৬৭ রানের জুটি। হেইডেন ফিরে গেলে বৃষ্টির আভাস চিন্তা করে পন্টিং ব্যাট করতে পাঠান গিলেস্পিকে। তারপর অবশ্য টানা তিন দিন ব্যাট করতে হয় গিলেস্পিকে। কারণ বৃষ্টি বারবার বাগড়া দিচ্ছিল। খেলেছিলেন ৪২৫ বল। তাতে ২০১ নট আউট। সঙ্গ-দোষে লোহা ভাসে, আর সঙ্গ-গুণে?

গিলেস্পিকে বেশ ভালোই সঙ্গ দিয়েছিলেন ‘মিস্টার ক্রিকেট’ খ্যাত মাইক হাসি। মাইক ১৮২ রানে থামলেও থামানো যায়নি গিলেস্পিকে। নাইটওয়াচম্যান সোসাইটির কেউ এখনো এই রেকর্ড ভাঙতে পারেননি। পনেরো বছর ধরে এই রেকর্ড অক্ষত। ক্ষত যা হওয়ার, তা কেবল গিলেস্পির মনেই সম্ভবত।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের নামও রেকর্ড বইয়ে তুলে দিয়েছেন জ্যাসন গিলেস্পি। ছবি: গেটি ইমেজেসআগের টেস্ট তো জেতা ছিলই, চট্টগ্রাম টেস্টে ইনিংস ও ৮০ রানে জিতে সিরিজও জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ম্যান অব দ্য ম্যাচ আর ম্যান অব দ্য সিরিজ দুটোই গিলেস্পি। আর ওখানেই যবনিকা। হ্যাঁ, চট্টগ্রাম টেস্টই গিলেস্পির শেষ টেস্ট হিসেবে থেকে গিয়েছে। পাঠকের হয়তো মনে হতে পারে, গিলেস্পি হয়তো ফর্ম থাকতে অবসরে গিয়েছেন অথবা তাঁর বয়স হয়ে গিয়েছিল। আসলে গিলেস্পি তখন সবে ৩০ পেরিয়েছেন। বাদ পড়ার কারণ আসলে বল হাতে আগের কয়েক সিরিজে বাজে পারফরম্যান্স। ২০১ রানের ইনিংস, ম্যান অব দ্য সিরিজ কোনোকিছুই ক্যাঙ্গারু সিলেক্টররা গণনায় নেননি। তাঁদের বক্তব্য, ' বাপু, তোমাকে তো ডাবল সেঞ্চুরি করার জন্য টিমে নেওয়া হয় না। তোমাকে বল করার জন্যই নেওয়া হয়, ওটা তোমায় দিয়ে আর হচ্ছে না।' 

বাদ যে পড়লেন, আর ফেরা হয়নি গিলেস্পির। অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংস খেলেও কেউ চিরতরে বাদ যেতে পারেন,  এমন উদাহরণ বোধহয় অস্ট্রেলীয় নির্বাচকরাই তৈরি করতে পারেন। মাঝখানে ভারতীয় আইসিএলে (আইপিএল না) খেলেছেন গিলেস্পি। ২০০৮ সালে বিদায় জানিয়ে দেন ক্রিকেটকে।  

২০২০ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করার পর তাঁকে উইশ করে টুইট করেছিলেন গিলেস্পি। লিখেছিলেন, 'এটা যেন ম্যাথুসের শেষ টেস্ট না হয়।'

ওই টুইটটাই আসলে বুঝিয়ে দেয়, গিলেস্পি বাকি জীবন হয়তো ভুলতে পারবেন না এই ঘটনার কথা। ওই ম্যাচের দুই অধিনায়ক রিকি পন্টিং বা হাবিবুল বাশারেরও ভুলতে পারার কথা না। 
 

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×