সুযোগ থাকলে কার কী নিতে চাইতেন

কৈশোরে কাকে নকল করতেন তাসকিন?

শুভ্র.আলাপ

১৩ মে ২০২১

কৈশোরে কাকে নকল করতেন তাসকিন?

তাসকিন আহমেদ

মাশরাফিকে তাসকিন আইডল মানতেন, এই তথ্য কারও অজানা নয়। শুভ্র.আলাপে অতিথি হয়ে এসে তাসকিনকে তাই পড়তে হলো একটু ভিন্নধর্মী প্রশ্নের সামনে, শৈশবে এমন কেউ কি ছিলেন, যাঁর বোলিং অ্যাকশন নকল করতেন তিনি!

তিনি নিজেই এখন লক্ষ কিশোর-তরুণের অনুপ্রেরণা। কোনো একটা ক্রিকেট একাডেমিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেই হয়তো উত্তর পাওয়া যাবে, 'আমি তাসকিন হতে চাই।' সেই তাসকিন নিজে কার মতো হতে চাইতেন শৈশবে? কে ছিলেন তাঁর রোল মডেল?

মাশরাফিকে তিনি আইডল মানতেন, এই তথ্য অবিদিত নয় কারও কাছে। গতকাল শুভ্র.আলাপের অতিথি হয়ে এসেও তাঁর কণ্ঠ ঝরে বেরোচ্ছিল মাশরাফির বোলিং নিয়ে, মাশরাফিকে নিয়ে তাঁর মুগ্ধতার কথা। সেই চেনা উত্তরটা আরও একবার শোনালে তা দর্শকদের বিরক্তির কারণ হবে ভেবে উৎপল শুভ্র প্রশ্নটা করলেন একটু ঘুরিয়ে, এমন কোনো বোলার কি ছিলেন, যাঁর বোলিং দেখে তাসকিন তাঁকে নকল করার কথা ভেবেছিলেন?

তাসকিনের উত্তরটা অবশ্য 'না' বোধকই হলো। শৈশবে সে অর্থে কোনো বোলারের মতোই হতে চাইতেন না তিনি। তবে স্বীকার করলেন, দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলার মরনে মরকেলের বোলিংটা বিশেষভাবে আকর্ষণ করত তাঁকে। কিন্তু  দুচোখে মুগ্ধতা নিয়ে দেখতেন শোয়েব আখতার, ব্রেট লিদের মতো কিংবদন্তিদের বোলিংও। বোঝাই যাচ্ছে, গতির নেশাটা তাঁর সেই ছোটবেলা থেকেই। শোয়েব আখতার-ব্রেট লিদের বোলিং দেখে যতটা না অনুকরণের চেষ্টা ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল শেখার আকাঙ্ক্ষা। সে আকাঙ্ক্ষাটা বজায় আছে এখনো। তাই, নিজের বোলিংয়ে উন্নতি আনতে জসপ্রীত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি, জফরা আর্চারদের বোলিংটাও মন দিয়ে দেখেন তিনি। তাসকিনই বলছেন, 'আমি বুমরাহ, শামি, জফরা আর্চারদের বোলিংটা খুব উপভোগ করি। চেষ্টাও করি ওদের সঙ্গে কথা বলার, যাতে নিজেকে ইম্প্রুভ করতে পারি।'

ছোটবেলায় মরনে মরকেলের বোলিংটা ভালো লাগত তাসকিনের। ছবি: আইওএল

পরবর্তী প্রশ্নে উৎপল শুভ্র তাসকিনকে নিয়ে গেলেন কল্পনার রাজ্যে। যদি কোনো এক সকালে ইচ্ছেপূরণের দৈত্য যদি এসে হাজির হয় তাসকিনের দরজায়, তবে বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের কোন বোলারের কোন অস্ত্রটা তিনি নিজের বোলিংয়ে যোগ করতে চান? তাসকিনও জানেন, বিনা পরিশ্রমে ওই তীরগুলো তাঁর তূণে যোগ হবে না, তবুও তিনি জবাবটা দিলেন সোজাসাপটাই, ইচ্ছেপূরণের দৈত্যের কাছে মোস্তাফিজের কাটার আর বুমরাহর ইয়র্কারটাই চাইতেন তিনি।

তার মানে কি নিজের এখনকার গতি নিয়েই খুশি তিনি? না, তিনি তা নন, তবে এর জন্য কারও কাছে হাত পাতার ইচ্ছেও তাঁর নেই। বরং বলছেন, 'আমার এখন যে-ই পেস আছে তা আলহামদুলিল্লাহ। তবে এটার ডেভেলপমেন্টটা আমি কষ্ট করে আর্ন করতে চাই।'

এরই মধ্যে এক দর্শক প্রশ্ন করলেন, রিভার্স সুইং করাতে চাইলে অন্য সব বোলাররা বলের উজ্জ্বল পাশটা ঢেকে রাখেন, কিন্তু তাসকিন তা করেন না কেন? প্রশ্নটা যে তাসকিনের মনে ধরেছে, তা বোঝাতে প্রশ্নকর্তাকে,ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি স্বীকার করলেন, রিভার্স সুইং জিনিসটা এখনও পুরোপুরি আয়ত্তে আনতে পারেননি তিনি। তবে খুব তাড়াতাড়িই বোলিংয়ের এই কারুকার্যে 'মাস্টার' হওয়ার ইচ্ছে আছে তাঁর, '(বল) ঢাকা, অন্যভাবে ধরা, দৌড়ের মাঝখানে বলের শাইনি পার্টটা চেঞ্জ করা, এগুলো সবই আসবে ইনশাআল্লাহ। এগুলো আমার নেক্সট লেভেলের অংশ। আই অ্যাম স্টিল লার্নিং।'

তাসকিন যেন শিখতে গিয়ে হতোদ্যম না হয়ে পড়েন, সে জন্যেই বোধ হয় উৎপল শুভ্র যোগ করলেন, রিভার্স সুইংয়ের এই শিল্পটা মোহাম্মদ শরীফ আর রুবেল হোসেন বাদে বাংলাদেশের অন্য কোনো পেসারের বোলারের বোলিংয়ে তেমন দেখা যায়নি। তাসকিন শিখতে পারলে সেটা বাংলাদেশের বোলিংয়ে নতুন এক মাত্রাই যোগ করবে। বিশেষ করে উপমহাদেশের কন্ডিশনে রিভার্স সুইং তো পেস বোলারদের গুরুত্বপূর্ণ এক অস্ত্র।

রিভার্স সুইং শেখার ইচ্ছা তো আছেই, তবে আপাতত তাসকিনের প্রায়োরিটি লিস্টের এক নম্বরে আছে ইয়র্কার। পারবেন একদিন জসপ্রীত বুমরাহর মতো বলে বলে ইয়র্কার করতে? দেখা যাক, চেষ্টা আর পরিশ্রমে কী না হয়! এর কিছুটা প্রমাণ তো তাসকিনের প্রত্যাবর্তনের গল্পেই লেখা। 

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×