অন্তরঙ্গ সাক্ষাৎকারে তামিম ইকবাল

‘টেস্ট ক্রিকেটের মতো স্যাটিসফেকশন আর কিছুতে পাই না’

উৎপল শুভ্র

২৭ ডিসেম্বর ২০২১

‘টেস্ট ক্রিকেটের মতো স্যাটিসফেকশন আর কিছুতে পাই না’

সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বে তামিম ইকবাল ফিরে তাকিয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারের দিকে। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, তৃপ্তি-আক্ষেপ এসব এসেছে স্বাভাবিকভাবেই। ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের বিবর্তন নিয়ে তো বলেছেনই; বেছে নিয়েছেন টেস্ট ও ওয়ানডেতে তাঁর চোখে নিজের সেরা পাঁচ ইনিংসও।

উৎপল শুভ্র: ৬৪ টেস্ট ম্যাচে ৪৭৮৮ রান। অ্যাভারেজ ৩৯.৫৭। ৯টি সেঞ্চুরি, ৩১টি হাফ সেঞ্চুরি। ২১৯ ওয়ানডেতে ৭৬৬৬ রান। অ্যাভারেজ ৩৬.৮৫।১৪টা সেঞ্চুরি, ৫১টা হাফ সেঞ্চুরি। পরিসংখ্যানে নিজেকে দেখলে কেমন লাগে? 

তামিম ইকবাল: আমার স্ট্যাটসটা আমি দুইভাবে দেখি। ডিজঅ্যাপয়েন্টেড হই, যখন দেখি ওয়ানডেতে ৫১টা ফিফটি। এই ৫১টার মধ্যে ৬টা বা ৭টাকেও যদি ১০০ করতে পারতাম, তাহলে তো ২০টা ২১টা সেঞ্চুরি হয়ে যেত। এটা ভেবে খারাপ লাগে। আরেকভাবে দেখি, যেটাতে আমি খুব প্রাউড। ২০১৫ থেকে যখন দেখি, আমার মনে হয় আমি ৭০টা ম্যাচে ১০টা সেঞ্চুরি করেছি। এই ৭০ ম্যাচে আমার অ্যাভারেজ ৫০-এর মতো। এটা দেখলে খুব ভালো লাগে। কারণ আমার মনে হয়, এটা বিশ্বসেরাদের সঙ্গে তুলনা করার মতো। নেক্সট ফোর ইয়ার্স, ফাইভ ইয়ার্স যতদিনই আমি খেলি, এমন বা এর চেয়ে একটু ভালো করতে পারলে ক্যারিয়ার শেষে আই উইল বি হ্যাপি।

উৎপল শুভ্র: টেস্ট ক্যারিয়ার?

তামিম ইকবাল: টেস্ট ক্যারিয়ারটাও সেইম। আমার ৫০ কয়টা? ২৬টা না? 

উৎপল শুভ্র: ৩১টা। ৯টা সেঞ্চুরি। 

তামিম ইকবাল: আপনি যদি লাস্ট সিরিজই দেখেন, সেখানে আমার তিনটা সেঞ্চুরি করার সুযোগ ছিল (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯০, অপরাজিত ৭৪ ও ৯২)। আমার অ্যাভারেজ ৪০-এর কাছাকাছি। আমি যদি অ্যাভারেজটা ৪৫-এর মধ্যে রাখতে পারতাম, সেঞ্চুরি যদি ১৫/১৬টা হতো, তাহলে আরেকটু হ্যাপি হতাম। তবে টেস্ট ক্রিকেটটা আই এনজয় আ লট। টেস্ট ক্রিকেটে আমি যখন একটা বড় রান করি, তখন যে স্যাটিসফেকশনটা পাই, অন্য কোনো ফরম্যাটে ওই জিনিসটা পাই না।

উৎপল শুভ্র: একজন ক্রিকেটারের আসল পরীক্ষাটা তো টেস্ট ক্রিকেটই নেয়...পারফর্ম করতে পারলে তৃপ্তিটাও তাই অন্যরকম... 

তামিম ইকবাল: হ্যাঁ, টেস্ট হান্ড্রেড করার যে আনন্দ, এমনকি ৮০/৯০ হোয়াটএভার, ওটার যে ফিলিংটা...টু স্পেন্ট আওয়ার্স, মাঠের মধ্যে ডিফিকাল্ট টাইম পার করে ভালো টাইমে রান করা। আর টি’তে যাওয়া, লাঞ্চে যাওয়া, লাঞ্চের আগের শেষ ওভারটা খেলা...ইট ইজ আ ডিফরেন্ট আর্ট। এই কারণেই টেস্ট ইজ দ্য মোস্ট বিউটিফুল গেম।

উৎপল শুভ্র: ২০১০ সালে ওই বয়সে ইংল্যান্ডে গিয়ে পরপর দুই সেঞ্চুরির কথা তো আপনাকে প্রায়ই কেউ না কেউ মনে করিয়ে দেয়। আপনি উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটারদের মধ্যে জায়গা পাওয়ার পর আমার অনুরোধে উইজডেনের সে সময়ের সম্পাদক শিল্ড বেরি প্রথম আলোতে একটা লেখা লিখেছিলেন। যাতে তিনি একটার প্রত্যাশার কথা বলেছিলেন, তামিম ৪০ গড়ের মোটামুটি একজন ব্যাটসম্যান থেকে একদিন ৫০ গড়ের একজন গ্রেট ব্যাটসম্যানে উন্নীত হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রিকেটকেও অন্য লেভেলে নিয়ে যাবে। উইজডেনের লেখার জন্য আপনার যখন ইন্টারভিউ করি, তখন আপনিও বলেছিলেন, আপনার স্বপ্ন বিশ্বসেরাদের একজন হওয়া। ১১ বছর কী বলবেন? 

তামিম ইকবাল: আমি কখনো মনে করি না যে, আমি লাইফে অনেক কিছু অ্যাচিভ করে নিয়েছি। আপনি যদি বাংলাদেশের মধ্যে ভাবেন, তাহলে হয়তো অনেক বড় কিছু। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমি বাংলাদেশের বা দেশের সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার চেষ্টা করিনি। সবসময় চেষ্টা করেছি বেস্টদের সঙ্গে কমপিট করতে। পেরেছি কি পারি নাই, দ্যাটস এ ডিফারেন্ট ইস্যু। যেটা আপনাকে বললাম,. আমার অ্যাভারেজ যদি এখন ৪৫ হতো, তাহলে আমি আরেকটু প্রাউড হতাম।

তবে টেস্ট ক্রিকেটে যদি আগামী চার/পাঁচ বছর ভালো যায়, আমি সম্ভবত ৪৫ অ্যাভারেজে শেষ করতে পারব। আমি কোথায় খেলছি, কোন ধরনের উইকেটে খেলছি, এটাও কিন্তু অনেক ইম্পর্ট্যান্ট। কারণ যখন আমরা হোম কন্ডিশনে খেলি, ওখানে রানই হয় ২০০/২৫০। এটা কোনো এক্সকিউজ না। এটা আমরা জেনেশুনেই হোম কন্ডিশনের অ্যাডভান্টেজ নেওয়ার জন্য খেলি। তবে এগুলো আপনাকে এগুলোও কনসিডার করতে হবে। আর গত এক/দুই বছর একটু বেশি খেললেও দেশের বাইরে টেস্ট ক্রিকেট তো আমরা অনেক গ্যাপ দিয়ে দিয়ে খেলেছি।

উৎপল শুভ্র: এবার টেস্ট ও ওয়ানডেতে আপনার চোখে আপনার বেস্ট ৫টা ইনিংস জানতে চাইব। টি-টোয়েন্টিটা বাদই থাক। যদিও টি-টোয়েন্টিতে আপনি বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান, ওটা তো সব সময় স্পেশালই থাকবে; ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকায় একটা অপরাজিত ৮৮-ও আছে। টেস্ট দিয়ে শুরু করি...সেরা পাঁচ টেস্ট ইনিংস... 

তামিম ইকবাল: বলছি...২০১০-এর ইনিংস দুইটা ভেরি স্পেশাল। 

উৎপল শুভ্র: ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেরটা কি এক নম্বরে? আপনি ওই সময়ে আমাকে বলেছিলেন, টেকনিক্যালি ওল্ড ট্রাফোর্ডকে আপনি এগিয়ে রাখেন। আর লর্ডস স্পেশাল আপনার বাবার কারণে, কারণ বাবা আপনাকে ছোটবেলাতেই লর্ডস চিনিয়েছিলেন...

তামিম ইকবাল: হ্যাঁ, এই ইনিংস দুটি সবসময়ই আমার ভেরি ক্লোজ টু হার্ট। তবে আমাকে যদি বলেন, সবচেয়ে বেশি আপনি কোন টেস্ট ইনিংসটা রেট করেন, তাহলে বলব, ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের সাথে ঢাকায় যে ম্যাচটা আমরা জিতেছিলাম। যে উইকেটে আমি সেঞ্চুরি করেছিলাম, দ্যাট ওয়াজ এক্সট্রিমলি ডিফিকাল্ট টু ব্যাট অন। ওই একটা ইনিংসকে আমি খুবই হাইলি রেট করি। এরপর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমরা যে টেস্টটা জিতেছি, দুই ইনিংসে আমি ৭১ ও ৭৮ করেছিলাম। ওই দুইটা ইনিংসও আমি হাইলি রেট করি। বিকজ দৌজ ওয়াজ এক্সট্রিম কন্ডিশন। ব্যাটিংয়ের জন্য এর চেয়ে কঠিন কন্ডিশন আর হয় না। এই ইনিংসগুলোকে আমি খুবই হাইলি রেট করি।

তামিমের চোখে তামিমের সেরা টেস্ট ইনিংস। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে ১০৪। ছবি: এপি

উৎপল শুভ্র: তাহলে কি দাঁড়াল? ওল্ড ট্র্যাফোর্ড আর লর্ডস ভেরি ক্লোজ টু ইয়োর হার্ট। অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দুইটা ইনিংস তো প্রায় সমানই। এই ৫টা? 

তামিম ইকবাল: হ্যাঁ।

উৎপল শুভ্র: এক নম্বরে কি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরিটা?

তামিম ইকবাল: হ্যাঁ, ওটাই এক নম্বর।

উৎপল শুভ্র: যদি আমি অংকে যাই, দুই নম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফার্স্ট ইনিংসের ৭১ না সেকেন্ড ইনিংসের ৭৮?

তামিম ইকবাল: (একটু ভেবে) ফার্স্ট ইনিংস। ফার্স্ট ইনিংসে আমরা টেন ফর থ্রি ছিলাম। 

উৎপল শুভ্র: তিন নম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেকেন্ড ইনিংস?

তামিম ইকবাল: তিন নম্বরে আপনি লর্ডসকে রাখেন। না স্যরি, ওল্ড ট্রাফোর্ড। 

উৎপল শুভ্র: চার নম্বরে অস্ট্রেলিয়া বিপক্ষে প্রথম ইনিংস, না লর্ডসের সেঞ্চুরি?

তামিম ইকবাল: চার নম্বরে অস্ট্রেলিয়া, পাঁচ নম্বরে লর্ডস। 

উৎপল শুভ্র: এবার ওডিআই। ওডিআইয়ের সেরা পাঁচ ইনিংস বেছে নেওয়া কি একটু কঠিন? সেঞ্চুরিই আছে ১৪টা। অনেকগুলো ফিফটিও তো ম্যাচ উইনিং...

তামিম ইকবাল: আমি আপনাকে ওডিআইয়ের ইনিংসগুলো বলছি। যেটা আমার সবচেয়ে প্রিয়, নট নেসেসারিলি বেস্ট। ওডিআইতে আমার সবচেয়ে প্রিয় সেঞ্চুরি হলো ১২৫ অ্যাগেইনস্ট ইংল্যান্ড। যেটাতে আমরা হেরেছি। ২০১০। এরপর আমার দুটি ব্যাক টু ব্যাক ইনিংস অ্যাগেইনস্ট পাকিস্তান।২০১৫। তারপর (২০১৭) চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইনিংসটা। ইংল্যান্ড। আরেকটা...আরেকটা...একটু দাঁড়ান চিন্তা করে বলি দাদা, ২১৬টা ম্যাচ তো।                  

উৎপল শুভ্র: হ্যাঁ, একটু তো কঠিনই। সেঞ্চুরির বাইরেও তো অনেক ৪০-৫০-৬০-৭০ আছে, ম্যাচের প্রেক্ষাপটে যা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ... 

তামিম ইকবাল: হ্যাঁ, তা তো ঠিকই। আপনার কী মনে হয়? আচ্ছা, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংসটা...ওই সময়ে থ্রি হান্ড্র্রেড চেজ করা মানে আমাদের জন্য ছিল চেজিং ফোর হান্ড্রেড।  

উৎপল শুভ্র: হ্যাঁ, ওই্ সময়ে তো ওটা হিউজ ইনিংস ছিল। এত রান (১৫৪) করা তো কখনোই সহজ না। লর্ডস আর ওল্ড ট্রাফোর্ড যেমন ভেরি ক্লোজ টু ইয়োর হার্ট, আমার আবার ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ত্রিনিদাদের ইনিংসটা ক্লোজ টু মাই হা্র্ট। কারণ প্রেসবক্সে ওই ফিলিংস্ আমি জীবনে ভুলব না। ইন্ডিয়ান সাংবাদিকদের সামনে দিয়ে ঘুরছিলাম আর ওরা বলছিল, ‘এই মালটাকে কোথ্থেকে এনেছিস তোরা? এ তো ফাটিয়ে দিচ্ছে রে!’ এখন যদি একটু বলেন, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৫ এত প্রিয় কেন?

তামিম ইকবাল: সবারই একটা ইনিংস থাকে না যে, আমি আমার ইচ্ছামতো ব্যাট করতে পারছি। আমি ওইদিন যা করতে চেয়েছি, যা ইচ্ছা করেছে, তা-ই করতে পেরেছি। এই ইনিংসটা কেমন আমি বলছি...আমি যখন একটা বড় রান করি, পরে এটার হাইলাইটস বা ভিডিও দেখি। একবারের বেশি আর কোনোটা আমার দেখতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু ওই ইনিংসটা যদি আমাকে ১০ বার দেখতে বলেন, আমি ১০ বারই দেখব। বিকজ ইট ওয়াজ সো নাইস। এ কারণেই এটা প্রিয়।  

ওয়ানডেতে তামিমের সবচেয়ে প্রিয় ইনিংস ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৫। মিরপুর, ২০১০। ছবি: গেটি ইমেজেস

উৎপল শুভ্র: আর ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি সেঞ্চুরি...্ওটা তো ওয়ার্ল্ড কাপের ঠিক পরেই...ওয়ার্ল্ড কাপের ওই দুঃসময়টার কি কোনো ভূমিকা আছে ওখানে? 

তামিম ইকবাল: তা তো আছেই। ওই খেলার আগে আমি অসম্ভব চাপে ছিলাম। সিচুয়েশন চিন্তা করে প্রথম সেঞ্চুরিটা (১৩২)। আর পরের ইনিংসটা কেন, আমি বলছি।২০১৫ বিশ্বকাপের পর হাথুরুসিংহে আমাকে কিছু কথা বলেছিলেন। রিয়েলিটি চেক থাকে না, সেরকম? যে কথাগুলো বলেছিলেন, তা শুনতে খারাপ, তবে প্রতিটা কথাই সত্যি ছিল। প্রতিটা কথায় যুক্তি ছিল। বলেছিলেন, ‘দেখো, ইউ আর নট ফিট এনাফ। আমার কাছে মনে হয় না যে, তুমি ম্যাচের সেকেন্ড ইনিংসে ৫০/৬০-এর বেশি করতে পারবে, কারণ তোমার ফিটনেসই নাই। তোমার এখন দরকার হলো ফিরে গিয়ে নিজেকে ফিট করে ভালোভাবে কামব্যাক করা।’ ইন্ডিয়ার সাথে খেলার পর ড্রেসিংরুমে বসে আলাপ হচ্ছিল। আমার ভালোর জন্যই কথাগুলো বলেছিলেন, আর মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট থিং, জিনিসটা আমি খুব পজিটিভলি নিয়েছিলাম। এরপর যতটুকু সময় ছিল, আমি ফিটনেস নিয়ে অনেক কাজ করি। দ্বিতীয় ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করে ম্যাচটা শেষ করার পর সবাই যখন হ্যান্ডশেক করছে, তখন আমি তাঁর (হাথুরুসিংহে) হাতটা ধরে বলেছি, ‘তুমি আমাকে বলেছিলে যে, আমি পারব না। এই হলো প্রমাণ...।’

উৎপল শুভ্র: ফিটনেস নিয়ে আমিও আপনাকে বলেছিলাম। মনে আছে, ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট লুসিয়ায় আপনি দারুণ ব্যাটিং করতে করতে মিড উইকেটে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে এলেন। আমি নিশ্চিত ছিলাম, ক্লান্তির কারণেই ওই সময়ে ওই শটটা খেলেছিলেন। আপনাকে তা বলায় অবশ্য মানেননি...

তামিম ইকবাল: হ্যাঁ, দাদা, আসলে জিনিসটা কী, আপনাকে কিভাবে বোঝাই। ওই মুহূর্তে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, না, আসলে এই কারণে আউট হই নাই। এরপর যখন আমি আরও ফিট হলাম, তখন বুঝতে পারলাম যে, না, কথাটা ঠিক।

উৎপল শুভ্র: আর দুইটা ইনিংস রইল...ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেঞ্চুরি, ইংল্যান্ডে খেলা, আইসিসি টুর্নামেন্ট...কারণগুলো অনুমান করতে পারি। 

তামিম ইকবাল: এটাই...সলিড বোলিং অ্যাটাক, ওদের মাঠে খেলে রান করা ওটা একটা আলাদা জিনিস ছিল। বিগ টেস্ট, ফার্স্ট গেম অব দ্য টুর্নামেন্ট। ওই সেঞ্চুরির মূল্যটা আমার কাছে অনেক বেশি। 

উৎপল শুভ্র: গত কয়েক বছর বাংলাদেশের উইকেট, বিশেষ করে মিরপুরের উইকেট আরও খারাপ হয়েছে। এই উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আপনার দুটি ইনিংস দেখে আমি লিখেছিলাম, আপনি এখন কমপ্লিট ব্যাটসম্যান, যে ইচ্ছামতো গিয়ার চেঞ্জ করতে পারে। এমন উইকেটে খেলা কি আপনাকে আরও অলরাউন্ড ব্যাটসম্যান বানিয়েছে?   

তামিম ইকবাল: অবশ্যই দাদা। আমার কাছে মনে হয়েছে আই হ্যাভ গ্রোন অ্যাজ এ ব্যাটসম্যান। আপনাকে একটা কথা বলি, ধরেন, আমার খেলার স্টাইল অনেকের পছন্দ, অনেকের পছন্দ না। এটা নিয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কথাও বলি। কিন্তু আমি কী কারণে এই ধরনের খেলাটা খেলতে চাচ্ছি, তা মানুষ কোনোদিন অ্যাপ্রেশিয়েট করবে না, এটাও বুঝি। কিন্তু আপনি লাস্ট পাঁচ মাসের হিসাবটা দেখেন তো আমরা প্রথম ১০ ওভারে কয় উইকেট করে হারিয়েছি।

উৎপল শুভ্র: এর সঙ্গে এটাও কি আরেকটা কারণ, এত বেশি আপনার পার্টনার চেঞ্জ হয়েছে যে, নিজের কাঁধে বাড়তি দায়িত্ব তুলে নিতে হয়েছে? 
তামিম ইকবাল: একটা টিমে সবার ১০০ স্ট্রাইকরেট থাকলে ওই টিম প্রতিদিন ৫০০ রান করবে। একটা টিমকে যদি আড়াই শ-তিন শ রান করতে হয়, তাহলে সবার একটা রোল প্লে করতে হবে। এখন আমি যদি দেখি, আমি এভাবে ব্যাটিং করলে আমার টিমের লাভ হচ্ছে, তখন তো সেটা করতে কোনো সমস্যা নেই। এর ইম্পরট্যান্সটা আপনি তখনই বুঝবেন, যখন এই জিনিসটা কেউ করবে না, যখন রেজাল্ট আপনার চোখের সামনে থাকবে। এসব কথা ওয়ানডে-টি টোয়েন্টিতেই বেশি হয়। টেস্টটা আমি খুব সিম্পলভাবে খেলি। যখনই দেখি চ্যালেঞ্জিং উইকেট, উইকেটে ঘাস আছে বা বল সুইং করছে, বল গ্রিপ করছে। আই অলওয়েজ ট্রাই টু অ্যাটাক। কারণ আমার মনে হয়, আমি যদি বেশি দেখেশুনে খেলতে চেষ্টা করি, তাহলে সাকসেসফুল হতে পারব না। আর টেস্ট ক্রিকেটে আমি যখনই অনেক অ্যাটাকিং মোডে ছিলাম, আই হ্যাভ বিন অলওয়েজ সাকসেসফুল। টেস্ট ক্রিকেটে আমার বড় বড় যত ইনিংস আছে, আপনি যদি ঘেঁটে দেখেন, তাহলে দেখবেন, প্রত্যেকটাই অ্যাটাকিং ইনিংস। টেস্ট ক্রিকেট আমি এভাবেই খেলতে পছন্দ করি। ওয়ানডেতে যেভাবে খেলি টেস্টে, আমি কিন্তু সেভাবে খেলি না। বা টেস্টে যেভাবে খেলি ওয়ানডেতে এভাবে খেলি না। এর কারণও আছে।

উৎপল শুভ্র: একটা বড় কারণ তো ফিল্ড সেটিং। টেস্টে তো অনেক ফাঁকা জায়গা থাকে..

তামিম ইকবাল: সেটাই...ওয়ানডে ক্রিকেটে নয়জন রিংয়ে থাকে। তো দ্যাট ইজ দ্য ডিফারেন্স। অনেকে ভাবে, আমি কেন টেস্টে এত ফাস্ট খেলি কেন? 

উৎপল শুভ্র: টেস্টে অ্যাটাকিং ইনিংসের কথা বলছিলেন...২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে মিরপুরে ১৫১-কে আপনার সেরা পাঁচ ইনিংসের মধ্যে রাখবেন ভেবেছিলাম... 

তামিম ইকবাল: এটা আমার মাথায়ও ছিল। বলব কি বলব না চিন্তা করেছি, আসলে হয় কি জানেন, রিসেন্ট ইনিংসগুলোই বেশি মনে থাকে। 

(অসমাপ্ত)

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×