শামীম হোসেনের জন্য হাততালি

উৎপল শুভ্র

২৬ জুলাই ২০২১

শামীম হোসেনের জন্য হাততালি

‘আসল পরীক্ষা’ যখন হবে, তখন দেখা যাবে। তাতে কী হবে না-হবে, তা আগাম ভেবে ‘যা হয়েছে’, সেটি উদযাপন করবেন না? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরপর দুই ম্যাচে সম্ভাব্য কঠিনতম পরিস্থিতিতে যেভাবে ব্যাটিং করেছেন শামীম হোাসেন, সে জন্য জোরে একটা হাততালি দেবেন না?

আসল পরীক্ষা হবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আসন্ন সিরিজে...এ কথা বলার কোনো মানে হয় না। এটা কে না জানে!

সবচেয়ে ভালো জানেন শামীম হোসেন।

‘আসল পরীক্ষা’ যখন হবে, তখন দেখা যাবে। তাতে কী হবে না-হবে, তা আগাম ভেবে ‘যা হয়েছে’, সেটি উদযাপন করবেন না? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরপর দুই ম্যাচে সম্ভাব্য কঠিনতম পরিস্থিতিতে যেভাবে ব্যাটিং করেছেন শামীম, সে জন্য জোরে একটা হাততালি দেবেন না?

সেই হাততালির আওয়াজ অবশ্য ভালোই শোনা যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য যদি জনমানসের ব্যারোমিটার হয়, তাহলে কারও কারও হাততালিতে একটু দ্বিধাও অবশ্য টের পাওয়া যাচ্ছে। এতটা মাতামাতি করা কি ঠিক হচ্ছে?

সেই দ্বিধার কারণটা খুব ভালো বুঝি। ‘ঘরপোড়া গরু’ যে মেঘ একটু সিঁদুরে রং নিলেই ভয় পায়! নতুন কেউ ভালো করলে তাঁর প্রশংসা করতেও ভয় করে...এটা না আবার ছেলেটার মাথা ঘুরিয়ে দেয়! অথচ নিয়মটা হওয়া উচিত খুব সরল। ভালো করলে প্রাণ খুলে প্রশংসা। খারাপ করলে তো খারাপই বলতে হবে। তবে দুটিতেই পরিমিতিবোধের ব্যাপারটা মনে রাখলে ভালো।

মনে রাখা ভালো, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বড় কঠিন ঠাঁই। সাফল্য আর ব্যর্থতা এখানে একে অন্যের জমজ ভাই। শামীম দুই ম্যাচে ভালো করেছেন, হয়তো সামনের ম্যাচেও ভালো করবেন। আবার কে জানে, হয়তো বা ব্যর্থ হবেন। তাতেও কিন্তু এই সত্যিটা সত্যিই থাকবে যে, বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে এমন একজন ব্যাটসম্যানকেই খুঁজছিল। কেমন ব্যাটসম্যান?

এমন ব্যাটসম্যান, আস্কিং রেটের চোখ রাঙানিতে যে ভয় পায় না। ভয়ডরহীন ব্যাট চালাতে জানে। সাহস খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু শুধু সাহসে তো আর কাজ হয় না। সেই সাহসকে পারফরম্যান্সে রূপ দেওয়ার মতো স্কিল থাকতে হয়। ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে আরও সুনির্দিষ্টভাবে বললে হাতে শট থাকতে হয়। শুধু ক্রিকেটের প্রথাগত শটই নয়,  টি-টোয়েন্টির উদ্ভাবনী পৃথিবীর দাবি মেনে ব্যাকরণ-বহির্ভূত শটও। শামীমের সেটি আছে বলেই মনে হচ্ছে।

আছে বলেই তাঁর 'ছোট' ইনিংস দুটিও মানুষের মনে এমন দাগ কেটে গেছে। নইলে রানের হিসাব করলে এমন কিই-বা করেছেন! দুই ম্যাচে মোট ৬০ রানই তো! রানসংখ্যা যে বেশির ভাগ সময়ই ব্যাটিংয়ের মাহাত্ম্য বোঝাতে ব্যর্থ, এ তার আরেকটি আদর্শ উদাহরণ। কত রান করা হয়েছে, এর মতোই, আসলে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, কখন তা করা হয়েছে, কীভাবে করা হয়েছে। এখানেই শামীম হোসেনের ২৯ আর অপরাজিত ৩১ রানের ইনিংস দুটি স্পেশাল হয়ে যাচ্ছে। ক্রিকেটে এমন তো কতই হয়, ৭০-৮০ রানের ইনিংসও কখনো কখনো মনে থাকে না, যেখানে ২৫-৩০ রানের কোনো ইনিংসই আলোচনার বিষয় হয়ে থাকে অনেক দিন।  

ম্যাচ জেতানোর পর বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ম্যাচ উইনারের সঙ্গে। ছবি: বিসিবি

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ম্যাচেই নিজের চরিত্রটা ভালোই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন শামীম হোসেন। ১৩ বলে ২৯ রানের ইনিংসটি বাংলাদেশকে জেতাতে পারেনি, কারণ সেদিন ২২৩.০৭ স্ট্রাইক রেটে রান করাই শুধু যথেষ্ট ছিল না। বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় এই স্ট্রাইক রেট ধরে রেখে ইনিংসটা লম্বাও করতে হতো। নতুন এক তরুণের কাছে দাবিটা একটু বেশিই হয়ে যায়। সেই দাবি শামীম মেটাতে পারেননি, তবে ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের জন্য বিস্মরণযোগ্য ম্যাচে একমাত্র আলোর রেখা তো হয়ে ছিলেনই।

আর আজ তো ম্যাচ জিতিয়েই বেরোলেন। সেটিও কোন ম্যাচ? যে ম্যাচের প্রথম ৩০ ওভারই বলতে গেলে জিম্বাবুয়ের। যখন নেমেছেন, তখনো তো জিম্বাবুয়ের জয়ের দিকেই হেলে আছে ম্যাচের পাল্লা। ইনিংসের ২৬ বল বাকি, রান লাগবে ৪৪। এই ৪৪ যে চার বল বাকি থাকতেই হয়ে গেল, তা তো শামীমের ওই দুবির্নীত ব্যাটিংয়েই।

লিখতে লিখতে অবশ্য এটাও মনে হচ্ছে, মাত্র পাঁচ বল খেলেই এই জয়ে বড় ভূমিকা রাখা আফিফই যদি ম্যাচটা শেষ করে আসতেন, বা এই ইনিংসটা আসত মাহমুদউল্লাহ বা সোহানের ব্যাট থেকে; তাহলে কি তা নিয়ে এত আলোচনা হতো?

হতো না। কারণ একটাই, যা সবারই জানা। নতুনের কেতন ওড়া দেখতে কার না ভালো লাগে! শামীমের এই শুরু মনে করিয়ে দেয় পূর্ণেন্দু পত্রীর কবিতার ওই দুটি লাইনও: 

আরম্ভের সব কিছুই প্রতিশ্রুতিময়।
আরম্ভে সব কিছুই সহাস্য সবুজ।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×