উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

আজও কি নয়ের নামতা, মোস্তাফিজ?

আজও কি নয়ের নামতা, মোস্তাফিজ?

প্রশ্ন উঠছিল সব দিকে, `মোস্তাফিজ কোথায় হারালেন?` সে প্রশ্নের উত্তরটা দিলেন রেকর্ড বইয়ে ঝড় তুলে। সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিংয়ের রেকর্ড তো গড়লেনই, সঙ্গে জন্ম দিলেন এমন সব মুহূর্তের, অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা যার স্মৃতি বয়ে বেড়াবেন অনেক দিন। টানা দুই ম্যাচে ৪ ওভারে ৯ রান, আজও কি তাহলে নয়ের নামতা?

ঠিক বিস্ময়ে বিমূঢ় অবস্থা নয় কারোরই; মোস্তাফিজুর রহমান কী করতে পারেন, ২০১৫ সালে ক্রিকেটের অল্প বিস্তর খবরাখবর রাখতেন, এমন মানুষ মাত্রই তা জানেন। যেমন জানেন ২০১৬ আইপিএলে চোখ রাখা মানুষও। পেস বোলারের গতির কাছে ব্যাটসম্যান পরাস্ত হন, আঁকাবাঁকা সুইংয়ে নাকাল হন, কিন্তু পেস বোলারের স্লোয়ার ডেলিভারিতে বলের পর বল বিভ্রান্ত হচ্ছেন ব্যাটসম্যান, এমন কাণ্ড তো মোস্তাফিজের সৌজন্যেই দেখা গিয়েছিল প্রথম।

তবে প্রথমের সেই ঝলকের পর মেঘেই ঢাকা পড়েছিল মোস্তাফিজ নামের তারা। কাঁধের চোটে বোলিংয়ের শুরুর ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন অনেকটাই। বলের পর বল রানের চাকা আটকে রাখার কারণে যে নাম করেছিলেন, তা-ও মিলিয়ে যেতে শুরু করল মাঝে। ওভারপ্রতি তাঁর ১০-এর বেশি রান খরচা করাটা তো নিয়মিত দৃশ্যই হয়ে গিয়েছিল মাঝে। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল, ওই মোস্তাফিজ কোথায় হারাল?

তবে ওই মোস্তাফিজ যে চিরতরে হারিয়ে যায়নি, এর প্রমাণ মিলতে শুরু করেছিল আরও আগেই। আরও ভালো করে মিলল এবারের অস্ট্রেলিয়া সিরিজে। ফের বলে বলে ছড়াচ্ছেন 'কিছু হয়, কিছু হয়' উত্তেজনা; প্রশ্নের মুখে পড়ে ময়েজেস হেনরিকসদের বিশ্লেষণ করতে হচ্ছে মোস্তাফিজের বোলিংয়ের খুঁটিনাটি, যা শুনে মনে হচ্ছে তাঁর বোলিংয়ের সূত্রটা ধরে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া, এবং পরদিন মাঠে নেমে আবারও নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে ওই বোলিংয়েই; অ্যাস্টন অ্যাগার সংবাদ সম্মেলনে এসে আক্ষেপের সুরেই বলছেন, এবারের সিরিজটা যে অস্ট্রেলিয়ায় সম্প্রচারিত হলো না, তাতে সবচেয়ে ক্ষতি হলো অস্ট্রেলিয়ার শিশু-কিশোরদের। মোস্তাফিজের মতো বোলিং করার স্বপ্নটাই তো দেখতে পারল না তারা।

তা কী এমন বোলিং করেছেন মোস্তাফিজ? সব ভুলে পরিসংখ্যানগুলোই হাতে নিন। সিরিজে এখন পর্যন্ত ১৬ ওভার বল করে উইকেট পেয়েছেন ৭টি, কিন্তু ওই সাত উইকেট পেতে রান খরচ করেছেন ৫৭। মানেটা দাঁড়াচ্ছে, প্রতিটা উইকেট পেতে রান খরচ করেছেন ৮.১৪ করে, আর প্রতি ওভারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৩.৫৬।

এই ইকোনমি রেটের কারিকুরিতেই রেকর্ড বইয়ে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছেন মোস্তাফিজ। দুটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে কমপক্ষে ১০ ওভার বোলিং করেছেন, এমন বোলারদের মধ্যে মোস্তাফিজের চেয়ে কম ইকোনমি রেট রাখতে পেরেছেন কেবল দুজন, ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন (প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, ২০১৬) এবং শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০২১)। আর কমপক্ষে ১৫ ওভার করেছেন, এমন বোলারদের তালিকা করতে বসলে মোস্তাফিজই চড়ে বসছেন মগডালে। তাঁর ৩.৫৬ ইকোনমি রেটকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি কেউ। এটা অবশ্য চার ম্যাচ শেষের হিসাব, একটা ম্যাচ তো এখনো বাকি।

ছবি: বিসিবি

 তবে এটাও তো ঠিক, সিরিজ যত এগোচ্ছে, মোস্তাফিজ যেন অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য দুর্বোধ্য হয়ে উঠছেন আরও। সর্বশেষ দুই ম্যাচ মিলিয়ে রান দিয়েছেন ১৮! আইপিএলে ৪ ওভারে ৯ রান দেওয়ার কীর্তি গড়েছিলেন ২০১৬তেই, কিন্তু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক অঙ্কের ঘরে রান খরচ করলেন এবারই প্রথম। এবং সেটাও এক ম্যাচে নয়, পরপর দুই ম্যাচে। মোস্তাফিজ অনন্য হয়ে উঠেছেন এই তথ্যেও। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে টানা দুই ম্যাচে ১০-এর কম রান দেওয়ার রেকর্ড নেই আর কারও।

আজ কি সংখ্যাটা তিনে তিন করে বাকিদের সঙ্গে ব্যবধানটা বাড়িয়ে নেবেন মোস্তাফিজ? নাকি সিরিজের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে, মোস্তাফিজও টানা চার ম্যাচ খেলার ধকল সামলেছেন, আগের ম্যাচের বোলিংয়ে কিছুটা ক্লান্তির ছাপও দেখা গেছে…এসব ভাবনায় মোস্তাফিজকে আজ বিশ্রাম দেওয়ার কথা চিন্তা করবে ম্যানেজমেন্ট?

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরটা 'হ্যাঁ' হলে আপনার স্বস্তির নিঃশ্বাসই ফেলার কথা। আপনার পরিচয়: আপনি ২০২১ সালে বাংলাদেশ সফররত অস্ট্রেলিয়া দলের ব্যাটসম্যান।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×