বোর্ড পরিচালক হয়েও কোচ: স্বার্থের সংঘাত নিয়ে সুজন কী বলেন?

শুভ্র.আলাপ

২ অক্টোবর ২০২১

বোর্ড পরিচালক হয়েও কোচ: স্বার্থের সংঘাত নিয়ে সুজন কী বলেন?

খালেদ মাহমুদ সুজন

প্রশ্নটা আগেও অনেকবারই উঠেছে। তারপরও উৎপলশুভ্রডটকমের ইউটিউব শো শুভ্র.আলাপে খালেদ মাহমুদ সুজনকে পেয়ে তা আবারও তুললেন উৎপল শুভ্র। বিসিবি নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো প্রার্থী হয়েছেন সুজন। আগের দুই মেয়াদে বোর্ড পরিচালক হয়েও যিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পেশাদার কোচিং করিয়েছেন। এটা কি স্বার্থের সংঘাত নয়? কী জবাব দিলেন সুজন?

তাঁর অনেক পরিচয়। বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের চেয়ারম্যান পদটা তাঁর অধিকারে গত আট বছর ধরে, ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (কোয়াব) সহ-সভাপতির পদে ছিলেন বহু দিন, জাতীয় দলের ম্যানেজার, কখনো বা আপৎকালীন কোচ। ঘরোয়া ক্রিকেটে তো নিয়মিতই তাঁকে দেখা যায় কোচ হিসেবেও, খালেদ মাহমুদ সুজন যেটাকে বলছেন তাঁর 'রুটি-রুজি'। ক্রিকেট বোর্ডে সুজন কাজ করেন না, এমন অভিযোগ তাঁর নিন্দুকও তুলতে পারবে না। তবে এতগুলো পদ আঁকড়ে থেকেই তো তাঁর সমালোচকদের সামনে নতুন দ্বার খুলে দিয়েছেন সুজন। গতকাল বিসিবি নির্বাচনকে সামনে রেখে শুভ্র.আলাপে উৎপল শুভ্র যেমন রসিকতার সুরে বললেন, সচরাচর কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা থাকে কাজ না করার, যেখানে সুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগটা 'বেশি কাজ' করার!

এতগুলো দায়িত্বে থাকলে স্বার্থের সংঘাত অনিবার্য। উৎপল শুভ্র ভেঙে বললেন, সেই স্বার্থের সংঘাতটা কেমন হতে পারে। সুজন যখন মাঠের পাশে একটা দলের কোচ হিসেবে দাঁড়ান, তিনি নিজে যতই দাবি করুন, তিনি তখন কেবলই কোচ, কিন্তু আম্পায়ারদের মনে তো ওই ভাবনাটা গেঁথেই আছে, এই সুজনই বোর্ডের প্রভাবশালী (প্রভাবশালী শব্দটায় সুজন আপত্তি তুলেছেন স্বাভাবিকভাবেই) একজন পরিচালক। পরিচালক সুজনের সঙ্গে কোচ সুজনের পার্থক্য করা কি এতই সহজ?

সুজনের চোখে সহজ ভাবলেই সহজ। আর তাঁর দাবি, মাঠে কোনো বাড়তি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা তিনি করেন না। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর দাপট নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয় বেশি, বেশ কয়েক বছর ধরে যে দলটাকে কোচিং করাচ্ছেন সুজন। কিন্তু সুজন বলছেন, 'লাস্ট সিজনে আবাহনীর যে দলটা ছিল, তা কি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল ছিল না? আমি ছেলেদের শেখাতে চাই, লড়াই করে জিততে হবে। একজন সিনিয়র ক্রিকেটার, সিনিয়র হয়ে আমি কেন নাঈম শেখ, আফিফ (হোসেন), তানজিম সাকিবদের শেখাব, আম্পায়ারের বদান্যতায় জিততে হবে? আমরা যখন টিম বানাই, অনেক ক্যালকুলেশন করে টিম বানাই, কিভাবে আবাহনীকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারি। আর প্রিমিয়ার লিগে লাকও অনেক বড় ফ্যাক্টর। একটা সময় ছিল, যখন জিনিসটা অন্য রকম ছিল। তবে এখন আপনি বলতেই পারবেন না, কোনো সময় কোনো প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করা হয়েছে।'এই প্রশ্নের উত্তর অতীতেও অনেকবারই দিতে হয়েছে খালেদ মাহমুদ সুজনকে

কিন্তু এতেই কি সব প্রশ্নের উত্তর মিলল? কথা প্রসঙ্গে সুজনই টেনে এনেছিলেন, গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদের প্রসঙ্গ। উৎপল শুভ্র পাল্টা প্রশ্ন করলেন, মাঠে তিনি একটা দলের কোচ হিসেবে সাকিবের সঙ্গে কলহে জড়িয়েছেন। আবার সাকিবের স্টাম্পে লাথি মারার ঘটনার বিচার করার সময় তো তিনি বিসিবির পরিচালক। স্বার্থের সংঘাতের প্রশ্নটা তো সে কারণেই আসছে। সঙ্গে এটাও যোগ করলেন, বিসিবির বাইরে থাকলে কোনো পরিচালকের এমন দ্বৈত ভূমিকায় থাকাটা সুজন সমর্থন করতেন কি না।

অতীতে অনেকবারই এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং প্রতিবারই সুজন উত্তর দিয়েছেন, ক্রিকেট বোর্ডে তাঁর কাজটাতে কোনো বেতন নেই, কোচিং করেই তাঁর রুটি-রুজির সংস্থান হয়। শুরুতেই উৎপল শুভ্র সেই অনুমিত উত্তরটা নিজেই বলে দিয়েছিলেন। তারপরও যে প্রশ্নটা থাকেই, তা বোঝাতে একটা উদাহরণও দিলেন, কেউ বিচারপতি হয়ে গেলে তিনি তো আর ওকালতি করতে পারবেন না। করলে তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের প্রশ্ন অবধারিতভাবেই আসবে। একই রকমভাবে কেউ বোর্ডের পরিচালক হলে তিনি আর পেশাদার কোচিং করাতে পারবেন না, এটা মেনে নিয়েই কাউকে পরিচালক হওয়া উচিত। 

আর শুধু সুজনই নন, 'কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট'-এর প্রশ্নে আটকে যাবেন বিসিবির অনেক কর্তাই। বিসিবির নির্বাচকদেরও তো বিপিএলের সময় কোনো না কোনো ফ্র‍্যাঞ্চাইজির ডাগআউটে পাওয়া যায়। নির্বাচকের দল লে কোনো খেলোয়াড়কে সুযোগ দেওয়া হলে তখন জনমনে প্রশ্ন তো উঠতেই পারে, নির্বাচকের আনুকুল্যেই সুযোগ পেয়েছে।

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে সুজন ডেকে আনলেন বিসিবি নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী নাজমূল আবেদীন ফাহিমকে, 'কথার কথা ধরুন, আমি ইলেকশনে হেরে গেলাম, ফাহিম ভাই গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হলেন। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে ১৫ জন প্লেয়ার উনি বিকেএসপি থেকেই নিলেন। বিকেএসপিতে ১৫ জন ভালো প্লেয়ার থাকতেই পারে। কিন্তু ফাহিম ভাই তো বিকেএসপির ক্রিকেট কমিটির সাথে যুক্ত, তখন কি আপনি ফাহিম ভাইকে দোষ দেবেন? কথাটা কিন্তু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একই থাকছে।'শুভ্র.আলাপে খালেদ মাহমুদ সুজন ও উৎপল শুভ্র

সুজন তাই 'কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট'-এর কোনো সুযোগই দেখছেন না। বরং মনে করছেন, দেশের ক্রিকেট মেধার সংকটের কারণেই তাঁর মতো ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ মানুষদের নিতে হচ্ছে বাড়তি দায়িত্ব। নিজের  'একটা মানুষের যদি নিষ্ঠা থাকে, মানুষটা যদি সৎ থাকে, তাহলে কেন (সে বেশ কয়েকটা পদে থাকতে পারবে) না? আমাদের কতজনের সেরকম ক্রিকেট মেধা আছে? কতজন ক্রিকেটকে ঠিকভাবে সময় দিচ্ছে?'

সুজন টলছেন না জনমানুষের সমালোচনাতেও, 'বোর্ডে কাজ করতে গেলে আলোচনা হবে, সমালোচনা হবে। এখন সেটা স্পোর্টিংলি নিই। আগে যেটা নিতে পারতাম না। এখন বয়স বেড়েছে, ম্যাচুরিটি এসেছে; তাই হয়তো নিতে পারি।'

খুব তাড়াতাড়িই যে দায়িত্ব কমিয়ে আনার কোনো তাড়া নেই সুজনের মাঝে, সেটাও বুঝিয়ে দিলেন শুভ্র.আলাপেই, 'কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট বলেন বা যা-ই বলেন, ক্রিকেট ছেড়ে তো আমি থাকতে পারব না। আমার রক্তে ক্রিকেট।'

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×