উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

লিটন-মুশফিককে আরও রেকর্ডের হাতছানি

রিফাত বিন জামাল

২৭ নভেম্বর ২০২১

লিটন-মুশফিককে আরও রেকর্ডের হাতছানি

মুশফিক-লিটন আরও ৭৭ রান আনতে পারলে পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপটাও হয়ে যাবে। বাংলাদেশের হয়ে পঞ্চম উইকেটে দুই শ পেরোনো চারটি জুটিতেই অবশ্য আছে মুশফিকের নাম৷

আজকের দিনের স্মরণীয় মুহূর্ত আপনার কাছে কোনটি?

হয়তো বলবেন, বারবার ক্র্যাম্পে আক্রান্ত লিটনের জন্য বাবর-আবিদদের 'ফিজিও' বনে যাওয়ার মুহূর্ত। কিংবা দিনশেষে লিটনের কাঁধে হাসানের হাত রাখা, পাকিস্তানিদের অভিনন্দন জানানো। অথবা সেসব যে কারণে, সেই সেঞ্চুরির পর লিটনের ব্যাট উঁচিয়ে ধরার কথা। কিন্ত স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারে আরেকটি মুহূর্তও। যখন রাসেল ডমিঙ্গোও মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে হাসিমুখে উদযাপনে সঙ্গী হলেন। ডমিঙ্গো-প্রিন্সদের জন্যও যে লিটনের এই সেঞ্চুরিটা সমান স্বস্তির! তাদের মুখের এই হাসিটা ছিল ভেতর থেকে আসা প্রশান্তির হাসি। এ এমন এক মুহূর্ত, যখন ছবিই বলে দিচ্ছিল অনেক কিছু!

লিটনের ব্যাট কথা বলুক, কে না চায়! লিটনের সামর্থ্য সম্পর্কে 'পানির মতো পরিষ্কার' ধারণা তো আছে ডমিঙ্গোদেরও! সেই সামর্থ্যবান লিটনকে দেখতে চান তো তাঁরাও! ডমিঙ্গোর অধীনে সব ফরম্যাট মিলিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছেন লিটন দাস। কিন্ত টি-টোয়েন্টিতে লিটন এমনই এক দুঃসময় পার করছেন যে, বাংলাদেশের ভরাডুবির পর বাদ পড়াদের তালিকায় তাঁর নামটাই ছিল শুরুর দিকে। কিন্ত টেস্টে আবার এ বছরটা তাঁর জন্য ঠিক বিপরীত। উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে এবছর টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এসেছে তারই ব্যাট থেকে। আজ টেস্টে প্রথমবারের মতো তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের দেখাও পেয়ে গেলেন। দিনের প্রথম ঘন্টা না পেরুতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ দিনশেষে ভালো অবস্থানে লিটনের সাথে মুশফিকের দারুণ পার্টনারশিপেই। 

সময়টা তো মুশফিকের জন্যও বড্ড কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এক ধরনের অপমানের স্বীকার হয়েই তাঁকে বাদ পড়তে হয়েছে টি-টোয়েন্টি দল থেকে। নির্বাচকেরা বিশ্রাম দেওয়ার কথা জানালেও মুশফিক জানিয়েছিলেন, তিনি কোনও বিশ্রাম চাননি, তাঁকে আসলে বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু 'বিশ্রাম'-কে বাহানা আর যাই বলুন, বাদ দেওয়ার সময় বিশ্রামের যে কারণ দেখানো হয়েছিল, তা ছিল টেস্টে মুশফিকের সেরাটা পাওয়া। সেই কারণটার সত্যতা নিয়ে আপনার সংশয় থাকতে পারে। কিন্ত টেস্টে মুশফিক যে স্বরূপেই দেখা দিলেন। প্রথম দিন শেষে সেঞ্চুরি এখন তাকে হাত নেড়ে ডাকছে। 

টেস্টের শুরুটা হয়েছিল পাকিস্তানের উৎসব দিয়ে। ছবি: এএফপি

পোশাকের রঙ সাদা হোক আর রঙিন, রানের দেখা না পেলে যেমন অস্বস্তি থাকে, তেমনি রানের সাথে ফিরে আসে স্বস্তিও। মুশফিক-লিটনের সাথে এ ম্যাচে স্বস্তি তো ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশও! টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ রানেই চার উইকেট হারিয়ে তো বাংলাদেশ পড়েছিল মহা চাপেই! সেই চাপটা মুশফিক-লিটন ২০৪ রানের অপরাজিত দারুণ এক জুটিতে স্রেফ উড়িয়েই দিলেন! তবে মনের শান্তি পেলেও লিটনের শরীরটা তাঁকে বেশ অস্বস্তিতেই রাখছে। লিটনের সেঞ্চুরির পথে আজ ফিজিওর ডাক পড়েছে বেশ কয়েকবার। শেষের দিকে তো মনে হচ্ছিল, লিটন শুধু সময়টা কোনমতে ফুরোনোর অপেক্ষায়ই ছিলেন।

দিনের মাঝখানের বিশ্রাম লিটনের জন্য তাই আশীর্বাদ হয়েই এসেছিল। দ্বিতীয় দিন সকালে নতুন বলে শাহিন-হাসানদের সামলানোর কাজটা সহজ হবে না বটে, তবে একটা রেকর্ড কিন্তু হাতছানি দিচ্ছে মুশফিক-লিটন জুটিকে। টেস্ট ক্রিকেটে পঞ্চাশ রানের কমে চার উইকেট হারানোর পর দুই শর বেশি রানের জুটি হয়েছে এর আগে পাচঁবার। মুশফিক-লিটন তাদের ২০৪ রানের জুটিটাতে আরও ২০ রান যোগ করতে পারলে সেটি হয়ে যাবে পঞ্চাশের কম রানে ৪ উইকেট হারানোর পর তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি। আর সর্বোচ্চ ছাড়িয়ে যেতে তাদের প্রয়োজন ৭৭ রান, দিলশান-সামারাবীরা যেদিন পঞ্চম উইকেটে ২৮০ রানের পার্টনারশিপ গড়েছিলেন, সেদিন ৪৮ রানে চার উইকেট তুলে নিয়েও ভুগেছিল বাংলাদেশ। এবার বাংলাদেশেরই পালা পাকিস্তানের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলার!

এই জুটিতে আরও অনেক অর্জনের হাতছানি

মুশফিক-লিটন আরও ৭৭ রান আনতে পারলে পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপটাও হয়ে যাবে। বাংলাদেশের হয়ে পঞ্চম উইকেটে দুই শ পেরোনো চারটি জুটিতেই অবশ্য আছে মুশফিকের নাম৷ ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ যখন পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৩৫৯ রান পেয়েছিল, তখন সাকিবের সঙ্গে এক পাশে ছিলেন মুশফিক। ২০১৩ সালে গলে যে ইনিংসে আশরাফুল ১৯০ রানে আউট হয়ে আফসোসের আগুনে পুড়েছিলেন, মুশফিক সে ইনিংসেই হয়ে গিয়েছিলেন টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান। তার আগে দুজনে পঞ্চম উইকেট জুটিতে এনেছিলেন ২৬৭ রান। 

কাল মুশফিক-লিটন রানের চাকা চলন্ত রাখতে পারলে এগিয়ে যাবেন সেসব রেকর্ডের পথে। বাংলাদেশও অবশ্যই তাতে এগিয়ে যাবে, তবে তাদের নিজেদেরও তো কম প্রাপ্তি থাকবে না। একজন সমালোচনার মহাসাগরে পড়ে গিয়েছিলেন, সেখানে কিছুটা হলেও উদ্ধারকর্তার কাজ করল এই ইনিংসটা। আর মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে কোচের যে দ্বন্দ্বের কথা বাংলার ক্রিকেট আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছিল, সেসব যদি সত্যিও হয়ে থাকে, মুশফিকুর রহিম অন্তত ব্যাট দিয়ে টেস্টে নিজের জায়গা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগটা আর রাখলেন না। যদিও প্রমাণের কিছুই নেই মুশফিক রহিমের! তবু ব্যাট কথা বললে প্রশ্নেরও যে সামনে আসার সাহস হয় না! 

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×