তাইজুলের সঙ্গে যাঁর মিল খুঁজে পান এনামুল
রিফাত বিন জামাল
২৯ নভেম্বর ২০২১
তাইজুলের বোলিংয়েই চট্টগ্রাম টেস্টে এখনো স্বপ্ন দেখার সাহস পাচ্ছে বাংলাদেশ। উৎপলশুভ্রডটকমের ইউটিউব শো শুভ্র.আলাপে এসে বাংলাদেশের আরেক কৃতি বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়র কথা বললেন তাইজুলকে নিয়ে। বাংলাদেশের বাকি সব বাঁহাতি স্পিনারের মধ্যে কার সঙ্গে তাইজুলের মিল খুঁজে পান তিনি?
সকালটা হবে বাংলাদেশের। এই আশা নিয়ে আপনি যখন ঘুম থেকে উঠে খেলা দেখতে বসেছেন, তখন সময়ের সাথে সাথে আবিষ্কার করেছেন, সত্যিই তো! সকালে পুব দিকে ওঠা সূর্যটার আলোতেই যেন আলোকিত হয়ে গেল বাংলাদেশ! কিন্ত সেই সূর্য অস্ত যাওয়ার সময়ে আলোটা যেন কিঞ্চিৎ ছিনিয়ে নিয়ে গেল। নিভু নিভু আলোয়ই এ ম্যাচে এখন জ্বলছে বাংলাদেশ। অবশ্য সেটিই নিভু নিভুর থেকে বেশি কি না, এই প্রশ্নের উত্তরটা সময়ের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে। তবে এটা তো এখনই বলে ফেলা যাচ্ছে যে, সারা দিনে মাঠে সবচেয়ে ঔজ্জ্বল্য ছড়ানো নামটি তাইজুল ইসলাম!
আগের দুদিন মিলে যে দশ উইকেট পড়েছিল, তার সব কটিই সকালের সেশনে। কিন্ত সকালে বোলিংয়ের ফায়দাটা জুটেছিল পাকিস্তানের কপালেই। দ্বিতীয় দিনের বাকি দুই সেশনে বোলিং করে উইকেটশূন্য হাতে বাংলাদেশ দিন শেষ করেছিল হারের শঙ্কা নিয়েই। ওভারের পর ওভার সেদিন বল করে গেছেন, উইকেট তাইজুলকে দেখা দেয়নি। আর তৃতীয় দিনে পঞ্চম বলেই মিলে গেল পরম আরাধ্য সেই উইকেট! উইকেট এনে দিল আরেকটি উইকেট। কিন্ত সেই ওভারে দুই উইকেট পাওয়ার পর টানা নয় ওভার আর কোনো উইকেট পাননি। তবে উইকেট না পেলেও লাইন-লেংথের ওপর নিয়ন্ত্রণটা আলগা হতে দেননি একবারের জন্যও। এই যে উইকেটের দেখা না পেয়েও টানা ভালো জায়গায় বোলিং করে যাওয়ার মানসিকতা, সেটি ধরে রাখাটা নিশ্চয়ই সহজ ব্যাপার নয়। তাইজুল কিভাবে পারলেন তা?
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক আরেক বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়র নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানেন এই প্রশ্নের উত্তর। তা এমন, ‘এমন সময়ে অবশ্যই আমাদের টিমের কথা চিন্তা করতে হয়। যেমন আজকে তাইজুল যে জিনিসটা করেছে। গতকালও কিন্ত সে খুব ডিসিপ্লিনড্ ছিল। অ্যাকুরেট বোলিং করেছে। আমাদের চেষ্টা করতে হয় ওই অ্যাকুরেট বোলিং করা। আর আমাদের স্পিনারদের কোচরাও বলে থাকে, যদি উইকেট না পাও, ভালো উইকেট থাকে, অবশ্যই তোমাকে অ্যাকুরেট হতে হবে। আমাদের কন্ডিশনে তুমি যদি সফল হতে চাও, অ্যাকুরেট হলেই চলবে।’
উৎপলশুভ্রডটকমের ইউটিউব শো শুভ্র.আলাপে অতিথি হয়ে এসে এনাামুল অ্যাকুরেসির মাহাত্ম্যটাও বুঝিয়ে বললেন, ‘আমাদের কন্ডিশনে আমরা যদি নিখুঁত হই, আমাদের স্পিনাররা যদি অ্যাকুরেট হয়, একটা সময় উইকেট পড়তে বাধ্য। যেটা আজকে তাইজুল করেছে। আমরা যখন উইকেট পাই না, তখন অবশ্যই চেষ্টা করি যাতে স্টাম্প টু স্টাম্প বোলিং করতে পারি, লাইন-লেংথ বজায় থাকতে পারে, যাতে আমরা রান দেব না।’
তাইজুল ধৈর্যের চরম পরীক্ষা দিয়েছেন, এর ফলও পেয়েছেন। সাত উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে গুটিয়ে দিতে দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করেছেন ৪৪.৪ ওভার! এত বেশি ওভার বল করে যাওয়ার অভ্যাসটা অবশ্য নতুন নয় তাইজুলের। টেস্টে এক ইনিংসে ৪০ ওভারের বেশি বোলিং করেছেন তিনি ১২ বার, বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আটবার তা করেছেন সাকিব আল হাসান। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের কোনো বোলারের টেস্টে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটা এর আগে ছিল সাকিবের। সাকিবের থেকে এক উইকেট বেশি নিয়ে আজ সেটি তাইজুল নিজের করে নিলেন। বাংলাদেশের হয়ে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটাও তাইজুলের। সেরা পাঁচটি বোলিং পারফরম্যান্সে দুবার আছে তাঁর নাম।
এক সময় বাংলাদেশের হয়ে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটা যাঁর ছিল, সেই এনামুল তাইজুলকে প্রথম দেখার স্মৃতির কথা বললেন উৎপল শুভ্রর সঙ্গে আলাপে, ‘ওর সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা ছিল, ওর বলের গতি এবং অ্যাকুরেসি। যেটা তাইজুলকে তাইজুল হিসেবে চিনিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, ও দিনে দিনে উন্নতি করতে চায়। ওর ডোমেস্টিকে (বোলিংয়ের) সাথে ইন্টারন্যাশনালের অনেক বড় তফাত দেখলাম আমি। ডোমেস্টিকের তুলনায় ও কিন্ত ইন্টারন্যাশনালে এসে ওর জায়গা নিয়ে, লাইন-লেংথ নিয়ে অনেক ধারাবাহিক। এটা সবার হয় না আসলে, অনেকের ইন্টারন্যাশনালে এসেই সমস্যা হয়। ও দেখলাম যে, দুই তিন মৌসুমে ঘরোয়াতে যে বোলিং করেছে, তার থেকে আরও ভালো বোলিং করেছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।‘
এ ম্যাচের আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৭টি উইকেট ছিল মোহাম্মদ রফিকের। সাত উইকেটের পথে সেই রফিককেই আজ ছাড়িয়ে গেছেন তাইজুল। এবং সেই রফিকের সাথেই পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে ১৯ উইকেট নেওয়া তাইজুলের মিল খুঁজে পান এনামুল জুনিয়র, ‘ওকে (তাইজুল) আসলে আমি প্রথম দেখি জাতীয় লিগেই, ওর বলে তখন আরও বেশি টার্ন ছিল। হয়তো বা এখন একটু কমেছে, কিন্ত ও স্পিন করাতে পারে প্রথম থেকেই। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, তাইজুল হচ্ছে অ্যাকুরেট। যেটা রফিক ভাইয়েরও ছিল। এই কন্ডিশনে আপনাকে ভালো করতে হলে অ্যাকুরেট হতেই হবে।’
সেই নিখুঁত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ তাইজুলেই বাংলাদেশ জয়ের আশা দেখেছিল। কিন্ত সেই জয়ের মিটমিট আশাটাকে প্রজ্জ্বলিত করতে এখন দরকার একটা ভালো সংগ্রহ। হয়তো তখন আরও একবার তাঁর অভ্যাসের বিষয় ‘অ্যাকুরেসি ও ডিসিপ্লিন’ দেখাবেন তাইজুল, তাতেই বাংলাদেশ যদি পেয়ে যায় জয়!