সুপার টেনের শুরুতেও সেই বিবর্ণ বাংলাদেশই

উৎপল শুভ্র

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

সুপার টেনের শুরুতেও সেই বিবর্ণ বাংলাদেশই

ড্রেসিংরুমের পথে সাকিব আল হাসান। ছবি:গেটি ইমেজেস

যেকোনো ম্যাচেই ফলাফল নিয়ে সংশয় দূর হয়ে যাওয়ার পর যে খেলাটা হয়, সেটির মতো অর্থহীন কিছু আর হয় না। কাল মিরপুরে ম্যাচের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সেই অর্থহীন খেলাই দেখতে হলো দর্শকদের। হংকংয়ের কাছে হেরে প্রাথমিক পর্ব যেখানে শেষ করেছিল বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে `সুপার টেন`-ও শুরু যেন সেখান থেকেই।

প্রথম প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০১৪। প্রথম আলো।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৭১/৭। বাংলাদেশ: ১৯.১ ওভারে ৯৮। ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭৩ রানে জয়ী।

পেছনে ছিল হংকং, সামনে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। মাঝখানে চার দিন। ঘুরে দাঁড়ানোর কত মন্ত্র জপ! কিন্তু আদৌ কি কিছু বদলাল?

একাদশে চার-চারটি বদল। হংকংয়ের বিপক্ষে টসে জিতে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করেছিল। কাল টসে জিতে পরে ব্যাটিং। পার্থক্য খুঁজলে এমন কিছুতেই খুঁজতে হবে। যেখানে সেটি দরকার ছিল, ব্যাটসম্যানদের সেই পারফরম্যান্সে কোনো বদল নেই। সেখানে আশ্চর্য ধারাবাহিকতা! নাকি সেটি আরও খারাপই হলো! 

ব্যাটসম্যান-বোলাররা ধারাবাহিকভাবে ভালো করে গেলে ‘আগের ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই আবার শুরু করলেন’ জাতীয় কথাবার্তা লেখা হয়ে থাকে। উল্টো অর্থে কথাটা এখানেও অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। হংকংয়ের বিপক্ষে প্রাথমিক পর্ব যেখানে শেষ করেছিল বাংলাদেশ, সুপার টেন নামে পরিচিতি পেয়ে যাওয়া চূড়ান্ত পর্বও শুরু করল সেখান থেকেই! 

যেকোনো ম্যাচেই ফলাফল নিয়ে সংশয় দূর হয়ে যাওয়ার পর যে খেলাটা হয়, সেটির মতো অর্থহীন কিছু আর হয় না। কাল মিরপুরে ম্যাচের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সেই অর্থহীন খেলাই দেখতে হলো দর্শকদের। 

গর্জন করার বদলে স্তম্ভিত `বাঘ`! ছবি:গেটি ইমেজেস।

ভুল বলা হলো। সেই অর্থহীন খেলা দেখার বদলে বাড়ি ফিরে যাওয়াই ভালো সিদ্ধান্ত নিয়ে গ্যালারি দ্রুতই ফাঁকা হয়ে গেল। সবচেয়ে বড় স্রোতটা গ্যালারি থেকে বেরিয়ে গেল বাংলাদেশ ইনিংসের ১১ ওভার পর। স্কোরবোর্ড যখন দেখাচ্ছে ৭ উইকেটে ৫৯!
বাকি ৫৪ বলে বাংলাদেশের জিততে চাই ১১৩ রান। আস্কিং রেট ১২.৫৫, হাতে ৩ উইকেট! এই দেখুন, অর্থহীন খেলা বলে-টলে আবার কী সব অর্থহীন পরিসংখ্যানও তুলে দিচ্ছি! ৯ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ৫১-এর সঙ্গে দুই ওভারের মধ্যে ৪ উইকেট ও ৮ রান যোগ হওয়ার পর পরিস্থিতিটা এমন যে, খেলাটা বক্সিং হলে রেফারি তখনই খেলা থামিয়ে দিতেন!

ক্রিকেট বলেই সেটি থামল না। বাংলাদেশের ইনিংস ধুঁকতে ধুঁকতে শেষ ওভার পর্যন্ত গেল। স্কোরটা অবশ্য তাতেও তিন অঙ্ক ছুঁতে পারল না। ৭৩ রানের বিশাল জয়, তারপরও বাংলাদেশের শেষ ৩ উইকেট ৩৯ রান যোগ করে ফেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটু মন খারাপ হতেই পারে। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হারতে হয়েছে। ‘গ্রুপ অব ডেথ’ থেকে সেমিফাইনালে ওঠা না-ওঠায় নেট রানরেট নির্ধারক হয়ে উঠলে এসব ছোটখাটো ব্যাপারই না তখন বড় হয়ে ওঠে!

বাংলাদেশের যে দুর্দশা, তাতে নেট রানরেট-টেট জাতীয় ব্যাপার নিয়ে ভাবার ‘ঝামেলা’ থেকে তারা মুক্ত! মুশফিকুরের দল এখন অকূল সমুদ্রে দিশাহীন নৌকা। সেই নৌকাতেও আবার অসংখ্য ফুটো। ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং ভুলে গেছেন, এটা যদি হতাশার হয়; তার চেয়েও অনেক বেশি হতাশার ফিল্ডিং করতেও ভুলে যাওয়া।

বাংলাদেশ যে ব্যাটিং করল, তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৩০-১৪০ করলেও হয়তো কিছু আসত-যেত না। রানটা কিন্তু অমনই হওয়া উচিত ছিল। সেটি ১৭১ হয়ে গেল ভুলে ভরা অবিশ্বাস্য ফিল্ডিংয়ে। একাধিক ক্যাচ পড়ল, মিস ফিল্ডিংয়ে একাধিকবার চার হলো। সতীর্থদের কী আর বলবেন মুশফিকুর! অধিনায়ক যে নিজেই নেতৃত্ব দিলেন এতে! ব্যাটিংয়ে ২২ বলে ২২ রান করে দলের সর্বোচ্চ স্কোরার। কিন্তু এর অর্ধেক রান তো কিপিং ব্যর্থতায় আগেই দিয়ে রেখেছেন! বাই রান দিয়েছেন ১০টি, দুবার তাঁর হাত-পা ফাঁঁকি দিয়ে ব্যাট না ছোঁয়া বল সীমানাও পেরোল।

পুরো ম্যাচটাই কেমন যেন ভুতুড়ে! ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসটা তো অবশ্যই। টি-টোয়েন্টিতে ২০ ওভারের একটা ইনিংসে যা যা হওয়া স্বাভাবিক, তা তো হলোই। যেসব হওয়া খুব স্বাভাবিক নয়, সেসবও। যেসব হওয়ারই কথা নয়, তা-ও যেন হলো!

পুরো বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি যেন অধিনায়ক মুশফিক! ছবি: গেটি ইমেজেস।

বাংলাদেশের জঘন্যতম ফিল্ডিংয়ের দিনে ফিল্ডার হিসেবে যাঁর তেমন নাম নেই, সেই তামিম ইকবাল শূন্যে লাফিয়ে দুর্দান্ত যে ক্যাচটি নিলেন, সেটি অবশ্যই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা ক্যাচের দাবি জানিয়ে রাখল। বাউন্ডারি লাইনে তামিমের বুদ্ধিদীপ্ত আরেকটি ক্যাচই বিদায়ঘণ্টা বাজাল গেইলের। 

ডোয়াইন স্মিথের ৪৩ বলে ৭২ রান টি-টোয়েন্টির সঙ্গে যতটা মানানসই, ঠিক ততটাই বেমানান গেইলের ৪৮ বলে ৪৮। সেটিও শেষ দিকে একটু হাত খুলেছিলেন বলে। ১০ ওভার শেষে স্মিথ যখন ৩৫ বলে ৫১, গেইল ২৫ বলে মাত্র ১৭!

আল আমিনের করা ইনিংসের শেষ ওভারটিও তো একই রকম বিস্ময়কর। সাকিবের এক ওভার বাকি থাকতেও আল আমিন কেন—এই প্রশ্ন মাথায় নিয়ে যেটির শুরু। প্রথম বলেই উইকেটে যেটি একটু ঝাঁজ হারাল। ওই ওভারে উইকেট পড়ল ৪টি! এর মধ্যে অবশ্য রান আউট একটি। রান হলো মাত্র ৪।

১৭১ অনেক রান, কিন্তু নাটকীয় ওই শেষ ওভার কিছুটা হলেও উজ্জীবনী মন্ত্রের কাজ করতেই পারত। করেছে কি না, এই প্রশ্নের উত্তর পেতে বলতে গেলে কোনো অপেক্ষাই করতে হলো না

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×