বিস্ময়ের নাম চার্লস কভেন্ট্রি

উৎপল শুভ্র

১৬ আগস্ট ২০২১

বিস্ময়ের নাম চার্লস কভেন্ট্রি

চার্লস কভেন্ট্রি: ক্রিকেট বিশ্ব তাঁকে চিনেছিল যেদিন

চার্লস কভেন্ট্রিকে চেনেন? চেনার কথা। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডে যেদিন সাঈদ আনোয়ারের পাশে বসেছিলেন, সেদিন থেকেই নামটি পরিচিত সবার কাছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে চমকে দেওয়া ওই ইনিংসের পর আবার হারিয়েও গেছেন জিম্বাবুয়ের এই ব্যাটসম্যান।

প্রথম প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০০৯। প্রথম আলো।

অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, বীরেন্দর শেবাগ, ব্রায়ান লারা, শচীন টেন্ডুলকার...গত ১২ বছরে এমন কিছু নামই এসেছে ঘুরে ফিরে। সাঈদ আনোয়ারের ওয়ানডে-সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি কে ভাঙতে পারেন, এ প্রশ্নের উত্তরে।

সাঈদ আনোয়ারও নিশ্চিত এই নামগুলোই বলতেন। সঙ্গে হয়তো যোগ করে দিতেন আরও দু-একটি নাম। কিন্তু চার্লস কভেন্ট্রি? ১৯৯৭ সালের ২১ মে গড়ে রাখা তাঁর ১৯৪ রানের রেকর্ড ভাঙতে পারেন—সম্ভাব্য এমন ৫০ জন ব্যাটসম্যানের নাম বলতে বললেও সাঈদ আনোয়ার নিশ্চিত এই নামটি বলতেন না। বলার কথা তো পরে আসছে, অনেক দিনই ক্রিকেটের মতো জাগতিক বিষয়কে তুচ্ছজ্ঞান করে পরকালকেই ধ্যানজ্ঞান করে নেওয়া পাকিস্তানের বাঁহাতি ওপেনার চার্লস কভেন্ট্রির নামটা কখনো শুনেছেন কি না, সেটাই তো প্রশ্ন।

১৫৬ বলে অপরাজিত ১৯৪ রানের ইনিংস খেলার পথে চার্লস কভেন্ট্রি। ছবি: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

কাল নিশ্চয়ই শুনেছেন। বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ নিয়ে সাঈদ আনোয়ারের আগ্রহ থাকার কথা নয়। তবে কেউ না কেউ নিশ্চয়ই তাঁকে জানিয়েছেন যে, জিম্বাবুয়ের এক অখ্যাত তরুণের ব্যাটের ঝড় কেমন কাঁপিয়ে দিয়েছিল তাঁর রেকর্ডটিকে। শেষ পর্যন্ত পারেননি চার্লস কভেন্ট্রি। সাঈদ আনোয়ারকে টপকে যেতে শেষ বলে ৩ রান লাগত, নিতে পেরেছেন ২। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ডটি তাই সাঈদ আনোয়ারের সঙ্গে মিলেমিশেই ভোগ করতে হচ্ছে তাঁকে। তবে পারেননিই বা বলেন কীভাবে! ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের তালিকায় সবার ওপরে তো থাকবে কভেন্ট্রির নামটাই। ১২ বছর আগে চেন্নাইয়ের আর্দ্রতাময় প্রচণ্ড গরমের এক রাতে ১৯৪ রানে শচীন টেন্ডুলকারের বল সুইপ করতে গিয়ে ফাইন লেগে সৌরভ গাঙ্গুলীর ক্যাচ হয়ে গিয়েছিলেন সাঈদ আনোয়ার। চার্লস কভেন্ট্রি তো ১৯৪ রানে অপরাজিত থাকলেন।

১৫৬ বলে অপরাজিত ১৯৪। ১৬টি চার ও ৭টি ছয় যদি এই ইনিংসের অলংকার হয়, ১৩ আর ১৩৮ রানে পাওয়া দুটি ‘লাইফ’ তাতে কলঙ্ক। সৈয়দ রাসেল ও মাহমুদউল্লাহ তাতে জ্বলেপুড়ে মরতে পারেন, তবে ক্রিকেট ইতিহাসের তা মনে রাখতে বয়েই গেছে! সেটি বরং মনে রাখবে, বুলাওয়ের এক শীতার্ত দুপুরে চশমা চোখে এক তরুণ ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে কীভাবে সাধারণ এক ব্যাটসম্যান থেকে মহাতারকা বনে গিয়েছিলেন। ক্রিকেট ইতিহাস এটিও সবাইকে জানাবে যে, ছয় বছরে খেলা ১৪টি ওয়ানডেতে যে ব্যাটসম্যানের মোট রান ছিল মাত্র ৩০১ (সর্বোচ্চ ৭৪), পঞ্চদশ ইনিংসে তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিটাই কেমন বিশ্ব কাঁপিয়ে দিল!

ওই একটা দিনই ছিল চার্লস কভেন্ট্রির দিন। ছবি: এএফপি

ওয়ানডে অভিষেক ২০০৩ সালে। জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটে তখনো রাহুর দশা শুরু হয়নি। সে সময়কার সমীহ জাগানো জিম্বাবুয়ে দলে অভিষিক্ত ২০ বছরের তরুণকে কেন ছয় বছর পর কাল ১৫ নম্বর ওয়ানডে খেলতে নামতে হলো? এ প্রশ্নটাই অবান্তর হয়ে যাবে, যখন জানবেন ১৫টা ওয়ানডেও তাঁর খেলার কথা ছিল না। ১১ ওয়ানডেতেই (সঙ্গে ২০০৫ সালে ভারতের বিপক্ষে খেলা দুটি টেস্ট) তো নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ বলে মেনে নিয়েছিলেন চার্লস কভেন্ট্রি।

২০০৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে কোচ কেভিন কারেন ও ম্যানেজার অ্যান্ডি পাইক্রফটের সঙ্গে এমনই ঝামেলা হয়েছিল যে, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে ক্লাব ক্রিকেট খেলতে। পরের বছর বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনাও মন গলাতে পারেনি তাঁর। ‘ওরা থাকলে আমি নেই’—এই ঘোষণা জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটও খুব ভালোভাবে নেয়নি বলেই কারেন-পাইক্রফট জুটি বিদায় নেওয়ার পরও অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে কভেন্ট্রিকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সিরিজে ফিরলেন তিন বছর পর। সেটিকেও তখন বলা হয়েছে—বিস্ময়কর অন্তর্ভুক্তি।

তখন কে জানত, আসল বিস্ময়টা এভাবে উপহার দেবেন চার্লস কভেন্ট্রি!

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×