জাদুকর তাবারেজ শামসি!

উৎপলশুভ্রডটকম

৩১ অক্টোবর ২০২১

জাদুকর তাবারেজ শামসি!

ইমরান তাহিরের দিনগুলোতে অন্য কোনো স্পিনারের দক্ষিণ আফ্রিকা দলে সুযোগ পাওয়া ছিল কঠিন। তারপরও তাবারেজ শামসি ঠিকই নিজের দাবি জানিয়ে দিয়েছেন। তাহিরের শেষের পর নিজেকে মেলে ধরেছেন আরও ভালো করে। হতে চেয়েছিলেন জাদুকর। হয়ে গেলেন ক্রিকেট নামের খেলাটার স্পিন-জাদুকর। শামসি এবারের বিশ্বকাপ শুরু করেছেন তাঁর খেলার জাদুতে সবাইকে মোহাবিষ্ট করতে।

স্বপ্নটা ছিল জাদুকর হওয়ার। বয়স যখন ১৫-১৬, তখন থেকেই জাদুর প্রতি শুরু নিজের অদ্ভুত মুগ্ধতার। জাদুবিদ্যা শিখেছিলেনও কিছুদিন। তবে খুব দ্রুতই জাদুকে টপকে ভালোবাসার শীর্ষস্থান দখল করে নেয় ক্রিকেট। সেখানেও তো জাদুই দেখাচ্ছেন। বোলিং হোক বা উদযাপন, দুই ক্ষেত্রেই তো জাদুকর বনে গেছেন তাবারেজ শামসি।

গত রবিবার শারজায় লঙ্কানদের বিপক্ষে তাঁর বোলিং জাদুতে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে নিজেদের আশা জিইয়ে রেখে ঝাপসা করে দিয়েছে লঙ্কানদের সেমির সম্ভাবনা। একই সাথে বিশ্ব ক্রিকেটের পুরোনো এক উদযাপনও নতুন করে দেখা গেছে শামসির কাছ থেকে।

শামসির উদযাপন অবশ্য আলোচনায় থেকেছে বরাবরই। কখনো জুতাকে মোবাইল বানিয়ে, আবার কখনো পকেট থেকে বের করা রুমালকে জাদুদণ্ডে রূপান্তর করে। এবার যেন ইমরান তাহিরকেই ফিরিয়ে নিয়ে এলেন। এ আর অস্বাভাবিক কী! জাদুকরদের কত কৌশলই তো জানা আছে। শামসি ব্যতিক্রম হবেন কেন? তাঁর জাদু দেখানো উদযাপনে দর্শক ও ধারাভাষ্যকার সবারই অবাক হয়ে চোখ কচলাতে হয়।

উদযাপনেও নজর কাড়েন তাবারেজ শামসি

লঙ্কানদের বিপক্ষে নবম ওভারের নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে রাজাপাকসেকে সাজঘরের টিকেট ধরিয়ে শামসির ভোঁ দৌড়ে কি একটুও ইমরান তাহির ফুটে ওঠেননি? শূন্যে ছুঁড়ে দেওয়া হুঙ্কারে কি অন্যদের চোখে ইমরান তাহিরের বৈশিষ্ট্য চোখে ধরা দেয়নি? ১২ বলের ব্যবধানে আভিস্কা ফার্নান্দেকেও একই ফাঁদে ফেলে শারজায় শামসির উদযাপনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবারও যেন ইমরান তাহির ফিরে এলেন। বাতাসে শামসির ছুঁড়ে দেওয়া মুষ্টিবদ্ধ হাত তাহিরের আগ্রাসনকেই সামনে নিয়ে এসেছিল।

ইমরান তাহির আর শামসি দুজন ভিন্ন দুই হাতের বোলার হলেও দলের চাওয়া, বোলিংয়ের শিল্প আর উদযাপন তিনে মিলে দুজন তো একই। শামসি কেবল বাড়তি উন্মাদনা তৈরি করেন উদযাপনে জাদুর ভেলকি যোগ করে। আপাতত সবদিকেই ভেলকি দেখিয়ে চলছেন নিয়মিত। টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান যার বড় প্রমাণ। বিশ্বকাপে পারফরম্যান্সও প্রমাণ করছে সেই র‍্যাঙ্কিংয়ের যৌক্তিকতা। ইমরান তাহিরের অভাব সেভাবে অনুভবই করছে না দক্ষিণ আফ্রিকা। উদযাপনটা তাহিরের সাথে মিলে গেছে, পারফরম্যান্সও কোনো অংশে কম মেলেনি তাহিরের সাথে।

বাঁহাতি রিস্ট স্পিনাররা স্বাভাবিকভাবেই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বেশি কার্যকর। কারণ তাঁদের স্টক বলটা বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে বেরিয়ে যায়। ২০১৯ সালে ১৬ ইনিংসে শামসির শিকার করা ১২ উইকেটের ৮টিই ছিল বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। তখন প্রশ্ন উঠেছিল ডানহাতিদের বিপক্ষে তাঁর কার্যকারিতা নিয়ে।পারফরম্যান্স দিয়েই সকল সমালোচনাকে ছুটিতে পাঠান তিনি। ২০২০ এর জুলাই পর্যন্ত ৩৩ উইকেটের ২১টিই ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে আউট করে। চলতি বিশ্বকাপে চার উইকেটের তিনজনই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। 

দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড তাহিরের ছেড়ে যাওয়া আসনে যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজছিল। তাহিরের উদযাপনের সঙ্গে পারফরম্যান্সেরও পুনরাবৃত্তি শামসি ঘোষণা করে দিয়েছেন, এই শূন্য স্থানটা আমিই পূরণ করব।

তাবারেজ শামসি

শামসির এত দূর আসা হতো না, যদি না ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সূচনাকালে পেস বোলার হওয়ার স্বপ্নকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে স্পিনে পরিবর্তন না করতেন। পেস বোলিং করতেন, একদিন কোচই বলে দেন, তোমার বলে তো পেসার হওয়ার মতো গতি নেই৷ তুমি বরং স্পিনেই মনযোগী হও। স্বপ্ন ভেঙে গেলে সবারই মনোবল ভেঙে পড়ে। শামসিরও ভেঙেছিল মনোবল। কিন্তু সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়ে নয়া এক উত্থানের গল্প লিখলেন।

সেই গল্প ডালপালা ছড়াতে ছড়াতে এখন বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে। তাবারেজ শামসি যা জানিয়েও দিয়েছেন। কারও চোখেই দলটা ফেবারিট না হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার অধরা বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের স্বপ্নের সারথি বলা যায় শামসিকেই। স্লো-লো-টার্নিং উইকেটে যাঁকে ঘিরেই মূল স্বপ্নটা বুনতে হচ্ছে প্রোটিয়াদের। দেখা যাক, জাদুকর টুপি খুলে আর কী কী দেখান!

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×