আক্রমণের মন্ত্রে দীক্ষা শাহীন শাহ আফ্রিদির

উৎপলশুভ্রডটকম

৩০ নভেম্বর ২০২১

আক্রমণের মন্ত্রে দীক্ষা শাহীন শাহ আফ্রিদির

শাহীন শাহ আফ্রিদি

চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে ৭ উইকেট নিয়েছেন। স্লো উইকেট থেকেও আদায় করে নিয়েছেন গতি আর বাউন্স। দ্বিতীয় টেস্টেও একইরকম আক্রমণাত্মক মানসিকতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘোষণা দিয়ে দিলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বয়স তিন পেরিয়ে চারে পড়েনি এখনো, অপেক্ষাটা আরও দিন বিশেকের। কিন্তু যদি জানা না থাকে, তো শাহীন শাহ আফ্রিদির বোলিং দেখে কে বুঝতে পারবে তা! এই মুহূর্তে নতুন বল হাতে শাহীন শাহ আফ্রিদিকে দেখার চেয়ে রোমাঞ্চকর কিছু বিশ্ব ক্রিকেটে কমই আছে। বয়স ২২ না পেরোতেই পাকিস্তানের টেস্ট বোলিংয়ের নেতৃত্বে, শাহীন শাহ আফ্রিদির প্রতিভা সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হয়ে যায় এই তথ্যেই।

বিশ্বকাপে রোহিত শর্মাকে দুর্দান্ত এক ইনসুইঙ্গারে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে শুরু। শাহীন আফ্রিদি এরপর থেকে রীতিমতো উড়ছেন। বাংলাদেশ সফরে এসে প্রথম ম্যাচে পেয়েছিলেন বিশ্রাম। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে প্রথম মাঠে নেমে ১৫ রানে ২ উইকেট। পরের ম্যাচে আর খেলেননি এবং টেস্টে ফিরে যথারীতি সেই বিধ্বংসী শাহীন। দ্বিতীয় ইনিংসে ফাইফারসহ ম্যাচে নিয়েছেন ৭ উইকেট।

এই সাফল্য-যাত্রার রহস্য কী? তাঁর চোখে সাফল্যের মূলে একটা জিনিসই, ক্রিকেটটাকে উপভোগ করছেন খুব। তাই  সব ফরম্যাটেই দিতে পারছেন নিজের সেরাটা। আর করোনার এই সময়ে সব সময় নিজেকে সতেজ রাখা কঠিন, তবুও সেটা তিনি করতে পারছেন বলে ধন্যবাদ দিতে চান কোচিং স্টাফ আর ফিজিও-ট্রেনারদেরও।

উপভোগ যে করছেন, সেটা অবশ্য মুখে না বললেও চলত। এশিয়ার কঠিন সব উইকেটেও সাফল্য পাচ্ছেন। আর সাফল্য পাচ্ছেন বলেই তাঁর নামটা উচ্চারিত হচ্ছে ক্রিকেটের রথী-মহারথীদের সঙ্গে, অনেকে তো তাঁকে বানিয়ে দিতে চাইছেন ওয়াসিম আকরামই। তবে সেসব আলোচনায় একদমই কান দিচ্ছেন না শাহীন, স্রেফ নিজের কাজ করে যাওয়াটাই লক্ষ্য তাঁর, 'আমার সব সময়ই চেষ্টা থাকে যে, অধিনায়ক যখনই আমার হাতে বল তুলে দেয়, শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করি। উইকেট নেওয়া বা না-নেওয়া একদমই আমার হাতে নেই। আমি স্রেফ দলের জন্য চেষ্টাই করতে পারি। আগ্রাসী বোলিং করে দলকে জেতাতে চেষ্টা করতে পারি। শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করতে পারি। বাকিটা আল্লাহর হাতে। আমি শুধু চেষ্টাই করতে পারি।'

ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শাহীন শাহ আফ্রিদি

যে চেষ্টা করে আফ্রিদি সফল হয়েছেন চট্টগ্রামের প্রথম টেস্টে। উইকেটে এমন কোনো গতি না থাকলেও আগুন ঝরিয়েছেন সেখানেই। আর এমনিতেও উইকেটের ধীরগতি কোনো সমস্যাই নয় তাঁর জন্য, 'এশিয়ার সব উইকেটই আসলে কম-বেশি ধীরগতির। স্পিনারদেরই সহায়তা বেশি মেলে। তবে শক্তপোক্ত হলে ও গায়ে জোর থাকলে এখানেও কার্যকর হওয়া যায়।' 

টেস্টে বোলিং করার সময় লক্ষ্য থাকে একটাই , সব সময় আক্রমণাত্মক মনোভাবটা ধরে রাখা। তিন ওভারের স্পেল হোক বা পাঁচ ওভারের স্পেল, আক্রমণকেই বানিয়েছেন মন্ত্র। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে লিড নিলেও বাংলাদেশ যে হেরে গেল, তাতে দ্বিতীয় ইনিংসে আফ্রিদির এই আক্রমণাত্মক বোলিংয়েরই বড় ভূমিকা। ওই ইনিংসে বাংলাদেশের টপ-অর্ডারকে ধসিয়ে দেওয়ার কাজটা একাই করেছেন শাহীন, নিয়েছেন প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের উইকেটই। তাঁর বলের গতি আর বাউন্সে রীতিমতো নাকাল হয়েছেন সাইফ হাসান। দুই ইনিংসেই আউট হয়েছেন আফ্রিদির বাউন্সারে।

দ্বিতীয় টেস্টের আগে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন হলো, টপ-অর্ডারের উইকেট এত সহজে পাওয়া যাবে, এমন আশা কি তিনিও করেছিলেন কি না? আফ্রিদি বলছেন, করেননি, 'টেস্ট ক্রিকেটে টানা দুই বলে উইকেট নেওয়া কখনোই সহজ নয়। সত্যিই কঠিন। এটির নাম টেস্ট ক্রিকেট, কারণ এখানে প্রতিটি সেশন, প্রতিটি মিনিট কঠিন ক্রিকেট হয়। টেস্টে আমি ফুল লেংথে বল করার চেষ্টা করি এবং উপভোগ করি। শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করি।’

প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মানবোধের প্রকাশ পরের কথায়, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের উইকেট নেওয়া সহজ নয়। ওদের বেশ কজন ভালো ক্রিকেটার আছে।'

চট্টগ্রাম টেস্টে পাকিস্তানের দুই ফাস্ট বোলার একেবারে সমানে-সমান। প্রথম ইনিংসে হাসান আলী ৫ উইকেট নিয়েছেন, শাহীন আফ্রিদি ২। দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট-সংখ্যাটা অদল-বদল হয়ে গেছে। শাহীন আফ্রিদি ৫, হাসান আলী ২। বছরজুড়েই চলছে দুজনের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা। শাহীন আফ্রিদি নিয়েছেন ৪৪ উইকেট, হাসানের উইকেট পাঁচটি কম। এই দুজনের বোলিং পার্টনারশিপটাও জমে উঠেছে ভালোই। শাহীন আফ্রিদিও যা দারুণ উপভোগ করছেন, 'বোলিংটাও তো পার্টনারশিপ গড়েই করতে হয়। হাসানের সঙ্গে যখনই আমি বোলিং করি, তখন কে অ্যাটাক করবে, কে রান আটকাবে… এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ হয়৷ নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করি, কোনো ব্যাটসম্যান ভালো খেলতে থাকলে কিভাবে তাকে আটকে রাখা যায় বা দ্বিধায় ফেলা যায়। হাসানকেও তাই কৃতিত্ব দিতে হবে।'

প্রথম টেস্টে জয় পেলেও পাকিস্তানের মিডল অর্ডার তেমন একটা ভূমিকা রাখতে পারেনি সেখানে। আফ্রিদি অবশ্য তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন না একদমই। মাত্রই তিনটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা আবদুল্লাহ শফিক এবং আবিদ আলী যেমন আলো ছড়িয়েছিলেন প্রথম টেস্টে, দলের প্রয়োজনে দ্বিতীয় টেস্টে জ্বলে উঠবেন মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যানরাও। আর দ্বিতীয় টেস্টেও যে আক্রমণাত্মক বোলিং করে যাওয়াটাকেই পাখির চোখ করেছেন, সেটা জানিয়েছিলেন আগেই, 'মোমেন্টাম খুব ভালো আছে, দলের কম্বিনেশন দারুণ। ছেলেরা প্রস্তুত দ্বিতীয় টেস্টের জন্য। অবশ্যই লড়াই করব এবং ভালোভাবে শেষ করব এবং এখান থেকে সিরিজ জিতে ফিরব।'

কথাটার ভেতর প্রচ্ছন্নে কি একটা হুমকিই মিশে থাকল বাংলাদেশের জন্য?

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×