টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা পাঁচ পারফরম্যান্স

উৎপল শুভ্র

১৭ অক্টোবর ২০২১

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা পাঁচ পারফরম্যান্স

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দলীয় অর্জন তেমন কিছু নেই, তবে বলার মতো ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স তো কিছু আছেই। সেখান থেকে সেরা পাঁচ পারফরম্যান্স বেছে নিয়েছেন উৎপল শুভ্র। দেখুন তো, আপনার সঙ্গে মেলে কি না!

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমার চোখে সেরা পাঁচ/স্মরণীয় পাঁচ বেছে নেওয়ার আগে ঠিক করে নিয়েছিলাম, শুধু প্রেসবক্সে বসে দেখা পারফরম্যান্সগুলোই বিবেচনায় নেব। তা নিলেও অবশ্য শুধু একটা বিশ্বকাপই বাদ পড়ে। যে ৬টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়েছে, এর মধ্যে ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটাই তো শুধু আমি কাভার করিনি।  

বাংলাদেশের সেরা পাঁচ পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে অবশ্য একটু ব্যতিক্রম হয়েছে। এমন একটা পারফরম্যান্স আছে, যা আমি মাঠে বসে দেখিনি, কিন্তু আমার মনে হয়েছে, ওটা বাদ দেওয়াটা 'পাপ' হবে। সেটি কোন পারফরম্যান্স, তা না হয় একটু ধীরেসুস্থেই বলি।

শুরুটা হোক পাঁচ নম্বর থেকেই...


৫. 
মাশরাফি বিন মুর্তজা

১/১৪, বিপক্ষ নেদারল্যান্ডস, ধর্মশালা, ২০১৬

অনুমান করি, এটা একটু বিস্ময় হয়েই এসেছে আপনার কাছে। কারণ আমার ধারণা, আমি যেটিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা পারফরম্যান্সের পাঁচে রেখেছি, অনেকের তা মনেই নেই। মনে না থাকার দুটি কারণ। ম্যাচটা ছিল প্রাথমিক পর্বে এবং প্রতিপক্ষ ছিল নেদারল্যান্ডস। তারপরও মাশরাফির ৪ ওভারে ১৪ রানে ১ উইকেট কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? শুধু একটা ওভারের জন্য। নেদারল্যান্ডস ইনিংসের ১৭তম ওভার। হাতে ৬ উইকেট নিয়ে নেদারল্যান্ডসের তখন আর ৪২ রান লাগে জিততে। ডাচ ব্যাটসম্যানরা ভালোই মারতে পারেন, ম্যাচে তাই বাংলাদেশের হেরে যাওয়ার শঙ্কা। আর হেরে গেলে মূল পর্বে উঠতে না পারার কেলেঙ্কারি হয়ে যায়।এই অবস্থায় ১৭ নম্বর ওভারটা করতে এসে মাশরাফি ৩ রান দিয়ে একটা উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। ২ রানে ২ উইকেটও হতে পারত, কিন্তু ওভারের প্রথম বলটা স্টাম্পে লাগার পরও বেলস্ পড়েনি, উল্টো ১ রান হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ জিতেছিল মাত্র ৮ রানে, এই তথ্যটাই বুঝিয়ে দেবে ওই ওভারটার গুরুত্ব।


৪. 
তামিম ইকবাল

১০৩*, বিপক্ষ ওমান, ধর্মশালা, ২০১৬

এটাও প্রাথমিক পর্বের ম্যাচ এবং একই বিশ্বকাপের। এখানেও প্রতিপক্ষের নাম এই পারফরম্যান্সের সেরা পাঁচে অন্তর্ভূক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। তারপরও এটাকে কেন রেখেছি? প্রথমত এর ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি। এখন পর্যন্ত একমাত্রও। এর চেয়েও বড় কারণ, মূল পর্বে ওঠার জন্য নকআউটের রূপ নেওয়া এই ম্যাচে বাংলাদেশকে উদ্ধার করেছিল তামিমের ওই সেঞ্চুরি। এর আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় মূল পর্বে উঠতে এই ম্যাচে জিততেই হতো। অথচ ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে শেষে স্কোরবোর্ডে রান মাত্র ২৯, তামিমের ৬০ বলে সেঞ্চুরি সেখান থেকেই বাংলাদেশকে জয়ের পথে নিয়ে যায়, সঙ্গে মূল পর্বেও। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছিল ১১০ রান, যার ৬৬-ই এসেছিল তামিমের ব্যাট থেকে। 


৩. সাকিব আল হাসান
৮৪, বিপক্ষ পাকিস্তান, পাল্লেকেলে, ২০১২ 

আদর্শ টি-টোয়েন্টি ইনিংস বলতে যা বোঝায়, এই ইনিংসটা ছিল ঠিক তা-ই। ৫৪ বলে ৮৪, যাতে ১১টি চার ও ২টি ছয়..তা কিছুটা বোঝাচ্ছে, পুরোটা নয়। সাকিবের ওই ইনিংসের একটা সময় পাকিস্তানের বোলারদেরও রীতিমতো অসহায় লাগছিল। ‌তামিমের সেঞ্চুরির আগে এটা ছিল টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংস, পাকিস্তানের বিপক্ষেও সর্বোচ্চ। সাকিবের কল্যাণে ১৭৫ রান করে ফেলার পর বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনাও জেগেছিল, যা মুছে দেন ইমরান নাজির ২০০ স্ট্রাইক রেটের এক ইনিংসে। ৩৬ বলে ৭২ রানের ইনিংসটি অবশ্য বাংলাদেশের ক্যাচিং ব্যর্থতার ফসল। যা নিয়ে ম্যাচের পরদিন আমাকে দেওয়া ইন্টারভিউয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সাকিব। টিমমেটদের অ্যাপ্রোচ, মাঠে নিবেদন এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে এমন কিছু কথা বলেছিলেন, যা আন্তর্জাতিক নিউজ এজেন্সিতেও খবর হয়েছিল।


২. 
মোস্তাফিজুর রহমান
৫/২২, বিপক্ষ নিউজিল্যান্ড, কলকাতা, ২০১৬

ম্যাচটা বাংলাদেশ হেরেছিল ৭৫ রানের বিশাল ব্যবধানে। কিন্তু মোস্তাফিজুরের দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্স তো তাতে মিথ্যা হয়ে যায় না। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের যেভাবে নাকানিচুবানি খাইয়েছিলেন, তা এখনো চোখে ভাসে। কেন উইলিয়াসনের মতো ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করেছিলেন দারুণ এক বলে। গ্রান্ট এলিয়ট কাটারে বোকা বনে এমনভাবে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন, যেন ক্যাচিং প্র্যাকটিস করাচ্ছেন। ২২ রানে ৫ উইকেট এখনো টি-টোয়েন্টিতে মোস্তাফিজুরের সেরা বোলিং। নিউজিল্যান্ডকে ১৪৫ রানের বেশি করতে না দিয়ে জয়ের একটা সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন। টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিম্ন ৭০ রানে অলআউট হয়ে গিয়ে উল্টো দুঃস্বপ্নের রূপ নেয় ওই ম্যাচ। মোস্তাফিজুরের বোলিং ছাড়া বাংলাদেশের মনে রাখার মতো আর কিছুই থাকে না।


১.
মোহাম্মদ আশরাফুল
২৭ বলে ৬১, বিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জোহানেসবার্গ ২০০৭

সেরা পাঁচের মধ্যে এই একটা পারফরম্যান্সই প্রেসবক্সে বসে দেখা হয়নি, দেখেছি টেলিভিশনে। তারপরও সেটি না রেখে তো পারলামই না, রাখতে হলো এক নম্বরেও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাংলাদেশের এই একটিই জয়, বলতে গেলে যেটি মোহাম্মদ আশরাফুলের একক কৃতিত্বধন্য। শটের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন সেদিন, যার মধ্যে আলাদা হয়ে আছে ক্যারিবীয় বোলারদের হতভম্ব করে দেওয়া প্যাডল স্কুপগুলো। হাফ সেঞ্চুরি এসেছিল মাত্র ২০ বলে, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তখন যা ছিল দ্রুততম। এই ইনিংস শেষে ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেটের দিক থেকেও এক নম্বরে উঠে গিয়েছিলেন আশরাফুল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৬৪ রান দুই ওভার বাকি থাকতেই টপকে গিয়েছিল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা পারফরম্যান্স যে সেরা ম্যাচের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে, তাতে আর আশ্চর্য কি! 

 

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×