উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

জ্বলে ওঠো আপন তারুণ্যে...

ইফতেখার নিলয়

১৭ অক্টোবর ২০২১

জ্বলে ওঠো আপন তারুণ্যে...

একমাত্র বাংলাদেশ দলেই তিনজন ক্রিকেটার আছেন, যাঁরা খেলছেন টানা সপ্তম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। মুদ্রার অন্য পিঠ হলো, বাকি ১২ জনের নয়জনের জন্যই এটি প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ছয়জনের জন্য তো প্রথম কোনো বৈশ্বিক আসরই। যাঁদের ভালো করা না-করার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতা।

ইতোমধ্যেই উঠে গেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর্দা। এরপরও যার যার কাছে বিশ্বকাপের পর্দা উঠবে পছন্দের দলের খেলার দিনই। বাংলাদেশিদের জন্য পর্দা উঠতে যেমন বাকি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। সমর্থকরা কতটুকু আশা করছেন এই দলকে ঘিরে, তা আপাতত বলা মুশকিল। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান সবুজ সংকেত দিলেও বিশ্বকাপ পরিসংখ্যান মোটেও আশাজাগানিয়া নয়। তাছাড়া ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে যেমন হইহই একটা রব ছিল, তা এবার নেই। না থাকাটা অবশ্য খারাপ নয়। সেবার তো হইহই রব নিয়ে গিয়ে একেবারে সাদামাটা এক পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে হতাশ করেছিল টিম বাংলাদেশ। এবার কম বাগাড়ম্বর থেকেই যদি দারুণ কিছু হয়!

বাংলাদেশকে ঘিরে এবার প্রত্যাশার পারদটা সেরকমভাবে চড়ছে না এবারের দলটায় তারুণ্যের মেলা বসেছে বলেই বোধ হয়। দলে তিনজন ক্রিকেটার...অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম আর সাকিব আল হাসান...অংশ নিতে যাচ্ছেন নিজেদের সপ্তম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। কিন্তু বাকি ১২ ক্রিকেটারের নয়জনেরই তো এটা প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আর দুজন বেশি হলে তো তাদের দিয়েই একটা একাদশ সাজানো যেত।

নয়জনের মধ্যে নাঈম শেখ, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন, মাহেদি হাসান, নাছুম আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম কোনো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার স্বাদ পাচ্ছেন এবারই প্রথম। বাকি তিনজনের মধ্যে লিটন দাস ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন খেলেছেন গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে। আর ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দলের সাথে ছিলেন নুরুল হাসান সোহান, যদিও মাঠে নামা হয়নি।

মাহেদি হাসান গত কিছুদিন নিয়মিতই ছিলেন দলে

ম্যাচের শুরু থেকেই এবার বাংলাদেশকে নির্ভর করতে হবে নতুনদের ওপর। শুরুতে ব্যাটিং করলে হয়তো লিটন-নাঈম, আবার বোলিং করলে এক প্রান্ত থেকে বোলিংয়ে আসবেন সাইফ অথবা শরিফুলের কেউ। কিংবা দুই প্রান্ত থেকে শুরু করতে পারেন দুজনই; আইপিএলে ভালোই করেছেন মোস্তাফিজ, কিন্তু জাতীয় দলে তিনি নতুন বল হাতে তুলছেন না অনেক দিন ধরেই।

তবে নতুনরা সেভাবে ভরসা যোগাতে পারছেন কি? নাঈম আর লিটনের এ বছরের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ওপেনিং পার্টনারশিপ ২০ রানের। অন্যদিকে, জিম্বাবুয়ে সফরে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নাঈম-সৌম্যের ১০২ রানের ওপেনিং জুটি স্বপ্ন দেখালেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরের সিরিজে দুজনের সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি নেমে এসেছে ২৪ রানে। যদিও পিচ ব্যাটিংয়ের জন্য দুরূহ ছিল বলে এগুলো আমলে নিতে নিষেধ করেছেন সাকিব আল হাসান।

অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও আস্থা রাখতে বলেছেন ওপেনারদের ওপর। তারপরও তিন প্রস্তুতি ম্যাচের দুটিতেই নাঈম ও লিটন ভালো করতে না পারায় পিছু ছাড়ছে না শঙ্কা। সৌম্য রানে ফেরায় তাঁকেও যে ওপেনিংয়ের ভাবনায় রাখা হয়েছে, সেটা অধিনায়ক গতকালই নিশ্চিত করেছেন। এক্ষেত্রে প্ল্যান 'বি-তে' সৌম্য সরকারের থাকা ও তাঁর প্রস্তুতি ম্যাচের ফর্মে স্বস্তির নিঃশ্বাসটা একটু দীর্ঘ হয়।

আফিফ আর সোহান নামবেন পর পর। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী বোধ হয় আগে-পরে করা হবে। আফিফের ভেতরকার তেজ তো সবারই নজরে এসেছে শেষ দুই সিরিজে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ৩১ বলে ৩৭ ও কিউই বোলারদের বিপক্ষে তেড়েফুঁড়ে করা ৩৩ বলে ৪৯ আফিফকে ঘিরে আশা বাড়িয়েছে কয়েক গুণ। সোহান ব্যাটিংয়ে দলকে সমর্থন দিতে চান, প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিং সেই বার্তাই সবার কাছে পৌঁছে দিয়েছে। উইকেটের পেছন থেকে দলকে চাঙা রাখার কৌশল তাঁর চেয়ে আর কে-ই বা ভালো জানে!

আফিফ ও সোহানের দিকে তাকিয়ে থাকবে লেট মিডল অর্ডারের ব্যাটিং

শামীম একাদশে জায়গা পাবেন কি না, তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। তাঁকে ঘিরে যে আশা করা হচ্ছে, সেটা পূরণ করতে পারেননি শেষ দুই সিরিজে। শামীম না খেললে ফিনিশারের ভূমিকায় নামতে হবে সাইফউদ্দিনকে। যেখানে চাওয়া থাকবে, ২০১৯ বিশ্বকাপের সাইফউদ্দিনকে দেখার, ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটায় তো পেয়েছিলেন ফিফটির দেখাই। বোলিংয়ে কিছুটা খরুচে হলেও উইকেট নিয়ে ছন্দেই আছেন। সবশেষ ৮ ম্যাচে পেয়েছেন ১১ উইকেট। মূল আসরে এই ছন্দের পতন না ঘটলেই হয়।

বোলিংয়ে যদি কোনো সিমার না আনা হয় প্রথমে, সেক্ষেত্রে আসবেন নাছুম আহমেদ ও মাহেদি হাসান। সর্বশেষ ১১ ম্যাচে নাছুমের নামের পাশে ১৬ উইকেট তাঁর কাছ থেকে প্রত্যাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।সমানসংখ্যক ম্যাচ খেলে মাহেদি নিয়েছেন ১০ উইকেট। শুরুর দিকে ব্রেকথ্রু এনে দিয়ে এই দুজন আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন অধিনায়কের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মাহেদির ম্যাচ জেতানো শেষ ওভারের স্মৃতিটাও নিশ্চয়ই অনুপ্রেরণা হয়ে ঘুরছে তাঁর মনে। আর ব্যাট হাতেও দলকে সাপোর্ট দিতে জানেন তিনি।

মোস্তাফিজ এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোলিংয়ের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। জাতীয় দলে তাঁর সাথে শরিফুলের জুটিটাও বেশ জমে উঠেছে। আইপিএল খেলে বেশ চাঙাও আছেন। আইপিএলের শেষ কয়েক ম্যাচ ও প্রস্তুতি ম্যাচের স্মৃতি ভুলে স্বরূপে ফিরবেন, এটাই সবার আশা। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া শরিফুলের সাথে জুটিটা এবার আরও রাঙিয়ে তুলতে চাইবেন মোস্তাফিজ। শেষ ৮ ম্যাচে মাঠে নেমে শরিফুলের ক্যারিয়ারের উইকেট বেড়েছে ১৫টি। শরিফুলে যে বাংলাদেশ আশা দেখছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানের উপর মোস্তাফিজের তৈরি করা চাপকে কাজে লাগিয়েই উইকেট তুলে নিচ্ছেন শরিফুল।

দলে সিনিয়র তিন ক্রিকেটার সবগুলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছেন। কিন্তু সেই অর্থে এই ফরম্যাটের বিশ্ব আসরে তেমন কোনো অর্জন নেই বাংলাদেশের। হতে পারে, এই তিন ক্রিকেটারের একসাথে এটাই শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সাকিবের অলরাউন্ড নৈপুণ্যের পাশাপাশি রিয়াদের নেতৃত্ব আর? মুশফিক টি-টোয়েন্টিতেও সত্যিকারের 'মিস্টার ডিপেন্ডেবল' হয়ে উঠলে উদীয়মানরাও পাবেন বাড়তি প্রেরণা।

পরিসংখ্যান বলছে, দারুণ ছন্দে আছেন এই নয় ক্রিকেটারের অধিকাংশই। ধারণা করা হচ্ছে, ওমানের উইকেটে স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পাবেন। সেজন্য নাছুম-মাহেদিরা তো প্রস্তুতই। শরিফুল ইদানীং বেশ কাটার ব্যবহার করছেন। অস্ত্রটা শরিফুলকে হয়তো মোস্তাফিজই রপ্ত করিয়েছেন। দেখা যাক, অস্ত্রটা কতটুকু কাজে লাগে।

যদি নবীনদের সব অস্ত্র ঠিকঠাক গর্জে ওঠে, তাদের নিয়ে স্বপ্ন তো বোনাই যায়!

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×