সেবার তো তামিম পার করেছিলেন, এবার কে?

উৎপল শুভ্র

১৯ অক্টোবর ২০২১

সেবার তো তামিম পার করেছিলেন, এবার কে?

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর তামিম ইকবাল

মাঝখানে কেটে গেছে সাড়ে পাঁচ বছরেরও বেশি। অনেক লম্বা সময়। স্মৃতিতে তাই ধুলো পড়াই স্বাভাবিক। সেই ধুলো ছেড়ে একটু যদি পেছন ফিরে তাকান, আপনার হয়তো মনে পড়েও যেতে পারে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জন্য ওমান-ম্যাচ এমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার ঘটনা এটাই প্রথম নয়।

কে ভেবেছিল, ওমানের বিপক্ষে একটা ম্যাচ বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে হঠাৎই এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে! পরিণত হবে প্রায় নকআউটে! প্রায়…প্রায় কেন? এই ‘প্রায়’ শব্দটা কাগজে-কলমের হিসাবে রাখতে হয় বলেই রাখা। স্কটল্যান্ড-পাপুয়া নিউ গিনি ম্যাচ শেষে যেটির আর প্রয়োজন না-ও হতে পারে। স্কটল্যান্ড হেরে গেলেই শুধু বেঁচে থাকবে ওই 'প্রায়' শব্দটা। আর অনুমিতভাবে স্কটল্যান্ড জিতলেই শেষ ওই ‘প্রায়’-এর আয়ু। তখন ওমান আক্ষরিক অর্থেই নকআউট। পরাজয় মানেই প্রাথমিক পর্ব থেকে বাংলাদেশের 'টা টা বিশ্বকাপ'। 

অকল্পনীয় বলবেন? বলতে পারেন। অভূতপূর্ব? এখানে একটু কথা আছে। ‘অভূতপূর্ব’ মানে আগে কখনো ঘটেনি, তাই তো? না, তা বলা যাচ্ছে না। মাঝখানে সাড়ে পাঁচ বছর অনেক লম্বা সময়। স্মৃতিতে তাই ধুলো পড়াই স্বাভাবিক। সেই ধুলো ছেড়ে একটু যদি পেছন ফিরে তাকান, আপনার হয়তো মনে পড়েও যেতে পারে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জন্য ওমান-ম্যাচ এমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবরের মাসকটে ম্যাচের দিন সকালে তা-ও ‘প্রায় নকআউট’ বলা যাচ্ছে। ২০১৬ সালের ১৩ মার্চের ধর্মশালায় যা ছিল আক্ষরিক অর্থেই নকআউট। 

এবারের ‘সুপার টুয়েলভ’-এর বদলে সেবার ‘সুপার টেন’। প্রাথমিক পর্বে দুই গ্রুপ থেকে দুই চ্যাম্পিয়ন দলেরই শুধু টিকিট মিলবে মূল পর্বের। তো সেবার বাংলাদেশ-ওমান ম্যাচের আগে দুই দলেরই পয়েন্ট ৩। সমীকরণটাও পরিষ্কার: যে দল জিতবে, সেই দল সুপার টেনে। যে দল হারবে, সেই দলের বিদায়। 

ওমান এবারই প্রথম এমন দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়ায়নি

বাংলাদেশ যে জিতেছিল, এটা তো আপনি জানেনই। জিতেছিল বলেই হয়তো ম্যাচটা সেভাবে মনেও পড়ে না। হেরে গেলে ভিন্ন কথা, নইল সহযোগী সদস্য দেশগুলোর বিপক্ষে ম্যাচ তো দ্রুতই বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। ওমানের বিপক্ষে ওই ম্যাচটা ব্যতিক্রম হয়ে আছে তামিম ইকবালের কারণে। বাংলাদেশের পক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি, এখন পর্যন্ত একমাত্রও, ম্যাচটার জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের একটা পাতা তাই চিরদিনই বরাদ্দ থাকবে। 

মাসকটে ওমানের বিপক্ষে ম্যাচের দিকে যেভাবে উদ্বেগাকূল চোখে তাকিয়ে আছে গোটা বাংলাদেশ, তাতে বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে ধর্মশালা। সেই ম্যাচের আগেও টেনশন খুব একটা কম ছিল না। বরফে ঢাকা পাহাড়ের পশ্চাৎপট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ধর্মশালার অপূর্ব ওই স্টেডিয়ামে সেদিন সকাল থেকেই মাঠকর্মীদের প্রাণান্ত অবস্থা। বৃষ্টি আসে আর যায়। নেদার‍ল্যান্ডস ও আয়ার‍ল্যান্ডের মধ্যকার দিনের প্রথম ম্যাচটি যে কারণে টোয়েন্টি-টোয়েন্টি থেকে পরিণত হয়েছে সিক্স-সিক্সে। দুই দলেরই অবশ্য বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে এই ম্যাচের আগেই। 

নেদারল্যান্ডসের সঙ্গেই প্রথম ম্যাচ ৮ রানে জিতেছে বাংলাদেশ, জয়ের চেয়েও যেখানে বড় হয়ে উঠেছে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তাসকিন ও আরাফাত সানির নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় তা থেকে জুটেছে ১ পয়েন্ট। বিশ্বকাপ অভিষেকেই আয়ার‍ল্যান্ডকে হারিয়ে সবাইকে চমকে দেওয়া ওমানের পরের ম্যাচেরও একই পরিণতি (নেদার‍ল্যান্ডসের বিপক্ষে)। 

বাংলাদেশ-ওমান ম্যাচও শুরু হয়েছে বৃষ্টির ভ্রুকুটি নিয়ে। পরিত্যক্ত হয়ে গেলে সমস্যা নেই। নেট রানরেটে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশ উঠে যাবে চূড়ান্ত পর্বে। পুরো ম্যাচ হলেও বাংলাদেশেরই জেতার কথা (স্কটল্যান্ড ম্যাচের টাটকা তিক্ত স্মৃতি এবার যা বলতে দিচ্ছে না)। কিন্তু বৃষ্টি এসে ম্যাচ সংক্ষিপ্ত করে দিলে? সেই দুশ্চিন্তায় রীতিমতো কাতর বাংলাদেশ। টসে হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে হওয়ায় যা আরও বেড়েছে। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে পরে ব্যাটিং করলে হিসাব-নিকাশ করে খেলার সুবিধাটা পাওয়া যায়। প্রথমে ব্যাটিং করলে যেখানে করার থাকে একটাই, যত বেশি সম্ভব রান করে বৃষ্টি-সৃষ্ট সম্ভাব্য উল্টোপাল্টা সমীকরণকে মূল্যহীন বানিয়ে ফেলা। 

সেই সেঞ্চুরির সময় `ভয়ঙ্কর সুন্দর` তামিম

অথচ বাংলাদেশের ইনিংসে ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে শেষে স্কোরবোর্ডে কিনা মাত্র ২৯! তামিমের সঙ্গে ওপেন করতে নামা সৌম্য ত্রিশ গজ পার করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। সপ্তম ওভারে যখন আউট হলেন, নামের পাশে ২২ বলে ১২। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে সৌম্যর আউটটাকে মনে হচ্ছিল ‘শাপে বর’। এরপরই নেমে সাব্বির করেছিলেন ২৬ বলে ৪৪। পরে সাকিব ৯ বলে ১৬। তবে রাজমিস্ত্রির যেমন ‘যোগালি’ থাকে, তাঁরা তো শুধু সেই যোগালির কাজটাই করেছেন। ‘রাজমিস্ত্রি’ কাকে বলছি, তা তো আপনি জেনেই গেছেন, অথবা আগেই আপনার তা জানা ছিল। ৬০ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম, ৬৩ বলে অপরাজিত ১০৩। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছিল ১১০ রান, যার ৬৬-ই এসেছিল তামিমের ব্যাট থেকে।

২ উইকেটে ১৮০ করে ফেলার পর বাংলাদেশ অনেকটাই নিশ্চিন্ত। দুশ্চিন্তা বলতে যা একটু ছিল, তা বৃষ্টি নিয়েই। কোন সময় তা নামবে, ডাকওয়ার্থ ও লুইস সাহেবের অবোধ্য আইন তখন কী রায় দেবে, সেটি তো ‘দেব না জানন্তি’। সেই বৃষ্টি এলো ৭ ওভার পর, ওমানের রান যখন ২ উইকেটে ৪১। ডি/এল মেথডে টার্গেট থেকে যা ১৯ রান কম। বৃষ্টি-বিরতির পর আবার যখন খেলা শুরু হলো, জয়ের জন্য ওমানের সামনে নতুন লক্ষ্য ১৬ ওভারে ১৫২ রান। ১.২ ওভার পর আবার বৃষ্টি। আবার নতুন টার্গেট, এবার ১২ ওভারে ১২০। ৭.২ ওভার তো খেলা হয়েই গেছে। বল বাকি আছে তাই মাত্র ২২টি, সেই ২২ বলে ৭৫ রান করতে বলাটাকে ওমানের কাছে রসিকতা বলে মনে হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। বাংলাদেশ তখন ইডেন গার্ডেনে পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার টেনের প্রথম ম্যাচ নিয়ে ভাবতে শুরু করে দিয়েছে।

ওমানের বিপক্ষে এই ম্যাচ এমনিতেও হয়তো তামিম ইকবালের কথা মনে করিয়ে দিত। স্কটল্যান্ডের সঙ্গে পরাজয়ে তা এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় তামিমকে আরও বেশি মনে পড়ছে। সেবার তো তামিম পার করেছিলেন, এবার ‘তামিম’ হবেন কে?

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×