২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

তাহলে কি ভারত-পাকিস্তানই ফেবারিট?

ইএসপিএনক্রিকইনফো

২৩ অক্টোবর ২০২১

তাহলে কি ভারত-পাকিস্তানই ফেবারিট?

দুই অধিনায়ক বাবর আজম ও বিরাট কোহলি। ছবি: দ্য ব্রিগেড ক্রনিকল

ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছে বিশ্বকাপের একদম শুরুতেই। তবে এই বিশ্বকাপে যদি দু`দলের শেষ দেখা এটাই না হয়, অবাক হওয়ার কিছুই নেই। দুই বিশ্বকাপের মাঝের সময়টায় এই দুই দলের টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্স যে এমনই বলছে। কিন্তু এটা কি আসলেই বড় নিয়ামক?

ভারত-পাকিস্তানের বিশ্বকাপটা শুরুই হচ্ছে গত বিশ্বকাপের পর থেকে সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ড সঙ্গী করে। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি আফগানিস্তান পেয়েছে আইসিসির পূর্ণ সদস্য পদ। ভালো জয়-পরাজয়ের অনুপাতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে তারাই। আর যে আট দল বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে সরাসরি অংশ নিচ্ছে, তাদের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়-পরাজয়ের অনুপাতটাই সবচেয়ে বাজে, মাত্র ০.৬৬।

ভারত-পাকিস্তানের এই পরিসংখ্যান দেখে মনে হতেই পারে, বিশ্বকাপে ফেবারিট হিসেবেই যাচ্ছে তারা। কিন্তু ইতিহাস বলছে অন্য কথা। বিশ্বকাপ-পূর্ব ফর্মটা বিশ্বকাপে টেনে আনতে অতীতে বেগ পেতে হয়েছে অনেকেরই। ২০১২ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার কথাই ধরুন। ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে ওই বিশ্বকাপ পর্যন্ত যে ১৬ ম্যাচ খেলেছিল দলটা, তার মধ্যে ১১টাতেই জিতেছিল তারা। কিন্তু বিশ্বকাপে গিয়ে ফেরত আসতে হয়েছিল সুপার এইট থেকেই, সেটাও টানা তিন ম্যাচ হেরে। আর সে আসরের শিরোপা জিতেছিল যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জয়-পরাজয়ের অনুপাতে ওই ২০১০-১২ সময়টায় দ্বিতীয় 'নিকৃষ্ট' দল ছিল তারা।

২০১৬ বিশ্বকাপেও একই দশা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ গিয়েছিল গড়পড়তা এক রেকর্ডকে সঙ্গী করে। টুর্নামেন্ট জয়ের পথে সেমিফাইনালে ভারতকে হারিয়েছিল তারা, ২০১৪-১৬ সময়ে সবচেয়ে ভালো টি-টোয়েন্টি রেকর্ড ছিল যাদের।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকার এমন পরিসংখ্যান যদি আশাহত করে ভারত-পাকিস্তানকে, তো তারা অনুপ্রেরণা নিতে পারে এশিয়ার আরেক দল শ্রীলঙ্কা থেকে। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ জিতেছিল তারা, আগের আসরের পর থেকে জয়-পরাজয়ের অনুপাতে সবার ওপরে ছিল তারাই।

নানা দলের নানা পথ

গত এক দশকের পরিসংখ্যানে তাকিয়ে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বকাপহীন বছরগুলোতে বিভিন্ন দল বিভিন্ন চিন্তাধারায় টি-টোয়েন্টি খেলেছে। কিছু দল যেমন একাদশ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চেয়েছে, তাদের প্রথম সারির খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিতে চেয়েছে বিশ্বকাপ একদম কাছে চলে আসার আগ পর্যন্ত। আবার কিছু দল যেমন গুরুত্ব দিয়েছে দল নির্বাচনের ধারাবাহিকতায়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেমন প্রমাণ করেই দিয়েছে, বিশ্বকাপ নেই বছরগুলোতে তাদের টি-টোয়েন্টি রেকর্ড দেখে তাদের যাচাই করে ফেলাটা বড় বোকামিই হবে। পূর্ণশক্তির দল নিয়ে তারা মাঠে নেমেছিল কমই। ঘরে মাঠে ২০১০ বিশ্বকাপের পর থেকে যে ১১৮টা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে তারা, তার মধ্যে কেবল ২৬টাতেই একসঙ্গে দলে ছিলেন ক্রিস গেইল-ডোয়াইন ব্রাভো-কিয়েরন পোলার্ড ত্রয়ী। আর ওই ২৬ ম্যাচের ১১টাই খেলা হয়েছে ২০২১ সালে, নিজেদের শেষ বিশ্বকাপ রাঙিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে।

২০১০ বিশ্বকাপের পর থেকে বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বকাপের বছরে (১ জানুয়ারি থেকে টুর্নামেন্টের ফাইনাল পর্যন্ত) ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়-পরাজয়ের অনুপাত ১.৫৫৫। আর বিশ্বকাপ নেই বছরগুলোতে এই সংখ্যাটাই কমে যাচ্ছে ০.৫৮৯-তে। বিপরীতে পাকিস্তান আর ইংল্যান্ড হেঁটেছে উল্টে পথে: বিশ্বকাপ নেই বছরগুলোতে তাদের জয়-পরাজয়ের রেকর্ডটা বেশ ভালো, পাকিস্তান বিশ্বকাপবিহীন বছরগুলোতে টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলেছে সবচেয়ে বেশি (৯৩), অন্য কোনো দল ৭২টির বেশি খেলেনি।

ইংল্যান্ডের দারুণ টি-টোয়েন্টি রেকর্ডটা ব্যাখ্যা করা যায় এভাবে, দলের টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞদের নিয়মিত সুযোগ করে দিয়েছে তারা। ২০১৬ বিশ্বকাপের পর থেকে যে ৫০টা ম্যাচ খেলেছে তারা, তার মধ্যে দলের অধিনায়ক এউইন মরগান ছিলেন ৪৫ ম্যাচেই। দলের 'ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট' ক্রিস জর্ডান দলের বাইরে কাটিয়েছেন মাত্র দুই ম্যাচ।

কিন্তু এরপরও বিশ্বকাপে তাদের পারফরম্যান্সকে ভালোর কাতারে রাখা যাচ্ছে না। কারণ সম্ভবত সর্বশেষ তিনটা আসরই এশিয়াতে আয়োজিত হওয়া, যে জায়গাতে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা খাপ খাইয়ে নিতে পারেন না তেমনভাবে। সমস্যাটা অনুধাবন করেছে তারাও, যে কারণে সমাধানের চেষ্টায় দলের টি-টোয়েন্টি তারকাদের যত বেশি সম্ভব আইপিএলে খেলার সুযোগ করে দিতে চেয়েছে। এবারের বিশ্বকাপ দলের অর্ধেকের বেশি সদস্যেরই আছে আবর আমিরাতে আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতা।

অস্ট্রেলিয়া আবার অনেকটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো। খেলোয়াড়েরা অন্য ফরম্যাটগুলোতে খেলতেই বেশি আগ্রহী, আবার ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের জন্য অস্ট্রেলিয়ার গৃহীত নীতিও এই সংস্করণ থেকে দূরেই রাখে তাদের তারকা খেলোয়াড়দের। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে যা ব্যতিক্রম, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফ্র‍্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতেও তেমন একটা খেলেন না অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ফ্র‍্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বিগ ব্যাশেও দেখা যায় না তাদের অনেককেই।

তারকা খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতির কারণে অনেক বেশিসংখ্যক খেলোয়াড়কে গায়ে জাতীয় দলের জার্সি তুলে দেওয়ার সুযোগ পায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হাজির হয় বিশ্বকাপে গিয়ে সঠিক সমন্বয়টা খুঁজে না পাওয়া। ২০১৪ আর ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এমন হয়েছেন, খুব সম্ভবত ২০২১ সালেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ পাঁচ বছরে অস্ট্রেলিয়া ৫৮টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে, এর মধ্যে কেবল পাঁচজন ক্রিকেটারই অর্ধেকের বেশি ম্যাচে দলে ছিলেন--অ্যারন ফিঞ্চ (৪৮), অ্যাডাম জাম্পা (৪৪), অ্যালেক্স ক্যারি (৩৮), গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (৩৮) ও অ্যাশটন অ্যাগার (৩৭)। এর মধ্যে ক্যারি আবার জায়গা করে নিতে পারেননি বিশ্বকাপ দলে; আর যারা জায়গা করে নিয়েছেন, তাদের অবস্থাও তো খুব একটা সুবিধার নয়।

অস্ট্রেলিয়াকে তাই আর ফেবারিট বলা যাচ্ছে কী করে!

* ইএসপিএন ক্রিকইনফো থেকে ভাষান্তর

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×