ম্যাচ ছাপিয়ে আলোচনায় বৃষ্টি

আজ বাংলাদেশের সামনে নিউজিল্যান্ড

উৎপল শুভ্র

৯ জুন ২০২১

ম্যাচ ছাপিয়ে আলোচনায় বৃষ্টি

কার্ডিফে মুখোমুখি হতে যাচ্ছিল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড, যে ম্যাচের ফলের দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা বাংলাদেশ। অথচ ম্যাচ শুরুর আগে লাগাতার বৃষ্টিতে খেলা মাঠে গড়ানো নিয়েই ছিল চরম অনিশ্চয়তা। বৃষ্টিতে তিতিবিরক্ত হয়ে সাকিব আল হাসান তো উৎপল শুভ্রকে এমনও প্রশ্ন করেছিলেন, `আইসিসিকে প্রশ্ন করেননি, এই সময় টুর্নামেন্টটা কেন হচ্ছে?`

প্রথম প্রকাশ: ৯ জুন ২০১৭। প্রথম আলো।

বাংলাদেশ জিতবে, না নিউজিল্যান্ড?

ম্যাচের আগে এই প্রশ্নটাই তো সবার মুখে মুখে ফেরার কথা। অথচ সেটি ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠছে অন্য একটা প্রশ্ন—বৃষ্টি খেলা হতে দেবে তো?

শুধু এই ম্যাচেই নয়, এই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কোটি টাকার প্রশ্ন এখন এটাই। অন্য সবকিছু ছাপিয়ে বৃষ্টি-সন্ত্রাস এমনই বড় হয়ে উঠছে যে, রসিকতা হচ্ছে টুর্নামেন্টের নাম বদলে এটিকে ডাকওয়ার্থ-লুইস ট্রফি বললেই তো হয়!

ডাকওয়ার্থ-লুইসও তো সব সময় কাজে আসছে না। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দুবার শিরোপাজয়ী একমাত্র দল অস্ট্রেলিয়ার দুটি ম্যাচেই যেমন আসেনি। ক্রিকেটে কোথায় ব্যাটিং-বোলিং নিয়ে কথা হবে, তা নয়। এসব বাদ দিয়ে বিচিত্র সব আলোচনা হচ্ছে। এমন যদি হয়, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার শেষ ম্যাচেও পয়েন্ট ভাগাভাগি হলো আর একটা পুরো ম্যাচ না খেলেই অস্ট্রেলিয়া উঠে গেল সেমিফাইনালে!

কার্ডিফ এমনই কাভারে ঢাকা ছিল ম্যাচের আগে। ছবি: এএনআই

কাল সকালে পার্ক প্লাজা হোটেলের ব্রেকফাস্ট টেবিলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কথাবার্তায় বারবার ঘুরেফিরে এল বৃষ্টি। আগের রাতে শুরু হয়ে তখনো যা ঝিরিঝিরি ঝরে চলেছে। কনকনে ঠান্ডা। তাপমাত্রা দেখাচ্ছে ১৫ ডিগ্রি, কিন্তু বৃষ্টি আর বাতাস মিলিয়ে সেটিকে মনে হচ্ছে আরও ২-৩ ডিগ্রি কম। অবস্থা এমনই যে, হোটেলের লবির একপাশের ফায়ারপ্লেসে একটু দূরে দূরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই সাকিব আল হাসান বললেন, ‘আইসিসিকে প্রশ্ন করেননি, এই সময়ে কেন টুর্নামেন্টটা হচ্ছে? আর এটা ইংল্যান্ডেই হতে হবে কেন, আর কোনো দেশ নেই?’

টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হচ্ছে ইংল্যান্ডে। কার্ডিফেও খেলা হচ্ছে বলে অবশ্য শুধু ইংল্যান্ড না বলে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস বলা উচিত। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আজ সকালেও বৃষ্টি হবে। তবে সকাল ১০টার দিকে রোদ উঠে যাওয়ার কথা। তবে বৃষ্টি কাঁটায় কাঁটায় সব মেনে চলবে, এমন তো কথা নেই। এই গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালে ওঠার সমীকরণে তাই বৃষ্টিরও উঁকিঝুঁকি। সেটিকে ভুলে গিয়ে সরল সমীকরণটা আবার জানিয়ে দিই। আগামীকাল এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিলে এই বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে জয়-পরাজয়ের আর কোনো মূল্য থাকবে না। ইংল্যান্ড তো আগেই উঠে গেছে সেমিফাইনালে। তাদের সঙ্গী হবে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু উল্টোটা যদি হয়! তাহলে এই ম্যাচের জয়ী দল চলে যাবে সেমিফাইনালে। কার্ডিফে আজ তাই দুই দলের জন্যই এটি নিজেদের কাজটা সেরে রাখার ম্যাচ। মাশরাফি বিন মুর্তজাও এভাবেই দেখছেন। কাল সকালে টিম হোটেলে বললেন, ‘জিতলে চান্স আছে। আমরা শুধু আমাদের কাজটাই করে রাখতে পারি। বাকিটা তো আমাদের হাতে নেই।’

শুধু সেমিফাইনালে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখার জন্যই নয়, আরেকটা কারণেও আজ জয় পাওয়াটাকে জরুরি মনে করছেন মাশরাফি। ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে ছয় নম্বরে ওঠার পরও যে প্রতিনিয়তই নিজেদের প্রমাণ করার দায় তাড়িয়ে বেড়ায়। মাশরাফি তাই বলছেন, ‘এই ম্যাচ জিতেও যদি সেমিফাইনালে কোয়ালিফাই করতে না পারি, কিছু করার নেই। তবে এটা তো অন্তত সবাইকে দেখিয়ে দেওয়া যাবে, আমরা কতটা উন্নতি করেছি।’

ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনে যাওয়ার আগে কার্ডিফের পার্ক প্লাজা হোটেলের লবিতে আয়েশি ভঙ্গিতে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। মোস্তাফিজকে পেছনে দাঁড় করিয়ে ছবিটা তুলেছিলেন উৎপল শুভ্র

‘জিততেই হবে’ এমন একটা ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে পাওয়া এক দিক থেকে ভালোই হয়েছে। গত কয়েক বছরে খেলতে খেলতে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে নিউজিল্যান্ড হয়ে গেছে পাড়ার কোনো চেনা দলের মতো। মাশরাফি যদিও মনে করিয়ে দিলেন, ‘আমরা যেমন ওদের সম্পর্কে সব জানি, ওরাও কিন্তু আমাদের সম্পর্কে সব জানে।’

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা হলে অবধারিতভাবে ‘বাংলাওয়াশ’ কথাটা বাতাসে উড়তে থাকে। একবার হলেও কথা ছিল, দুবার নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। শুধু ‘নিজের মাঠেই বাঘ’—এই অপবাদও ঘুচিয়েছে কদিন আগে আয়ারল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে। দুই দলের সর্বশেষ দেখায় জয় মানসিকভাবে কিছুটা হলেও বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখার কথা। কাল দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে কিউই ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্ট অবশ্য ঠিকই মনে করিয়ে দিলেন, ওই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের নিয়মিত খেলোয়াড়দের বেশ কজন খেলেননি। তাঁদের একজন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। যাঁর কথা উঠলেই মাশরাফি বলেন, ‘ও-ই নিউজিল্যান্ডের ইনিংসটা ধরে রাখে।’

তাহলে কি উইলিয়ামসনকে তাড়াতাড়ি ফেরানোই জয়ের চাবিকাঠি? মাশরাফির আরও কিছু নাম মনে পড়ে যায়, ‘গাপটিল-রনকি কিন্তু শুরুতে খেলাটা সেট করে দেয়। এরপর ছোট ছোট ঝড় তোলার লোক তো আছেই—মানরো, অ্যান্ডারসন...।’

ইনিংস ধরে রাখার উইলিয়ামসন আর ছোট ছোট ঝড় তোলার মানরো-অ্যান্ডারসনদের সামলাতে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলাটাই একমাত্র পথ বলে মনে হচ্ছে। মিরাজের জায়গায় তাই দলে আসছেন তাসকিন আহমেদ। যার অর্থ, বাংলাদেশ নামছে চার পেসার নিয়ে। বছর দুয়েক আগে চার পেসারের বাংলাদেশ সূচনা করেছিল নতুন এক অধ্যায়ের। আরেকটি নতুন অধ্যায়ের হাতছানি তো এখানেও!

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×