২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

ওমান দলে কারা খেলেন, কেমন খেলেন

উৎপলশুভ্রডটকম

১৯ অক্টোবর ২০২১

ওমান দলে কারা খেলেন, কেমন খেলেন

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে ওঠার পথে বাংলাদেশের বাধা এখন ওমান। সেই ওমান আবার খেলছে নিজেদের মাঠে। টানা দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যারা জিতেছে প্রথম ম্যাচ। পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে ১০ উইকেটের জয়ে একটা বার্তাও দিয়েছে। তা এই ওমান দলটা কেমন, কেমন তাদের সাম্প্রতিক পারফর‍ম্যান্স, কারা খেলেন এই দলে...এসব জেনে নেওয়া ভালো না?

১৭ অক্টোবর তারিখটা ওমান ক্রিকেটের জন্য বিশেষ হয়ে ছিল এমনিতেই। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কল্যাণে ২০১২ সালের এ দিনেই টার্ফ মাঠ পেয়েছিলেন ওমানের ক্রিকেটাররা। তবে ওটা যদি খবর হয়, ব্রেকিং নিউজ সৃষ্টি হলো ২০২১ সালে এসে। ওমানে বিশ্বকাপের উদ্বোধন হলো ওই ১৭ অক্টোবরেই। পারফরম্যান্সেও আলো কাড়লেন ওমানের ক্রিকেটাররা। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে প্রথম দল হিসেবে ১০ উইকেটের জয়ের রেকর্ডটাও তো সেদিনই গড়লেন তারা।

ওমানের হয়ে খেললেও, যাদের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে ওই মরুর দেশটার ক্রিকেট, সেই স্বপ্ন সারথিদের কেউই কিন্তু জন্মসূত্রে ওমানি নন। এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে কেবলমাত্র সুফিয়ান মেহমুদই বেড়ে উঠেছেন ওমানের জল-হাওয়া গায়ে মেখে। বাকি ১৪ জনই এসেছেন অন্য কোনো দেশ থেকে।

এই বংশোদ্ভূত ক্রিকেটারদের মধ্যে পাকিস্তানিদেরই আধিপত্য। ১৪ জনের মাঝে আটজনই পাকিস্তানের, ভারতীয় আছেন পাঁচজন। বর্তমান অধিনায়ক জিসান মাকসুদ বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন পাকিস্তানের সিসভাতানির হয়ে। ওমানে পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যটা আর্থিক, ২০০৮ সালে জীবিকার সন্ধানেই সেখানে যাওয়া।

তার একটা ব্যবস্থা হওয়ার পর আবার মন দেন ক্রিকেটে। ২০১২ সালে ওমান জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকেই তিনি দলের নিয়মিত সদস্য। এখন তো নেতৃত্বই দিচ্ছেন ওমানকে। আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর খোঁজখবর রাখলে অজানা নেই নিশ্চয়ই, ভারতের ঘরোয়া লিগের পরাশক্তি মুম্বাইয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিয়েছিল তারা। প্রস্তুতিটা যে ভালোই হয়েছিল, ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় তো সেটাই প্রমাণ করে।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ থেকে এই বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত ১৯টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ওমান জয় পেয়েছে ১১টিতে। একই সময়ে ঘরের মাঠে ১১ ম্যাচ খেলে জয় ৭টিতেই। প্রথমবারের মতো নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলতে নেমে ১০ উইকেটের রেকর্ড জয়টাও নিশ্চয়ই বাংলাদেশ ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসটা বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুণ।জিসান মাকসুদ, বল হাতে এগিয়ে এসেছিলেন একদম অধিনায়কের মতোই

আর ওমানি ক্রিকেটাররাও তো দারুণ ছন্দেই আছেন। জিসান মাকসুদের বোলিং যদি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের প্রাপ্তি হয় তো দুই ওপেনার যতিন্দর আর আকিবের ফিফটি যোগাচ্ছে বিশ্বাস। গত ম্যাচে প্রয়োজন পড়েনি, তবে সর্বশেষ চার ইনিংসে খাওয়ার আলী ১৪০-এর বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন দুবার, যেখানে আছে ৪৫ বলে অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংসও। পিছিয়ে নেই মোহাম্মদ নাদিমও। বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ে যে প্রাণোচ্ছ্বাস দেখান, তাতে কে বলবে, তাঁর বয়স এখন ৩৯! বোলিংয়ে অবশ্য বিলাল খানই ওমানের শেষ কথা। সর্বশেষ ১০ ম্যাচে তাঁর শিকার ২২ উইকেট, এতেই যা বুঝে নেওয়া যাচ্ছে অনেকটা।

বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় অবশ্য ওমানের জন্য এবারই প্রথম নয়। ২০১৬ সালে ধর্মশালায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিষেকেই আয়ারল্যান্ডের ১৫৪ রানের লক্ষ্য টপকে ওমান চমকেই দিয়েছিল সবাইকে। পরের রাউন্ডে অবশ্য ওঠা হয়নি সেবার। বৃষ্টির কারণে পয়েন্ট ভাগাভাগি হয় হল্যান্ডের সঙ্গে। তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের প্রত্যয়ে মাঠে নেমেও তামিম ইকবালের সেঞ্চুরিতে পাত্তাই পায়নি ওমান।আকিব ইলিয়াস

তবে এবার পরিস্থিতি মোটেই সেরকম নয়। সুপার টুয়েলভে উঠতে গেলে আজ জয় পেলেই হচ্ছে। সামনে সেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটা যে বাঁচা-মরার, সেটা তো জেনেই গিয়েছেন আপনি। আর এই বাঁচা-মরার ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন ওমানের সবাই। মিডিয়ার সঙ্গে এমনিতেই কিউরেটরের কথা বলার অনুমতি নেই। তবে এবার নাকি ওমান ক্রিকেট বোর্ডের তরফ থেকে একটু বেশিই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে মাঠকর্মীদের ওপর। একজন মাঠকর্মী তো এমনও জানিয়েছেন, তাদের ওপর স্পাই লাগিয়ে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ দলের কাছে মাঠ-সংক্রান্ত কোনোরূপ কোনো তথ্যই যেন পাচার হতে না পারে, সে কারণেই।

'ডু-অর-ডাই' ম্যাচটায় বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ তাই শুধু এগারোজনই নয়।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×