২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

মাহমুদউল্লাহর পাল্টা জবাব

উৎপলশুভ্রডটকম

২২ অক্টোবর ২০২১

মাহমুদউল্লাহর পাল্টা জবাব

মাহমুদউল্লাহ

ওমানের বিপক্ষে ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে সাকিব সাংবাদিকদের প্রশ্নের বাঁকা বাঁকা উত্তর দিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, মাহমুদউল্লাহও যে `শক্ত` হয়ে আছেন, এর কারণটা কী? কূটনীতির আশ্রয় না নিয়ে মাহমুদউল্লাহ মনের কথাটাই বলে দিলেন।

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই পরাজয়ে রীতিমতো ঝড় উঠে গিয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে। প্রাথমিক পর্ব থেকেই বিদায় নেওয়ার শঙ্কা নিয়ে শুরু হওয়া ওমানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে কষ্টে পাওয়া জয়েও যা পুরোপুরি থামেনি। মাঠে মাহমুদউল্লাহর চেহারা দেখেই অনুমান করা যাচ্ছিল, কী ঝড় বয়ে যাচ্ছে তাঁর মনে! সহজ একটা ক্যাচ ফেলে দেওয়াটাও ছিল হয়তো এরই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। 

সংবাদ সম্মেলনেও আসেননি সেদিন। এলেন পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে বড় জয় দিয়ে সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত করার পর। এই জয়ে সুপার টুয়েলভে উঠে যাওয়ার স্বস্তির কথা বললেন। সঙ্গে উগড়ে দিলেন মনে জমে থাকা ক্ষোভের লাভাও।

এর আগে টি-টোয়েন্টির অনিশ্চয়তার কথা মনে করিয়ে দেওয়াটাও কর্তব্য বলে মনে হলো তাঁর, 'এই ফরম্যাটে উত্থান-পতন থাকবেই। ফরম্যাটটাই এমন, এখানে ছোট দল-বড় দল বলে কিছু নাই। একজন ব্যাটসম্যান, একজন বোলার, কিংবা একটা পার্টনারশিপ দাঁড়িয়ে গেলেই ম্যাচ বের হয়ে যায়।'

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তা বেরিয়েও গিয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে টালমাটাল করে দেওয়া সেই পরাজয়ের পর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সবচেয়ে বড় কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, টিমের মধ্যে শান্ত একটা ভাব বজায় রাখা। যে কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। এমনিতেই প্রাথমিক পর্ব থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার অকল্পনীয় বিপর্যয়ের চোখ রাঙানি, তার ওপর চারপাশ থেকে ধেয়ে আসা সমালোচনা। এমন সময় ক্রিকেট বোর্ড কোথায় পাশে দাঁড়াবে, উল্টো সংবাদ মাধ্যমের সামনে এসে বোর্ড সভাপতিও আমজনতার সঙ্গে যোগ দিলেন দলের তীব্র সমালোচনায়। ক্রিকেটারদের নাম ধরে ধরে ঘোষণা করে দিলেন এই পরাজয়ের জন্য দায়ীদের নামও।

ক্রিকেটারদের অপমানিত বোধ করাটা ছিল খুবই স্বাভাবিক। সেটির প্রকাশও ঘটেছে নানাভাবে। এই ম্যাচের আগের দিনই যেমন ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনের জন্য নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা দুয়েক পেরিয়ে গেলেও আসেননি বাংলাদেশ দলের কেউ। অপেক্ষায় থাকতে থাকতে এক সময় ওমানে টুর্নামেন্ট কাভার করতে যাওয়া বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা বয়কটের ঘোষণা দিয়ে চলে এসেছেন সেখান থেকে। পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে জয়ের পর মাহমুদউল্লাহর কথায় অনুমান করা গেল, এটাও হয়তো ছিল প্রতিবাদের একটা ভাষা।

পরে তো অনেকটা সরাসরিই তা বলে ফেললেন তিনি। ওমানের বিপক্ষে ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে সাকিব সাংবাদিকদের প্রশ্নের বাঁকা বাঁকা উত্তর দিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, মাহমুদউল্লাহও যে 'শক্ত' হয়ে আছেন, এর কারণটা কী? কূটনীতির আশ্রয় না নিয়ে মাহমুদউল্লাহ মনের কথাটাই বলে দিলেন, 'শক্ত হয়ে যাওয়াটাই মনে হয় স্বাভাবিক। আমরাও মানুষ, আমাদেরও ফিলিংস কাজ করে, আমাদেরও পরিবার আছে। আমরাও ভুল করতে পারি। সমালোচনা অবশ্যই হবে, তবে আমাদের ছোট করে ফেলাটা ঠিক না।'

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে দলের তিন সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর ধীরগতির ব্যাটিংয়ের ঝাঁজালো সমালোচনা করেছিলেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান। এর জবাবটাও যেন এদিন দিয়ে দিলেন, 'মিডিয়াসহ সবার কথাই বলছি আমি। আমাদের তিনজনের (সাকিব-মুশফিক-রিয়াদ) স্ট্রাইক রেট নিয়ে কথা হয়েছে। সবারই মন খারাপ। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দিলে (আবেগটা) আমাদেরও কাজ করে। কারও ব্যথা আছে, ইনজুরি আছে; দিনের পর দিন পেইন কিলার নিয়েও আমরা খেলি। কমিটমেন্ট নিয়ে তাই প্রশ্ন তোলা ঠিক না।'

সেই প্রশ্ন কয়েক দিন হয়তো আর উঠবে না। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সংস্কৃতি অনুযায়ী আরেকটা পরাজয়ই হয়তো আবার টালমাটাল করে তুলবে সব।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×