২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

রেকর্ড তো শুধু সাকিবই করেননি...

রিফাত বিন জামাল

২২ অক্টোবর ২০২১

রেকর্ড তো শুধু সাকিবই করেননি...

প্রথম দুই ম্যাচের জীর্ণ-শীর্ণ পারফরম্যান্স দেখে বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে আশঙ্কার মেঘ উঁকি দিচ্ছিল পাপুয়া নিউ গিনির সাথে ম্যাচের আগেও। বাংলাদেশ দল তা উড়িয়ে দিয়ে যেমনভাবে জেতা উচিত, তেমনভাবেই জিতল। পাপুয়া নিউগিনিকে যে একপেশে খেলেই হারিয়েছে, তার স্বপক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছে ৮৪ রানের জয়। চলুন, বাংলাদেশের দাপুটে সে জয়ের গল্পে ঘুরে আসা যাক সংখ্যায় সংখ্যায়।

৪৬+৪- আজ রান করেছেন ৪৬, উইকেট নিয়েছেন ৪টি। অলরাউন্ড পারফর্ম্যান্সের পূর্ণ এক প্রতিচ্ছবি! এর আগে যেখানে ৪০ এর বেশি রান করার সাথে কমপক্ষে ৪ উইকেট, টি-টোয়েন্টির এক ম্যাচে এমন কিছু কেউ একবারের বেশিই করতে পারেননি, সেখানে সাকিব এই নিয়ে তা করলেন তৃতীয়বারের মতো। আরও নয়জন এমন নৈপুণ্য দেখালেও সাকিবের আগে বিশ্বকাপে তা পেরেছেন একমাত্র ডোয়াইন ব্রাভোই। ২০০৯ সালে ভারতের সাথে ব্যাট হাতে ৬৬ এর পাশাপাশি বল হাতে চার উইকেট নিয়েছিলেন ব্রাভো। সাকিব আজকের আগে ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৫ উইকেটের সঙ্গে রান করেছিলেন ৪২। জিম্বাবুয়ের সাথে ২০১৩ সালে আরেক ম্যাচে তাঁর অবদান ছিল ৪০ রান ও চার উইকেট।

- আজকের ম্যাচে সাকিবের বোলিং ফিগার- ৪-০-৯-৪। বিশ্বকাপে এটি বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সেরা। ২০১৬ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২২ রানে মোস্তাফিজের ৫ উইকেট বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বকাপে সেরা বোলিং। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের তালিকায় প্রথম সাতটিই মোস্তাফিজ ও সাকিবের, সেগুলোর পাচঁটিঅ আবার অবশ্য সাকিব আল হাসান।

২.২৫- চার ওভারের কোটা শেষে আজ সাকিবের ইকোনমি রেট ছিল ২.২৫। কমপক্ষে দুই ওভার বল করার শর্ত আরোপে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের হয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় সেরা মিতব্যয়ী বোলিং এটা। কিপটে বোলিংয়ের সাথে তাঁর ঝুলিতে এদিন উইকেটও ছিল ৪টি। বাংলাদেশের হয়ে যারা কমপক্ষে দুই ওভার বোলিং করে ইকোনমি তিনের নিচে রাখতে পারার ঘটনা ঘটেছে ১৩ বার, এর মধ্যে মাত্র দুবারই বোলার এমন মিতব্যয়ী বোলিংয়ের সাথে উইকেটও নিয়েছেন চারটি করে। সাকিব একাই তা দুবার করেছেন, আজকের আগে অস্ট্রেলিয়ার সাথেও সাকিব সমান ৯ রান দিয়ে উইকেট নিয়েছিলেন ৪টি। সেই সিরিজেই নাসুমও ৪ উইকেট নিয়েছিলেন ১০ রানে।

১০০- রেকর্ডময় দিনে সাকিব আজ ঢুকে গেছেন 'শ ছক্কা'-র ক্লাবেও। সব ফরম্যাট মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে এক শর বেশি ছয় মারার কীর্তি আছে আরও চারজনের। তারা হলেন- তামিম(১৮২), মাহমুদুল্লাহ(১৫৩), মুশফিক (১৫১) ও মাশরাফি(১০৭)।

- টি-টোয়েন্টিতে ইনিংসে চার কিংবা তার বেশি উইকেট সবচেয়ে বেশি ছয়বার নিয়েছেন পাকিস্তানের উমর গুল। আজকের ম্যাচে চার উইকেট নিয়ে সাকিব ছুঁয়ে ফেললেন তাঁকে।

৩৯- টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডেও ৩৯ উইকেট নিয়ে সাকিব ছুঁয়ে ফেলেছেন শহীদ আফ্রিদিকে। আফ্রিদির লেগেছছিল ৩৪ ম্যাচ। ২৮ ম্যাচেই তাঁর পাশে বসা সাকিব হয়তো সামনের ম্যাচেই ছাড়িয়ে যাবেন তাঁকে।

৮৪- বাংলাদেশ আজ পাপুয়া নিউগিনির সাথে জয় পেয়েছে ৮৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। এতটাই বিশাল যে, টি-টোয়েন্টিতে এত বড় ব্যবধানে বাংলাদেশ জিততে পারেনি আগে কখনো। রানের হিসাবে বাংলাদেশের এর আগের সবচেয়ে বড় জয় এসেছিল ৭১ রানে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১২ সালে।

- শূন্য রানে আউট হয়ে বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই নাঈম পেয়ে গেছেন ডাকের দেখা। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে অবশ্য তাঁকে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরতে হয়েছে আর মাত্র একবার, পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই শূন্য তাঁর ক্যারিয়ারেরই একমাত্র 'গোল্ডেন ডাক'।

৪৬- পাপুয়া নিউগিনি দলের বাকি সবাই মিলেই যেখানে করেছেন ৪৬ রান, কিপলিন ডোরিগা একাই করেছেন সমান রান৷ আট নাম্বারে নেমে ডোরিগা করেছিলেন ৪৬ রান, আট কিংবা তার নিচে ব্যাটিংয়ে নেমে এটিই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ স্কোর। এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আফগানিস্তানের গুলবাদিন নাঈবের ৪৪ রানের ইনিংসটা ছিল সর্বোচ্চ।

২৯- পাপুয়া নিউ গিনি যখন ৭ উইকেট হারিয়েছিল ২৯ রানে, তখন বিশ্বকাপে হল্যান্ডের ৩৯ রানের সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জার রেকর্ড উঁকি দিচ্ছিল তাদের জন্য। কিপলিন ডোরিগার ব্যাটে তা এড়ালেও তারা অলআউট হয়েছে শেষমেশ ৯৭ রানে। টি-টোয়েন্টিতে এই নিয়ে বাংলাদেশ কোন দলকে ষষ্টবারের মতো এক শর কমে আটকে দিল।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×