আফ্রিদি কেন ১০ বাবর কেন ৫৬

উৎপলশুভ্রডটকম
৫ নভেম্বর ২০২১
ক্রিকেটারদের সবার জার্সির পেছনে একটা নম্বর থাকে। এই নম্বরের কি ভিন্ন কোনো গল্প থাকে? অনেকের থাকে। অনেকের না। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে নম্বরটা শরীর ও মনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়। যেমন হয়েছে ফখর জামান কিংবা শোয়েব মালিকের। কিন্তু শাহিন আফ্রিদি কিংবা ফখর জামানের গল্পটা আবার ভিন্ন। সেই সব গল্পই আছে এই লেখায়।
মাশরাফি বিন মুর্তজার ব্র্যান্ড ২। সাকিব আল হাসানের ৭৫। মুশফিকুর রহিমের ১৫ আর তামিম ইকবালের ২৮। জাতীয় দলের জার্সি নম্বরের সঙ্গে জীবন বাঁধা পড়েছে তাদের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক খেলোয়াড়ের জার্সি নম্বরের পেছনে একটা গল্প থাকে। পাকিস্তানের তরুণ ফাস্ট বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদি যেমন ছোটকাল থেকে শহীদ আফ্রিদির ভক্ত। তাই শহীদ আফ্রিদির ১০ নম্বরটা চাইতে চাইতে শেষ পর্যন্ত পেয়ে গেছেন চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। নৌবাহিনীতে থাকতে তাঁর রুমের নম্বর যা ছিল, তা এখন ফখর জামানের পিঠে থাকে। তাহলে গতি তারকা হারিস রউফের পিএসএলের নম্বর ১৫০ কেন?
এবারের বিশ্বকাপে সবার আগে সেমিফাইনালে উঠে গেছে পাকিস্তান। টুর্নামেন্ট শুরু করার পর ফেবারিট হয়ে ওঠা দলটার খেলোয়াড়দের নিয়ে হচ্ছে নানা চর্চা। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ভাবল, খেলোয়াড়দের কার জার্সি নম্বর কত আর তা কেন, সেটা নিয়ে একটা ভিডিও বানালে কেমন হয়! যেমন ভাবা তেমন কাজ। হয়ে গেল ভিডিও এবং তাতেই জানা যাচ্ছে, অধিনায়ক বাবর আজম থেকে শুরু করে একাদশের বাইরে থাকা সাবেক অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের জার্সি নম্বরের পেছনের গল্পও।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অসাধারণ বোলিংয়ে ২২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হওয়া রউফের একটা দুঃখ আছে। ২৭ বছরের এই ফাস্ট বোলার নিয়মিত ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুতে ১৫০ কিলোমিটারও উঠেছে গতিটা। ওই নম্বরটা পিএসএলে পেলেও পাকিস্তান দলে পাননি, ‘পাকিস্তান আমাকে যে জার্সি নম্বরটা দিয়েছে তা ৯৭। তবে আমি তাদের অনুরোধ করেছিলাম অন্য একটা দিতে। পিএসএলে আমার জার্সি নম্বর ১৫০। কারণ, যখন আমি রানআপ মার্ক করি, তখন ওখানে গিয়ে ১৫০-ই লিখি।’ রউফ বলেন, ‘এর পেছনে অনেক গল্প আছে। যখন আমি প্রথম ক্রিকেটে নির্বাচিত হই, তখন ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করেছিলাম। তখন থেকে পরিচিতরাও আমাকে "১৫০" বলে ডাকে।’
সাবেক অধিনায়ক শোয়েব মালিকের অবশ্য অত কারণ নেই, ‘আমার জার্সি নম্বর ১৮। আমি যখন প্রথম জাতীয় দলে ঢুকি, তখন নম্বর-টম্বর নিয়ে আমি কিছুই জানতাম না। শুরু থেকেই ১৮ পেয়েছি। মাঝে নম্বর বদলেছিলাম। কিন্তু পরে আবার ১৮ নম্বরে ফিরে আসি। এর পেছনে বড় কোনো ঘটনা বা কারণ নেই। আমি এই নম্বরটা পছন্দ করি। কারণ, শুরু থেকেই আমি এটা পেয়েছি।’
বর্তমান অধিনায়ক বাবর আজম শুরুতে যে নম্বরটা পেয়েছিলেন, সেটা বদলেছেন। শুনুন তাঁর মুখেই, ‘আমার জার্সি নম্বর ৫৬, তা তো সবার জানা। প্রথমে আমি পেয়েছিলাম ৩৩ নম্বর। এরপর আমি আমার পছন্দ জানানোর সুযোগ পেলাম। আমার কাছে জানতে চাওয়া হলো, আমি ৩৩ রাখতে চাই নাকি ৫৬? আমি ৫৬ বেছে নিলাম। নাম্বারটা কেন যেন ভালো লেগেছিল। এখন পর্যন্ত ওটাই ধরে রেখেছি।’ ওই নম্বরটা ক্রিকেট জীবনের অংশ হয়ে গেছে। এখন ওই নম্বরের সঙ্গে ‘বিএ’ যোগ করে ব্র্যান্ডও চালু করেছেন বাবর।
সরফরাজের খেলার আর জীবনে ১ আর ৬ এর দারুণ মেলবন্ধন। আর সেই কারণে তাঁর জার্সি নম্বর ১৬। গল্পটা শুনুন সরফরাজের মুখেই, ‘আমার জার্সির নম্বর ১৬। ক্যারিয়ারের প্রথম ইনিংসে আমি ১৬ রানই করেছিলাম। এরপর যে কী হয়ে গেল, কে জানে! আমার জন্মদিনেও ৬ আছে। আমার স্ত্রীর জন্মদিনেও ৬ আছে। আমার দুই মেয়ের জন্মের তারিখেও ১ আর ৬ আছে। সব মিলে ১ আর ৬ থাকে বলে এটা বেছে নিয়েছি আমি।’
শাদাব খানের জার্সি নম্বরটা শুরু থেকে ৭ নয়। ওটা ছিল পেসার মোহাম্মদ সামির নম্বর। এক সময় সামি পাকিস্তান ক্রিকেটে অতীত হয়ে গেলেন। ২৯ নম্বর জার্সির বদলে প্রিয় ৭ পেয়ে গেলেন শাদাব।
প্রথম জীবনে নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ফখর জামান। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস্ ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি করা এই খেলোয়াড় ক্রিকেটে এসেছেন নৌবাহিনী থেকেই। পেছনের জীবনটা কোনো না কোনোভাবে রয়ে গেছে তাঁর সাথে, ‘যখন পাকিস্তান জাতীয় দলে আসি, তখন আমি কত নম্বর জার্সি চাই, তা জানতে চাওয়া হয়। ৩৯ নম্বর জার্সিটা নেওয়া সুযোগ ছিল। আমি যখন প্রথম নেভিতে যাই, তখন ওখানে আমার রুম নম্বর ছিল ৩৯। তাই মনে হয়েছিল যে ৩৯ নম্বরের সঙ্গে আমার কিছু না কিছু স্মৃতি তো আছে। এই জন্য আমি ৩৯ নম্বর বেছে নিয়েছিলাম।’
২১ বছরের শাহিন আফ্রিদি যে শহীদ আফ্রিদির হবু জামাই, তা নিশ্চয়ই এতদিনে আপনার জানা। দুজনই পাকিস্তানের এক এলাকা থেকে এসেছেন। দুজনই আফ্রিদি। শাহিন আফ্রিদি অনেক অপেক্ষা করার পর পেয়েছেন ১০ নম্বরটা, ‘একেবারে প্রথম দিকে আমার জার্সির নম্বর ছিল ৪০ আর জার্সির পেছনে শাহিন লেখা থাকত। আমার সখ ছিল যে আমি আফ্রিদি লেখা জার্সিতে ১০ নম্বর পরব। কারণ, আমি লালাকে (শহীদ আফ্রিদি) দেখে বড় হয়েছি। পাকিস্তানে তিনিই আমার ফেবারিট খেলোয়াড়। তাই আমার ইচ্ছা ছিল যে, পাকিস্তানের হয়ে খেলার সময় আমার জার্সি নম্বরও ওটা থাকবে।’
নিজের ফেবারিট খেলোয়াড়ের নম্বরটা পেতে শাহিন শাহ আফ্রিদি কী করেছিলেন, সেই গল্পটাও বলেছেন তিনি, ‘২০১৮ সালে আমি পিসিবির কাছে এই নম্বর চেয়ে দরখাস্ত করি। কিন্তু তখনো লালা অবসর নেননি। এবার যখন বিশ্বকাপ এল, তখন পিসিবি আমাকে অনুমতি দেয়। শহীদ ভাই বলেছিলেন, শাহিন ওটা পরতে চাইলে পরতে পারে। এটা এমন একটা নম্বর, যেটা পরলে গর্ব লাগে। কারণ, আগে ওটা লালা পরতেন, এখন আমি পরি। আমি চাই, এটা পরে গর্বের সাথে খেলে বিশ্বকাপটা জিতে নিতে।’